আসন্ন জাতীয় বাজেটের মূল লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘কৃষি-শিল্প-পাট-সুন্দরবন ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায়’ পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে কৃষি-শিল্প-পাট ও পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক কমিটি। 

বুধবার (১৪ মে) সকাল ১১টার দিকে খুলনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুতপা বেদজ্ঞ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে কৃষিখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং টেকসই কৃষির উন্নয়নের লক্ষ্যে বাজেটে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। 

আরো পড়ুন:

করমজলে বাটাগুর বাসকা কচ্ছপের ৬৫ বাচ্চার জন্ম

সুন্দরবন থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ‘শিল্প বা প্রকল্প নয়’

কৃষিখাতে নিম্নলিখিত দাবি ও প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে-
১.

কমিউনিটি সিড ব্যাংক স্থাপন ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা। 

২. নতুন চাহিদা নিরুপনের ভিত্তিতে বীজ উৎপাদন খামার ও ফসল সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা। 

৩. কৃষি পণ্যের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তর, যন্ত্রপাতি আমদানি ও কৃষিপণ্যের ওপর শুল্ক রেয়াতের জন্য বাজেটে নির্দেশনা থাকা। 

৪. জাতীয় বাজেটে কৃষকদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, কৃষি ভর্তুকি বজায় রাখতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা। 

৫. সহজ শর্তে এবং কম সুদে কৃষি ঋণ প্রদান করা, যাতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা তাদের চাষাবাদের খরচ বহন করতে পারে। 

৬. রাসায়নিক সার ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং সেগুলোর দাম কৃষকের নাগালের মধ্যে রাখা। 

৭. খাল খনন করে কৃষির জন্য পানির রিজারভেশন বা সংরক্ষণার তৈরি। জমিতে সেচের সুবিধা বাড়ানো এবং জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। নদী-খাল ইজারা বন্ধ করে কৃষির জন্য উন্মুক্ত রাখা। 

৮. বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। শষ্য বীমা চালু করা। 

৯. জমির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য জৈব পদার্থের ব্যবহার বৃদ্ধি, জমিতে সুষম সার ব্যবহার, শস্য পর্যায় নির্ধারণ করে সাথী ফসল চাষ, লাঙল ও চাষাবাদের সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার, পানি ব্যবস্থাপনার উন্নতি, আগাছা ও কীট পতঙ্গের সমন্বিত দমন, মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ভূমি ক্ষয়রোধ বিবেচনায় নিয়ে জমির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা। 

১০. কৃষিজমি ও জলাভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার না হওয়ায়, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ শিল্পায়নের নামে কৃষিজমি ধ্বংস করা হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক জমির জোনিংয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কৃষকের জমির মালিকানা নিশ্চিতকরণে খোদ কৃষকের হাতে জমি ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ থাকতে হবে এবং ভূমি মালিকানার সীমা নির্ধারণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন করা।  

সংবাদ সম্মেলনে বন্ধ কল-কারখানাগুলো চালুর দাবি জানিয়ে বলা হয়- ২০২০ সালের ২ জুলাই সরকার একসঙ্গে খুলনার ৯টিসহ সারা দেশের ২৬টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে। সরকার মিল বন্ধের দুই মাসের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও অদ্যবধি অনেক শ্রমিক তাদের বকেয়া পাওনা পায়নি। অন্যদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকার পরেও বিজেএমসি ও মিলের ২৫১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সবেতনে বহাল তবিয়তে আছেন। সরকার তাদের জন্য বছরে বেতন বাবদ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা দিচ্ছে। 

বন্ধকৃত মিলসমূহ চীনা বিনিয়োগের জন্য চালুর ব্যাপারে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিচ্ছে। মন্ত্রণালয়, বিডা ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য হচ্ছে- রাষ্ট্রায়ত্ত পাট শিল্পকে আধুনিকায়ন করে, দুর্নীতিমুক্তভাবে এবং ব্যবস্থাপনার গুণগতমান উন্নত করে চালু করতে পারলে, এই পাট শিল্প লাভজনক করা সম্ভব। ব্যাপক কর্মসংস্থান, পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন করাও সম্ভব। 

এক্ষেত্রে প্রস্তাবনা হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলসমূহ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আধুনিকায়ন ও দুর্নীতিমুক্ত করে ক্রমান্বয়ে চালুর উদ্যোগ নিতে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। ৎখুলনার খালিশপুর জুট মিল ও দৌলতপুর জুট মিল, সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিল এবং চট্টগ্রামের কেএফডি ও আর আর জুটমিলের শ্রমিকরা এখনো বকেয়া কোনো টাকা পায়নি। বকেয়া পরিশোধের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।

