দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের ঝুঁকিপূর্ণ ডাকবাংলো সেতু নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন স্থানীয়রা। সেতুটির রেলিং শেষ পর্যন্ত ভেঙেই পড়ল।
সোমবার সন্ধ্যায় এক মোটরসাইকেল আরোহী সেতুটি পার হওয়ার সময় এর একাংশের রেলিং ভেঙে যায়। এ ঘটনা সেতুটির ঝুঁকির ব্যাপারে চূড়ান্ত বার্তা পাওয়া গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদরের নলজুর নদীর ওপর নির্মিত ডাকবাংলোর পশ্চিম দিক থেকে মোটরসাইকেলে দুই যুবক সেতুর পূর্ব দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় সেতুতে যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে মোটরসাইকেলটি বের করার সময় রেলিংয়ে সামান্য চাপ লাগতেই সেটি ভেঙে যায়। এতে কেউ হতাহত হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী সুহেল আহমদ বলেন, সদরের খাদ্যগুদামের পুরোনো সেতুটি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে নদীর দুই পারের কয়েক লাখ মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতুটি। এমনতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সেতুর করুণদশা। সেতুটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ জোরাতালির এ সেতু দিয়ে উপজেলার পূর্বপার থেকে পশ্চিমপারে একমুখী যানবাহন চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও কেউ তা মানছে না। এমনই সেতুর অবস্থা নাজুক, তার ওপর যানজটের চাপে ঝুঁকি বেড়ে গেছে কয়েক গুণ বেশি।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অর্থায়নে নির্মাণকাজ শুরু হয় ডাকবাংলো সেতুর। শেষে ১৯৯৬ সালে এলজিইডি অধিদপ্তরের মাধ্যমে এর কাজ শেষ হয়। ২০২২ সালের ১৭ মার্চ নদী খননকালে সেতুর পিলারের কাছ থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার সময় সেতু দেবে যাওয়ায় ১১ মাস যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে এলজিইডি ও জগন্নাথপুর পৌরসভার উদ্যোগে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে স্টিলের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি চালু করা হয়।
১৯৮৭ সালে উপজেলার নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খাদ্যগুদামের সামনে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। গত সরকারের আমলে পুরোনো সেতুটি ভেঙে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে নতুন সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিশোরগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ গত বছরের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি।
এ সেতুর পাশে ওই সময় বিকল্প হিসেবে হেলিপ্যাড এলাকায় একটি বেইলি সেতু তৈরি করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানান, ডাকবাংলোর সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে দুর্ঘটনা এড়াতে তাৎক্ষণিক কয়েকটি বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এ সেতু নতুন করে নির্মাণের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি