যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) দেশি প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। অভিজ্ঞতার কথা বলে জাতীয় অর্থনীতির প্রধান ‘লাইফ লাইন’ চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। আজ বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে ১২–দলীয় জোটের নেতারা এসব কথা বলেছেন।

জোটের নেতারা বলেন, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত প্রধান সমুদ্রবন্দর বিদেশি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে দেওয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। এত বড় জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়ার কোনো এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।

প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যারা বন্দরের ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ, পৃথিবীর সেরা যারা, তাদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ যদি রাজি না হয়, জোরাজুরি নয়, রাজি করিয়েই করতে হবে। কারণ, এটা এমন এক বিষয়, পুরো জিনিস শুনলে রাজি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

১২–দলীয় জোটের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দেশের টাকায় নির্মিত জেটি ও নিজেদের অর্থে কেনা যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনা করার ফ্যাসিস্ট সরকারের সিদ্ধান্তকে অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করছে।

নির্মাণের ১৭ বছর পর কেন একটি সফল টার্মিনালকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে হবে—এমন প্রশ্ন রেখে এই জোটের নেতারা বলেন, টার্মিনালটিতে জাহাজ থেকে বার্ষিক ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো–নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। সেখানে দেশীয় অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো–নামানোর কাজ করেছে। তাহলে কাকে খুশি করতে বা কী চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলছে সরকার?

১২–দলীয় জোটের নেতারা বলেন, টার্মিনালটি বিদেশি অপারেটরকে দিয়ে পরিচালনা করলে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয় অর্ধেকের চেয়ে কমে যাবে। ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে নিয়োজিত শ্রমশক্তি কর্মসংস্থান হারাবে। বিদেশি অপারেটররা লাভের অংশ বিদেশি মুদ্রায় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে; নতুনভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। ফলে এটি একেবারে আত্মঘাতী একটি সিদ্ধান্ত, যার পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘দেশবিরোধী’ এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ১২–দলীয় জোটের নেতারা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রকিব প্রমুখ।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের অর্থনীতি বদলাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দর একমাত্র ভরসা: প্রধান উপদেষ্টা১৪ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সেতুর অভাবে দুর্ভোগ ৩৫ গ্রামের মানুষের

মির্জাপুর পৌর এলাকার লৌহজং নদীর কুমুদিনী হাসপাতাল ঘাটে সেতু না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অন্তত ৩৫ গ্রামের মানুষ। তারা এই ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সভা-সমাবেশ করছেন, তবে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশ।
মির্জাপুর পৌর এলাকার লৌহজং নদীতে কুমুদিনী হাসপাতাল খেয়াঘাট। এই খেয়াঘাট হয়ে উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৩৫ গ্রামের মানুষ নিয়মিত চলাচল করে থাকেন। খেয়াঘাটে একটি সেতু না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে হাসপাতালে যাতায়াত করতে হয়। লৌহজং নদীর কুতুববাজার ও পাহাড়পুর এলাকায় দুটি সেতু নির্মিত হলেও কুমুদিনী হাসপাতাল খেয়াঘাটে সেতু না থাকায় মানুষের ভোগান্তি কমেনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমুদিনী হাসপাতাল খেয়াঘাটে সেতু না থাকায় মির্জাপুরের দক্ষিণাঞ্চলসহ আশপাশের অনেক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভরা বর্ষায় ঘাটে খেয়ানৌকায় পারাপার হতে হয়। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে চলাচলের জন্য স্থাপন করা হয় বাঁশের সাঁকো। কয়েক মাস আগেও প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয়ে সাঁকো স্থাপন করা হয়। গত ৩ মে সন্ধ্যায় স্রোতে কচুরিপানার চাপে সাঁকোটি ভেঙে যায়। নদী পারাপারে ব্যবস্থা না থাকায় লোকজন প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে কুতুববাজার ও পাহাড়পুর এলাকার দুই সেতু দিয়ে গন্তব্যে যান। এ কারণে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় নষ্ট হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছরই ভেঙে যায় বাঁশের সাঁকো। এতে ভোগান্তির শিকার হন তারা। এর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ এই ঘাট ইজারা দেয় জেলা পরিষদ।
গতকাল সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভেঙে যাওয়া সাঁকো তিন দিন আগে মেরামত করা হয়েছে। নদীতে পানি আগের চেয়ে কম। স্রোতও কমে গেছে। সাঁকো দিয়ে লোকজন কোনো রকমে নদী পার হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কুমুদিনী হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং স্কুল ও কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই নদীর দক্ষিণ পাড়ে থাকেন। তারাও শুকনো মৌসুমে সাঁকো বর্ষায় নৌকা ব্যবহার করে নদীর উত্তর পাড়ে যান।
মির্জাপুর সাহাপাড়ার বাসিন্দা ডা. বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, আমাদেরও ইচ্ছে নদীর উত্তর পাড়ের ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলে-মেয়েদের পড়াতে। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে যাওয়ার ভয়ে তা পারছি না। এদিকে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন ডন জানান, কুমুদিনী হাসপাতাল খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণ তাদের দীর্ঘদিনের দাবি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে।
মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মনিরল সাজ রিজন বলেন, লৌহজং নদীর ওই ঘাটটি কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের নিজস্ব রাস্তার সঙ্গে যুক্ত। এলজিইডি থেকে ওই ঘাটে সেতু নির্মাণ করা যাবে, তবে কুমুদিনী কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।
কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার রায় জানান, ওই স্থানে সেতু নির্মাণের অনুমতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। রাস্তাটিতে রোগীসহ হাসপাতালের কর্মী ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা চলাচল করেন। সেতু নির্মাণ করা হলে যান চলাচল করলে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। এ জন্য সেতু নির্মাণে কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহ। তবে এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী ওই স্থানে ফুট ওভারব্রিজ হলে ভালো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