বাল্টিক সাগরে রুশ জাহাজের সন্দেহজনক তৎপরতা, পাল্টা পদক্ষেপ পোল্যান্ডের
Published: 23rd, May 2025 GMT
রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ এর অন্তর্ভুক্ত একটি জাহাজ সুইডেন ও পোল্যান্ডকে সংযুক্তকারী বিদ্যুৎ ক্যাবলের কাছে সন্দেহজনক গতিবিধি চালিয়েছে। এ সময় পোলিশ সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করলে জাহাজটি পিছু হটে। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক গত বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর বাল্টিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ ক্যাবল, টেলিকম লাইন ও গ্যাস পাইপলাইনে একাধিক নাশকতার ঘটনায় পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো এ অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
টাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা শ্যাডো ফ্লিটের একটি রুশ জাহাজ পোল্যান্ড ও সুইডেনের মধ্যে সংযোগকারী বিদ্যুৎ ক্যাবলের কাছে সন্দেহজনক কার্যকলাপ চালায়। আমাদের সেনাবাহিনীর কার্যকর হস্তক্ষেপে জাহাজটি একটি রুশ বন্দরে ফিরে যায়।’
‘শ্যাডো ফ্লিট’ বলতে রাশিয়ার এমন সব জাহাজকে বোঝানো হয় যেগুলো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তেল, অস্ত্র ও খাদ্যপণ্য পরিবহন করে। ইউক্রেনে হামলার পর এসব জাহাজ আন্তর্জাতিক নজরদারির বাইরে থেকে রাশিয়ার রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ঘটনার পর পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওয়াদিস্লাভ কোসিনিয়াক-কামিশ সাংবাদিকদের বলেন, পোল্যান্ডের একটি টহল বিমান জাহাজটিকে তাড়িয়ে দেয় এবং নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ওআরপি হেওয়েলিউজকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।
পোল্যান্ড নৌবাহিনীর ভাইস-অ্যাডমিরাল ক্রিস্তফ ইয়াওর্স্কি জানান, সন্দেহজনক ওই ট্যাংকারটির নাম ‘সান’ এবং এটা অ্যান্টিগুয়ার পতাকাবাহী ছিল।
ওয়ারশতে অবস্থিত রুশ দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অতীতে মস্কো এমনসব নাশকতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং পশ্চিমা দেশগুলো সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেল রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করতে এসব অভিযোগ তুলছে বলে জানায়।
উল্লেখ্য, সুইডেনের কারলশাম ও পোল্যান্ডের উত্তরের উস্তকা শহরের মধ্যে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। এটি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ লেনদেন সহজ করে।
পোল্যান্ডের বিদ্যুৎ গ্রিড অপারেটর পিএসই জানিয়েছে, সুইডেনের সঙ্গে সংযুক্ত বিদ্যুৎ ক্যাবল এখনো সচল আছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার দুপুর ১১টা ৩০ মিনিটে ওই লাইনের মাধ্যমে সুইডেনে ৬০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছিল।
পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কোসিনিয়াক-কামিশ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই ঘটনা প্রমাণ করে আমরা কতটা বিপজ্জনক সময়ের মধ্যে বাস করছি আর বাল্টিক সাগরে পরিস্থিতি কতটা জটিল।’ তিনি আরও বলেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পর বাল্টিক সাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। এটি এমন এক অঞ্চল, যেখানে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাজনিত ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ক্যাবল বিচ্ছিন্ন হওয়া ও পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
ঘটনা সম্পর্কে সুইডেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পল জনসন বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মিত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’ তিনি জানান, সুইডেন ঘটনাস্থলের আশেপাশে যেকোনো পরিস্থিতিতে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ ক য বল মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
আসাদুজ্জামান নূরের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দের আদেশ
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর নামে থাকা ১৬টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, আসাদুজ্জামান নূরের অর্জিত সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে তাঁর নামে পাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ যেন তিনি হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, সে জন্য তা জব্দ ও অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুলাই মামলা করেছে দুদক। তাঁর নামে ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি রয়েছে। আরও রয়েছে তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকায়। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুনআট মাসে ১৯২ একর জমি, ২৮ ভবন ও ৩৮ ফ্ল্যাট জব্দ ১৭ মে ২০২৫