মাছ এবং মুরগি দুটিই শরীরের জন্য উপকারী। তবে যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য কোনটি উপকারী জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। 

পুষ্টিবিদদের মতে, যারা ওজন কমাতে চান তাদের নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি ভালো প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় খুব কম পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাবার রাখা উচিত। প্রোটিন দীর্ঘস্থায়ী শক্তি যোগায়। এটি পেশিকে শক্তিশালী করে। মাছ এবং মুরগি দুই খাবারেই প্রোটিন পাওয়া যায়।

ওজন কমাতে চাইলে মাছ না মুরগি
কিছু গবেষণা অনুসারে, মাছ খেলে পেট ভরা অনুভূতি হয়। মাছে ক্যালোরি কম থাকে। এটি খেলে পেশি শক্তিশালী হয় এবং তুলনামুলকভাবে শরীরে বেশি শক্তি পাওয়া যায়।
‘নিউট্রিশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, হৃদ্‌রোগীদের সুস্থ থাকতে মাছ খাওয়া খুব জরুরি। এ ক্ষেত্রে সামুদ্রিক মাছ খুব উপকারী। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো। চাইলে ছোট মাছও খেতে পারেন। যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন তারাও বেশি করে মাছ খেতে পারেন। উপকার পাবেন। 
পুষ্টিবিদরা বলছেন, ওজন কমাতে মুরগিও দারুণ উপকারী। মুরগির মাংসে থাকা নানা রকম স্বাস্থ্যগুণ দ্রুত ওজন ঝরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। তবে মুরগির মাংস কী ভাবে খাচ্ছেন সেটা জরুরি। ডোবা তেলে ভেজে খাওয়া ঠিক নয়। শরীরের যত্ন নিতে চাইলে চিকেন দিয়ে বানাতে হবে স্টু, স্যুপ জাতীয় খাবার। অনেকে আবার গ্রিলড চিকেনও খান। সিদ্ধ মুরগির মাংস খেতে পারলে বাড়তি উপকার পাওয়া যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, আট সপ্তাহ ধরে অন্য কোন মাংস না খেয়ে শুধু মাছ খাওয়া ব্যক্তিরা, মাছ না খাওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক বেশি ওজন কমিয়েছেন। তবে শুকনো মাছে বেশি ক্যালোরি থাকে। যারা ওজন বাড়াতে চান তারা শুকনো মাছ খেতে পারেন।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, ওজন কমাতে মাছ এবং মুরগির মাংস দুটি জরুরি। তবে মাছ কিংবা মাংস যাই খান, কী ভাবে খাচ্ছেন খেয়াল রাখুন। বেশি বেশি তেল-মসলা দিয়ে রান্না করে খেলে কোনও ফল পাওয়া যাবে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ওজন কম ন ওজন কম ত ম রগ র ম উপক র

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশকে জনবান্ধব ও মানবিক হিসেবে গড়ে তুলতে সংস্কারের বিকল্প নেই

বাংলাদেশ পুলিশকে সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব ও মানবিক পুলিশ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংস্কারের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কার: প্রেক্ষিত নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের আলোচনায় এ বক্তব্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. এম. আকবর আলীর সভাপতিত্বে শনিবার (৫ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

আরো পড়ুন:

নাসিরনগরে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

পাট ক্ষেতে মিলল নিখোঁজ বৃদ্ধের মরদেহ 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. মো. মতিয়ার রহমান। মুখ্য আলোচক ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. মাহমুদুর রহমান।

বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি মো. আব্দুর রহমান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা। গোলটেবিল বৈঠকে বিচারপতি, সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা এবং সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধে ড. মতিয়ার রহমান বলেন, “পুলিশ বাহিনীর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ হলো, ঔপনিবেশিক আইন ও কাঠামো, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিগত ঘাটতি, দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার অভাব এবং কর্মচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।”

