নীরব সন্ত্রাস থেকে শহরটিকে রক্ষা করুন
Published: 12th, May 2025 GMT
রাজশাহী নগরে শব্দদূষণ ক্রমেই এক নীরব সন্ত্রাসে রূপ নিচ্ছে। শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে (রেলগেট) গত চার বছরে শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিবেল থেকে ৯৭.২ ডেসিবেলে উত্তীর্ণ হওয়া এর ভয়াবহতার সুস্পষ্ট নিদর্শন। বাংলাদেশ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬-এর বিধানানুসারে, মিশ্র এলাকায় দিবাভাগে শব্দের অনুমোদিত সর্বোচ্চ সীমা ৬০ ডেসিবেল নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে এর দ্বিগুণাধিক মাত্রা পাওয়া যাচ্ছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ শব্দদূষণাক্রান্ত নগর। এ পরিস্থিতি কেবল মানবস্বাস্থ্যের জন্যই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশের সামগ্রিক ভারসাম্যের জন্যও এক গভীর সংকটের বিষয়।
শব্দদূষণের মূল কারণ হিসেবে যানবাহনের অপরিমিত হর্নবাজি, বিশেষত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তীক্ষ্ণ ভেঁপু হর্নের যথেচ্ছ ব্যবহারকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আইনানুগ সীমা লঙ্ঘন করেও এই যানগুলো নিরন্তর শব্দের তীব্রতা বাড়াচ্ছে। তার ওপর নগর-পরিকল্পনায় পরিবেশসম্মত অবকাঠামোর অভাব, বৃক্ষরোপণের অপ্রতুলতা এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রয়োগে কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্য সমস্যাকে ঘনীভূত করেছে।
বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, রাজশাহীর রেলগেটে শব্দের মাত্রা মানবীয় শ্রবণসীমার সহনীয় পরিসরকে ব্যাপকভাবে অতিক্রম করেছে।
এই সংকট নিরসনে প্রথমত, যানবাহনের হর্নবাজি কঠোর নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ভেঁপু হর্নের পরিবর্তে নিম্নশব্দযুক্ত হর্ন বাধ্যতামূলক করে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নগরের মিশ্র এলাকায় আম, জাম, নিম ও শজনেগাছের মতো ঘন পাতাবিশিষ্ট বৃক্ষরোপণ করতে হবে, যা শব্দদূষণ প্রশমনে প্রাকৃতিক হাতিয়ার হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তৃতীয়ত, শব্দ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বলবৎ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি, জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জারি করতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে।
শব্দদূষণ শুধু শ্রবণেন্দ্রিয়ের ক্ষতিসাধন করে না, এটি হৃদ্রোগ, মানসিক অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা প্রভৃতি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে। পশুপাখির প্রাকৃতিক আবাসস্থলও এর কারণে বিঘ্নিত হয়। রাজশাহীর ‘আমের শহর’ অভিধা রক্ষার্থে পরিবেশসম্মত নগরায়ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হবে শব্দের মাত্রা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রকাশ্য প্রতিবেদন প্রণয়ন এবং দূষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান করা।
রাজশাহীর নাগরিক জীবনে শান্তি ও সুস্থতা পুনরুদ্ধার করতে শব্দদূষণের এই বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটন করতে হবে। এটি শুধু সরকারি নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এর জন্য সামগ্রিক সামাজিক সচেতনতা, পরিবেশবান্ধব আচরণ ও নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার সমন্বয়ে এক যুগপৎ অভিযানের আবশ্যকতা রয়েছে। অন্যথায় এই নীরব সন্ত্রাস নগরের প্রাণশক্তিকে ক্রমেই নিষ্পেষিত ও বিপর্যস্ত করে তুলবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রত্যেক জেলায় হাসপাতালের মত সিনেমা হলও দরকার: জাহিদ হাসান
‘প্রত্যেকটা জেলায় শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যেমন হাসপাতাল আছে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সিনেমা হল থাকা দরকার। সুস্থ বিনোদন থাকলে মানুষ নেশা, হানাহানি ও মব জাস্টিস থেকে দূরে থাকবে। আমাদের যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান দরকার তেমনি বিনোদনের জন্য সিনেমা হল দরকার।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘উৎসব’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী শেষে কথাগুলো বলছিলেন নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসান।
‘উৎসব’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। শুটিংয়ের বহুদিন পেরিয়ে গেলেও জাহাঙ্গীর চরিত্রের মধ্যে থেকে এখনো বের হতে পারেননি বলেন জানালেন এই অভিনেতা।
জাহিদ হাসান বলেন, ‘এখনো আমি এই চরিত্রটার মধ্যে ডুবে আছি। সিনেমার আমার চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে জাহাঙ্গীর লুকিয়ে আছে। কারণ, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের মাঝে হিরোইজম আছে, ভিলেন আছে। আছে উপলব্ধি করার ক্ষমতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সেই রিয়েলাইজেশনের সময়টা আছে। কখন মৃত্যু হয় আমরা জানি না। এই রিয়েলাইজ যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে আজ আমরা যারা জাহাঙ্গীরের মত আছি, কাল আমরা ভালো হয়ে যাবো।’
ঈদের সিনেমা মানেই এখন যেন অ্যাকশন অথবা থ্রিলার। গত কয়েক বছরে ঈদে বাজিমাত করা সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে এমনটাই মনে হতে পারে। সেসব থেকে বেরিয়ে হাস্যরস পরিবার এবং সম্পর্কের গল্পে এবার ঈদে বাজিমাত করেছে ‘উৎসব’। এই সফলতার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন প্রত্যেক শিল্পীর সততাকে।
জাহিদ হাসানের কথায়, ‘প্রডাক্টশন বয় থেকে শুরু করে এই সিনেমার সঙ্গে আমরা যারা যুক্ত ছিলাম তারা প্রত্যেকেই অনেক সৎ ছিলাম। অভিনয় নিয়ে কোনো অসৎ অবস্থার মধ্যে আমরা যাইনি। এটাই মনে হয় আমাদের সফলতার বড় বিষয়। এই সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্যের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে।’
করোনা মহামারির পর অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায়নি জাহিদ হাসানকে। নির্মাতাদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি তার। কারোনার পর ‘উৎসব’-ই তার প্রথম সিনেমা।
তার ভাষ্য, ‘করোনার পর খুব একটা অভিনয় করা হয়নি। আমাকে অভিনয়ে নেওয়া বা না নেওয়াটা নির্মাতাদের দায়িত্ব। বলতে গেলে গত কয়েকবছর সেভাবে সুযোগও আসেনি। ‘উৎসব’ সিনেমার মধ্যে সেই সুযোগটা এলো। অভিনয় করলাম। দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝেছি অনন্ত ফেল করিনি।’
সিনেমার হলের সংখ্যা কম হওয়ায় দেশের সিনেমা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন জাহিদ হাসান। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসকদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। আমার বোন ফোন করে বললেন এখানে তো সিনেমা হলে নেই। তাই আমরা সিনেমা দেখতে পারছি না। এই কথা শুনে কষ্ট পেয়েছি। এটা সত্য সিরাজগঞ্জের মত দেশের অনেক বড় শহরে সিনেমা হল নেই। জেলা প্রশাসকসহ দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা আছে তাদের সবাইকে অনুরোধ করবো তারা যেন প্রত্যেকটি জেলায় সিনেমা হলের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তার বাস্তবায়ন করেন।’