দুই দিন না যেতেই আবার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে; বেড়েছে দাম, যা রবিবার (১৮ মে) থেকেই কার্যকর হচ্ছে। এখন প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৩৬৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়াল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) শনিবার (১৭ মে) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গত ১৫ মে (বৃহস্পতিবার) রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্বর্ণের দাম কমানোর তথ্য দিয়েছিল সমিতি।
আরো পড়ুন:
তিন দিন না যেতেই ফের কমল স্বর্ণের দাম
‘বিনাধান-২৫ চাষ ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে’
শনিবার প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৪ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। ২৩ এপ্রিল দেশের বাজারে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম ওঠার পর ৮, ১০ ও ১২ মে দাম কমার ঘোষণা আসে।
শনিবার রাতে দাম বাড়িয়ে বাজুসের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বেড়ে যাওয়ায় ভরি প্রতি স্বর্ণের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম রবিবার থেকে কার্যকর হবে।
২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের মূল্য ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭১৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৯৭৮ টাকা ধরা হয়েছে, যা রবিবার থেকেই কার্যকর হচ্ছে।
দেশের বাজারে স্বর্ণের মূল্য বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। বাজুসের তথ্য অনুয়াযী, ভরিপ্রতি ২২ ক্যারেটের রুপার দর ২ হাজার ৫৭৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপা ভরি প্রতি দর ১ হাজার ৫৮৬ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
গত ২৩ এপ্রিল দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ওঠে সর্বোচ্চ, সেদিন ভরিপ্রতি দাম বেড়েছিল ৫ হাজার ৩৪২ টাকা। ওই দিন ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকায়। তবে ১০ মে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের ভরি প্রতি স্বর্ণের দাম কমে হয়েছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১ টাকা। তার পরদিন ফের স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা আসে বাজুসের পক্ষ থেকে।
চলতি বছর ৩৩ বার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হলো। যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে ২২ বার, আর কমেছে মাত্র ১১ বার। ২০২৪ সালে দেশের বাজারে ৬২ বার দাম সমন্বয় করা হয়। তার মধ্যে দাম বৃদ্ধি করা হয় ৩৫ বার, তবে হ্রাস করা হয় ২৭ বার।
ঢাকা/এনএফ/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২২ ক য র ট র স বর ণ র দ ম দ ম কম
এছাড়াও পড়ুন:
এখন গান আছে কিন্তু তাতে দরদ নেই: সাবিনা ইয়াসমিন
দিনটি ছিল সোমবার। আষাঢ়ের আকাশে গাঢ় মেঘের ছায়া, বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ভিজে যাচ্ছিল শহরের অলিগলি। বাতাসে ছিল স্নিগ্ধ শীতলতা, আর ঠিক সেই মুহূর্তেই সুরের মন্দিরে প্রবেশ করলেন বাংলা গানের চিরন্তন পাখি– সাবিনা ইয়াসমিন। যাঁর কণ্ঠে ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’, ‘ও আমার বাংলা মা তোর’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে’ কিংবা ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’ গানগুলি বাঙালির রক্ত এখনও তোলপাড় তুলে দেয়। গায়কিতে এখনও অনন্য তিনি। বয়স ৭০। যা তাঁর কণ্ঠের কাছে সংখ্যা মাত্র। রোগ-শোক, দীর্ঘ পথচলা, জীবনের ওঠানামা– সব পেরিয়ে তিনি এখনও যখন গান ধরেন, তখন সময় যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তাঁর কণ্ঠে সুরের এমন এক জাদু রয়েছে, যা সময়কে বশ করে নেয়, হৃদয়কে অচেনা শিহরণে ভরিয়ে দেয়।
মগবাজারের দিলু রোডের রেকর্ডিং স্টুডিওতে যখন তিনি উপস্থিত হলেন, চারপাশে যেন অন্য এক আবেশ ছড়িয়ে পড়ল। পরিচিত সেই কোকিলকণ্ঠ যখন বেজে উঠল, মনে হচ্ছিল না যে তিনি সত্তর পেরিয়েছেন। বরং মনে হলো, কোনো এক তরুণী গান ধরেছে, যার কণ্ঠে মায়া, মমতা আর গভীর প্রেম। গাইছিলেন ‘প্রাণের বাংলাদেশ’। গানটি লিখেছেন আরিফ হোসেন বাবু, সুর করেছেন রোহান রাজ। সাবিনা ইয়াসমিন যেন গানে গানে বাংলাদেশের আত্মাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিলেন। এক অন্তরা শেষ করেই থেমে বললেন, ‘এই লাইনটা মনমতো হয়নি, আবার দেই।’ সেই একাগ্রতা, সেই নিষ্ঠা– এ যেন শিল্পের প্রতি তাঁর প্রেমের প্রকাশ। একটানা গাইছিলেন, আবার থেমে যাচ্ছিলেন। সংশোধন করছিলেন, আবার গাইছিলেন দরদ দিয়ে। তাঁর সেই মুহূর্তগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, শিল্পী নিজেই যেন নিজের সবচেয়ে বড় সমালোচক।
