চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রোহিঙ্গাসহ অন্তত ১৬৭ জনকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন) ভারত। এ মুহূর্তে এমন আরও শতাধিক ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানা গেছে কূটনৈতিক সূত্রে।

দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে এমন তৎপরতায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পুশ ইনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক বার্তা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের কাছে সরকার এই বার্তা পৌঁছে দেবে।

ভারত থেকে কূটনৈতিক এবং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একাধিক স্থানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ৪ থেকে ৭ মে বাংলাদেশের পাঁচটি জেলা দিয়ে ভারত থেকে ১৬৭ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭৩ জনকে খাগড়াছড়ি, ৪৬ জনকে কুড়িগ্রাম, ২৩ জনকে সিলেট, ১৫ জনকে মৌলভীবাজার, ১০ জনকে চুয়াডাঙ্গায় পুশ ইন করা হয়েছে।

জানা গেছে, খাগড়াছড়ি ও কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে এক দিনেই অন্তত ১১০ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তাঁদের মধ্যে মাত্র আটজন নিজেদের বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিয়েছেন, বাকি সবাই রোহিঙ্গা ও ভারতের গুজরাটের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের একটি বিমান সংস্থার অনির্ধারিত ফ্লাইটে বিএসএফের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২০০ লোককে গুজরাট থেকে ত্রিপুরায় নেওয়া হয়। এঁদের একটি অংশকে সীমান্তের বিভিন্ন অংশ দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
ভারত থেকে একটি সূত্রে জানা গেছে, গুজরাট থেকে ত্রিপুরায় পৌঁছানো লোকজনের একাংশ এখনো আগরতলায় রয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী লোকজনের একটি তালিকা ভারত ঢাকার কাছে দিয়েছে বলে কূটনৈতিক একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে।

ভারত থেকে পুশ ইনের প্রেক্ষাপটে গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশি নাগরিক নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে তাঁদের বাংলাদেশে গ্রহণ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আর নাগরিকত্ব নিশ্চিত না হলে তাঁদের গ্রহণ করা হবে না বলে বৈঠকে মত আসে।

‘পুশ ব্যাক’ করা যাচ্ছে না

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে অতীতে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত থেকে এভাবে কয়েক দিনে এত পুশ ইনের নজির সাম্প্রতিক নেই। তা ছাড়া আগে পুশ ইন করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুশ ব্যাক (ফেরত পাঠানো) করা হতো; কিন্তু এবার এখনো পুশ ব্যাক করা হচ্ছে না।

স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দলই সীমান্ত এবং কুড়িগ্রামের রৌমারী ও ভূরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার অভিযোগে গত বুধবার ৬১ জনকে আটক করেছে বিজিবি। খাগড়াছড়িতে বুধবার ভোরে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক ৭৩ জনকে ফিরিয়ে দিতে (পুশ ব্যাক) পারেনি প্রশাসন। তবে সীমান্তে নতুন করে কাউকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দলই সীমান্ত দিয়ে গত বুধবার অনুপ্রবেশ করার অভিযোগে নারী, শিশুসহ ১৫ জনকে আটক করে বিজিবি। কমলগঞ্জের ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর গতকাল বিকেলে বলেন, এই ১৫ জন এখনো বিজিবি ক্যাম্পে রয়েছেন। তাঁদের সম্ভবত থানায় দেওয়া হবে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৩ নারী ও ৩ শিশু রয়েছে।  

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত কয়েক দিনের পুশ ইনের পদক্ষেপগুলো গভীর উদ্বেগের, যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করছে। পুশ ইনের ওই পদক্ষেপগুলো ১৯৭৫ সালের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি)-২০১১ এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে অতীতে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, ভারত থেকে এভাবে কয়েক দিনের পুশ ইনের নজির সাম্প্রতিক অতীতে নেই। তা ছাড়া পুশ ইন করলে সব সময় পুশ ব্যাক করা হতো। ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে লালমনিরহাট সীমান্তে দুই শর বেশি মানুষকে বাংলাদেশে পুশ ইন করার চেষ্টা করেছিল ভারত। কিন্তু ঢাকার অনমনীয় অবস্থানের কারণে সীমান্তের শূন্যরেখায় তাদের থাকতে হয়েছিল প্রায় দুই মাস। তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান এ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশোবন্ত সিনহার সঙ্গে আলোচনার জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। দিল্লির সঙ্গে আলোচনার ঠিক আগেই দেখা যায়, সীমান্তের শূন্যরেখায় প্রায় দুই মাস ধরে থাকা ওই লোকজন আর নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র ক টন ত ক প শ ইন র

এছাড়াও পড়ুন:

সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবির কাছে ১৪ জনকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ১৪ বাংলাদেশিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল শনিবার বিকেলে জেলার কুশখালী সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়। পরে রাত ৯টার দিকে তাঁদের সাতক্ষীরা সদর থানায় সোপর্দ করে বিজিবি।

সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবির প্রেস উইং কর্মকর্তা মিলন হোসেন বলেন, বিএসএফের হস্তান্তর করা ১৪ জনই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার নাগরিক। তাঁরা অবৈধভাবে ভারতে ছিলেন। আন্তর্জাতিক আইন মেনে তাঁদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আটক ব্যক্তিদের বাড়ি ঢাকা, সাতক্ষীরা, খুলনা, গাজীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায়। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তাঁদের কেউ ভারতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। আবার কেউ চিকিৎসা করাতে, কেউবা আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। আটক এক নারী বলেন, তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে ওই দেশের পুলিশের হাতে আটক হন। আরেক পুরুষ বলেন, চার বছর আগে তিনি কাজ করার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামিনুল হক বলেন, পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ১৪ বাংলাদেশিকে গ্রহণ করে বিজিবি এবং গতকাল রাত ৯টার দিকে তাঁদের থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাঁদের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার দুপুরের পর স্বজনদের কাছে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বড়লেখায় ১২ রোহিঙ্গাসহ ১৬ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ 
  • বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১২ রোহিঙ্গাসহ ১৬ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • পুশইনের হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৯ কিলোমিটার সীমান্ত
  • পতাকা বৈঠকের পর চার বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ
  • ভুল করে ভারতে ঢোকা বিজিবি সদস্যকে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ
  • সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৪ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করলো বিএসএফ
  • সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবির কাছে ১৪ জনকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ
  • পথ ভুলে ভারতে ঢোকা বিজিবি সদস্যকে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ
  • বিজিবি সদস্যের ভুল করে ভারতে চলে যাওয়ার খবর