দুদকের ডাকে সাড়া দেননি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ২ পিও
Published: 20th, May 2025 GMT
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ডাকে সাড়া দেননি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসান। এমনকি সময় বৃদ্ধির জন্য তারা কোনো আবেদন করেননি।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদবির বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের তলব করে দুদক।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের কথা ছিল তাদের। তবে তারা কেউই হাজির হননি।
আরো পড়ুন:
সাবেক মেয়র খালেক ও তার স্ত্রীর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা
গোপালগঞ্জে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে দুদকের অভিযান
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.
তিনি বলেন, “তাদের অনুপস্থিতির কারণে দুদকের অনুসন্ধান থেমে থাকবে না। দুদকের আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান থাকবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ হলে দুদকের টিম তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদনের আলোকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবিকে ২০ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। এছাড়া এনসিপির সাবেক নেতা গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরকে ২১ মে এবং স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনকে ২২ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবিকে সম্প্রতি অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন ও সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ তুহিন ফারাবির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, তদবির বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে। অভিযোগ আমলে নিয়ে দুইজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ জন্য আলাদা টিমও গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির সাবেক যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দীন তানভীরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, তদবির বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নামে বেনামে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠলে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ট্যাগিং কিংবা নিপীড়নের নতুন হাতিয়ার
দেশে সম্প্রতি ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ট্যাগিং খুব ‘জনপ্রিয়’ হয়ে উঠেছে। এখানে বিভিন্ন ট্যাগিং ব্যবহার করা হয় প্রতিপক্ষ, অপছন্দের লোকের ওপর। ইংরেজিতে একটা কথা আছে– ‘গিভ এ ডগ এ ব্যাড নেম অ্যান্ড হ্যাং হিম’। কাউকে কোনো নাম দাগিয়ে দিলে তাকে বধ করা বা তার ক্ষতি করা সহজ হয়ে ওঠে। গত দেড় দশক এখানে ‘রাজাকার’ বা ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ ট্যাগ দেওয়া হতো প্রতিপক্ষকে বধ করতে।
এখন ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ট্যাগ দিয়ে যাকে তাকে, যখন তখন হেনস্তা করা যাচ্ছে। রাস্তায় লোক জড়ো করে পেটানো যাচ্ছে। এমনকি পিটিয়ে মেরেও ফেলা যাচ্ছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায় নীরবে এসব দেখছে। তারা বেতনের দাবিতে জড়ো হওয়া কারখানার শ্রমিকদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করতে পারলেও কোনো এক আশ্চর্য কারণে এদের সঙ্গে ঠিক পেরে উঠছে না।
এরা ইভটিজারকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় ঢুকে হুমকি-ধমকি দিতে পারে। গুলশানের মতো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে, টিভি ক্যামেরার সামনে অন্যের বাড়ি লুট করে বীরদর্পে বেরিয়ে যেতে পারে। কেউ এদের টিকিটি ছুঁতে পারে না। এরা ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে আজ অমুককে পেটায়, কাল তমুককে পেটায়, পরশু চাকরি খায়, তরশু সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করে।
বাংলাদেশে গত ১৫ বছর ছিল দুঃস্বপ্নের। আপস করতে করতে মানুষ একসময় সয়েও গিয়েছিল। কিন্তু সহ্যেরও শেষ আছে। সেটা অতিক্রমের পর মানুষ প্রতিবাদ করেছে। রাস্তায় যারা নেমেছিল তারা প্রাণের মায়া করেনি। বরং প্রাণ দিয়েছে অকাতরে। অন্ধ হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এক ভয়ংকর স্বৈরশাসকের কবল থেকে অনেক প্রাণের বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তারপর থেকে যেন সব শাসনের বেড়ি টুটে গেছে। কয়েকজন লোক জোগাড় করতে পারলে এখন বেআইনি সব করা যাচ্ছে।
