আইএফএফএইচএসের তালিকায় সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলার
Published: 20th, May 2025 GMT
আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাস ও পরিসংখ্যান সংস্থা (আইএফএফএইচএস) প্রকাশ করেছে সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলারের তালিকা। ফুটবল ইতিহাসে অসংখ্য কিংবদন্তির ভিড়ে সবার ওপরে স্থান পেয়েছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি।
এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন ব্রাজিলের কালজয়ী ফুটবলার পেলে, আর তৃতীয় স্থানে আরেক আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। মেসির দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো অবস্থান করছেন চতুর্থ স্থানে। পঞ্চমে আছেন ডাচ ফুটবলের প্রতিভাবান নাম ইউহান ক্রুইফ। এর পরের দুটি স্থানে রয়েছেন রোনালদো নাজারিও (ব্রাজিল) ও জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স)।
সেরা দশের বাকি তিন জন হলেন জার্মানির ডিফেন্সিভ জিনিয়াস ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার (অষ্টম), আর্জেন্টিনা ও স্পেনের হয়ে খেলা আলফ্রেদো ডি স্টেফানো (নবম) এবং ব্রাজিলিয়ান জাদুকর রোনালদিনহো (দশম)।
১৯৮৪ সালে জার্মানির লাইপজিগে প্রতিষ্ঠিত আইএফএফএইচএস বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাস ও পরিসংখ্যান সংরক্ষণের জন্য একটি স্বীকৃত সংস্থা। সংস্থাটি জানায়, এই তালিকা তৈরিতে তারা একটি ‘হাইব্রিড ভোটিং’ পদ্ধতি অনুসরণ করেছে, যেখানে ১০০ জন অফলাইন ফুটবল বিশেষজ্ঞের ভোটকে ২৫% এবং অনলাইন বিশ্বব্যাপী ভক্তদের ভোটকে ৭৫% ওজন দেওয়া হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় বর্তমান সময়ের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অতীতের পারফরম্যান্সকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএফএফএইচএস।
আইএফএফএইচএস তালিকায় সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলার: লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা), পেলে (ব্রাজিল), ডিয়েগো ম্যারাডোনা (আর্জেন্টিনা), ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল), ইউহান ক্রুইফ (নেদারল্যান্ডস), রোনালদো নাজারিও (ব্রাজিল), জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স), ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার (জার্মানি), আলফ্রেদো ডি স্টেফানো (আর্জেন্টিনা/স্পেন), রোনালদিনহো (ব্রাজিল)।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন ফ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এরদোয়ানের কপাল খুলে দিতে পারে
ইসরায়েল শুধু ইরানের ওপর আক্রমণই করেনি, এটি ছিল ইহুদি রাষ্ট্রটির বড় সামরিক শক্তির প্রদর্শনও। কিন্তু ইরানের ওপর হামলার ইসরায়েলের সেই সামরিক শক্তি প্রদর্শন তুরস্কের নাগরিকদের হকচকিত করে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ও দরিদ্র হলেও ইরান তুর্কিদের কাছে একটি স্থিতিশীল দেশ। তা ছাড়া ইরানিরা একটি মহৎ জাতি, যার রয়েছে প্রাচীন সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সাহিত্য সম্ভার। তুর্কিরা ইরানিদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা আধিপত্যের প্রতিরোধ এবং নিজেদের ধর্মীয় নেতৃত্বের ওপর আস্থার প্রতি সম্মান করে।
ইরাক বা লেবাননের ওপর হামলার তুলনায় ইরানের ওপর হামলার ঘটনা তুরস্কে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া হয়। ইরানে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে তাদের আসলে অন্য আরও উদ্দেশ্য রয়েছে, যেমন বৃহত্তর ইসরায়েল গঠন এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার; ফলে তুরস্কের নাগরিকেরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে সেখানে তুরস্ক হতে পারে ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট।
আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫ইরানে হামলার পর তুর্কিদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সবার প্রথম ও প্রধান উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তুরস্কের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা নিয়ে। ‘তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কী অবস্থা?’, ‘আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি এফ-৩৫ শনাক্ত করতে পারবে?’—এই প্রশ্নগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে এসেছে। এসব প্রশ্ন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চলাকালে দৈনন্দিন আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আশা প্রকাশ করা যাচ্ছে। ধারণা করা যায় তিনি তুর্কি জনগণের এ প্রশ্নগুলোর উত্তর ভালোভাবে দিতেই প্রস্তুত আছেন। তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের বিষয়ে তিনি ইতিমধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।
