জেন্ডার বাজেট বা বাজেট জেন্ডার সংবেদনশীল কিনা– তা দেখা এখন মোটামুটি সবার কাছে পরিচিত একটি বিষয়। দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখতে হলে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বিভিন্ন খাতে উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে বাজেট বরাদ্দ সন্তোষজনক হয় না। উন্নয়নমূলক কাজ জনগণের জন্য করা হয়, সেই জনগণের একটি অংশ নারী। বাজেট বরাদ্দ নারীর ক্ষমতায়ন ও তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে কিনা, সেটি দেখা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। এটি সবাই জানেন নারীর জন্য কিছু বাড়তি বরাদ্দ দিয়ে দিলেই জেন্ডার বাজেট হবে না, বরং সার্বিকভাবে সব অর্থনৈতিক খাতের বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার সময় নারীর জন্য যে কাজ করা হবে, যার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন হবে, এমন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ হলে তাকে সুষ্ঠু জেন্ডার বাজেট হয়েছে বলা যেতে পারে। এটি পরিষ্কার যে কেবল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাড়ালেই জেন্ডার বাজেট হয়ে যাবে না।
সব মন্ত্রণালয়ের কাজই নারীর জন্য প্রয়োজন; এমনকি অর্থ, পরিকল্পনা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজও নারীর ক্ষমতায়নের দৃষ্টিতে বিচার করা যায় জেন্ডার বাজেট হলো কিনা। ধরেই নেওয়া হয় যেসব কাজে সরাসরি নারীর সংশ্লিষ্টতা আছে, কেবল সেখানে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এর মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বা স্থানীয় সরকার ইত্যাদি আসে। নারীরা এখন সবখানে এগিয়ে আসছে; খেলাধুলায় বিশেষভাবে গ্রামের মেয়েরা এগিয়ে আসছে। বিষয়টি মাথায় রেখে কি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেটে নির্দিষ্টভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়? আমার জানা নেই। শ্রমিকদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে ডে-কেয়ার ইত্যাদির বরাদ্দ, অনেক সংগ্রাম করে কিছু বরাদ্দ পাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারী বিজ্ঞানী, শিক্ষক, চিকিৎসক কর্মরত আছেন। অথচ তাদের সন্তানদের জন্য কোনো ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা নেই, এর জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দও নেই। তারা মধ্যবিত্ত পরিবারের; তারা চাকরি রক্ষা করতে চাইলেও মনের মধ্যে সন্তানের জন্য তার হাজার কষ্ট হলেও কোনো মতে ব্যবস্থা করে অফিসে যেতে হয় এবং ৯টা-৫টা সময় পার করতে হয়। ফলে তার কাজে মনোযোগের অভাব হলে তার দায় কি সেই নারীর, নাকি তার জন্য যে বরাদ্দ থাকা উচিত ছিল, সেটা নেই বলে এমন পরিস্থিতি হচ্ছে? এসব প্রশ্ন আমাদের করতে হবে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেন্ডার বাজেটের সঠিক প্রয়োগের কথা চিন্তা করে বিশেষ খাতে বাজেট বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। যেমন– সাধারণভাবে কৃষিতে সার-কীটনাশক, হাইব্রিড বীজ ইত্যাদির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটিকে খুব বাহবাও দেওয়া হয়। উন্নত জাতের গরু, মুরগি ইত্যাদি পালনের জন্য বরাদ্দ থাকে। এসব করে নারীর সুবিধা হয় কিনা দেখা হয় না। সার-কীটনাশক বরাদ্দ বাড়ানোর চেয়ে কমিয়ে দিলে ভালো হয় কিনা ভেবে দেখা যেতে পারত, কিন্তু তা করা হয় না। গাছ লাগানোর কথা বলে ইউক্যালিপটাস, একাশিয়া লাগিয়ে যে সর্বনাশ করা হয় তার ভুক্তভোগী নারীরাই বেশি হয়।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানে নারীর কথা আগেই ওঠে এবং নারীকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ নারীর জন্য ততটা হয় না। বড় বড় প্রকল্প নিলে তা হয়ে যায় পুরুষের, আর নারীর জন্য অল্প টাকার প্রকল্প, এটিই চিন্তায় থাকে।
