Risingbd:
2025-11-02@11:12:32 GMT

নো টি-টোয়েন্টি, নো প্রবলেম!

Published: 5th, July 2025 GMT

নো টি-টোয়েন্টি, নো প্রবলেম!

দুই দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর ২০১৬ সালে আবারও তারা চ্যাম্পিয়ন। ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ চালুর পর ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যে দামামা বাজতে শুরু করে সেখানে ক্যারিবীয়ান ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণই সবচেয়ে বেশি।

অথচ স্রোতে গা না ভাসিয়ে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ক্রিকেটের আভিজাত্যের ফরম্যাটে নিজের মনোযোগ স্থির রেখেছেন। গর্ব নিয়ে কেবল টেস্ট ক্রিকেটই খেলে গেছেন। ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ড, সুনীল নারাইনরা যখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ডটে ডলারের পাহাড় গড়েছেন সেখানে ব্র্যাথওয়েটের ভরসা কেবল লাল বলের ক্রিকেটে।

সাদা বলের ক্রিকেটে পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে খেলেছেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়েই রেখেছেন তিনি। তাই তো অন্যরকম এক রেকর্ডে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন ব্র্যাথওয়েট।

আরো পড়ুন:

৮০ বলের সেঞ্চুরিতে জেমির রেকর্ড, শতকের দেখা পেলেন ব্রুকও

সাইফউদ্দিন-নাঈম শেখকে নিয়ে টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা

ক্রিকেট বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলেছেন কোনো টি-টোয়েন্টি ছাড়া। এমন না যে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ব্র্যাথওয়েট অনুপস্থিত। ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে পাওয়া যায়নি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান গ্রেনাডা টেস্টে নিজের শততম টেস্ট খেলছেন ব্র্যাথওয়েট। লাল বলের বিশেষজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ১৯১ ইনিংসে ৫ হাজার ৯৪৩ রান, ১২ সেঞ্চুরি ও ৩১ ফিফটি করেছেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে তার ২১২ রান সর্বোচ্চ। 

টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে নিজের ভাবনা জানাতে গিয়ে ব্র্যাথওয়েট বলেছেন, ‘‘আমি যখন ১৪ বছর বয়সী ছিলাম তখনই লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম, আমি ১০০ টেস্ট খেলবো। ১৮ বছর পর আমি এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি। নিজের শততম টেস্ট খেলছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে ধন্যবাদ। আমি তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে চাই। সাধারণ মানের কেউ হতে চাই না। আমি চাই আমার প্রভাব থাকুক।’’

অন্যরকম এক রেকর্ডও তার নামের সঙ্গে যুক্ত আছে। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসের একমাত্র ওপেনার হিসেবে এক টেস্টে দুই ইনিংসেই অপরাজিত থাকার রেকর্ড আছে তার। ২০১৬ সালে শারজাহতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪২ রান করার পর ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

২০১১ সালে তার অভিষেক হয়েছিল। ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দায়িত্ব পান। সব মিলিয়ে ৩৯ টেস্টে ক্যারিবীয়ানদের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। 

ব্যাটসম্যান হিসেবে তার রেকর্ড তার সামর্থ্যের পক্ষে কথা বলছে না। তবে ২২ গজে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ব্যাটিং করতে পারতেন। কমপক্ষে ৪০০ বল খেলেছেন এমন পাঁচটি ইনিংস রয়েছে তার। ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসেই ৬৭৩ বল খেলেছিলেন। যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক, ভালোবাসা, ভালোলাগা, অর্থের ঝনঝনানির সময়ে শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেটের দিকে মনোযোগ দেওয়া রীতিমত বিস্ময়কর, অভাবনীয়, গর্বের মতো। ব্র্যাথওয়েট সেই কাজটাই করে আসছেন লম্বা সময় ধরে। 
 

ঢাকা/ইয়াসিন 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব র য থওয় ট র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

