বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি কোচ কার্লো আনচেলত্তির ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। যদিও আনুষ্ঠানিক পরিচয় হবে ২৬ মে। তবে ইতোমধ্যেই পর্দার আড়ালে তার কাজ শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। আর সেই প্রস্তুতির এক ঝলক যেন আগেভাগেই ফাঁস হয়ে গেল সংবাদ মাধ্যমে।

ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) ইতোমধ্যে ২৮ জনের একটি প্রাথমিক স্কোয়াড জমা দিয়েছে ফিফার কাছে। যেখানে আনচেলত্তির পছন্দের রূপরেখা ফুটে উঠেছে স্পষ্টভাবে। ব্রাজিলীয় সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন ১২ ফুটবলারের নাম। যাদের আনচেলত্তি নাকি ব্যক্তিগতভাবে খেয়াল রাখছেন এবং অনেকের নাম মূল দলে থাকার প্রবল সম্ভাবনা।

দক্ষিণ আমেরিকা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জুনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রয়েছে ব্রাজিলের সামনে। ৬ জুন ইকুয়েডরের বিপক্ষে এবং ১১ জুন প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। এই ম্যাচগুলোর জন্য আনচেলত্তি ঘোষণা করবেন চূড়ান্ত ২৩ সদস্যের দল। তবে তার আগেই আলোচনায় উঠে এসেছে কিছু পরিচিত ও অপ্রত্যাশিত মুখ।

আরো পড়ুন:

ব্রাজিলের ফুটবল প্রধানকে অপসারণ, পুরো বোর্ড বরখাস্ত

ব্রাজিলের নতুন কোচ আনচেলত্তি, দায়িত্ব নিচ্ছেন চলতি মাসেই

আলোচিত ১২ জনের তালিকায় সবচেয়ে চমক জাগানো নাম সম্ভবত অস্কার এবং কুতিনহো। ২০১৪ ও ২০১৮ বিশ্বকাপে দ্যুতি ছড়ানো এই মিডফিল্ডাররা অনেকদিন পর ব্রাজিল দলে ফেরার সম্ভাবনায় উঠে এসেছেন আলোচনায়। বিশেষ করে অস্কার বর্তমানে চীনের লিগে খেলা হলেও আনচেলত্তির রাডারে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

ফ্লামেঙ্গো থেকে সম্ভাব্য ছয় ফুটবলার আনচেলত্তির নজরে রয়েছেন। তারা হলেন- দানিলো, ওয়েলসি, লিও অর্টিজ, অ্যালেক্স সান্দ্রো, জেরসন এবং পেদ্রো। তারা প্রত্যেকে ঘরোয়া লিগে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখিয়ে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।

ফায়েনর্ডের ইগার পায়েক্সো, যিনি চলতি মৌসুমে ডাচ লিগে ১৮ গোল ও ১৪ অ্যাসিস্ট করেছেন, তাকেও আনচেলত্তি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। একই সঙ্গে লিলির দীর্ঘদেহি ডিফেন্ডার অ্যালেক্সহান্দ্রো রিবেইরো নিয়েও আনচেলত্তি ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে গ্লোবোর সূত্র জানিয়েছে।

নেইমার জুনিয়রের ফিটনেস নিয়ে যদিও আলোচনা আছে। তবুও তার নাম রয়েছে আলোচিত তালিকায়। এছাড়া ব্রুনো গিমারায়েশ ও করিন্থিয়ানে খেলা গোলরক্ষক হুগো সৌজাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আনচেলত্তির আগমন শুধু খেলোয়াড় বাছাইয়ে নয়, ব্রাজিলীয় ফুটবলের পুরো কাঠামোয় নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করতে যাচ্ছে। একদিকে অভিজ্ঞদের প্রতি আস্থা, অন্যদিকে ঘরোয়া ও ইউরোপিয়ান লিগে খেলানো তরুণদের ওপর নজর—এই দ্বৈত কৌশলে তিনি গড়ে তুলতে চাইছেন বিশ্বজয়ের স্বপ্নদল।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল র

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে যান শ্বশুরবাড়ি, ফিরে দেখেন ঘর থেকে কোটি টাকার স্বর্ণালংকার চুরি

তরুণ ব্যবসায়ী আসিফ তাঁর স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে রাজধানীর ডেমরার মুসলিমনগরে নিজেদের ছয়তলা বাড়ির তৃতীয় তলায় বসবাস করেন। ঈদুল আজহার দুই দিন পর (৯ জুন) আসিফ তাঁর স্ত্রী, বাবা-মাকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে যান। এক দিন শ্বশুরবাড়িতে থেকে ১০ জুন রাত আটটায় মা খালেদা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে আসিফ ডেমরার নিজের বাসায়। আসিফ দেখতে পান শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগে দরজার তালা যেমন লাগিয়ে গিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই রয়েছে। কিন্তু ঘরে ঢুকে তাঁরা দেখতে পান, ড্রয়িং রুমের মেঝেতে এলোমেলোভাবে জামাকাপড় পড়ে আছে।

