‘পুশ ইন’ ঠেকাতে ভারতকে বার্তা দেবে বাংলাদেশ
Published: 9th, May 2025 GMT
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রোহিঙ্গাসহ অন্তত ১৬৭ জনকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন) ভারত। এ মুহূর্তে এমন আরও শতাধিক ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানা গেছে কূটনৈতিক সূত্রে।
দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে এমন তৎপরতায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পুশ ইনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক বার্তা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের কাছে সরকার এই বার্তা পৌঁছে দেবে।
ভারত থেকে কূটনৈতিক এবং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একাধিক স্থানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ৪ থেকে ৭ মে বাংলাদেশের পাঁচটি জেলা দিয়ে ভারত থেকে ১৬৭ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭৩ জনকে খাগড়াছড়ি, ৪৬ জনকে কুড়িগ্রাম, ২৩ জনকে সিলেট, ১৫ জনকে মৌলভীবাজার, ১০ জনকে চুয়াডাঙ্গায় পুশ ইন করা হয়েছে।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি ও কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে এক দিনেই অন্তত ১১০ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তাঁদের মধ্যে মাত্র আটজন নিজেদের বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিয়েছেন, বাকি সবাই রোহিঙ্গা ও ভারতের গুজরাটের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের একটি বিমান সংস্থার অনির্ধারিত ফ্লাইটে বিএসএফের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২০০ লোককে গুজরাট থেকে ত্রিপুরায় নেওয়া হয়। এঁদের একটি অংশকে সীমান্তের বিভিন্ন অংশ দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
ভারত থেকে একটি সূত্রে জানা গেছে, গুজরাট থেকে ত্রিপুরায় পৌঁছানো লোকজনের একাংশ এখনো আগরতলায় রয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী লোকজনের একটি তালিকা ভারত ঢাকার কাছে দিয়েছে বলে কূটনৈতিক একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে।
ভারত থেকে পুশ ইনের প্রেক্ষাপটে গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশি নাগরিক নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে তাঁদের বাংলাদেশে গ্রহণ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আর নাগরিকত্ব নিশ্চিত না হলে তাঁদের গ্রহণ করা হবে না বলে বৈঠকে মত আসে।
‘পুশ ব্যাক’ করা যাচ্ছে নাপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে অতীতে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত থেকে এভাবে কয়েক দিনে এত পুশ ইনের নজির সাম্প্রতিক নেই। তা ছাড়া আগে পুশ ইন করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুশ ব্যাক (ফেরত পাঠানো) করা হতো; কিন্তু এবার এখনো পুশ ব্যাক করা হচ্ছে না।
স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দলই সীমান্ত এবং কুড়িগ্রামের রৌমারী ও ভূরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার অভিযোগে গত বুধবার ৬১ জনকে আটক করেছে বিজিবি। খাগড়াছড়িতে বুধবার ভোরে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক ৭৩ জনকে ফিরিয়ে দিতে (পুশ ব্যাক) পারেনি প্রশাসন। তবে সীমান্তে নতুন করে কাউকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দলই সীমান্ত দিয়ে গত বুধবার অনুপ্রবেশ করার অভিযোগে নারী, শিশুসহ ১৫ জনকে আটক করে বিজিবি। কমলগঞ্জের ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর গতকাল বিকেলে বলেন, এই ১৫ জন এখনো বিজিবি ক্যাম্পে রয়েছেন। তাঁদের সম্ভবত থানায় দেওয়া হবে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৩ নারী ও ৩ শিশু রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত কয়েক দিনের পুশ ইনের পদক্ষেপগুলো গভীর উদ্বেগের, যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করছে। পুশ ইনের ওই পদক্ষেপগুলো ১৯৭৫ সালের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি)-২০১১ এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে অতীতে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, ভারত থেকে এভাবে কয়েক দিনের পুশ ইনের নজির সাম্প্রতিক অতীতে নেই। তা ছাড়া পুশ ইন করলে সব সময় পুশ ব্যাক করা হতো। ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে লালমনিরহাট সীমান্তে দুই শর বেশি মানুষকে বাংলাদেশে পুশ ইন করার চেষ্টা করেছিল ভারত। কিন্তু ঢাকার অনমনীয় অবস্থানের কারণে সীমান্তের শূন্যরেখায় তাদের থাকতে হয়েছিল প্রায় দুই মাস। তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান এ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশোবন্ত সিনহার সঙ্গে আলোচনার জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। দিল্লির সঙ্গে আলোচনার ঠিক আগেই দেখা যায়, সীমান্তের শূন্যরেখায় প্রায় দুই মাস ধরে থাকা ওই লোকজন আর নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র ক টন ত ক প শ ইন র
