চলতি বছরের প্রথম তিন মাস—জানুয়ারি-মার্চে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশের টেলিকম খাতের শীর্ষ দুই কোম্পানিরই ব্যবসা কমেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে শীর্ষ কোম্পানি গ্রামীণফোনের ব্যবসা কমেছে ৯৮ কোটি টাকা। একই সময়ে দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটর রবি আজিয়াটার ব্যবসা কমেছে ১৭৫ কোটি টাকার।
কোম্পানি দুটির গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে গ্রামীণফোন বা জিপির ব্যবসা কমার পাশাপাশি মুনাফা কমেছে ৭০৪ কোটি টাকা বা ৫৩ শতাংশ।। অন্যদিকে রবির ব্যবসা কমলেও মুনাফা বেড়েছে। কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ১২৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১০৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে রবির মুনাফা ১৮ কোটি টাকা বা প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটা সম্প্রতি আলাদাভাবে তাদের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোন গত ২৭ এপ্রিল আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর রবি আজিয়াটার পরিচালনা পর্ষদ গত বৃহস্পতিবারের সভায় তাদের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে। গতকাল শনিবার তাদের প্রতিবেদনটি স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে।
রবির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটি সমন্বিতভাবে ২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব৵বসা করেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। রবির নিজস্ব ব্যবসার পাশাপাশি সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা মিলিয়ে যে আয় বা ব্যবসা করে, সেটিই তাদের সমন্বিত আয় বা ব্যবসা।
অন্যদিকে এ বছরের প্রথম তিন মাসে গ্রামীণফোন ব্যবসা করেছে ৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে এই অপারেটর ১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল, যা চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কমে ৬৩৪ কোটি টাকায় নেমে আসে।
কোম্পানি দুটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে রবির তুলনায় গ্রামীণফোন দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা ও ৫ গুণ বেশি মুনাফা করেছে।
রবির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় কমে যাওয়ার পরও মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিক্রি ও বিতরণ বাবদ খরচ আগের বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ ব্যয়ও হ্রাস পেয়েছে। তৃতীয়ত, কর বাবদ খরচ কমেছে। গত বছরের প্রথম তিন মাসে রবি বিক্রি ও বিতরণ খাতে খরচ করেছিল ৩৮৭ কোটি টাকা, যা এবারে একই সময়ে কমে ২৮০ কোটি টাকায় নেমেছে। ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ গত বছরের জানুয়ারি-মার্চে যেখানে রবির খরচ হয়েছিল ১৮৩ কোটি টাকা, সেখানে এবার একই সময়ে তা কমে ১৬৯ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। কোম্পানিটি গত বছরের প্রথম তিন মাসে কর বাবদ ব্যয় করেছিল ১৬২ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের একই সময়ে কমে ১০৪ কোটি টাকায় নেমেছে। উল্লেখিত তিন খাতে খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় কোম্পানিটির মুনাফা প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
রবির আয় কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা এম রিয়াজ রশিদ বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা ডেটার দাম প্রায় ২০ শতাংশ কমিয়েছি। এর ফলে ডেটার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও রাজস্ব বা আয় বৃদ্ধির গতি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তাই ডেটার দাম ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতিসহ সাধারণ মানুষের নানা ধরনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের আয়ে। তবে আমরা বিশ্বাস করি দেশের অর্থনীতি খুব শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র প রথম প র ন ত ক বছর র প রথম ত ন ম স র ব যবস উল ল খ
এছাড়াও পড়ুন:
হায়দরাবাদে ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, নারী-শিশুসহ নিহত ১৭
ভারতের হায়দরাবাদে আইকনিক চারমিনারে কাছের এক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছে। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত তা জানা যায়নি।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দমকল বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, আজ রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান দমকল বাহিনীর সদস্যরা। তিনি আরও বলেন, আগুন নেভাতে ১১টি ফায়ার ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, যে ভবনে আগুন লেগেছে সেটির নাম ‘গুলজার হাউজ’। বাড়িটির নিচে সোনার অলঙ্কারের বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। দোকানদারদের পরিবারের সদস্যরা থাকতেন উপরতলায়।
এনডিটিভি লিখেছে, যে এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখানে সারি সারি জুয়েলারি দোকান আছে, এসব দোকানের অনেকগুলো শতাব্দীপুরনো এবং একে অপরের গা ঘেঁষে অবস্থিত।
তেলেঙ্গানার মন্ত্রী পুনম প্রভাকর জানিয়েছেন, সব মৃতদেহ উদ্ধার করে সেগুলো হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকার শিগগিরই সব তথ্য জানাবে।
এ ঘটনায় শোক জানিয়ে নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ভবনটিতে উদ্ধারকাজ এখনও চলছে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেসের রাজ্যসভা সদস্য এম অনিল কুমার যাদব। তিনি বলেন, ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এটি একটি বাজার এলাকা। আমি দমকল ও অন্যান্য বিভাগকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তারা সর্বোচ্চ যতটুকু করা যায়, ততটুকু করেছে। আগুন নেভানো হয়েছে।’
উদ্ধারকাজ চলছে, ভবনটির ভেতরে এখনও কয়েকজন আটকে আছেন বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।