জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নারীর নির্বাচনী তরিকা নিয়ে তিনটি কমিশন মোটামুটি কাছাকাছি পরামর্শ দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত নিম্নকক্ষে ৩০০ আসনের স্থলে ৪০০ আসন করে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছে।

প্রতি চার আসনের একটি ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে। সেই আসনে শুধু নারীই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে প্রতি তিনটি আসনের একটি ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অবশ্য জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের জন্য ৬০০ সদস্য নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে; প্রতিটি আসনে ভোটাররা একজন নারী ও একজন পুরুষকে নির্বাচিত করবেন। তাতে জাতীয় সংসদে নারী ও পুরুষ সমমর্যাদায় নির্বাচিত হবেন। উদাহরণ হিসেবে উপজেলা পরিষদে একই নির্বাচনী এলাকা থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। 

ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ভারতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে আসছে। এই পদ্ধতির ভালো দিক হচ্ছে, একজন নারীকে সাধারণ আসনের কমপক্ষে তিন গুণ বিদ্যমান সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনী ধকল সামলাতে হবে না। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের অভিমত, তিনটি সাধারণ আসনের নির্বাচিত সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত সদস্যের অধিক্ষেত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় গত ২৭ বছর ধরে ব্যবস্থাটি নারীর ক্ষমতায়নে কাঙ্ক্ষিত সুফল আনতে পারেনি। প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে সেটা সম্ভব হবে। 

মন্দ দিক হচ্ছে, সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একজন নারীকে প্রতি তৃতীয় নির্বাচনের জন্য এবং জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রে প্রতি চতুর্থ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যোগ্যতা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও একেকটি নির্বাচনী এলাকার পুরুষ প্রার্থীদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিন মেয়াদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার মেয়াদ অন্তর নিষ্ক্রিয় থাকতে হবে। 

ভারতে সংরক্ষিত নারী আসন কোনো কোনো সময়ে তপশিলি নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকায় অ-তপশিলি নারীকেও নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে হয়। কোনো সর্বজনীন নির্বাচনে লিঙ্গ বা ধর্মের কারণে কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখা হলে তা প্রকৃত গণতন্ত্র হতে পারে না। ভারতে প্রচলিত বলেই ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে আসন সংরক্ষণকে ভালো সমাধান মনে করার কারণ নেই। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের তুলনায় বরং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অধিকতর গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব করেছে। 

সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ধারণা আমাদের দেশে আসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে। এই আইনে বঙ্গীয় আইন পরিষদের মোট ২৫০টি আসনের মধ্যে ১১৭টি আসন মুসলমানদের জন্য এবং অবশিষ্ট আসনগুলোর ২০ শতাংশ তপশিলি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ করে। তদনুসারে ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৭ ও ১৯৪৬ সালের এবং পূর্ব বাংলায় ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থা রহিত করা হয়। নতুন করে সংরক্ষিত আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হলে এই ব্যবস্থার দাবি নানাভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে। 

নারী আসন সংরক্ষণে আমরা পুরোনো প্রেসক্রিপশন অনুসরণ না করে নতুন কিছু ভাবতে পারি। বিশেষত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ইউনিয়ন পরিষদে ৯টি নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের পরিবর্তে ৯ থেকে ৩৯টি পর্যন্ত ৩ গুণিতক সংখ্যক ওয়ার্ড গঠনের প্রস্তাব করেছে। প্রতি ওয়ার্ডে একজন সদস্য নির্বাচনের পরিবর্তে এক ওয়ার্ড থেকে তিনজনকে নির্বাচিত করে সমস্যার সমাধান খোঁজা যেতে পারে। গত বছরের ২৫ নভেম্বর সমকালে ‘‌স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে করণীয়‌’ শীর্ষক নিবন্ধে সমাধানের রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল। 