প্রয়োজনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি দরকার নারীর চলাফেরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারীর মর্যাদা রক্ষা হয়– এমন কাজে বরাদ্দ যথেষ্ট পরিমাণে দেওয়া। গণপরিবহন, রাস্তাঘাট নারীর জন্য এখনও যথেষ্ট নিরাপদ নয়। জননিরাপত্তা বিভাগের বাজেট বরাদ্দের সময় এ বিষয়গুলো নিয়ে আসতে হবে।
নাগরিক সেবা পেতে গিয়ে নারীকে অনেক বৈষম্যের শিকার হতে হয়। নিম্ন আয়ের মানুষ, গরিব ভূমিহীন নারীর সরকারি সেবা শুধু ভিজিএফ চালের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সংকীর্ণ চিন্তা। সেবার ধরন এমন হওয়া উচিত যেন নারী তার অধিকার নিশ্চিত করার সুযোগ পায়।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের কাজে সম্পর্ক দেখা জেন্ডার বাজেটের জন্য বড় প্রশ্ন। দেখা গেছে এক মন্ত্রণালয়ের কাজের কারণে অন্য মন্ত্রণালয়ের কাজের ব্যাঘাত ঘটেছে। যেমন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু নির্মাণের কাজের কারণে মৎস্যজীবীদের জীবিকার ক্ষতি হতে পারে; সে বিবেচনা করা হয় না। নারীর জীবন-জীবিকার কী ক্ষতি হতে পারে, সেটিও দেখা হয় না। কৃষিতে কীটনাশকের ব্যবহার নারীর স্বাস্থ্য, বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বিষয়টি উপেক্ষা করা হলে তা জেন্ডার বাজেটের দৃষ্টিতে ঠিক হবে না।
জেন্ডার বাজেট অনেক বিষয়ের সমন্বিত চিন্তা, অনেক কাজের সমন্বিত ফলাফল। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি সঠিক জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা সেই আশাই করি। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ ট বর দ দ বর দ দ ব ড় ন র র জন য বর দ দ দ র জন য ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগের কর্মী দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের অভিযোগ, বিক্ষোভ
গাজীপুরের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ। এই কলেজ শাখায় শনিবার (১৬ আগস্ট) রাতে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একাধিক সক্রিয় কর্মী ও বিবাহিতদের পদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কমিটি ঘোষণার পর রাতেই কলেজের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা।
শনিবার রাতে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিরন স্বাক্ষরিত পত্রে ৩৯ সদস্যের কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, কলেজ শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে সাবেক ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অনেক কর্মীই রয়েছে। ভাওয়াল কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগের সদস্যরা পদ পাওয়ায় হতাশা তারা।
আরো পড়ুন:
সিকৃবিতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছাত্রদলের কমিটি, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সড়ক ব্লকেড, যান চলাচল বন্ধ
বিক্ষোভকারীরা জানান, তারা অবৈধ ও পকেট কমিটি মানবেন না। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ দিয়ে গঠন করা এই কমিটি মানা হবে না। তাদের কাছে কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকের ছবি ও ভিডিও রয়েছে, যারা ছাত্রলীগের মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
পদবঞ্চিত ছাত্রদল কর্মী আরাফাত বলেন, “ছাত্রলীগের লোকজন এখন কমিটিতে। বিগত দিনে তাদের ছাত্রলীগের মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখেছি। যারা জেল খাটল, ত্যাগ শিকার করেছে, তাদেরকে এই কমিটিতে মাইনাস করা হয়েছে। আমরা এই কমিটি মানি না।”
গাজীপুর মহানগর ছাত্রদল সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ঘুমাচ্ছি, পরে কথা বলব।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