কবি কাজী কাদের নেওয়াজ লিখেছেন, ‘‘মা কথাটি ছোট্ট অতি/কিন্তু জেনো ভাই/ইহার চেয়ে নামটি মধুর/তিন ভূবনে নাই’’— সত্যিই এই ছোট একটি শব্দ মায়া, মমতা, ভালোবাসা, আদর, আদিখ্যেতা, নির্ভরতা সবকিছুর প্রতীক। যদিও মাকে ভালোবাসার জন্য কোনো দিন লাগে না কিন্তু একটি বিশেষ দিন যদি থাকে তাহলেই বা মন্দ কি!
এই দিন মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জানান দিতে অনেকেই মাকে ফুল দেন, শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। মায়ের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে মায়ের ছোট ছোট প্রয়োজনগুলোর দিকে আজ মনোযোগ দেওয়া আর মাকে সময় দেওয়া।। আজ যারা মায়ের কাছে আছেন তারা মাকে একবার জড়িয়ে ধরে বলতে পারেন, তোমাকে ভালোবাসি। যারা দূরে আছেন তারা ফোনে কথা বলতে পারেন।
দিবসটির ইতিবৃত্ত:জানা যায় আধুনিক মা দিবসের প্রচলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এই দিবসটির প্রবক্তা আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তার মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী। যিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। আনার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য কাজ শুরু করেন মেয়ে। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবস প্রচলনের লক্ষ্যে সচেষ্ট হন তিনি।
আরো পড়ুন:
স্তন্যদানকারী মায়েরা সুস্থতার জন্য কী করবেন, কী করবেন না
গর্ভবতী মায়ের শারীরিক যত্নে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন ১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায়। ওই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। কিন্তু তাতে দমে যাননি আনা। তিনি তার সকল চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সফল হন আনা। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ অন্য অনেক দেশকে অনুপ্রাণিত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে দিবসটি ঘিরে বাণিজ্য শুরু হয়। এতে দিবসটির মূল চেতনা বেশ খানিকটা লঙ্ঘিত হয়। ফলে মর্মাহত হন আনা। দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের তীব্র বিরোধিতা করেন তিনি।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।