ইস্তাম্বুলের সাবেক মেয়র একরেম ইমামোগ্লুর দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার (যাকে বিরোধীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে) এবং অর্থনৈতিক সংকটের বাইরে এরদোয়ান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যেখানে নিজের সাফল্য দেখাতে পারেন, তা হলো নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশ।
সামনের নির্বাচনে তাঁর চ্যালেঞ্জ হবে তুরস্কের সামরিক শক্তি এবং এর নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্পের সক্ষমতা সম্পর্কে জনসাধারণকে বোঝানো। প্রতিরক্ষা শিল্পের পরিসর আরও বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত কর আরোপ করে তিনি তুর্কি জনগণের কাছে আর্থিক ত্যাগের জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন। এ ধরনের একটি নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল তুরস্কের তরুণ প্রজন্মের কাছেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে।প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নামার ক্ষেত্রে এরদোয়ান ইসরায়েল ও তুরস্কের তুলনামূলক প্রতিরক্ষাবিষয়ক অর্জনগুলোর ওপর জোর দিতে পারেন। ২০২৩ সালে নির্বাচনের আগে তিনি তুর্কি নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপ টিসিজি আনাদলু সামনে এনেছিলেন। জাহাজটিতে সাধারণ তুর্কি নাগরিকদের ওঠার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, মানুষ সেটির বিশালতা নিয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। নির্বাচনের মাত্র ৩৪ দিন আগে জাহাজটি সামরিক শক্তিতে যোগ করা হয়।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের কারণে তুরস্কের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতার প্রতি তুর্কি নাগরিকদের মনোযোগ আরও বেশি থাকবে। এরদোয়ানও নির্বাচনী প্রচারণার সময় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে ভালোভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন। তুর্কিদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ বিরোধীদের তুলনায় এরদোয়ানকে স্থিতিশীল তুরস্কের শক্তি হিসেবে দেখে। ক্রমবর্ধমান অস্থির হয়ে উঠা এ অঞ্চলে দেশ পরিচালনার জন্য বিরোধীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও সংকল্পের অভাব রয়েছে বলে তারা মনে করে।
আরও পড়ুনতুরস্ক কেন ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিন্দা জানায়নি২৩ জুন ২০২৫টিসিজি আনাদলু জাহাজ সংযোজন তুর্কি সামরিক বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়ে থাকে। এটি এক ব্যাটালিয়নের একটি বাহিনী পরিবহন এবং আটটি নৌযান বহন করতে সক্ষম ও বিমান পরিচালনাও করা সম্ভব এ জাহাজ থেকে। সহায়ক সামরিক সম্পদে অত্যাধুনিক ড্রোনের চেয়েও বড় কিছু দাবি করা হয়ে থাকে এ জাহাজকে।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে এরদোয়ানের প্রতিক্রিয়া ছিল লক্ষণীয়ভাবে সংযত ও গঠনমূলক। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে একটি আলাদা যোগাযোগের চ্যানেল খোলার চেষ্টা করেছিলেন, যার মধ্য দিয়ে ইস্তাম্বুলে একটি মার্কিন-ইরান বৈঠক করা যায়। যুদ্ধকালীন এরদোয়ানের মন্তব্যগুলো আগের মতো আক্রমণাত্মকও ছিল না।
সামনের নির্বাচনে তাঁর চ্যালেঞ্জ হবে তুরস্কের সামরিক শক্তি এবং এর নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্পের সক্ষমতা সম্পর্কে জনসাধারণকে বোঝানো। প্রতিরক্ষা শিল্পের পরিসর আরও বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত কর আরোপ করে তিনি তুর্কি জনগণের কাছে আর্থিক ত্যাগের জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন। এ ধরনের একটি নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল তুরস্কের তরুণ প্রজন্মের কাছেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া, কোন দিকে যাবে তুরস্ক২৬ ডিসেম্বর ২০২৩অনেক বিশ্লেষক যা মনে করেন, তাঁর বিপরীতে তুর্কি তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন ও এর পেছনে ব্যয়ের বিষয়টি নিবিড়ভাবে অনুসরণ করে। তারা তুরস্কের নির্মিত যুদ্ধবিমানগুলো সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখে এবং এগুলো তৈরির তাৎপর্য বোঝে। ফলে তুরস্কের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শিল্পকে নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান কৌশল হিসেবে নিলে এরদোয়ানের জন্য ভালো ফল দেবে।
ইলকার সেজার তুর্কি টুডে-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
তুর্কি টুডে থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