তিনি বলেন, “এজন্য প্রয়োজন আধুনিক ও গণমুখী আইন প্রণয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও মনোভাব পরিবর্তন, পুলিশকে অযাচিত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার বাস্তবায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সুশৃঙ্খল ও মানবিক বাহিনী এবং পুলিশের সেবামুখিতা অর্জন।”

তিনি বলেন, “পুলিশ বাহিনীর কাজের ওপর নিরপেক্ষভাবে নজরদারি নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। এ কমিশনে সাবেক ও বর্তমান বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও নারীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থাকবেন।”

তিনি বলেন, “স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মানবাধিকারসম্মত এবং জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গড়ার মধ্যে নিহিত রয়েছে একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।”

মুখ্য আলোচক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, “পুলিশ সংস্কার করতে হলে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে, পুলিশ সদস্যদের বেঁচে থাকার মতো সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, পুলিশের প্রশিক্ষণ আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে, র‍্যাব থেকে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে।”

তিনি এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পুলিশের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা কমিটি গঠনেরও সুপারিশ করেন।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পুলিশের অধঃপতন হয়েছে। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হলে পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে।” তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, “শেখ হাসিনার সময় পুলিশে ‘চেইন অব কমান্ড’ ছিল না। জুলাই বিপ্লবের পূর্বে পুলিশ ছিল দানবীয়। আজ পুলিশ মনোবলহীন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।”

নিজের রিমান্ডকালিন অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, “পুলিশ আজ যে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে এজন্য কি পুলিশ দায়ী? তখন যারা ডিবিতে ছিলেন তারা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় অথবা অন্যান্য পর্যায়ে নেতা। জুলাই বিপ্লব এজন্য অনিবার্য ছিল।”

তিনি বলেন, “এখন আমাদের টার্গেট হলো আরেকটা ফ্যাসিবাদ যেন আবার ফিরে না আসে সে ব্যবস্থা করা।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. বোরহান উদ্দিন বলেন, “পুলিশের পদোন্নতি, পোস্টিংয়ের জন্য আলাদা আইন থাকা প্রয়োজন। কোনো সরকারই পুলিশ কমিশন করতে চাইবে না।”

পুলিশকে মিলিটারি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ড. আহমেদ আবদুল কাদের বলেন, “পুলিশকে কখনো ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এজন্য পুলিশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।”

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য জারিফ রহমান বলেন, “ঐকমত্য কমিশন থেকে পুলিশ সংস্কারকে বাদ দেওয়া জুলাই আন্দোলনের সাথে এক ধরনের বেঈমানি।”

সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, “বিগত সরকারের আমলে পুলিশের ভূমিকার কারণেই পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সংস্কার আজ অনিবার্য।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “পুলিশকে শুধু ব্যবহার করা হয়। পুলিশে অনেক ভাল মানুষ আছেন তারা পরিবর্তন চায়। পুলিশকে ভালো হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।”

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “পুলিশের নিয়োগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। পুলিশ সদস্যদের সম্মানজনক বেতন-ভাতাদি দিতে হবে। ঐকমত্য কমিশনে পুলিশ সংস্কার বিষয়ে আলোচনা করা হবে,” বলে তিনি আশ্বাস দেন।

বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, “শেখ হাসিনা পুলিশকে গণশত্রুতে পরিণত করেছিল।”

তিনি পুলিশ সদস্যদের পদায়নের ক্ষেত্রে ফিট লিস্ট করার সুপারিশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, “ঔপনিবেশিক আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে পুলিশ সংস্কার করতে হবে। শুধু পুলিশ সংস্কার করলেই হবে না, প্রশাসনও সংস্কার করতে হবে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, “পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।”

সভাপতির বক্তব্যে ড. এম. আকবর আলী বলেন, “১৮৬১ সালের পুলিশ আইনে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। পুলিশের জনসম্পৃক্ততার কথা নেই। পুলিশকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের আওতায় আনতে হবে। পুলিশের মনোবল বৃদ্ধির জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।”

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