Samakal:
2025-06-23@04:24:19 GMT

নির্বাসিত কবির সঙ্গে

Published: 8th, May 2025 GMT

নির্বাসিত কবির সঙ্গে

চলে গেলেন খোকন ভাই। সবাই কবি দাউদ হায়দার নামটির সঙ্গে পরিচিত। খোকন  তাঁর ডাকনাম। নির্বাসিত কবি এই এপ্রিলে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন চির নির্বাসনে।  
মফস্বল শহর হবিগঞ্জ। সেই ছোটবেলার এক দুপুরে ঘুম ভাঙে রাস্তায় লোকজনের কোলাহলে। ছোট্ট আমি সেদিন ঘুমচোখে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেটের কাছে যাই। দেখি, আমার মায়ের দৃষ্টিও তখন গেটের ফাঁক গলে রাস্তার দিকে। রাস্তায় অনেক মানুষ হিংস্র এক মিছিল করায় মত্ত। সেই মিছিল থেকে দাউদ হায়দার নামে একজন মানুষের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠছে। সেদিনই দাউদ হায়দার নামের সঙ্গে পরিচিত হলাম। তার বেশি কিছুই বুঝতে পারিনি এবং কারও কাছে প্রশ্ন করে কিছু জানার কৌতূহলটাও মাথায় তাড়না তৈরি করেনি। বড় হতে হতে দাউদ হায়দারের কবি পরিচয়, তাঁর লেখা কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয় পর্বটা হয়ে যায়। জেনে যাই কবি দাউদ হায়দার একটি কবিতা লেখার অপরাধে নির্বাসন দণ্ডে দণ্ডিত। তিনি এক উদ্বাস্তু প্রবাসী মানুষ।
একসময় তাঁর কর্মস্থল দৈনিক সংবাদেই আমি ফিচার এডিটর হয়ে যোগ দিই। ওখানে দীর্ঘদিন কর্মরত আছেন, এমন অনেকের কাছ থেকে আমি সাহসী কবি দাউদ হায়দার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। শুনি কবির পরবাসে জীবনযাপনের অনেক কথা। জার্মানি ঘুরে আসা অনেকের কাছে কবির সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা জানি। জানি, বাংলাদেশের মানুষ পেলে উনি কতটা আপ্লুত হন। রান্না করে খাওয়ান। ঘুরে দেখান বার্লিন শহরের বিভিন্ন জায়গা। তবে আমি কখনও কল্পনাতেও কবির সঙ্গে দেখা হবে, এমন কথা ভাবিনি। মাঝেমধ্যে আমার শুধু ছোটবেলায় দেখা সেই মিছিলটার কথা মনে পড়ত।
২০০৪ সালে আমি সংবাদ পত্রিকায় কাজ করতে শুরু করি। ২০০৫ সালের মার্চে হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার আমন্ত্রণে সংবাদ পত্রিকা থেকে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক এক কর্মশালায় যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতায় যাই। সেই টিমে আমরা ছিলাম দু’জন মেয়ে আর চারজন ছেলে। সঙ্গে আমাদের চিফ রিপোর্টার সালাম জুবায়ের। সালাম ভাইয়ের সঙ্গে কলকাতার কবি-সাহিত্যিকদের বিশেষ সখ্য ছিল। অফিসে অবসর সময়ে সালাম ভাই আমাকে তাঁর সেইসব বন্ধু আর আড্ডার অনেক গল্প বলতেন। তো কলকাতায় পা রাখার পরদিনই সালাম ভাই আমাকে জানালেন, এ শহরে এখন তসলিমা নাসরিন এবং দাউদ হায়দার দু’জনেই আছেন। আমি তো শোনে মুগ্ধ। 

