একসময় ৫০ টাকার টিকিটেও ফুটবল স্টেডিয়ামের গ্যালারি পূর্ণ হতো না। মাইকিং করে দর্শকদের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া মিলত না। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইংলিশ হামজা দেওয়ান চৌধুরী লাল-সবুজের হয়ে যাওয়ার পর বদলেছে দেশের ফুটবলের চিত্র। হামজার পথ ধরে আসা কানাডাপ্রবাসী শমিত সোম, ইতালিয়ান ফাহমিদুল ইসলাম বাংলাদেশের ফুটবলে যে এখন আলোকবর্তিকা। সমাজের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ থেকে শুরু করে সংগঠনের কর্তাদের আলোচনায় হামজা আর বাংলাদেশের ফুটবল। 

আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আগামী ১০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজাকে মাঠে বসে সরাসরি দেখার জন্য দেশের ফুটবলপ্রেমীরা তাকিয়ে আছেন টিকিটের দিকে। অনেকেই বাফুফেতে ফোন করে টিকিটের ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন। সবার প্রশ্ন একটাই, কবে নাগাদ টিকিট ছাড়বে বাফুফে? টিকিটের চাহিদা এতটাই বেশি যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাদেরও ঘুম হারাম। টিকিটের সুষ্ঠু বণ্টনের প্রক্রিয়া কী হবে, দর্শকদের জন্য কতগুলো টিকিট ছাড়া হবে, টিকিটের দাম কত হবে, তা নির্ধারণ করতে প্রতিনিয়ত আলোচনার টেবিলে বসছেন দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তারা।
 
কবে নাগাদ টিকিট বাজারে ছাড়া হবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে এক থেকে দু’দিন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে স্টেডিয়ামের গ্যালারির লে আউট পাওয়ার পর আসন সংখ্যা নিশ্চিত হয়ে তবেই টিকিট ছাড়ার পক্ষে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। টিকিটের চূড়ান্ত দামও তখন প্রকাশ করা হবে। তবে বাফুফের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে টিকিটের দাম অনেকটা চূড়ান্ত করে ফেলেছে ফেডারেশন। জাতীয় স্টেডিয়ামের ২২ হাজার ৬৬৭টি আসনের মধ্যে সাধারণ গ্যালারি তথা দেশি চেয়ার আছে ১৮ হাজার ৩০০টি। 

সাধারণ গ্যালারির সব টিকিট অনলাইনে ছাড়বে বাফুফে। বিদেশি চেয়ার তথা ক্লাব হাউস, ভিআইপি, হসপিটালি বক্স এবং স্কাই ভিউ বক্সের টিকিটের দাম আকাশচুম্বী। ক্লাব হাউসের টিকিট ২ থেকে ৩ হাজার টাকা, ভিআইপি ৩ থেকে ৫ হাজার, হসপিটালিটি বক্স ৪ থেকে ৫ হাজার এবং স্কাই বক্সের টিকিটের দাম হতে পারে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী সব আসনের টিকিট বিক্রি করবে না বাফুফে। তিন থেকে চার হাজার টিকিট সৌজন্য হিসেবে রাখবে ফুটবল ফেডারেশন।

অনেক ফুটবল সমর্থক আছেন, যাদের বয়স অনেক বেশি কিংবা যারা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন না– এমন ব্যক্তির জন্য অথবা যারা অনলাইনে টিকিট কাটতে ব্যর্থ হবেন, তাদের জন্য অফলাইনে টিকিট কেনার সুযোগ করে দিচ্ছে বাফুফে। ফেডারেশন ভবন কিংবা স্টেডিয়ামে রাখা হবে একটি টিকিট বুথ। সেখান থেকে টিকিট কাটতে পারবেন ফুটবলপ্রেমীরা।

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে ফুটবল উন্মাদনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি। ‘সুপার রবিবার’ ক্যাম্পেইনের আওতায় ২৫ মে রবি গ্রাহকদের জন্য থাকছে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের ভিআইপি টিকিট জেতার সুযোগ। কীভাবে কিংবা কতজনকে টিকিট উপহার দেওয়া হবে, সেই পথরেখা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। স্টেডিয়ামের গ্যালারির কিছু অংশের টিকিট বাফুফে বিক্রি করবে রবির কাছে। গতকাল রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত রবি আজিয়াটার করপোরেট অফিসে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে রবি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ শ র ফ টবল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