তিনি যখন গাইছিলেন, তখন চারপাশটা নিঃশব্দ, রেকর্ডিং স্টুডিওর প্রতিটি দেয়াল যেন তাঁর কণ্ঠে মুগ্ধ হয়ে স্থবির হয়েছিল। তাঁর কণ্ঠে ফুটে উঠল বাংলাদেশের নদী, মাঠ, প্রান্তর, মানুষের দুঃখ-সুখ, প্রেম-বিরহ। ছেলেবেলায় যেমন রুপালি পর্দার নায়িকারা কল্পনায় হেঁটে বেড়াতেন, তেমনই আমাদের কল্পনার পর্দায় হেঁটে বেড়ালেন সাবিনা ইয়াসমিনের সুরেলা কণ্ঠ। কথায় বিনয়, চোখে ক্লান্তির ছায়া। কিন্তু কণ্ঠে ছিল সজীবতা। মনে হচ্ছিল, আমাদের খুব চেনা একজন মানুষ, যার সুরে আছে হাজারো অচেনা অনুভূতির গুঞ্জন।
গানে দরদ নেই, আবেগও নেই
টানা ৩০ মিনিটে রেকর্ডিং শেষ করলেন সাবিনা ইয়াসমিন। এসে বসলেন পাশে। তিন হাত দূর থেকে কালজয়ী গানের এই শিল্পীকে দেখার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। এসেই বললেন সবাই ভালো আছো তো? এরপর ধীরে ধীরে খুললেন গল্পের ঝাঁপি। প্রথমেই জানতে চাওয়া হলো এত দরদ দিয়ে গানটায় কণ্ঠ দিলেন কিন্তু এখনকার গানে এমন দরদ পাই না কেন আমরা? প্রশ্ন করতেই চাতক পাখির মতো তাকালেন। একটু ভেবে বলতে লাগলেন, লাস্ট একটি ছবির গানের সুর করেছিলাম। সেই সিনেমায় এই সময়ের একজন কণ্ঠশিল্পীকে আমি গানটি গাওয়ার ব্যাপারে এক্সপ্রেশনও বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। সে সিনেমার পরিচালক যিনি, তিনিও শিল্পীকে বলে বলে দরদ ও এক্সপ্রেশনটা পুরোপুরি আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি এমন কেন হবে। শিল্পীরা কেন এটা নিয়ে পরিশ্রম করছেন না। তারা কেন নিজ থেকে রেওয়াজ বা অনুশীলন করছেন না। সাদামাটা গেয়ে গেলে তো আর ফিল্মের গানের কিছু হলো না। এখন সেটাই হচ্ছে। সাদামাটাভাবেই যেন সবাই গাইছেন। ফলে এখনকার গানে দরদটা নেই, এক্সপ্রেশন নেই, আবেগও নেই, কোনো কিছুই যেন নেই। বোঝা গেল, সময়টায় মেধাবী শিল্পী থাকলেও সেই মেধা বিকাশের চেষ্টা না থাকায় কিছুটা হলেও মর্মাহত এই গায়িকা।
কেন গানে দরদ নেই সে বিষয়ে তিনি নিজেই ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন– গান যদি এক লাইন এক লাইন করে গাওয়া হয়, একটা একটা শব্দ করে যদি রেকর্ডিং করা হয় তাহলে গানে দরদ কীভাবে আসবে। এখন ডুয়েট গানেও শুনি একজন আরেকজনকে দেখেন না। অথচ আমরা যখন ডুয়েট করেছি তখন একসঙ্গে ভয়েস দিতাম। প্রতিযোগিতা চলত কে কার চেয়ে ভালো গাইতে পারে। একটা উদাহরণ দেই, সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা– এই গানটা আব্দুল আলীম ভাইয়ের সঙ্গে গাইতে গিয়ে তো আমি ভয়ে শেষ। পরে আলীম ভাই সাহস দিলেন। বেশ কয়েকবার আমাকে অভয় দিলেন। পরে গাইলাম। বলতে গেলে বিখ্যাত মানুষের সামনেও আমার পার্ট তার চেয়ে কীভাবে ভালো হয় সে প্রতিযোগিতা ছিল। একইরকম ঘটনা ঘটেছিল কিশোর কুমারের সঙ্গে গাওয়ার সময়। অথচ এখন সেটা অনুপস্থিত।
স্মৃতির ঝাঁপি ...
সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে কথা হবে আর সেখানে এন্ড্রু কিশোর থাকবেন না, তা হয় না। এই নামটি নিতেই কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গেলেন তিনি। প্রশ্ন করা হলো, যদি কখনও এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে দেখা হয় কী বলবেন? সাবলীল উত্তর, কিছুই বলতাম না। হাত ধরে বাসায় নিয়ে আসতাম। এই কথাতেই তাদের সম্পর্কের গভীরতা উপলব্ধি করা যায়। বোঝা যায়, কতটা মিস করেন প্রয়াত এই গায়ককে। কথায় কথায় আলাউদ্দীন আলী ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকেও স্মরণ করলেন তিনি। ছোট ছোট স্মৃতি বলতেই দেখা গেল চোখ ঝাপসা হয়ে উঠেছে তাঁর। বলতে শুরু করলেন এখন বুলবুল ও আলাউদ্দীন আলীর মতো মিউজিক ডিরেক্টর কোথায়? আতা ভাই, আলতাফ মাহমুদ, খন্দকার নুরুল আলম, আনোয়ার পারভেজ, সত্যদা, সুবল দা, আলম ভাই, দেবুদা, রবিন ঘোষদের মতো এখন কে আছেন? কী সব মায়া জাগানো সুর ও সংগীত করেছেন তারা। সবারই খুব ডিফারেন্ট টাইপের সুর। একেকজনের স্টাইল একেক রকম। আমরা প্রতিটি গানের পেছনে অনেক পরিশ্রম ও রেওয়াজ করতাম। এখন তো রেওয়াজ কী– সেটাও ভুলে গেছে। এরপর আর কথা বাড়ালেন না শিল্পী। উঠে দাঁড়ালেন। বললেন অনেক বেলা হয়ে গেছে। এবার বাসায় ফিরি।