ভাসমান পথশিশুদের নিয়ে এলইইডিও-র অন্যরকম আয়োজন

কমলাপুর রেলস্টেশনের ভাঙাচোরা প্ল্যাটফর্মে বোতল কুড়িয়ে কিংবা হাত পেতে খাবার জুটত হাসান আলী মুসাফিরের। বয়স তখন পাঁচ কিংবা ছয়। রাতে স্টেশনের পাশে ঘুমিয়ে থাকলে মাঝে মাঝেই তাড়িয়ে দিত পুলিশ। 

এক রাতে স্টেশনের ইঞ্জিনের ছাদে উঠে পড়ে সে-তার ছোট্ট বন্ধুও সঙ্গে ছিল। বন্ধুকে টানতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায় সে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসার সময় খোঁজ নেওয়া হয় তার পরিবারের, কিন্তু কোনো সন্ধান মেলে না।

একপর্যায়ে দায়িত্ব নেয় অলাভজনক সংগঠন লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এলইইডিও)। তখন থেকেই তাদের আশ্রয়ে বড় হয় হাসান। এখন নবম শ্রেণির ছাত্র সে। শিখেছে গ্রাফিক ডিজাইনসহ নানা হাতের কাজ। স্বপ্ন-একদিন পুলিশ হয়ে অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে।

দুই দশকে ৩০-৩৫ হাজার শিশুর পুনর্বাসন
হাসানের মতো হাজারো শিশুর জীবনের বাঁক ঘুরেছে এলইইডিও-র হাত ধরে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় আড়াই দশকে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার সুবিধাবঞ্চিত ও পরিবারহারা শিশুকে উদ্ধার করে পুনর্বাসনের চেষ্টা করেছে তারা। কেউ কেউ ফিরে গেছে পরিবারের কাছে, আবার কেউ থেকে গেছে সংগঠনের আশ্রয়ে-গড়ে তুলেছে নিজের ভবিষ্যৎ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এমন ৩০০ শিশু-কিশোরকে নিয়ে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী আনন্দভ্রমণের। স্থান ছিল ঢাকার ধামরাইয়ের মোহাম্মদী গার্ডেন। সকাল থেকে চলেছে চকলেট দৌড়, পিলো পাসিং, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-সব মিলিয়ে উৎসবমুখর এক দিন।

পথ থেকে আশ্রয়ে
এলইইডিওর সংগঠকরা জানান, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিল পাচার, নিখোঁজ ও ভাসমান শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়ন। কর্মীরা প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। যেসব শিশুর পরিবারের সন্ধান মেলে না, তাদের উদ্ধার করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যদি পরিবারের হদিস না মেলে, প্রথমে নেওয়া হয় ‘শেল্টার হোমে’, পরে ‘পিস হোমে’।

ঢাকার কমলাপুর ও কদমতলীতে রয়েছে দুটি শেল্টার হোম, আর ওয়াশপুরে একটি পিস হোম। শেল্টার হোমে প্রায় ২৫ জন ও পিস হোমে প্রায় শতাধিক শিশুর থাকার ব্যবস্থা রযেছে। শেল্টার হোমে থাকা শিশুদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলতে থাকে, ব্যর্থ হলে পাঠানো হয় সরকারি ছোট মনি নিবাসেও। পিস হোমে থাকা শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানো হয়, শেখানো হয় বিভিন্ন কারিগরি কাজ।

এছাড়া ঢাকার কদমতলী, সদরঘাট, এয়ারপোর্ট, মিরপুর, কমলাপুর ও তেজগাঁওয়ে ‘স্কুল আন্ডার দ্য স্কাই’ নামে ছয়টি মুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা করছে সংগঠনটি। খোলা আকাশের নিচে বসে পথশিশুরা সেখানে শেখে অক্ষর আর জীবনের নতুন দিশা।

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পথশিশুরা
‘এলইইডিও’র উদ্যোগে এই শিশুরাই অংশ নিয়েছে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও। ২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপে, আর ২০২৩ সালে ভারতে পথশিশুদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে। সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলার গৌরবও অর্জন করেছে তারা।

বিশেষ শিশুর গল্প: মালেকা আক্তার
কুড়িগ্রামের রাজারহাট থেকে ট্রেনে উঠে ঢাকায় চলে এসেছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু মালেকা আক্তার। স্মৃতিশক্তি দুর্বল, জন্মগতভাবে এপিলেপসিতে আক্রান্ত। তাকে উদ্ধার করে ‘এলইইডিও’।

এখন সে সংগঠনের পিস হোমে থাকে, স্কুলে যায়। শেখানো হয়েছে সেলাই ও ক্রাফটের কাজ। একসময় হাঁটতেও কষ্ট হতো তার, এখন নিয়মিত চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থ। হাসতে হাসতে বলল, “এখানে আমি নিরাপদ, নিজের মতো করে বাঁচতে পারি।”

যে স্কুলে পড়েছেন, এখন সেই স্কুলেই শিক্ষক
মো. নিজাম হোসেনের গল্প যেন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। রায়েরবাজারের ছেলেটি বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর ঘরহারা হয়। একসময় ভাসমান জীবনে জড়িয়ে পড়ে। ‘এলইইডিও’র কর্মীরা খুঁজে পেয়ে তাকে ভর্তি করান স্কুলে। এরপর পঞ্চম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়।

বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগে পড়ছেন নিজাম। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের লর্ডস স্টেডিয়ামে পথশিশুদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলেছেন। এখন ‘এলইইডিও’র স্ট্রিট স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।

নিজামের ভাষায়, “আমি যে স্কুলে পড়েছি, আজ সেই স্কুলেরই শিক্ষক। এখানে ভাসমান শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি করাই।”

তার আঁকা ছবি সংগ্রহ করেছেন ফুটবলার হামজা চৌধুরী, ছাপা হয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ক্যালেন্ডারেও। ভবিষ্যতে জাতিসংঘে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

দিনভর হাসি, আনন্দ
বিকেলের দিকে মঞ্চে পুরস্কার বিতরণ। মাইকে নাম ঘোষণা হতেই শিশুদের উল্লাস-পিলো পাসিংয়ে কমলাপুরের বিজয়, চকলেট দৌড়ে হাবিবা, পিস হোম থেকে শামীম। মাঠ জুড়ে হাততালি আর হাসি।

প্রতি বছরই এমন আয়োজন করে ‘এলইইডিও’। অংশ নেয় ‘স্কুল আন্ডার দ্য স্কাই’-এর শিক্ষার্থী, শেল্টার ও পিস হোমের শিশুরা।

এদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হোসেন, বোর্ড সদস্য তুষার আহমেদ ইমরান, এবং ফ্রেন্ডস অব স্ট্রিট চিলড্রেনের চেয়ারম্যান মাইক শেরিফ।

ফরহাদ হোসেন বলেন, “আড়াই দশক ধরে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে আছি। এবার ৩০০ শিশুকে নিয়ে এসেছি। রাষ্ট্র যদি আমাদের সঙ্গে এগিয়ে আসে, এই শিশুরাই ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের সম্পদ হয়ে উঠবে।”

শেষে সাংস্কৃতিক পর্বে শিশুরা গেয়েছে দেশাত্মবোধক ও জনপ্রিয় গান। অতিথি মাইক শেরিফ গাইলেন ‘আমার হাড় কালা করলাম রে’ শিশুদের করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মাঠ। বিকেলের রোদে সবার যৌথ ছবি তোলার মধ্য দিয়ে শেষ হয় উৎসবের দিনটি- ভাসমান শিশুরা ফিরল মুখভরা হাসি নিয়ে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন
  • ভাসমান পথশিশুদের নিয়ে এলইইডিও-র অন্যরকম আয়োজন