তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে নারীদের ক্যারিয়ার ও নেতৃত্বের ভূমিকায় অগ্রগতি অর্জনের কৌশল নিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ১১টায় যবিপ্রবির সিএসই বিভাগের ডিজিটাল ক্লাসরুমে ‘স্ট্রাটেজিস ফর উইমেন ইন আইসিটি টু অ্যাডভ্যান্স দেয়ার ক্যারিয়ারস অ্যান্ড লিডারশিপ রুলস’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যবিপ্রবির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগ ও ইমপ্রুভিং কম্পিউটার অ্যান্ড সফটয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারসিয়ারি অ্যাডুকেশন প্রজেক্ট (আইসিএসইটিইপি) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও আইসিএসইটিইপির পিইইউ ড.

মো. আলম হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন যবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন, সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. কামরুল ইসলাম।

আরো পড়ুন:

লোডশেডিংয়ে ‘নাকাল’ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

এডওয়ার্ড কলেজের ৩ আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন

সেমিনারে রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিএসইটিইপির উইমেন আইটি লিডারশিপ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শাহিনা সুলতানা ও স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের সিনিয়র সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার কানজুম আতিয়া বিনতি।

সিএসই বিভাগের প্রভাষক আবু রাফে মো. জামিলের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন ড. মো. আমজাদ হোসেন, সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নাজমুল হোসাইন, ড. মোহাম্মদ নওশীন আহমেদ শেখ, ড. মো. নাসিম আদনান, প্রভাষক এসকে সালাউদ্দিন কবির, জুবায়ের আল মাহমুদ প্রমুখ।

এ সময় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, “বর্তমানে দেশ গঠনে নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব বাধা পেরিয়ে দেশ তথা জাতি গঠনে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের এই বিভাগের নারী শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের বুকে যবিপ্রবির নাম উজ্জ্বল করবে।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এই সেমিনার থেকে তোমরা দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি নেতৃত্বগুণে এগিয়ে যাবে এবং পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করবে। তোমাদের হাত ধরেই যবিপ্রবি হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়।”

ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স এসই ব ভ গ র

এছাড়াও পড়ুন:

তালেবানকে স্বীকৃতির নেপথ্যে রাশিয়ার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ

রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশ আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দেওয়ায় দেশটির সামনে এখন নতুন কূটনৈতিক দ্বার খুলে গেছে। ভূরাজনৈতিক কৌশল হলেও মস্কোর এই পদক্ষেপ অন্যান্য দেশকে আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করতে পারে। একই কাতারে শামিল হতে পারে পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্কসহ অন্যান্য মুসলিম দেশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মূলত নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থেই কাবুলকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া।  
  
প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া কাবুল সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২১ সালে আশরাফ ঘানি সরকারের পতনের পর কাবুলের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। তালেবানের প্রতি অতীত সমর্থন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশীদারিত্ব থাকায় দু’দেশকে কাছাকাছি আনতে সহায়তা করেছে।   

আফগানিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার একটি জটিল ইতিহাস রয়েছে। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ এই ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। তবে ২০২১ সালে আফগানিস্তানে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর থেকে রাশিয়া তালেবান নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। স্বীকৃতির পর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে রাশিয়া ইতিবাচক। 

রাশিয়া আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দেওয়ায় চীন, পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্কের মতো দেশ উৎসাহিত হতে পারে। দেশগুলো ইতোমধ্যে তালেবান সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। কাবুলকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই দেশগুলোর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।  

রাশিয়া আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী আইসিসকে নিয়ে বারবার নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই হুমকি মোকাবিলায় দেশটি তালেবান শাসকদের একটি সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে দেখে থাকে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাসহ অর্থনৈতিক স্বার্থও রয়েছে রাশিয়ার। 

রাশিয়ার স্বীকৃতিকে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক্স পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার সাহসী পদক্ষেপকে মূল্য দিই। আল্লাহর ইচ্ছায় এটি অন্যদের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

