নীল নদে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরি
Published: 5th, July 2025 GMT
কয়েক শ কোটি ডলার ব্যয়ে নীল নদে বাঁধ নির্মাণ করেছে ইথিওপিয়া। আগামী সেপ্টেম্বরে বাঁধটি উদ্বোধন করা হবে। গত বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে এ তথ্য জানিয়েছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ।
ইথিওপিয়া এই বাঁধের নাম দিয়েছে গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ ড্যাম বা সংক্ষেপে জিইআরডি। শুরু থেকে এই বাঁধ নির্মাণের আপত্তি ও সমালোচনা করে এসেছে নীল নদের ভাটির দুই দেশ মিসর ও সুদান।
দেশ দুটিকে বাঁধ নিয়ে আপত্তি না জানিয়ে একে যৌথ সুযোগ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে আবি আহমেদ পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘ভাটিতে থাকা দুই প্রতিবেশী দেশ মিসর ও সুদানের জন্য আমাদের স্পষ্ট বার্তা হলো—এই বাঁধ হুমকি নয় বরং সবার জন্য একটি সুযোগ। এখান যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ও যে উন্নয়ন ঘটবে সেটা শুধু ইথিওপিয়ারই অগ্রগতি বয়ে আনবে না।’
মিসরে এমনিতেই পানির তীব্র সংকট চলছে। দেশটির যে পানির প্রয়োজন তার ৯৭ শতাংশ আসে নীল নদ থেকে। এর মধ্যে উজানে বাঁধ নির্মাণকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে দেশটি।তবে মিসর ও সুদানের উদ্বেগের জায়গা হলো এই বাঁধের কারণে তারা নীল নদ থেকে প্রয়োজনীয় পানির প্রবাহ পাবে না। এই নদের পানি তাদের দেশের জীবন ও জীবিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বাঁধের কারণে তা হুমকির মুখে পড়বে। এই বাঁধটি নিয়ে ইথিওপিয়ার সঙ্গে মিসর ও সুদানের একটি যৌথ সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মিসরে এমনিতেই পানির তীব্র সংকট চলছে। দেশটির যে পানির প্রয়োজন তার ৯৭ শতাংশ আসে নীল নদ থেকে। এর মধ্যে উজানে বাঁধ নির্মাণকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে দেশটি।
চলতি বছর বিশ্বব্যাংকের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ইথিওপিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন। দেশটির সরকার বলছে, এই বাঁধ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।ইথিওপিয়ার উত্তর–পশ্চিমে নীল নদের ওপর ২০১১ সালে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মিসর সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে এই বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। একে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাঁধটি প্রায় এক কিলোমিটার প্রশস্ত। উচ্চতা ৪৭৫ ফুট।
বাঁধটির সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ৭ হাজার ৪০০ কোটি কিউবিক মিটার। এখান থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ইথিওপিয়ার বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সক্ষমতা তার দ্বিগুণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এই বাঁধ থেকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো এই বাঁধ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে দেশটি।
পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। আফ্রিকার দ্বিতীয় ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ইথিওপিয়া। দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও সবার ঘরে বিদ্যুৎ নেই। চলতি বছর বিশ্বব্যাংকের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ইথিওপিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন। দেশটির সরকার বলছে, এই বাঁধ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তবে বাঁধটি নিয়ে আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহেই বৈঠক করেছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও সুদানের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান জেনারেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। বৈঠকে তাঁরা ‘নীল নদ অববাহিকায় একতরফা যেকোনো উদ্যোগের বিরুদ্ধে তাদের জোরালো অবস্থান’ তুলে ধরেন। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ শট র ন ল নদ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার তারিখ আরও পেছাচ্ছে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার তারিখ আবারও পেছানো হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁকে বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে নতুন তারিখ বলা হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর। পরে রাতে জানা গেছে, সে তারিখ পিছিয়ে সম্ভাব্য যাত্রার তারিখ ঠিক করা হয়েছে ৯ ডিসেম্বর। এই তারিখও পেছাতে পারে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে অবগত একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁকে বিদেশ পাঠানোর পরিকল্পনা আরও দুদিন পিছিয়ে ৯ ডিসেম্বর করা হয়েছে। তবে তাঁর যাত্রার বিষয়টি নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে গতকাল সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতির বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে কাতারের ব্যবস্থাপনায় নতুন করে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে, সেটা ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় অবতরণের কথা থাকলেও পরে সময়সূচিও পুনর্নির্ধারণ করে ১০ ডিসেম্বর করা হয়েছে।
আরেকটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছেএদিকে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর কথা ছিল ঢাকায়। কারিগরি ত্রুটির কারণে সেটি পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হওয়ায় বিকল্প হিসেবে দ্রুত একটি ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করছে কাতার সরকার।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় কাতার দূতাবাস এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে ঢাকায় কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ প্রথম আলোকে বলেন, কাতার সরকার জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকায় পাঠাচ্ছে। চিকিৎসক এবং বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সময় সমন্বয় করে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাবে।
সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, জার্মানির এফএআই রেন্ট-এ-জেট নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া করা হচ্ছে। এটি আসবে জর্জিয়ার রাজধানী তিবিলিসি থেকে। গতকাল বিকেলে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ ও পরদিন ৭ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে যাত্রার কথা ছিল। পরে রাতে জানা যায়, এই সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন সূচি অনুযায়ী, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, কাতারের আমিরের নির্দেশে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠানো হচ্ছে। সেটি কবে ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করবে, সেটি চিকিৎসক এবং বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।
কূটনৈতিক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে যাওয়া লোকজনের কলেবর ছোট হবে। প্রাথমিকভাবে বিএনপি ১৮ জনের যে তালিকা করেছে, সেটা থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে যাবেন। তালিকায় থাকা বাকি ব্যক্তিরা বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যেতে পারেন।
চিকিৎসকেরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেনগুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে কয়েক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি নেতা ও চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে লন্ডন নেওয়া হবে।
এর এক ঘণ্টা পর আরেক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তথ্য দেন। পরে রাতে জানা যায়, কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ‘কারিগরি সমস্যা’ দেখা দেওয়ায় যাত্রা বিলম্বিত হতে পারে।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে বিএনপির মিডিয়া সেল তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিএনপির মহাসচিবকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা যদি যাত্রার জন্য উপযুক্ত থাকে এবং মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলে তাহলে তিনি ৭ ডিসেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন।
এরপর গতকাল জুমার নামাজের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন মসজিদে দোয়া মাহফিলের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকেরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। শনিবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছালে রোববার (৭ ডিসেম্বর) তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে চিকিৎসকেরা আশা করছেন।
অবশ্য গতকাল রাতে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, যাত্রার সম্ভাব্য নতুন তারিখ ঠিক করা হয়েছে ৯ ডিসেম্বর।
আরও পড়ুনখালেদা জিয়ার জন্য জার্মানির প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতার৬ ঘণ্টা আগেশাশুড়ির পাশে জুবাইদা রহমানলন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছানোর পর শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে দেখতে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে যান জুবাইদা রহমান। এ সময় সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান (ডানে)। গতকাল সকালে