ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ক্লাবগুলো ইউরোপ চমক দিয়েছে। ম্যাচ হারিয়েছে, টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ও করেছে। সেমিফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে চেলসির বিপক্ষেও চমকের সুযোগ ছিল পালমেইরাসেরও। কিন্তু গোলরক্ষক ওয়েভারটনের ভুলে ২-১ গোলে হেরেছে তারা। সেমিফাইনালে চলে গেছে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসি। 

শনিবার সকালে ফিলাডেলফিয়ার লিংকন ফাইন্যান্সিয়াল ফিল্ডে ম্যাচের ১৬ মিনিটে লিড নেয় চেলসি। গোল করেন তরুণ ইংলিশ মিডফিল্ডার কোলে পালমার। প্রথমার্ধে শুধু ওই গোলে নয় সুযোগ তৈরি ও ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ বিবেচনায় পুরোটা এগিয়ে ছিল ব্লুজরা। 

তবে দ্বিতীয়ার্ধে ১৮ বছর বয়সী তরুণ এস্তেভাও উইলিয়ামসের দারুণ এক গোলে সমতায় ফেরে পালমেইরাস। তিনি ৫৩ মিনিটে বক্সের কোনা থেকে বাঁ-পায়ের দারুণ শটে চেলসি গোলরক্ষককে বোকা বানান। টুর্নামেন্টে এস্তেভাওয়ের এটি প্রথম গোল। সেটাও আবার চেলসির বিপক্ষে। ক’দিন বাদেই যে ক্লাবে যোগ দিতে যাচ্ছেন এই ব্রাজিলিয়ান। 

সমতায় ফেরার পরও পালমেইরাস ব্যাকফুটে ছিল। তবে চেলসিকে সেভাবে গোলের সুযোগ দিচ্ছিল না আবেল পেরেইরার দল। বল ও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ রাখা ব্লুজরাও বারবার আক্রমণে উঠছিল। তবে চেলসির কপাল খোলে এবং পালমেইরাসের কপাল পোড়ে ব্রাজিল জাতীয় দলের তৃতীয় পছন্দের গোলরক্ষক ওয়েভারটনের ভুলে। 

ম্যাচের ৮৩ মিনিটে গোলরক্ষকের ভুলে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে পালমেইরাস। চেলসির লুইস গুস্ত বাঁ পায়ে ছোট করে শট নেন। তা পালমেইরাস ফুটবলারের পায়ে সামান্য লেগে ওয়েভারটনের সামনে পড়ে জালে চলে যায়। বল সামান্য বাক বদলানোয় বোকা বনে যান পালমেইরাস গোলরক্ষক। 

এই জয়ে সেমিফাইনালে চেলসি মুখোমুখি হবে আরেক ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের। আল হিলালকে ২-১ গোলে হারিয়ে ব্রাজিলের ক্লাবটি শেষ চারে এসেছে। ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল ব্রাজিলের চার ক্লাব। চার দলই শেষ ষোলোয় পা রেখেছিল। সেখান থেকে শেষ আটে পৌছে দুই দল। সেমিফাইনালে রইল বাকি এক।    

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ল ব ব শ বক প চ লস স ম ফ ইন ল চ লস র

এছাড়াও পড়ুন:

বিতর্কে মুখে টেলিযোগাযোগ খাতের সংষ্কার

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থাপনা সংষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত এপ্রিল মাসে খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। নতুন নীতিমালায় বিদেশি বিনিয়োগ আরও উন্মুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান বহুস্তর ভিত্তিক বিভিন্ন লাইসেন্সের পরিবর্তে তিন স্তরের লাইসেন্স কাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সংষ্কার উদ্যোগ নিয়ে নানামুখী বিতর্ক শুরু হয়েছে।  

টেলিকম উদ্যোক্তা, রাজৈনিক দল, প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা খসড়া নীতিমালা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তারা বলছেন, এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় উদ্যোগ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। মোবাইল অপারেটররা বলছেন, বহু স্তরবিশিষ্ট লাইসেন্সিং নীতিমালায় পরিবর্তন আসলে গুণগত সেবা দেওয়া সহজ হবে। আর সরকার বলছে, গ্রাহকের খরচ কমাতে এবং দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করতেই নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। 

২০০১ সালের নীতিমালা বদলিয়ে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইন্টারন্যাশনাল লং ডিস্টেন্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস (আইএলডিটিএস) নামে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে। এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতে বহুস্তর বিশিষ্ট টেলিযোগ কাঠামো তৈরি হয়।

চার অপারটরের লাইসেন্স বাতিল হবে
খসড়া নীতিমালায় তিনটি মূল লাইসেন্স ক্যাটাগরি প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইল ও ফিক্সড ফোন অপারেটরদের অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এনএনএসপি) লাইসেন্স নিতে হবে। ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইসিএসপি) লাইসেন্সটি হবে ফাইবার, টাওয়ার ও ব্যাকহল নেটওয়ার্কের জন্য। আন্তর্জাতিক ভয়েস ও ডেটা সংযোগের জন্য নিতে হবে ইন্টারন্যাশনাল কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি) লাইসেন্স। ফলে বর্তমানের ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (নিক্স), ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইডিডব্লিউ) ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এই চার অপারেটরের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষে বাতিল হবে।

নির্ধারিত শর্ত মেনে তারা নতুন লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে পরিবর্তনের সুযোগ পাবে। ২০২৭ সালের মধ্যে সকল বিদ্যমান লাইসেন্সধারীদের নতুন কাঠামোর অধীনে স্থানান্তরিত হতে হবে। নীতিমালার খসড়ায় স্থানীয় পর্যায়ের ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবা প্রদানকারীদের জন্য দুটি এনলিস্টমেন্ট ক্যাটাগরি প্রস্তাব করা হয়েছে, স্মল আইএসপি সার্ভিস ও স্মল টেলিকম সার্ভিস।

লাইসেন্স ছাড়া সেবা
খসড়া নীতিমালায় টেলিযোগাযোগ খাতের কয়েকটি সেবাকে লাইসেন্সের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এগুলো হলো– কল সেন্টার, ভেহিকেল ট্র্যাকিং সেবা এবং টেলিকম খাতের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (টিভ্যাস)।

বিদেশ বিনিয়োগ উন্মক্ত
নীতিমালায় বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দরজা আরও উন্মুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় আইএসপি লাইসেন্সে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ এবং স্থানীয় আইএসপি লাইসেন্সে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মালিকানা রাখা যাবে। 

আরও যা আছে খসড়ায়
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) আপাতত একটি স্বতন্ত্র লাইসেন্স হিসেবেই চলবে। তবে নতুন লাইসেন্স ক্যাটাগরি চালু হলে এটি এনআইসিএসপি লাইসেন্সে রূপান্তরের সুযোগ পাবে। সব লাইসেন্সধারীকে বিটিআরসি নির্ধারিত সেবার গুণমান (কিউওএস) মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। এই মানদণ্ডে নির্দিষ্ট কি পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর (কেপিআই) নির্ধারণ থাকবে, যা পূরণে ব্যর্থ হলে লাইসেন্স নবায়নে সমস্যা হতে পারে, এমনকি লাইসেন্স বাতিলের ঝুঁকিও থাকবে। অবকাঠামো ভাগাভাগি সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে ফাইবার, টাওয়ার, ডেটা সেন্টার ও রেডিও নেটওয়ার্কসহ সব ধরনের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

দেশীয় উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ
মোবাইল কোম্পানির স্বার্থেই লাইসেন্সিং নীতিমালা পরিবর্তন করা হচ্ছে- অভিযোগ দেশীয় উদ্যোক্তাদের। আইজিডাব্লিউ অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) সভাপতি আসিফ সিরাজ রব্বানী বলেন, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে টেলিকম খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। ২৩টি আইজিডব্লিউ ও আন্তঃঅপারেটর সেবাদানকারী ২৪টি আইসিএক্স প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে এই খাতের কয়েক হাজার প্রকৌশলী ও কর্মী বেকার হয়ে পড়বে। তারা প্রতিবছর সরকারকে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব দিচ্ছেন সরকার তা থেকে বঞ্চিত হবে। বিদেশি কোম্পানির ব্যবসা বাড়ার কারণে দেশের অর্থ বাইরে চলে যাবে। 

ন্যাশনওয়াইড টেলিকম ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক কোম্পানি (এনটিটিএন) ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মইনুল হক সিদ্দিকী বলেন, নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে এ খাতের মাঝের স্তর পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে। ছোট অপারেটর আইএসপিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

টেলিকমিউনিকেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার অপারেটর অব বাংলাদেশের (টিআইওবি) সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খসড়া টেলিযোগাযোগ নীতিমালায় চূড়ান্ত হলে দেশের বাজারে বিদেশি অপারেটরদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। 

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম বলেন, নতুন নীতিমালায়  স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য তেমন কোনো সুরক্ষা রাখা নেই। 

বিএনপির উদ্বেগ
খসড়া টেলিযোগাযোগ নীতিমালা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপিও। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে যা টেলিযোগাযোগ খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নে বাধা দিতে পারে। এই নীতিমালায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এতে বাজারে বিদেশি কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্যের ঝুঁকি বাড়বে। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে এই গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা এ সময়ে একতরফাভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন হবে না বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। 

‘মোবাইল অপারেটরদের বাড়তি সুবিধা নেই’
প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ নীতিমালায় মোবাইল কোম্পানিগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে মোবাইলফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব। তবে সংগঠনটি বলছে, ২০০৭ সালের পুরোনো নীতিমালার কারণে অনেক বাধা তৈরি হয়েছে। অনেক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান (যেমন আইজিডব্লিউ, আইআইজি, আইসিএক্স, এনটিটিএন) তৈরি হয়েছে, যেগুলো খরচ বাড়িয়েছে এবং সেবার মানে বাধা দিচ্ছে।

একটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটি যদিও চূড়ান্ত সমাধান নয়, তবে সময়োপযোগী ও সাহসী উদ্যোগ। তারা চায়, সব পক্ষকে নিয়ে বাস্তবভিত্তিক ও অংশগ্রহণমূলক নীতিমালা তৈরি হোক, যা সেবা উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক হবে।

সরকারের বক্তব্য
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে বিদ্যমান বহুস্তর লাইসেন্স কাঠামো এ খাতের বিকাশের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। মোবাইল ইন্টারনেট ও ভয়েস কলের দাম কমানো যাচ্ছে না। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে লাইসেন্সিং কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। স্থানীয় আইএসপিদের কোনো লাইসেন্স লাগবে না। জাতীয় পর্যায়ে আইএসপি ব্যবসা করতে হলে লাইসেন্স লাগবে। যারা সেলুলার সেবা দেবে তারা এনটিটিএন সেবা দিতে পারবে না। এনটিটিএন সেবা দিতে হলে নতুন প্রতিষ্ঠান লাগবে। বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। উৎসাহিত হবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ। এতে সেবার মান বাড়বে, গ্রাহকের খরচ কমবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মত দিচ্ছে, এটা ইতিবাচক। সবার মত নিয়ে দেশীয় স্বার্থ রক্ষা করে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