বর্তমান বাজেট প্রস্তাবনায় নিউজপ্রিন্টের জায়গায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের তত্ত্বাবধানে একটি ফার্মাসিটিক্যাল কাঁচামাল উৎপাদন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩৩৮২ কোটি টাকা। প্রস্তাবনা হচ্ছে- এই কারখানা খুলনাতে হোক, একইসঙ্গে নিউজপ্রিন্ট মিল ও হার্ডবোর্ড মিল চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদান। 

সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন সুরক্ষায় প্রস্তাবনা ও দাবি তুলে ধরে বলা হয়- সুন্দরবন এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে যে সব শিল্প আছে সেগুলো সরিয়ে নিতে হবে এবং নতুন শিল্প স্থাপনে যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা কার্যকর করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় বাজেটের দিক নির্দেশনায় এটা থাকা দরকার। সুন্দরবন ইকোট্যুরিজম মাস্টার প্লানে (২০২৫-২০৪৫) পরিবেশবান্ধব পর্যটনের কথা বলা হয়েছে, সেজন্য বনবিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের দায়বদ্ধতার মধ্যে আনতে হবে। 

এছাড়াও আসছে বাজেটে নদী-খাল পুনঃখনন এবং নদীতীর সংরক্ষণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, জলাবদ্ধতা হ্রাস, কৃষি উন্নয়ন এবং পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। 

খুলনা অঞ্চলে নদী-খাল পুনঃখনন ও নদীতীর সংরক্ষণে ৫টি প্রকল্পের বাইরে বিদ্যমান পুকুর ও দীঘি সংরক্ষণে স্থানীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে এবং উক্ত সংরক্ষণ কার্যক্রমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করণ এবং সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমে স্থানীয় জাতের গাছকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং স্থানীয় ভূ-প্রকৃতির  সাথে উপযোগী প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানানো হয়। 

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দরবন প টকল র জন য ব জ ট বর দ দ র খ স ন দরবন র জন য প প রস ত ব ব যবহ র ব যবস থ প রকল প পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

গুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে চোখ বেঁধে আনা হয়েছে, জানালেন ভুক্তভোগীরা

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ফেলে যাওয়া ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের অনেকে অসুস্থ, কারও কারও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে। একজনের হাত ভাঙা। বেশির ভাগই কয়েক দিন না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাঁদের সবাইকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার দোতলার একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। কয়েকজন জানিয়েছেন, ১৫ দিন পর এই প্রথম থানায় এসে ভাত খেতে পেরেছেন তাঁরা।

পুলিশ জানিয়েছে, বিএসএফ যে ৭৮ জনকে ফেলে রেখে গেছে, তাঁদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি এবং ৩ জন ভারতীয় নাগরিক। গত শুক্রবার তাঁদের শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে রেখে যায় বিএসএফ। এরপর বন বিভাগ তাঁদেরকে উদ্ধারের পর শনিবার রাত ১১টার দিকে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ক্যাম্প থেকে তাঁকে জানানো হয়েছিল, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা কয়েক দিন না খেয়ে থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাত ভেঙে গেছে, আরও কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় খাবার, স্যালাইন ও পানি নিয়ে তিনি সেখানে পৌঁছান।

শ্যামনগর থানার দোতলায় ৭৮ জনকে একসঙ্গে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নড়াইল জেলার ৬৩ জন, বাকি ৮ জনের বাড়ি সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল ও ঢাকা জেলায়। তিনজন ভারতীয় নাগরিকের বাড়ি ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে।

গত শুক্রবার ভোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী দেশটিতে অবৈধভাবে থাকা ৭৮ বাংলাদেশিকে কয়েকটি স্পিডবোটে করে এনে সুন্দরবনের গহিনে মান্দারবাড়িয়া এলাকায় নামিয়ে দিয়ে যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোলায় ক্ষোভ উপেক্ষা করে এলপিজি সিলিন্ডার বিতরণকাজের উদ্বোধন
  • মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৪ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • পুশইন করা ৭৫ বাংলাদেশিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর
  • সুন্দরবনে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৩ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর
  • সাতক্ষীরায় সুন্দরবনের চরে রেখে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই অসুস্থ, ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি
  • সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা
  • সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি
  • গুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে চোখ বেঁধে আনা হয়েছে, জানালেন ভুক্তভোগীরা
  • ভারতের রেখে যাওয়া ৭৮ জন শ্যামনগর থানায়, আজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর