রাজশাহী নগরে শব্দদূষণ ক্রমেই এক নীরব সন্ত্রাসে রূপ নিচ্ছে। শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে (রেলগেট) গত চার বছরে শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিবেল থেকে ৯৭.২ ডেসিবেলে উত্তীর্ণ হওয়া এর ভয়াবহতার সুস্পষ্ট নিদর্শন। বাংলাদেশ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬-এর বিধানানুসারে, মিশ্র এলাকায় দিবাভাগে শব্দের অনুমোদিত সর্বোচ্চ সীমা ৬০ ডেসিবেল নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে এর দ্বিগুণাধিক মাত্রা পাওয়া যাচ্ছে। 

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ শব্দদূষণাক্রান্ত নগর। এ পরিস্থিতি কেবল মানবস্বাস্থ্যের জন্যই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশের সামগ্রিক ভারসাম্যের জন্যও এক গভীর সংকটের বিষয়।

শব্দদূষণের মূল কারণ হিসেবে যানবাহনের অপরিমিত হর্নবাজি, বিশেষত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তীক্ষ্ণ ভেঁপু হর্নের যথেচ্ছ ব্যবহারকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আইনানুগ সীমা লঙ্ঘন করেও এই যানগুলো নিরন্তর শব্দের তীব্রতা বাড়াচ্ছে। তার ওপর নগর-পরিকল্পনায় পরিবেশসম্মত অবকাঠামোর অভাব, বৃক্ষরোপণের অপ্রতুলতা এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রয়োগে কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্য সমস্যাকে ঘনীভূত করেছে।

বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, রাজশাহীর রেলগেটে শব্দের মাত্রা মানবীয় শ্রবণসীমার সহনীয় পরিসরকে ব্যাপকভাবে অতিক্রম করেছে।

এই সংকট নিরসনে প্রথমত, যানবাহনের হর্নবাজি কঠোর নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ভেঁপু হর্নের পরিবর্তে নিম্নশব্দযুক্ত হর্ন বাধ্যতামূলক করে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নগরের মিশ্র এলাকায় আম, জাম, নিম ও শজনেগাছের মতো ঘন পাতাবিশিষ্ট বৃক্ষরোপণ করতে হবে, যা শব্দদূষণ প্রশমনে প্রাকৃতিক হাতিয়ার হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তৃতীয়ত, শব্দ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বলবৎ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি, জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জারি করতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে।

শব্দদূষণ শুধু শ্রবণেন্দ্রিয়ের ক্ষতিসাধন করে না, এটি হৃদ্‌রোগ, মানসিক অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা প্রভৃতি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে। পশুপাখির প্রাকৃতিক আবাসস্থলও এর কারণে বিঘ্নিত হয়। রাজশাহীর ‘আমের শহর’ অভিধা রক্ষার্থে পরিবেশসম্মত নগরায়ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হবে শব্দের মাত্রা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রকাশ্য প্রতিবেদন প্রণয়ন এবং দূষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান করা।

রাজশাহীর নাগরিক জীবনে শান্তি ও সুস্থতা পুনরুদ্ধার করতে শব্দদূষণের এই বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটন করতে হবে। এটি শুধু সরকারি নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এর জন্য সামগ্রিক সামাজিক সচেতনতা, পরিবেশবান্ধব আচরণ ও নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার সমন্বয়ে এক যুগপৎ অভিযানের আবশ্যকতা রয়েছে। অন্যথায় এই নীরব সন্ত্রাস নগরের প্রাণশক্তিকে ক্রমেই নিষ্পেষিত ও বিপর্যস্ত করে তুলবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘের সম্মেলন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বড় সুযোগ সৃষ্টি করবে, আশা নিরাপত্তা উপদেষ্টার

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন জাতিসংঘের উদ্যোগে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে কক্সবাজারের অনুষ্ঠেয় সম্মেলনটি জাতিসংঘের একটি বৃহত্তর সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশবিশেষ। এই সম্মেলন রোহিঙ্গাদের জন্য এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এ সমস্যার একটি স্থায়ী ও প্রকৃত সমাধান খুঁজে বের করার পথনির্দেশিকা দেওয়ার একটি বড় সুযোগ।

২৫ আগস্ট কক্সবাজারে ‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য প্রাপ্ত বার্তা’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে ঢাকায় থাকা কূটনীতিকদের এ বিষয়ে আজ রোববার সকালে ব্রিফ করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরে কক্সবাজারের সম্মেলনে যোগ দিয়ে সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ব্রিফিংয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাস্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দেশ এবং জোট মিলিয়ে ৫০টি মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কূটনীতিকদের ব্রিফিং শেষে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, একসময় রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক আলোচনার এজেন্ডা থেকে প্রায় বাদ পড়ে যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনের জন্য সব সদস্যরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই আহ্বানে তাৎক্ষণিকভাবে ও সর্বসম্মতিক্রমে সাড়া পাওয়া যায় এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এই সম্মেলন আহ্বানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্বের ১০৬টি দেশ এই সম্মেলনকে স্পন্সর করেছে। এখন যথেষ্ট পরিমাণ আন্তর্জাতিক সমর্থন রয়েছে।

খলিলুর রহমান আরও বলেন, সম্মেলনটি রোহিঙ্গাদের জন্য এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এই সমস্যার একটি স্থায়ী ও প্রকৃত সমাধান খুঁজে বের করার পথনির্দেশিকা দেওয়ার একটি বড় সুযোগ। এই কারণে রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর, তাদের কথা, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের স্বপ্নগুলোকে সে সম্মেলনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা চলছে।

খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোই এ ধরনের সম্মেলনে অংশ নেয়। রোহিঙ্গারা তো আর সদস্য নয়। কিন্তু কাউকে তো তাদের ভয়েসটা নিয়ে যেতে হবে। আমরা এ ধরনের প্রক্রিয়ায় সে কাজটা করছি। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি।’

ব্রিফিংয়ে অংশ নেওয়া এক রাষ্ট্রদূত জানান, কক্সবাজার সম্মেলনের শিডিউল দেওয়া হয়েছে। এতে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