একাত্তরে যারা জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল তারা অবস্থান ব্যাখ্যা করবে, আশা এনসিপির
Published: 12th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে সাম্প্রতিক আন্দোলনে দেওয়া কিছু স্লোগান এবং জাতীয় সংগীত থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টার ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে। এর জবাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, তাদের কোনো সদস্য এই জনপদের মানুষের সংগ্রাম ও ইতিহাসবিরোধী কোনো স্লোগান দেননি।
আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে এনসিপি। একই সঙ্গে দলটি আশা করে, যারা ১৯৭১ সালে এই জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তারা জাতির সমানে তাদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করবে।
‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্কে এনসিপির অবস্থান’ শিরোনামে দলের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করার দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-মত-পক্ষ এবং সাধারণ ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করলেও একটি পক্ষ সচেতনভাবে দলীয় স্লোগান এবং বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রামবিরোধী স্লোগান দিয়েছে, যা জুলাই–পরবর্তী সময়ে সাম্প্রতিক আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য নবায়নের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।
এনসিপি বলেছে, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, এনসিপির কোনো সদস্য সাম্প্রতিক আন্দোলনে দলীয় স্লোগান কিংবা এই জনপদের মানুষের সংগ্রাম ও ইতিহাসবিরোধী কোনো স্লোগান দেয়নি। ফলে যেসব আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই বহন করতে হবে। এনসিপিকে এর সঙ্গে জড়ানো সম্পূর্ণ অহেতুক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বরং এনসিপি সদস্যদের বক্তৃতা ও স্লোগানে এই জনপদের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায়গুলো তথা ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের প্রতিফলন ছিল। আমরা আরও লক্ষ করেছি, আন্দোলনকারীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সময় একটি পক্ষ আপত্তি জানালেও তাঁরা দৃঢ়তার সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।
বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায় তথা ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের যথাযথ স্বীকৃতি এবং মর্যাদা বাংলাদেশে রাজনীতি করার পূর্বশর্ত বলে এনসিপি মনে করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যারা ১৯৭১ সালে এই জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, আমরা চাই তারা নিজেদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান জাতির সামনে ব্যাখ্যা করে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করবে এবং চব্বিশের অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে সহযোগী হবে।
এনসিপি বলেছে, বিগত ফ্যাসিবাদী জমানায় নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষে চব্বিশের অভ্যুত্থানে যারা ভূমিকা পালন করেছেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের আবশ্যিকভাবে ‘বাংলাদেশপন্থী’ ভূমিকা পালন করে যেতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এনসিপি মনে করে, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যকার বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুজিববাদকে সামগ্রিকভাবে পরাস্ত করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের জনগণের সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য সব পক্ষকে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছে এনসিপি।
আরও পড়ুনআওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর শাহবাগে উল্লাস১০ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক এনস প র অবস থ ন সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্র মানে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক চালানো নয়: ফরহাদ মজহার
গণ-অভ্যুত্থানের পর পতিত সরকারের সংবিধান ও আমলাতন্ত্র রেখে দেওয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। বর্তমান সরকারের বৈধতা নিশ্চিত না করে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং নির্বাচন আয়োজনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র মানে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক চালানো নয়।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার এ কথা বলেন।
ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে মুক্ত না হলে নির্বাচন নিয়ে কথা বলার কোনো অর্থ নেই বলে মনে করেন এই চিন্তক। উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি তো গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছেন, আপনি গণ-অভ্যুত্থানের কেউ নন। আমি আবারও বলছি এখানে ভুল বোঝার কোনো অপশন নেই। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের কেউ নন। এখানে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা অনেকে সরাসরি গণ-অভ্যুত্থানে রাস্তায় ছিলেন, বুক পেতে দিয়েছেন। আমরা বছরের পর নির্যাতিত হয়েছি। আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি।’
এরপরও অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে গ্রহণ করা হয়েছে এবং কোনো বিরোধিতা করছেন না উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘কিন্তু তিনি (ইউনূস) গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বোঝেননি। এখন তিনি যে জায়গায় গিয়েছেন, এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাঁর প্রথম ভুল তিনি এসেই তরুণ শিক্ষার্থীদের মাস্টারমাইন্ড বলে পরিচয় করিয়েছেন। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের সত্তা হচ্ছে জনগণ, কোনো ব্যক্তি নয়। সবাই মিলে এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে।’
সফল নির্বাচন আয়োজন নিয়ে শঙ্কাএই চিন্তক বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর প্রথম কাজ হওয়া দরকার ছিল ফ্যাসিস্ট সরকার এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উৎখাত করা। তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থানে অনেকে শহীদ হয়েছেন এবং অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রতি তাঁর প্রশ্ন, ‘এত বড় আত্মত্যাগের পরে আপনি কিসের ভিত্তিতে নির্বাচনের কথা শুরু করলেন?’
নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সফল নির্বাচনের কোনো লক্ষণ দেখছি না। আপনি কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন দিচ্ছেন? দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ফেলে দেবেন না। আপনার যে জনপ্রিয়তার হ্রাস হয়েছে, এটা আমাদের জন্য বিপজ্জনক। আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’
এই চিন্তক বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল বলে কিছু নেই। রাজনৈতিক দল মানে যারা জনগণের সেবা করে, জাতিকে যারা পথ দেখায়, নতুন কথা বলে। এখানে যেটা আছে, সেটা লুটেরা শ্রেণি, দুর্নীতিবাজ। তাদের সঙ্গে আপনি কথা বলেছেন, জনগণের সঙ্গে কথা বলতে বলেননি।’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল বলে কিছু নেই। রাজনৈতিক দল মানে যারা জনগণের সেবা করে, জাতিকে যারা পথ দেখায়, নতুন কথা বলে। এখানে যেটা আছে, সেটা লুটেরা শ্রেণি, দুর্নীতিবাজফরহাদ মজহার, কবি ও চিন্তকশেখ হাসিনার সংবিধান রেখে সে সংবিধানের অধীনে শপথ নেওয়ার সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনি একটা অবৈধ সরকার। তবে অবৈধ সরকার বলার মানে এই না যে আপনাকে আমরা চাই না। এর মানে হচ্ছে, আপনার প্রথম কাজ নিজের বৈধতা নিশ্চিত করা।’
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করেছি আপনার যেন মতি হয়। আপনি যেন রাজনীতি কাকে বলে, এটা বোঝেন; আইন কাকে বলে, বোঝেন। কারণ, রাষ্ট্র মানে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক চালানো না।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, জনগণ কী চায়, নতুন গঠনতন্ত্র চায় কি না। কিন্তু জনগণকে বঞ্চিত করে মাফিয়া শ্রেণির সঙ্গে কথা বলছেন। বিদেশ থেকে লোক এনে বসানো হয়েছে, যাঁরা বিদেশে কাজ করেছেন করপোরেট স্বার্থ রক্ষার জন্য।
তরুণেরা মন্ত্রণালয় চালাতে পারেনিএই চিন্তক বলেন, কিছু তরুণ ছাত্রদের মন্ত্রণালয়ে নিয়েছেন, এ জন্য অভিনন্দন। কিন্তু মন্ত্রণালয় তারা চালাতে পারেনি। তরুণেরা দেশ চালাবে, এটাই তো স্বপ্ন। কিন্তু তরুণদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করা হয়েছে। কারণ, শেখ হাসিনার আমলাতন্ত্র রয়ে গেছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে দলের নাম পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার জানান, জামায়াতের অনেক ইতিবাচক ভূমিকা আছে। কিন্তু এই এক কালো দাগের জন্য আগামী দিনে যে সম্ভাবনা, নতুনভাবে ইসলামের যে পুনর্জাগরণ, তার সর্বনাশ হয়ে যাবে।
সভায় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ডাকসুর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) মতো নির্বাচনে উপদেষ্টাদের যুক্ত হতে হয়। যখন ৩০০ আসনে নির্বাচনে হবে, তখন কী হবে?
কল রেকর্ড ফাঁসের ভয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ফোনে কথা না বলে সরাসরি দেখা করে কথা বলেন—এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি কী এমন কথা বলেন। এখানে সন্দেহ করার মতো বিষয় আছে।
সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক সচিব ও কূটনীতিক আবদুল্লাহ আল মামুন, আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাক, জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার প্রমুখ।