নয়াদিল্লি-ভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কবির তানেজা আল জাজিরাকে বলেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে কৌশলগত এবং নিরাপত্তা উভয় উদ্দেশ্যেই কাবুল সরকারের সঙ্গে জড়িত হওয়া ছাড়া খুব বেশি বিকল্প নেই। রাশিয়া স্বীকৃতি দেওয়ার পর অন্যান্য দেশও এটি অনুসরণ করতে পারে। এশিয়ার কিছু দেশের এই তালিকায় চীনও রয়েছে। 

তিনি বলেন, তালেবানকে রাশিয়ার স্বীকৃতি একটি ভূরাজনৈতিক খেলা। তবে স্বীকৃতির পদক্ষেপ কাবুলে মস্কোর অবস্থানকে দৃঢ় করে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই স্বীকৃতি তালেবানদের জন্য একটি বড় বিজয়। কারণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তাদের মূল লক্ষ্য।

মস্কো-কাবুল অর্থনৈতিক সম্পর্ক 

আফগানিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিকশিত হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য- জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি ও অবকাঠামোগত সম্ভাব্য সহযোগিতা। 

রাশিয়া টিএপিআই (তুর্কমেনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারত) গ্যাস পাইপলাইনসহ জ্বালানি প্রকল্পগুলোতে অংশগ্রহণ এবং সম্ভাব্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

রাশিয়া আফগানিস্তানকে গ্যাস এবং অন্যান্য পণ্যের জন্য একটি সম্ভাব্য ট্রানজিট হাব হিসেবে দেখছে। সম্ভবত এটিকে উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোরে একীভূত করতে পারে। কৃষি পণ্যের বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং ভূমি পুনরুদ্ধার এবং কৃষি শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

রাশিয়া আফগানিস্তানের রেলওয়ে উন্নয়নসহ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে আগ্রহী, যা ট্রানজিট হাব হিসেবে আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান থেকে উপকৃত হতে পারে। মস্কো আফগানিস্তানে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ স্বীকার করলেও সন্ত্রাসবাদ ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তালেবানকে একটি সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবেও দেখে। আফগানিস্তানের অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি রাশিয়ার জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়।  

আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রাজনীতি

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য গত জুলাইয়ে মস্কোতে পুতিন ও তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমন বৈঠক করেন। সেখানে দুই নেতা পরিবেশগত, আর্থিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে চুক্তি সই করেন।  

বৈঠকে পুতিন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি রাশিয়ার প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন। তিনি তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান থেকে চলমান নিরাপত্তা হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা মধ্য এশিয়ায় আফগানিস্তানকে একটি চ্যালেঞ্জ ও হুমকি হিসেবে বিবেচনা করি। রাশিয়া এই উদ্বেগগুলো মোকাবিলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

ইউরোশিয়া রিভিউ বলছে, নিরাপত্তা ইস্যুতে রাশিয়ার উদ্বেগের নানা কারণ রয়েছে। তালেবানের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সশস্ত্র নেটওয়ার্কগুলোর সংযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), ইসলামিক মুভমেন্ট অফ উজবেকিস্তান (আইএমইউ), ইসলামিক স্টেট-খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি) এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগ বিভিন্ন সময় ছিল। 

উজবেকিস্তানের সরকার ও তাজিকিস্তান আফগান ভূখণ্ড থেকে চরমপন্থি আন্দোলনের প্রবেশ সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইরান তার সীমান্তবর্তী এলাকায় ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হয়েছে। পাশাপাশি আফগান মাটি থেকে পরিচালিত টিটিপির চলমান সন্ত্রাসী হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান। রাশিয়া মনে করে এসব নিরাপত্তা হুমকি মস্কোর জন্য হুমকিস্বরূপ। 
  
তবে ভূরাজনৈতিক কারণ ও পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে রাশিয়া তালেবানকে তাদের দক্ষিণ সীমান্ত রক্ষার জন্য মিত্র হিসেবে দেখে।  

সূত্র: আলজাজিরা, ইউরেশিয়া রিভিউ, কাবুল নাউ অনলাইন 

সম্পর্কিত নিবন্ধ