প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিটি আসনে তিনজন প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষ যে প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, তিনি ‘সোনালি সদস্য’ নামে বিবেচিত হবেন। অবশিষ্ট পুরুষ প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত পুরুষ ও নারী প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত নারী ‘রুপালি সদস্য’ হিসেবে নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনজন প্রার্থী নির্বাচিত হবেন এবং কোনোক্রমেই সবাই নারী বা পুরুষ হবেন না। কমপক্ষে একজন নারী বা একজন পুরুষ প্রতিনিধিত্ব করবেন। এর ফলে স্থানীয় সরকারে ৩ গুণিতক সংখ্যক ওয়ার্ড নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। তবে যত সংখ্যক ওয়ার্ডই হোক না কেন, তার ৩ গুণিতক সংখ্যক সদস্য নির্বাচিত হবেন। 

উল্লিখিত তিনটি সংস্কার কমিশনই মন্ত্রিপরিষদ শাসিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচিত করার প্রস্তাব করেছে। আলোচ্য পদ্ধতিতে চেয়ারম্যান বা মেয়র ও সভাধ্যক্ষ পদে শুধু সোনালি সদস্যই প্রার্থী হতে পারেন। একজন করে রুপালি পুরুষ ও নারী সদস্য নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান বা ডেপুটি মেয়র হতে পারবেন। চেয়ারম্যান বা মেয়র, সভাধ্যক্ষ, ভাইস চেয়ারম্যান বা ডেপুটি মেয়র পদের মেয়াদ হবে এক বছর। একজন ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি একই পদে থাকতে পারবেন না। এতে চেয়ারম্যান-মেয়র বাকি সদস্যদের অবজ্ঞা করবেন না কিংবা মৌরসি পাট্টাদারও হবেন না। আইনে সোনালি সদস্য, রুপালি পুরুষ সদস্য ও রুপালি নারী সদস্যের দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকবে। এ পদ্ধতি কার্যকর হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ও জাতীয় সংসদে নারীর ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ আসন নিশ্চিত থাকবে। এমনকি কোথাও কোথাও সেই হার বেশিও হতে পারে; তবে কোনোভাবেই দুই-তৃতীয়াংশ অতিক্রম করবে না। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক আবহ বিরাজ করবে।

সংস্কারের মহামিছিলে হোক না একটি ব্যতিক্রমী সংস্কার! এমনটা যদি জাতীয় সংসদের ১০০ বা ১৩৩টি আসন ধরে নির্বাচন হয়, ক্ষতি কী! হতেও পারে জাতীয় সংসদের কোনো আসনে তিন দলের তিনজন নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন দলের সহাবস্থানের রাজনৈতিক উত্তরণ।

আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ব চ ত হব ন প রস ত ব ত একজন ন র ন র র জন করব ন আসন র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

কালিয়াকৈরে ৯৯৯-এ কল পেয়ে একজনের লাশ উদ্ধার করল পুলিশ

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের কালামপুর দক্ষিণপাড়া এলাকা থেকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল পেয়ে গজারি বনের পাশ থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লোকটি মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ওই এলাকায় কয়েক দিন ধরে ঘোরাঘুরি করছিলেন বলে স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য।

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। বয়স হতে পারে আনুমানিক ৪৫ বছর।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন বলেন, উপজেলার কালামপুর এলাকায় কয়েক দিন ধরে এক ব্যক্তি ঘোরাফেরা করছিলেন। তাঁকে দেখে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়েছে। পরে এলাকাবাসী তাঁর চিকিৎসার জন্য কিছু অর্থও সংগ্রহ করেন। গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯-এ কল করা হয়। পরে থানার পুলিশ গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে।

কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুর রহমান জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষক ৩, শিক্ষার্থী ৫
  • স্মার্ট ক্লাসরুম, নাকি শিক্ষক
  • ‘চল চল যমুনা যাই’— এই ধরনের রাজনীতি আর হতে দেব না: তথ্য উপদেষ্টা
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে নিহত ১, অগ্নিসংযোগ
  • সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ইসলামপন্থী নেতা শারার সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প, সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় আগ্রহ
  • দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তা ছড়াতে আলিয়ার বিশেষ উদ্যোগ
  • দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তা ছড়াতে আলিয়ার উদ্যোগ
  • গ্রামীণ ব্যাংকের পর্ষদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকতে হবে, কমছে সরকারি শেয়ার
  • কালিয়াকৈরে ৯৯৯-এ কল পেয়ে একজনের লাশ উদ্ধার করল পুলিশ