তাহলে কার সঙ্গে দেখা করা যায়? সালাম ভাইয়ের ভোট দাউদ হায়দারের দিকে বেশি। আমিও না চাইতে অনেক পাওয়া ভেবে তাঁর মতেই সায় দিই। ঠিক হলো পরদিন সকালে আমরা দাউদ হায়দারের রেস্ট হাউসে হানা দেব। এমন একজনের সঙ্গে দেখা হবে!! ভেবেই কল্পনায় বয়োবৃদ্ধ একজনের চেহারা মনে এঁকে ফেলি। ভাবি, এমনই হবে হয়তো মানুষটা। কারণ উনি তো দেশ ছেড়েছেন আমার ছোটবেলায়, সেই কবে! পরদিন সকাল সকাল আমি আর সালাম ভাই বেরিয়ে পড়ি। থিয়েটার রোডের সেই রেস্ট হাউসের ঘরে তখন দাউদ হায়দারের বড় তিন ভাই বিছানায় বসে আছেন আয়েশ করে। বেশ একটা জমাটি আড্ডার মুডে তিনজনই। তারাও আমাদের দেশের বিশিষ্ট লেখক এবং কবি। আমি তাদের চিনি, জানি। তবুও সালাম ভাই আমার সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। কারণ, তারা তো আর আমাকে চেনেন না। কয়েক মুহূর্তেই তাদের বড় কাছের মানুষ মনে হলো। আমার চোখ তখন ইতিউতি করে দাউদ হায়দারকে খুঁজছে। জানতে পারলাম তিনি শাওয়ার নিচ্ছেন। এর মধ্যে সালাম ভাইয়ের সঙ্গে তিন ভাইয়ের খোকন বলে কাউকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। একসময় প্রশ্ন করেই বসলাম, এই খোকন লোকটা কে? এমন সময় বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেন দাউদ হায়দার। পরনে জিন্স আর লাল রঙের টি-শার্ট। তরুণকাল অতিক্রম করে এলেও চেহারায় তখনও ধরে রেখেছেন তারুণ্য। চৌকস চেহারা। আপাদমস্তক একজন তুখোড় স্মার্ট ভদ্রলোক। আমরা তো তাকে দেখে বিস্মিত। কোথায় বয়োবৃদ্ধ এক কবি! তিনি তো রীতিমতো তরুণ।
মানুষটা বেরিয়েই আমার কথার উত্তর দিলেন, ‘আমিই খোকন। দাউদ হায়দার আমার পোশাকি নাম। খোকন ডাকটা বাবা-মা, ভাই-বোনের আদরের। এটা আমার ডাকনাম।’ প্রথম কথাতেই আমি মুগ্ধ। বাহ্ বেশ সুন্দর করে কথা বলেন তো! এবার আমি সাহস করে বলে ফেললাম, ‘দাউদ হায়দার নামটাতে মনে হয় একজন বয়স্ক মানুষ। খোকন নামটাই ভালো।’ কবি বললেন, ‘তাহলে তুমি আমাকে খোকন ভাই বলেই ডেকো।’
সেই থেকে উনি হয়ে গেলেন আমার খোকন ভাই।
আমরা কবির সঙ্গে দেখা করতে এসেছি জেনে প্রশ্ন করলেন, ‘কতটা সময় আমার জন্য বরাদ্দ করে নিয়ে এসেছ?’ সালাম ভাই উত্তর দিলেন, ‘যতক্ষণ আপনি বিরক্ত না হন ততক্ষণ পর্যন্ত।’ হেসে দিলেন কবি। এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হাঁটতে পারো কেমন?’ আমি হাঁটার ব্যাপারে তেমন আগ্রহী না হলেও মুখে বললাম ‘পারি, মন্দ না।’
‘তাহলে চলো’ বলে একটা ব্যাগ কাঁধে ঝোলালেন। ব্যাগে বিস্তর কাগজপত্র। সেই ব্যাগের ওজনে কবি নিজেও একদিকে ঝুঁকে গেলেন। তবুও তাকে ন্যুব্জ বলে মনে হলো না। তাঁর ভাইয়েরাও আমাদের কবির সঙ্গী হতে উৎসাহ দিলেন। আমরা রেস্ট হাউস থেকে বেরিয়ে পড়ি। রাস্তার উল্টো দিকেই একটা বড় রেস্তোরাঁ। (নামটা আজ আর মনে নেই) ব্রেকফাস্ট করবেন বলে সেদিকেই চললেন। রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করেই বুঝলাম এটা তার পরিচিত জায়গা। কলকাতা এলে এখানেই খাওয়াদাওয়া করেন। আমরা ব্রেকফাস্ট করে এসেছি তবুও নিস্তার নেই কবির সঙ্গে খেতেই হবে। দোসা আর ইডলি খেতে খেতে বললেন, ‘ইডলি অনেকটা আমাদের চিতই পিঠার মতো।’ আমি বললাম, ‘আমারও প্রথম খেয়ে এমনই মনে হয়েছে।’ আমি তখন কবির চেহারায় হঠাৎ বিষন্নতার ছায়া দেখি। জানতে চাইলাম, ‘দেশের চিতই পিঠা মিস করেন?’ তখন তাঁর ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসি। সে হাসিতে যেন কষ্টটাই মিলল বেশি। আমি সংবাদ-এর ফিচার এডিটর জেনে আরও উদ্বেলিত হলেন। তাঁর সময়ের সংবাদের অনেক গল্প করলেন। তখনকার বংশালের সংবাদ অফিস আর সাধনা ঔষধালয়ের বানরদের নিয়েও নানান কাহিনি শুনলাম। কথা বলতে বলতে কখনও তার দৃষ্টি উদাস হয়ে কোথাও ঘুরে ফিরছিল। আমি তখন তাঁকে বললাম, ‘আপনার সেই ঢাকা এখন অনেক বদলে গেছে।’ বিভিন্ন জায়গা আর রাস্তার স্মৃতিচারণ করছিলেন। আমি সেসব জায়গার বর্তমান চিত্রটা বলছিলাম। একসময় বললেন, ‘থাক আর বোলো না।’ আমার কথায় তাঁর কোথায় যে ক্ষরণ হচ্ছে, সেটা আমি ঠিক বুঝে নিলাম। তাই আর ও পথে গেলাম না। হৃদয় খুঁড়ে ব্যথা বাড়ালাম বলে আমি নিজেকেই ধিক্কার দিলাম। আসলে আমিও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। নিজেকেই নিজে বললাম, ‘এবার থামো।’
মার্চ মাস। শীত বিদায় নিতে ব্যস্ত। রাস্তায় রোদের কড়া শাসন। এমনই তাতানো প্রকৃতিতে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে আমরা কবির সঙ্গে পা মেলালাম। মানুষটা অনেক দ্রুতগামী। তাঁর হাঁটার জোরের সঙ্গে তাল মেলাতে আমি আর সালাম ভাইও হিমশিম খাচ্ছি। মাঝে মাঝে তাঁকে ধরার জন্য আমি ছোটখাটো ম্যারাথনও করছি। হাঁটতে হাঁটতে এলেন ব্রিটিশ কাউন্সিলে। কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করলেন, কথা বললেন। আমাদেরও তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর আবার রাস্তায়। চলতে চলতে কলকাতার অনেক রাস্তাঘাটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কোথায় কী মিলবে তা-ও মুখস্থ বলে দিলেন।   একেবারে গুগলের ম্যাপসদৃশ। তবে একটু পরপর ডাবওয়ালা দেখে থামছেন আর আমাদের ডাব খাওয়াচ্ছেন। বললেন, ‘পায়ে চলার পথে অন্য কিছু না খেয়ে ডাব খাবে।’ তবে আমাদের চলার গতি শ্লথ হয়ে এলেও কবির  ক্লান্তি নেই।
এবার আমরা পৌঁছালাম স্টেটসম্যান পত্রিকার অফিসে। সরাসরি সম্পাদকের দপ্তরে। সম্পাদক মানস ঘোষ আমাদেরও বেশ সমাদর করলেন। কারণ, আমরা যে দাউদ হায়দারের সঙ্গে এসেছি। আমাকে পাঠালেন তাদের বাংলা বিভাগের সম্পাদকের কাছে। সম্পাদক তখনই আমাকে ঢাকা থেকে তাদের বাংলা বিভাগে কালচারাল নিউজ পাঠাতে বললেন। এ সবই ঘটল খোকন ভাইয়ের কল্যাণে। ঘণ্টাখানেক বসে ওখান থেকে আবার আমরা পথে নামি। এবার চলতে চলতেই খোকন ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলো। জানতে চাইলেন, সংবাদের সাহিত্য পাতা কে চালায়? আমার ছোট্ট উত্তর, ‘ওবায়েদ আকাশ। তরুণ কবি।’ শুনে বললেন, ‘আমি অন্নদা শঙ্কর রায়ের একটা স্মৃতিচারণমূলক পাণ্ডুলিপি দেব বুলবুলকে। বলবে এটা যেন সংবাদের সাহিত্য পাতায় ধারাবাহিকভাবে ছাপে। আর যদি না ছাপে তাহলে আমাকে পাণ্ডুলিপিটা ফেরত দেবে।’ তৎক্ষণাৎ ব্যাগ থেকে বের করে একটা ব্রাউন পেপার খাম ধরিয়ে দিলেন। সালাম ভাই বললেন, ‘অবশ্যই এটা সংবাদে ছাপা হবে।’
ইতোমধ্যে মনে হয় আমরা অর্ধেক কলকাতা শহর হেঁটে ফেলেছি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার মুখে। এবার কবিকে ছেড়ে ফেরার পালা। পার্ক স্ট্রিটের একটা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কবি বললেন, ‘যখনই নিজের দেশটার কথা খুব মনে পড়ে, তখনই পাশের দেশ কলকাতায় চলে আসি।  আমার ভাইয়েরাও তখন এখানে আসে আমার সঙ্গে সময় কাটাতে। দেশ থেকে নিয়ে আসে আমার পছন্দের সবকিছু। কালই আবার কলকাতা থেকে ফিরে যাব। তবে তোমাদের এবং আজকের দিনটা আমার মনে থাকবে।’ আমার চোখের কোণে জলের ঝিলিক খেলে গেল তবে তা আড়াল করলাম। তখনও জানতাম না এটাই কবির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা আর শেষ দেখাও। হোটেলে ফিরে খুব মন খারাপ হলো। দু’দিন দেশের বাইরে থাকলেই আমার দেশের জন্য মন খারাপ হয় আর এই মানুষটা এতদিন ধরে কেমন করে দেশছাড়া জানি না! কী ভীষণ মন খারাপ নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি।
তখন হোয়াটসঅ্যাপ ছিল না, ফেসবুকও না; তাই দূরালাপনীতেই আামাদের যোগাযোগটা ঝুলে থাকল। সংবাদে অন্নদা শঙ্কর রায়ের লেখা নিয়মিত ছাপা হলো। কবি খুশি হলেন।
তখন অনেক কথা হতো কবির সঙ্গে। তবে সময় অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্কের ওপর যবনিকা টেনে দেয়। আমাদের বেলাতেও তাই হলো। যোগাযোগটা স্তিমিত হতে হতে ক্ষয়ে গেল। তবে পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি কবিকে অনেক খুঁজেছি, পাইনি। হয়তো সে সন্ধানে জোর ছিল না, তাই পাইনি। এ অপরাধে আজ মন কেমন যেন করছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম র প আম দ র র জন য র অন ক অন ক ক বলল ন করল ন বলল ম কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ

চট্টগ্রাম নগরীর অলিগলিতে প্রতিদিন জমে ওঠা প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের অজান্তেই হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের সম্পদ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উঠলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে দুর্গন্ধযুক্ত ডাস্টবিন বা বিশাল ল্যান্ডফিলের ছবি। অথচ সে চিত্রটাই বদলে দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার সমন্বিত উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি নতুন মডেল, যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য রূপ নিচ্ছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যে।
এই উদ্যোগের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো– ‘সার্কুলার ইকোনমি’র ধারণা প্রতিষ্ঠা, অর্থাৎ একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে অর্থনৈতিক চক্রে ফিরিয়ে আনা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন একটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা হুসনেআরা একজন সক্রিয় রিসাইকলার। প্রতিদিন সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন থেকে গড়ে ৭০-১৫০ কেজি প্লাস্টিক, পলিথিন ও ধাতব বর্জ্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তিনি সরবরাহ করেন স্থানীয় ডিলারদের কাছে। এ কাজ থেকে মাসে আয় হয় প্রায় ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। উদ্যোগের আওতায় কাজ করে হুসনেআরা শুধু নিজের জীবিকা নির্বাহই করছেন না, বরং অপচনশীল কঠিন বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখছেন।
‘আগে লোকজন বলত, এসব কুড়িয়ে কী হবে? এখন বোঝে, আমি পরিবেশও বাঁচাই, ঘরও চালাই’– বলেন হুসনেআরা। সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করতে খানিকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমি চাই না ওদের ওপর ভর করে চলি, যতদিন পারি নিজে কষ্ট করে খাই।’
হুসনেআরার এই নিষ্ঠা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি তাঁকে চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠ ভাঙারিওয়ালা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে, যা তাঁর মতো আরও অনেককেই কঠোর পরিশ্রম ও পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহ ও মর্যাদা দিয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে হুসনেআরার মতো প্রায় তিন হাজার বর্জ্য সংগ্রাহক প্রতিদিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত আছেন, যা এ উদ্যোগটিকে একটি সফল পরিবেশ-অর্থনীতি সম্মিলিত মডেলে রূপ দিয়েছে।
চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ২০২২ সাল থেকে চালু হওয়া ‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ উদ্যোগের আওতায় এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ হাজার টনের বেশি কঠিন বর্জ্য, যার মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ প্লাস্টিক এবং ৭০ শতাংশ সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক। 
আমাদের দেশের প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এ শিল্পে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিয়োজিত। এটি দেশের ১২তম বৃহৎ রপ্তানি খাত, যেখান থেকে প্রতিবছর ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় হয়। তাছাড়া সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে এ খাত থেকে। 
একজন বর্জ্য সংগ্রাহক মাসে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন, যা একদিকে তাদের জীবিকা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে শহরকে করে তুলছে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য। 

শিক্ষার্থী
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম কলেজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযানে গোলাগুলি, একজনের মরদেহ উদ্ধার 
  • ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩২৯ জন
  • করোনাভাইরাস: ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৫
  • ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩২৯
  • কুমিল্লায় করোনায় একজনের মৃত্যু
  • সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফফার মারা গেছেন
  • একটানা ৩৭ ঘণ্টা উড়ে ইরানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমান
  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ার পথে
  • বড় হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারকেও ভূমিকা রাখতে হয়
  • একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