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দিনব্যাপী পুষ্টিমেলা
বগুড়ায় পরিবেশবান্ধব নিরাপদ সবজি উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পারিবারিক পুষ্টি উন্নয়ন ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা, স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের নিয়ে পুষ্টিমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) আয়োজনে বগুড়ার জয়পুরপাড়ায় টিএমএসএস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে এ মেলা হয়।
আরো পড়ুন:
আম খাওয়া কেন জরুরি
দুধ পান করলে কী সত্যিই কাশি বাড়ে
টিএমএসএস কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ), ডানিডা ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পরিচালিত রুরাল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফর্মেশন প্রজেক্ট (আরএমটিপি) প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত পুষ্টি ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন পিকেএসএফের প্রোগ্রাম এন্ড নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট কপিল কুমার পাল।
দিনব্যাপী পুষ্টি ক্যাম্পেইন মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এস এম নূর-ই-শাদীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজী আশরাফুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালীপদ রায় ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ।
এছাড়াও টিএমএসএস পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান গুলনাহার পারভিন, টিএমএসএস উপদেষ্টা আয়েশা বেগম, উপদেষ্টা মিনতি আক্তার বানু, টিএমএসএস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শাহজাহান আলীসহ আমন্ত্রিত অতিথি, টিএমএসএস কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিএমএসএস প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে-আরা বেগম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন টিএমএসএস উপনির্বাহী পরিচালক সোহরাব আলী খান।
কৃষি উদ্যোক্তা ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পুষ্টি বিষয়ক র্যালির মাধ্যমে ক্যাম্পেইন শুরু হয়। র্যালির শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা পুষ্টি ক্যাম্পেইনের ভিটামিন, মিনারেল ও পুষ্টিজাত পণ্য বিষয়ক স্টল পরিদর্শন করেন।
মেলায় মেডিকেল ক্যাম্প, ভিটামিন স্টল, খনিজ, রান্নার কৌশল প্রর্দশনী, ওয়াস স্টল, নিউট্রিশন স্টলসহ সচেতনতামূলক আটটি স্টলের মাধ্যমে শিশু, অভিভাবক ও মেলায় আগত দর্শনার্থীদের হাতের নাগালে থাকা বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করে দেওয়া হয়। স্টল পরিদর্শন শেষে অতিথিরা এ ধরনের কার্যক্রম দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং পুষ্টি সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক দিকনির্দেশনা দেন। মেলায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়। কৃষি উদ্যোক্তা ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পুষ্টি বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা, কুইজ, গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। ক্যাম্পেইন শেষে প্রতিযোগীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।
মেলার আয়োজকরা জানান, এই মেলার উদ্দেশ্য জনসাধারণের মধ্যে পুষ্টি ও খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, জনগণের মধ্যে পুষ্টি সম্পর্কে জ্ঞান বাড়িয়ে দেওয়া, পুষ্টি সম্পর্কে ভুল ধারণা, ত্রুটিপূর্ণ খাদ্য অভ্যাস ও কুসংস্কার সম্পর্কে জ্ঞান দান, সুষম খাবার কী এবং এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু এ সম্পর্কে জনগণকে ধারণা দেওয়া এবং বিভিন্ন বয়সের পুষ্টি চাহিদা সম্পর্কে অবগত করা। বাড়ন্ত শিশুদের খাদ্যের ধরণ ও স্বাস্থ্যকর স্কুল টিফিন সম্পর্কে সচেতন করাসহ জনগণের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো বলেও জানান আয়োজকরা।
‘ইকোলজি বান্ধব নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ’ শীর্ষক উপপ্রকল্পটি টিএমএসএস কর্তৃক বগুড়ার ৪টি উপজেলায় ১১ হাজার ৫০০ জন সবজি খামারি নিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ঢাকা/এনাম/বকুল