Samakal:
2025-11-17@12:35:26 GMT

দারুণ সুগন্ধি

Published: 13th, May 2025 GMT

দারুণ সুগন্ধি

আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রসাধনী একটি অপরিহার্য উপাদান। অন্যান্য প্রসাধনীর মধ্যে সুগন্ধি আমাদের লাইফস্টাইলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সভ্যতার মানুষ হরেক রকমের সুগন্ধি ব্যবহার করে আসছে। সুগন্ধি কেবল সুঘ্রাণ নয়, এটি আপনার দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা এবং আবেগকে প্রভাবিত করতে পারে। সুগন্ধি ব্যবহারের পেছনে লুকিয়ে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি, ব্যক্তিত্ব প্রকাশের সূক্ষ্ম শিল্প এবং মানসিক অবস্থার প্রতিফলন।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এবং মেসোপটেমীয় সংস্কৃতির সময়ে উদ্ভিদ থেকে পাওয়া তেল আনুষ্ঠানিকভাবে এবং প্রসাধনীর কাজে ব্যবহার করা হতো এবং তখনকার মানুষ সুগন্ধির সংবেদনশীল ও থেরাপিউটিক গুণের প্রশংসা করত।
সুগন্ধি ব্যবহারের মানসিক উপকারিতা
মেজাজ ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়: প্রিয় সুগন্ধিটি আপনার মনোবল বাড়াতে পরোক্ষভাবে কাজ করে। এটি একটি অদৃশ্য বর্মের মতো, যা আপনার মনে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করতে সাহায্য করে।
শক্তিশালী স্মৃতি জাগিয়ে তোলে: সুগন্ধি আপনার রোজকার দিনগুলোর একটি ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। এটি মুহূর্তের মধ্যে কোনো স্মৃতি বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কথা মনে করিয়ে দিতে পারে।
আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ ঘটায়: আপনার নির্বাচিত সুগন্ধি ব্যক্তিগত পরিচয় হিসেবে কাজ করে। এটি আপনার স্টাইল ও পছন্দের কথা বলে এবং আপনাকে ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে ফুটিয়ে তোলে।
মেজাজ উন্নত করে: সুগন্ধি আপনার মেজাজকে প্রভাবিত করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি বিভিন্ন ধরনের আবেগ ও স্মৃতি বহন করে। যেমন স্থিতিশীলতা, সুখ অথবা প্রিয় স্মৃতির আবেশ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ল্যাভেন্ডারের সুগন্ধ তাদের শান্ত প্রভাবের জন্য পরিচিত। অন্যদিকে সাইট্রাসের সুগন্ধ আপনার আত্মাকেও উজ্জীবিত  করতে পারে। পছন্দের একটি সুগন্ধি মেজাজকে সামঞ্জস্য রেখে আপনার আত্মিক প্রশান্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারে।
কখন সুগন্ধি ব্যবহার করবেন
গোসলের ঠিক পরই সুগন্ধি লাগানোর সবচেয়ে ভালো সময়। কারণ তখন শরীর শুধু ঘাম ও ময়লা থেকে মুক্ত নয়, বরং উষ্ণও থাকে, যা ময়েশ্চারাইজার ও সুগন্ধি শোষণের জন্য আদর্শ। সুগন্ধি ব্যবহারের আগে কোনো গন্ধহীন বডিলোশন বা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। অতঃপর সুগন্ধি লাগালে তা দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হবে। তাই পোশাক পরার আগেই সুগন্ধি লাগিয়ে ফেলুন।
কোথায় সুগন্ধি লাগাবেন
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের ‘পালস পয়েন্ট’ অর্থাৎ যেখানে রক্তনালি ত্বকের পৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকে ও অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হয় সেখানে সুগন্ধি ব্যবহার করাই উত্তম। পালস পয়েন্টগুলো হলো– কব্জি, কনুইয়ের ভাঁজ, হাঁটুর ভাঁজ, ঘাড় এবং কানের পেছন। এসব অঞ্চলে সুগন্ধি লাগালে তা সারাদিন সুবাস ছড়ায়।
কোনো কোনো রূপ বিশেষজ্ঞের মতে, চুলেও সামান্য সুগন্ধি স্প্রে করলে ভালো গন্ধ ছড়ায়। তবে গহনা পরলে ঘাড়ে নয়, কানের পেছনে সুগন্ধি স্প্রে করা ভালো। এতে গহনা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক গন্ধ বজায় রাখতে পিঠেও সুগন্ধি ব্যবহার করা যেতে পারে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
ত্বক থেকে পাঁচ-সাত ইঞ্চি দূরত্ব রেখে সুগন্ধি স্প্রে করুন। চুলে সুগন্ধি দিতে চাইলে চিরুনিতে সামান্য স্প্রে করে নিন এবং চুল আঁচড়ান। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে থাকা অ্যালকোহল চুলের ক্ষতি করতে পারে। প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর সুগন্ধি ব্যবহার করুন।
দীর্ঘস্থায়ী সুবাসের জন্য উচ্চ ঘনত্বের সুগন্ধি নির্বাচন করুন। সাধারণত উচ্চ ঘনত্বের সুগন্ধির সুবাস তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। পাশাপাশি নির্বাচিত সুগন্ধির উপাদানে কোনো অ্যালার্জি আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন এবং প্রয়োজনে তা এড়িয়ে চলুন।
একটি সুগন্ধি কেবল একটি সৌন্দর্য পণ্য নয়, বরং এটি আপনার ব্যক্তিত্বেরও প্রকাশ। সামান্য প্রয়োগের শক্তিকে অবমূল্যায়ন করবেন না। কারণ এটি কেবল একটি সুগন্ধি নয়, এটি আপনার সৌন্দর্যের অনন্য প্রকাশ। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