চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে আত্মঘাতী: ১২–দলীয় জোট
Published: 15th, May 2025 GMT
যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) দেশি প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। অভিজ্ঞতার কথা বলে জাতীয় অর্থনীতির প্রধান ‘লাইফ লাইন’ চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। আজ বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে ১২–দলীয় জোটের নেতারা এসব কথা বলেছেন।
জোটের নেতারা বলেন, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত প্রধান সমুদ্রবন্দর বিদেশি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে দেওয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। এত বড় জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়ার কোনো এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।
প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যারা বন্দরের ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ, পৃথিবীর সেরা যারা, তাদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ যদি রাজি না হয়, জোরাজুরি নয়, রাজি করিয়েই করতে হবে। কারণ, এটা এমন এক বিষয়, পুরো জিনিস শুনলে রাজি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
১২–দলীয় জোটের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দেশের টাকায় নির্মিত জেটি ও নিজেদের অর্থে কেনা যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনা করার ফ্যাসিস্ট সরকারের সিদ্ধান্তকে অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করছে।
নির্মাণের ১৭ বছর পর কেন একটি সফল টার্মিনালকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে হবে—এমন প্রশ্ন রেখে এই জোটের নেতারা বলেন, টার্মিনালটিতে জাহাজ থেকে বার্ষিক ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো–নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। সেখানে দেশীয় অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো–নামানোর কাজ করেছে। তাহলে কাকে খুশি করতে বা কী চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলছে সরকার?
১২–দলীয় জোটের নেতারা বলেন, টার্মিনালটি বিদেশি অপারেটরকে দিয়ে পরিচালনা করলে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয় অর্ধেকের চেয়ে কমে যাবে। ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে নিয়োজিত শ্রমশক্তি কর্মসংস্থান হারাবে। বিদেশি অপারেটররা লাভের অংশ বিদেশি মুদ্রায় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে; নতুনভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। ফলে এটি একেবারে আত্মঘাতী একটি সিদ্ধান্ত, যার পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘দেশবিরোধী’ এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ১২–দলীয় জোটের নেতারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রকিব প্রমুখ।
আরও পড়ুনবাংলাদেশের অর্থনীতি বদলাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দর একমাত্র ভরসা: প্রধান উপদেষ্টা১৪ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটের ডিসিকে ‘ব্যর্থ’ দাবি করে প্রত্যাহার চেয়ে রাজপথে অবস্থান আরিফুলের
সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে প্রশাসনিকভাবে ‘অদক্ষ ও ব্যর্থ’ দাবি করে তাঁর প্রত্যাহার চেয়ে রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরের ব্যস্ততম কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। আরিফুল হক এ কর্মসূচিকে শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ের কর্মসূচি বলে ঘোষণা দেন। কর্মসূচিতে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকনেতারাও যোগ দেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় আরিফুল কোর্ট পয়েন্ট এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার একাংশে প্রায় দেড় শ মানুষ নিয়ে অবস্থান নেন। তবে কর্মসূচি শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। এ সময় মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন আহমদ মাসুকের সঞ্চালনায় সমাবেশ শুরু হয়। বেলা ১টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়।
সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্রঋণ–বিষয়ক সহসম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাজী ময়নুল ইসলাম, জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আবদুর রহিম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসম্পাদক মো. আবদুস সালাম, জেলা শ্রমিক দলের সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ থেকে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকনেতারা আগামী শুক্রবারের মধ্যে সিলেটের ডিসিকে অপসারণ না করলে শনিবার থেকে সিলেটের সব সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন। সমাবেশ চলাকালে আরিফুল হক বলেন, সম্প্রতি কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই জেলার বিভিন্ন স্থানে পাথর ভাঙার যন্ত্রের (ক্রাশার মেশিন) ব্যবসায়ীদের বৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। কোনো ধরনের সময় কিংবা নোটিশ না দিয়ে নগরের মেজরটিলা এলাকায় রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়েছে। ডিসি এই অঞ্চলের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করছেন। তাই ভুক্তভোগী বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্র হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ডিসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন।
সমাবেশে বক্তৃতায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ডিসি পাথর–সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে আজ এক সভা ডাকেন। তবে পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী কিংবা পরিবহনশ্রমিক নেতা, কেউ তাঁর বৈঠকে যাননি। নির্যাতন–নিষ্পেষণ করার পর ডিসি বলছেন, এখন এসো। তাই সবাই ঘৃণাভরে এ বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছেন। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে ডিসিকে প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তিনি।
এদিকে স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ‘কিছু বিষয় নিয়ে’ আরিফুল হক চৌধুরীর মনোমালিন্য ও দূরত্ব চলছে। এখন ইজারা বন্ধ থাকা সিলেটের পাথরকোয়ারি চালুর দাবিতে পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং মেজরটিলা এলাকায় উচ্ছেদের শিকার ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধতার সুযোগে আরিফুল হক ‘জেলা প্রশাসক হটাও’ কর্মসূচিতে নেমেছেন।
দুপুর ১২টার দিকে যোগাযোগ করলে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরীর জেলা প্রশাসক হটাও কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা একান্তই তাঁর নিজস্ব কর্মসূচি। তবে সিলেটে একটা অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের পাথরকোয়ারিগুলো ইজারা দিয়ে এবং পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ আবার চালুর দাবিতে সম্প্রতি পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা কর্মবিরতি, পরিবহন বন্ধ রাখাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে রাজনৈতিক নেতা, পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে বৈঠকে বসেন ডিসি। সেই বৈঠকে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলীসহ পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন।
আরিফুল হক চৌধুরীর অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণকাজের অংশ হিসেবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) তাদের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেমেছে। সরকারি কর্মকর্তারা তাঁদের কাজের অংশ হিসেবেই এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। এখন হঠাৎ করে আমার অপসারণ চেয়ে এমন কর্মসূচি পালন করার বিষয়টি একেবারেই দুঃখজনক।’