আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এবং তার বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নিয়ে সরকার থেকে কিছু ইঙ্গিত আমরা দেখছি। সরকার ‘স্মার্ট ক্লাসরুম’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিলেও শিক্ষাবিদ ও নীতিনির্ধারক মহলের প্রশ্ন– শ্রেণিকক্ষ কি প্রযুক্তি দিয়ে স্মার্ট হয়, নাকি শিক্ষকের চিন্তা, মূল্যবোধ ও দক্ষতাই শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে?

চলতি মাসের প্রথম দিন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় অনুষ্ঠিত ‘বঞ্চিত মেয়েদের শিক্ষা উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত প্রচেষ্টা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে কেবল স্মার্ট বোর্ড বসালেই স্মার্ট ক্লাসরুম হয় না। সরকার এমন একটি আধুনিক ক্লাসরুম ব্যবস্থা তৈরি করতে চায়, যেখানে শিক্ষকরা লন্ডন থেকেও ক্লাস নিতে পারবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করার লক্ষ্যে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোনো মেয়ে যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটাই সরকারের অঙ্গীকার।’

তিনি প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার কথা বলেছেন। প্রশ্ন হলো, শিক্ষক কোথায়? দক্ষ শিক্ষক, মর্যাদাপূর্ণ পেশা এবং মানবিক শিক্ষা পরিবেশ ছাড়া প্রযুক্তির এই বিপ্লব কতটা কার্যকর হবে? আগামী বাজেটে শিক্ষায় সর্বোচ্চ বরাদ্দের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেই বরাদ্দ জিডিপির কত শতাংশ? ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ থাকা উচিত, অথচ গত বাজেটে তা ১.

৬৯ শতাংশ ছিল। 

শিক্ষা বিভাগে অবকাঠামো উন্নয়ন বা প্রযুক্তি কেনাকাটাভিত্তিক প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ বেশি থাকে। কারণ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার সুযোগ বেশি থাকে। ফলে প্রকৃত শিক্ষা উন্নয়নের প্রধান উপাদান শিক্ষকের আর্থিক ও পেশাগত মর্যাদার উন্নয়ন, যেটি বারবার উপেক্ষিত। ভালো শিক্ষক শিক্ষার্থীর অবস্থা বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠদান পদ্ধতি বদলাতে পারেন; অবলম্বন করতে পারেন নতুন কৌশল। কিন্তু প্রযুক্তিনির্ভর ক্লাসরুম সেই মানবিকতা বা নমনীয়তা দেখাতে পারে না।

ফরিদপুরের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে স্মার্ট বোর্ড আছে। কিন্তু অনেক শিক্ষক তা ব্যবহার করতে জানেন না। কারণ তাদের সে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। বরং প্রকৃত দরকার ছিল শিক্ষক তৈরির পেছনে বিনিয়োগ।’ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন, বাড়ি ভাড়া, উৎসব ভাতা ইত্যাদি নিয়েও রয়েছে বৈষম্য ও দীর্ঘসূত্রতা। অনেক মাস্টার্স ডিগ্রিধারী শিক্ষক আধা সরকারি কর্মচারীর বেতনেরও কম পান। এতে তাদের কর্মোদ্দীপনা ও পেশাগত মর্যাদা ভয়াবহভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

প্রযুক্তি হতে পারে শিক্ষার সহায়ক, তবে কখনোই তা শিক্ষার মূল ভিত্তি হতে পারে না। শিক্ষার প্রাণভোমরা হচ্ছেন সেই শিক্ষক, যিনি শুধু পাঠদানই করেন না; নৈতিকতা শেখান, ভাবনার খোরাক জোগান এবং একজন মানুষ গড়ে তোলেন।

শিক্ষার ভবিষ্যৎ কি শুধু ডিজিটাল পর্দার আলোয় নির্ধারিত হবে, নাকি গড়ে উঠবে এমন এক শ্রেণিকক্ষ, যেখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন একজন সৃজনশীল, শ্রদ্ধাভাজন, দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিক্ষক? স্মার্ট বোর্ডের আগে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষক। তার জন্য চাই যথাযথ বিনিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও মর্যাদা। প্রযুক্তি হতে পারে শিক্ষার বাহন, কিন্তু তার চালক হতে হবে মানুষকেই। 

তারপরও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতেই হবে। কিন্তু শিক্ষক যেন বঞ্চিত না হন। আমরা দেখেছি, অতীতে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেও বরাদ্দ সেভাবে দেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকার সে ক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টি করুক। শিক্ষকদের গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে যথাযথ বরাদ্দ দিতে হবে। কোনোভাবেই শিক্ষকদের অবহেলা করা যাবে না। 

মো. মাহবুবুর রহমান: সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ফরিদপুর সিটি কলেজ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর দ দ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯

ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।

দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।

আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।

স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪০ ঘণ্টা পর এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ আরেকজন
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 
  • গরুর গোবর কুড়ানো থেকে সাত তারকা হোটেলে, জয়দীপের গল্প জানেন কি
  • টর্চলাইট
  • স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক
  • গাজীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার
  • খাগড়াছড়ির ঘটনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
  • ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করার নির্দেশ দিলো আদালত
  • ‘মোটা জেনারেলদের’ কড়া সমালোচনা করলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা হেগসেথ
  • ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