জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তসহ ৭০০ বন্দী এখনো পলাতক, উদ্ধার হয়নি ২০ আগ্নেয়াস্ত্র
Published: 5th, July 2025 GMT
ছিনতাইকারী রাসেল মিয়া ওরফে জুয়েল ও তাঁর সহযোগীরা ৯ বছর আগে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চলন্ত একটি ট্রেনে ছিনতাই করতে গিয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেন। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ওই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় রাসেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই বছরের ১৬ নভেম্বর রাসেল ও তাঁর সহযোগীদের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।
এর পর থেকে রাসেল গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যান রাসেল। আট মাস পর গত ২৬ জুন ঝিনাইদহের মহেশপুরের জলিলপুর বাজারে অভিযান চালিয়ে রাসেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক ঘটনাবলিতে রাসেলের মতো পালিয়ে যাওয়া ১ হাজার ৫২০ বন্দীকে কারাগারগুলোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ফিরিয়ে আনাদের মধ্যে ১ হাজার ১৩০ জনের জামিন হয়েছে। এখনো ৭২১ বন্দী পলাতক। এ ছাড়া দেশের পাঁচ কারাগার থেকে খোয়া যাওয়া ২০ আগ্নেয়াস্ত্র (চায়নিজ রাইফেল ও শটগান) এখনো উদ্ধার করা যায়নি।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে পালিয়ে যাওয়া দুর্ধর্ষ বন্দীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ হতে পারেন।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ধর্ষ বন্দীরা বাইরে থেকে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করতে পারেন, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ হতে পারে।
কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে ও পরে দেশের কয়েকটি কারাগারে বন্দীরা বিশৃঙ্খলা করেন। এ সময় দেশের পাঁচ কারাগারে চরম বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ করে ২ হাজার ২৪০ বন্দী পালিয়ে যান। হামলাকারীরা কারাগার থেকে ৯৪টি শটগান ও চায়নিজ রাইফেল লুট করেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছয় বন্দী মারা যান। পলাতক বন্দীদের মধ্যে জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়াসহ বিচারাধীন মামলার আসামি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ২০৩ জন। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
কারা অধিদপ্তরের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পলাতক বন্দীদের খুঁজে পাচ্ছে না। ধারণা করা হয়েছে, তাঁরা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই হাজার হাজার লোক ফটক ভেঙে নরসিংদী জেলা কারাগারে ঢুকে পড়েন। তাঁরা কারাগারের সেলগুলো খুলে দেন এবং
আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দী পালিয়ে যান।
কারাগারটির জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো.
কারা কর্মকর্তা শামীম ইকবাল আরও বলেন, কারাগারের অফিসের অনলাইন সিস্টেম ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ফলে পলাতক বন্দীদের বিষয়ে তাঁদের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই।
কারা অধিদপ্তরের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পলাতক বন্দীদের খুঁজে পাচ্ছে না। ধারণা করা হয়েছে, তাঁরা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন।কারাগার সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা প্রধান ফটক ভেঙে গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা কারাগারের ভেতর তৃতীয় তলার একটি গুদাম ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারা বন্দীদের ফাইলপত্র নষ্ট করে। হুড়োহুড়ি করে পালাতে গিয়ে ছয় বন্দী মারা যান। ওই কারাগার থেকে ২০২ জন বন্দী পালিয়ে যান। তাঁদের অধিকাংশ জঙ্গিবাদের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় কারাগারে ছিলেন।
কারাগারটির জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, পালিয়ে যাওয়া ৬৫ বন্দীকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনো ১৩৭ বন্দী পলাতক।
কারা সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় কয়েক শ দুর্বৃত্ত সাতক্ষীরা কারাগারের সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ে। পরে তারা প্রধান ফটকের তালা ভেঙে কারাগারে ঢুকে তালা ভেঙে ৫৯৬ বন্দীকে বের করে নিয়ে যায়।
সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের কারা তত্ত্বাবধায়ক দেব দুলাল কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত ৫২৯ বন্দী আত্মসমর্পণ করেছেন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পালিয়ে যাওয়া ২৩ বন্দীকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন ২ নারীসহ ৪৪ বন্দী পলাতক।
৫ আগস্ট বিকেলে দুর্বৃত্তরা শেরপুর জেলা কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। ওই সুযোগে কারাগারে থাকা ৫১৮ বন্দী পালিয়ে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা ওই কারাগার থেকে ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র (৫ চায়নিজ রাইফেল ও ৪টি শটগান) লুট করে নিয়ে যায়।
জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার মুহাম্মদ আবদুস সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এখনো পলাতক ৩৮০ বন্দী। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লুট হওয়া ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং এসবের ১ হাজার ১৭৫টি গুলি উদ্ধার করেছে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত বছরে গণ-অভ্যুত্থানের দুই দিন পর ৭ আগস্ট দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের ভেতর বন্দীরা বিদ্রোহ করেন। একপর্যায়ে কারারক্ষীদের ওপর হামলা চালিয়ে ৯৮ বন্দী পালিয়ে যান।
কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে ৬৯ জন ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁদের ৬০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও ৯ জন জঙ্গি। এ ছাড়া কারাগার থেকে লুট হওয়া কিছু চায়নিজ রাইফেল ও শটগান উদ্ধার হয়নি।কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেনযোগাযোগ করা হলে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আবদুর রহিমের তথ্য অনুযায়ী, পালিয়ে যাওয়ার পর ৭২ বন্দী আত্মসমর্পণ করেছেন। ৯ বন্দীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৭ বন্দী পলাতক।
এদিকে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে ৬৯ জন ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁদের ৬০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও ৯ জন জঙ্গি। এ ছাড়া কারাগার থেকে লুট হওয়া কিছু চায়নিজ রাইফেল ও শটগান উদ্ধার হয়নি। এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে হয়। তবে বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি তাঁরা চরম অবনতি ঘটাতে পারবেন না। কারণ, পলাতক বন্দীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অধিকাংশ বন্দীদের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর আগ ন য় স ত র প রথম আল ক কর মকর ত পর স থ ত রক ষ ক র ৫ আগস ট র কর ছ বন দ ক বন দ র শটগ ন এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
জনসাধারণের সমস্যা নিয়ে সরকার কতটা চিন্তিত
গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের আশা ছিল, দেশে স্থিতিশীলতা ও স্বস্তি ফিরে আসবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক পরিচিতি, অরাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল সহজ-সরল ও বাস্তবঘনিষ্ঠ: হয়তো জীবন কিছুটা সহজ হবে। বাস্তবে সে প্রত্যাশার ফল মিলছে না।
দেশের জনসাধারণের প্রতিদিনের বাস্তবতা– খাবার জোগাড়, বাসা ভাড়া, সন্তানের পড়ালেখা, অসুখ হলে চিকিৎসা, মাস শেষে ধার না করে চলার চেষ্টা। এসবই তাদের জীবনের মুখ্য বিষয়; শহর-পল্লি নির্বিশেষে। কোথাও হয়তো বাসা ভাড়ার প্রশ্নটি নেই; আছে অন্যান্য খরচের বিষয়। লেখাপড়ার কারণে বাড়ি থেকে দূরে থাকা সন্তানের হোস্টেল বা মেস ভাড়া দেওয়ার চিন্তা।
এমন বাস্তবতায় আম জনতা রাজনীতিতে সরাসরি আগ্রহ না দেখালেও রাজনীতির যে কোনো পট পরিবর্তন তাদের জীবনে প্রবল প্রভাব ফেলে। গত এক বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আয় না বাড়া, খরচের চাপ মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে। টিসিবির পণ্যের লাইনে ভিড় বেড়েছে, অথচ স্বস্তির আশা কমেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত তিনটি লক্ষ্য– সংস্কার, বিচার এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোরও দাবি। সাধারণ মানুষও এগুলোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। কিন্তু এসব উদ্যোগ তাদের জীবনের বাস্তব সংকট দূর করার সঙ্গে কতটা যুক্ত– তা নিয়ে এখন সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পার হয়েছে, কিন্তু স্বস্তির দেখা মেলা ভার।
দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ও মূল্য ক্রেতার নাগালে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন– এসব বিষয়ে জনগণ যে ধরনের অগ্রগতি দেখতে চেয়েছিল, তা হচ্ছে না। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের বড় তিনটি কাজের ঘোষণা সাধারণ মানুষের কাছে ‘বিমূর্ত ছবি’ হয়ে উঠছে। আম জনতার প্রাথমিক চাওয়া– নিরাপদ জীবন, শান্তিতে ঘুমানো, সঞ্চয়ের সামান্য সুযোগ, আত্মমর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকা। এই মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণেও যদি সরকার ব্যর্থ হয়, তাহলে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন কেবল রাজনৈতিক শব্দ হয়েই থাকবে।
১২ মাসের মাথায় দাঁড়িয়ে স্পষ্টভাবে বলা যায়– অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় ঘাটতি হলো স্বচ্ছতা ও নিয়মিত জনসংযোগের অভাব। শুরু থেকেই যদি সরকারের পক্ষে প্রতি সপ্তাহে কিংবা অন্তত ১৫ দিন অন্তর জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়া হতো; তাদের কাজের অগ্রগতি, উদ্দেশ্য এবং সাধারণ মানুষের জীবনে সরকারের কাজের প্রভাব ব্যাখ্যা করা হতো; তাহলে অনিশ্চয়তা, গুজব ও ভুল ব্যাখ্যার জায়গা তৈরি হতো না।
পাশাপাশি আরেকটি সংকট জনমানসে জায়গা করে নিচ্ছে। সরকার যেন কেবল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবি পূরণেই বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছে। এতে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বিশেষত বেসরকারি খাত, খেটে খাওয়া, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ নিজেদের বঞ্চিত মনে করছে। এ বঞ্চনা থেকে তৈরি হচ্ছে গভীর বিচ্ছিন্নতাবোধ, যা দীর্ঘস্থায়ী হলে সরকারের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে জরুরি সরকারের এমন একটি রোডম্যাপ, যা জনগণের মৌলিক চাহিদার প্রতিফলন ঘটায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থানমুখী আর্থিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখানো না গেলে সংস্কার-বিচার-নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অর্থহীন হয়ে যাবে। এমনিতেই এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের অন্যতম বৃহত্তম আবাসন খাত স্থবির হয়ে পড়ায় সংশ্লিষ্ট শিল্পকারখানা ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ লক্ষাধিক মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। টাকার হাতবদল কমে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে কর্মসংস্থানের অন্যান্য খাত। এ নিয়ে সরকারের দিক থেকে কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন যা করতে হবে: জনগণের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে সরকারের পরিকল্পনাকে যুক্ত করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ এবং মানুষের অর্থনৈতিক কষ্ট লাঘবে কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রকৃত সাফল্য বিচার হবে এই প্রশ্নে– সাধারণ মানুষের কতটা পাশে দাঁড়িয়েছে; তাদের কতটা শোনার চেষ্টা করেছে এবং তাদের কতটা মর্যাদা দিয়েছে।
জনগণ বড় বড় প্রতিশ্রুতি চায় না। তারা চায় দেশের সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন আয়োজনের আড়ালে যেন তাদের বেঁচে থাকার মতো জীবন বিনষ্ট বা বিপর্যস্ত না হয়। তারা চায় যেন বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ বহাল থাকে। যেখানে খাদ্যের নিশ্চয়তা থাকবে, শোনার মতো সরকার থাকবে এবং সম্মান নিয়ে বাঁচার সুযোগ থাকবে। যদি সরকার সেই মৌলিক মানবিক শর্তগুলোও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হতে পারে। কারণ জনগণ যদি পাশে না থাকে, তাহলে কোনো সরকারই টিকতে পারে না। সেটা অন্তর্বর্তী হোক বা নির্বাচিত।
মোহাম্মদ গোলাম নবী: কলাম লেখক; প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইট টার্ন