আসিফের মা দেখতে পান, তাঁর কক্ষের আলমারি ভাঙা। তখন আলমারির বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালংকার খুঁজতে থাকেন তিনি। কোথাও স্বর্ণালংকারের ব্যাগ খুঁজে না পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেন। আসিফ তখন মাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। পরে আসিফ নিজের শয়নকক্ষে গিয়ে দেখতে পান, বাসার কাপড়চোপড় এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। আলমারির দরজার তালা ভাঙা। তখন আলমারিতে রাখা স্ত্রীর স্বর্ণালংকারের ব্যাগ দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আসিফ তখন বাসার অন্য আরেকটি আলমারির দিকে খেয়াল করেন। দেখতে পান সেই আলমারির তালাও ভাঙা। আলমারির বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালংকারের সেই ব্যাগও সেখানে নেই। স্ত্রী, মা, নানি, মামির সব স্বর্ণালংকার চুরি হওয়ায় আসিফ তখন আরও হতাশ হয়ে পড়েন।

একপর্যায়ে আসিফ বাসার তৃতীয় তলার আরেকটি শয়নকক্ষের জানালার একটি গ্রিল কাটা অবস্থায় দেখতে পান। আসিফের মা সেখানে এসে তাঁকে বলেন, ‘আসিফ, আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে…।’

আসিফ তখন মুন্সিগঞ্জে অবস্থান করা তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে বাসায় চোর ঢোকার তথ্য জানান। আসিফের ফোন পেয়ে তাঁর স্ত্রী ওই রাতেই মুন্সিগঞ্জ থেকে ডেমরার বাসায় চলে আসেন। আলমারিতে বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালংকারের ব্যাগটি দেখতে না পেয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। আসিফের স্ত্রীর কান্না দেখে তাঁর মা খালেদাও তখন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। পুত্রবধূকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন তিনি।

এ বিষয়ে আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের সময় আমার শ্বশুরবাড়ি যাওয়াটাই কাল হয়েছে। আমার ভাবনাতেই ছিল না, আমরা বাসায় না থাকলে বাসার গ্রিল কেটে চোর ঢুকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর ২৮ ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছে। আর মায়ের ২১ ভরি। আমার নানির সাড়ে চার ভরি আর মামির সাড়ে ছয় ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছে। মোট আমাদের বাসা থেকে এক কোটি টাকা (৬০ ভরি স্বর্ণ) মূল্যের স্বর্ণালংকার চুরি হয়েছে।’

আসিফদের শয়নকক্ষের যে জানালার গ্রিল কাটা, সেখানে আর কোনো ভবন নেই। বেশ দূরে রয়েছে একটা ভবন। আসিফ বলেন, ‘আমাদের বাসার প্রবেশপথে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) রয়েছে। কিন্তু সেটি যে নষ্ট ছিল, সেটা আমাদের জানা ছিল না। আর বাসার পেছনে থাকা তৃতীয় তলার শয়নকক্ষের জানালার গ্রিল কেটে চোর ঢুকেছে। ওই পাশে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই।’

চোর শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ

ঘরে চুরি হওয়ার তিন দিনের মাথায় গত ১৩ জুন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে ডেমরা থানায় মামলা করেন আসিফ। এরপর এক মাস হতে চললেও কোটি টাকার স্বর্ণ চুরির সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এতে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন আসিফ।

আক্ষেপ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুরির এত দিন পার হয়ে গেল, পুলিশ কাউকে ধরতে পারল না। চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকার উদ্ধার না হওয়ায় আমার স্ত্রী ও মায়ের মন অনেক খারাপ। প্রায় সময় মা আমার কান্নাকাটি করেন। স্ত্রীর মনেও অনেক ক্ষোভ জন্মেছে, কেন পুলিশ চোর ধরতে পারছে না?’

আসিফ জানান, ১০ জুন রাতে বাসায় ঢুকে যখন তাঁরা বুঝতে পারেন স্বর্ণালংকার চুরি হয়ে গেছে, তখন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন। ডেমরা থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা আসেন রাত ১০টার পর। তিনতলার যে কক্ষের জানালার গ্রিল কাটা হয়েছে, সেটির ছবি তোলেন তাঁরা। পরে চুরি যাওয়া ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার আর নগদ ৫ লাখ টাকা চুরি হওয়ার তথ্য লিখে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।

এ মামলা তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাসা থেকে ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। বাসার কাছের একটি সিসিটিভির ফুটেজ জোগাড় করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তাতে একজন যুবকের উপস্থিতি দেখা গেছে। তাঁকে শনাক্ত করা এবং চোর খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