এরা ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ কথাটা খুব গ্রহণ করেছে। কারও সম্পত্তি দখল করতে হবে– নাম দাও ফ্যাসিবাদের দোসর। কারও চাকরি খেতে হবে– নাম দাও ফ্যাসিবাদের দোসর। কারও প্রেমিকাকে হেনস্তা করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর নাম দিয়ে যাকে খুশি পুলিশে দিয়ে দাও। পুলিশ অন্যদের সামলাতে না পারলেও ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ পাকড়াও করতে বেশ সফলতার পরিচয় দিয়েছে।
গত দেড় দশকে প্রতিটি মানুষকে কোনো না কোনোভাবে আপস করে বসবাস করতে হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বাধ্যতামূলকভাবে দেখাতে হয়েছে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। নইলে তাদের পদোন্নতি তো দূরের কথা, চাকরি বাঁচানোই মুশকিল হতো। ব্যবসায়ীদের দেখাতে হয়েছে তাদের চেয়ে বড় আওয়ামী লীগ নেই। নইলে তারা ব্যবসা করতে পারত না। বুদ্ধিজীবীদের উনিশবার বলতে হয়েছে তাদের পরিবার আওয়ামী সমর্থক তবু নেহাতই যৌক্তিক কারণে সমালোচনাটা করতেই হচ্ছে। এসব না করলে রেহাই ছিল না কারও, সমালোচনা করতে হলেও প্রচুর গুণগান গেয়ে নিতে হতো প্রথমে। সেটাই ছিল তখনকার সমালোচনার কৌশল। বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে থেকে কোনো কৌশলের আশ্রয় না নিয়ে স্পষ্টভাবে সরকারের বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করতে পেরেছেন এমন মানুষ দশজনও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। তারপরও কখন কাকে সাদা পোশাকের লোক এসে তুলে নিয়ে যায় সেই ভয়ে সর্বদা তটস্থ থেকেছে মানুষ। মানুষ আর মানুষ থাকেনি, হয়ে উঠেছিল মানবেতর। সরকার সমর্থিত একদল লুটেরা ছাড়া দৃশ্যত এখানে সবাই যাপন করছিল প্রজার জীবন।
শেখ হাসিনা তাঁর জমিদারিতে কাউকে নাগরিক ভাবতেন না, সবাই ছিল তাঁর প্রজা। এখানে কৌশলে বাঁচতে হয়েছিল মানুষকে। সুতরাং কোনো না কোনো যুক্তিতে প্রায় সবাইকেই ফ্যাসিবাদের দোসর নাম দিয়ে দেওয়া যাবে এখন। কেননা, সবাইকেই আপস করে চলতে হয়েছে। এমনকি যে সমন্বয়কদের নেতৃত্বে মানুষ পথে নামল এদেরও অনেকেই সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল গণআন্দোলনের আগেও। আন্দোলন শুরু হলে অনেক মানুষ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পদ ত্যাগ করে সাধারণের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিল। শেখ হাসিনার পুলিশ ছাত্রদের গুলি করার পরপরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের ছেলেরা পদত্যাগ করছিলেন। তখনকার পত্রপত্রিকা নিয়মিত পড়েছেন যারা তাদের মনে থাকার কথা ঘটনাগুলো। সুতরাং, ফ্যাসিবাদের দোসর নাম দিতে চাইলে সম্ভবত যে কাউকে এই নাম দিয়ে দেওয়া যাবে। তাহলে গত ১৫ বছরে যারা সরাসরি নির্যাতিত হয়েছেন, তারা বাদে এই দেশে কি সবাই নির্যাতনযোগ্য এখন?
বিগত আমলে রাজাকার নাম দিয়ে মানুষকে হেনস্তা করা হয়েছে, এখন নাম দেওয়া হচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসর। এই নামে ডেকে যে কাউকে সামাজিক, শারীরিক, মানসিক আক্রমণ করা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভ চরিতার্থ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের একটি। স্বভাবতই এই দলের সমর্থন করেন এমন মানুষের সংখ্যা এখনও কম নয়। শুধু দলটিকে সমর্থন করার কারণে এমন অনেক মানুষ নিগৃহীত হচ্ছেন যারা কোনো অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন। এমন অনেক মানুষ যারা এমনকি কোনো দলের সমর্থক নন, তারাও আখ্যা পাচ্ছেন ফ্যাসিবাদের দোসর। শত্রুতাবশত বা লুটপাটের জন্য এই বিশেষণ দেওয়া হচ্ছে যাকে তাকে।
আওয়ামী লীগের আমল থেকেই এখানে ‘মামলা বাণিজ্য’ নামে একটি কথা চালু হয়েছে। মামলার ভয় দেখিয়ে অথবা মামলায় নাম দিয়ে পরবর্তী সময়ে সেই নাম কাটানোর কথা বলে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নেওয়া হয়। ৫ আগস্টের পর মামলা বাণিজ্য শুরু হয়েছে আরও জোরেশোরে।
কোনো অবস্থাতেই সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। এটা কোনো নতুন বন্দোবস্ত নয়। এটা পুরোনো স্বৈরাচারী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। এটা জুলাই আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে স্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক। মানুষ একটি উন্নতর ব্যবস্থার জন্য রাস্তায় নেমেছিল। এমন স্বৈরাচারী ব্যবস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নয়।
মেহেদি রাসেল: কবি ও প্রাবন্ধিক
mehedirasel32@gmail.com