এবার আনিস-হাওলাদারকে অব্যাহতি, নেতাকর্মীদের ক্ষোভ
Published: 7th, July 2025 GMT
দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর প্রকাশ করেছে জাতীয় পার্টি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতির ঘটনার মধ্যেই এ খবর পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা।
সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে পৃথক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ অব্যাহতির বিষয়টি জানানো হয়।
গত ২৮ জুন প্রেসিডিয়াম সভায় এই তিন নেতাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পার্টির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হলেও আজ সোমবার এ খবর প্রকাশ করেছে দলটি। এতদিন বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্ত কি কারণে এতদিন গোপন রাখা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলে এভাবে গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে অগণতান্ত্রিক বহিষ্কারের ঘটনায় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “দলে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য গঠনতন্ত্রের স্বৈরাচারী ধারা সংশোধনের দাবি তোলায় বলী হয়েছেন এসব শীর্ষনেতা। ওই বিশেষ ধারায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
নেতাকর্মীদের দাবি, দলে গণতন্ত্র নেই। যখন ইচ্ছা বহিষ্কার আবিষ্কারের ঘটনা চলছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই। জবাবদিহিতা চাইতে গেলে হেনস্থা, এমনকি দল থেকে বহিষ্কার হতে হয়। যার সর্বশেষ প্রমাণ দলের দুই কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বহিষ্কার। দল সবার মতামতে চলবে, কিন্তু এখন দল চলছে এক ব্যক্তির মর্জিতে। এভাবে দল চলতে থাকলে একদিন জাতীয় পার্টি মুসলিম লীগে পরিণত হবে।
সোমবার দলের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির গত ২৫ জুন জেলা/মহানগরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক/আহ্বায়ক, সদস্য সচিবদের মতবিনিময় সভায় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো- চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মো.
গত ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সভায়ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই তিন নেতাকে দলীয় সব পদ-পদবী থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এমতাবস্থায় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে প্রাথমিক সদস্যসহ দলীয় সব পদ-পদবী থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। এ আদেশ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
এর আগে, পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব নিযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নিয়োগ দেন বলে দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের বৈধ মহাসচিব দাবি করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর মহাসচিব নিয়োগ দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদের কর্তৃক চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
সোমবার বিকেলে চুন্নুকে বাদ দিয়ে পাটোয়ারীকে নতুন মহাসচিব নিয়োগের এক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা একথা বলেন।
তারা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ ও সম্মানিত মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়। জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুকে কোনো কারণ ছাড়াই অব্যাহতি দিয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে একক সিদ্ধান্তে মহাসচিব নিয়োগ চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন। এটি একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ, যা পার্টির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
তারা বলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইতোমধ্যে জাতীয় কাউন্সিল ঘোষিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো প্রকার নিয়োগ, অব্যাহতি বা বহিষ্কার সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। এই ধরনের সিদ্ধান্ত দলের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলছে।
তারা আরো বলেন, আমরা বিস্মিত যে, দায়িত্বশীল প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়মিত চাঁদা প্রদান সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যেভাবে অব্যাহতির চিঠি প্রদান করা হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং নীতিহীন ও সম্মানহানিকর আচরণ।
তারা জাতীয় পার্টিকে ব্যক্তি নয়, গঠনতন্ত্র ও আদর্শে পরিচালিত হওয়ার দাবি জানান।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম জ ব ল হক চ ন ন ক গঠনতন ত র ন ত কর ম অব য হ প রক শ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইমরানের সঙ্গে সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি
কারাবন্দী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা এবং দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর বোন ও দলীয় নেতাদের সাক্ষাতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিরোধীদলীয় জোট। অন্যথায় তারা দেশজুড়ে বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট হাউসের বাইরে গত শুক্রবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দেশটির বিরোধীদলীয় জোট। এতে পাখতুনখাওয়া মিলি আওয়ামী পার্টির (পিকেএমএপি) সভাপতি মেহমুদ আছাকজাই বলেন, ‘আমরা সিন্ধি, বেলুচ, পশতু ও পাঞ্জাবিদের রাস্তায় নামা আটকেছি। না হলে তাঁরা সরকার ও তার নীতির বিরুদ্ধে (রাস্তায়) নেমে পড়তেন। এতে করে শাসকেরা বড় সমস্যায় পড়তেন।’
সরকার পার্লামেন্টকে ‘রাবার স্ট্যাম্পে’ পরিণত করেছে এবং জাতীয় পরিষদের স্পিকার আয়াজ সাদিক ‘অন্য কোথাও থেকে আসা নির্দেশ’ অনুসরণ করছেন বলেও অভিযোগ করেন মেহমুদ। তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। কিন্তু স্পিকার এ গুরুতর বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন না।’
ইমরান খান দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী। বর্তমানে তিনি আছেন রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে। সম্প্রতি ইমরানের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে নানা খবর ছড়িয়েছে। সেদিকে ইঙ্গিত করে মেহমুদ প্রশ্ন করেন, ইমরান খানকে কেন এখনো কারাগারে রাখা হয়েছে এবং কেন তাঁর বোন ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না? সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী আদিয়ালা কারাগারের বাইরে বসে আছেন। পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তাঁর অনুরোধে কেউ কান দিচ্ছে না।’
গণতন্ত্রের দাফন
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই নেতা আসাদ কায়সার বলেন, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে ‘গণতন্ত্রকে দাফন করা হয়েছে’।
আসাদের অভিযোগ, হারিপুরের উপনির্বাচনের ফলাফল কম্পিউটার সিস্টেমের আশ্রয় নিয়ে বদলে দেওয়া হয়েছে। এ আসনে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা ওমর আইয়ুইবের স্ত্রী প্রার্থী ছিলেন।
পিটিআইয়ের আরেক নেতা ব্যারিস্টার গওহর আলী খান বলেন, বিরোধী দল পার্লামেন্ট ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হয়েই থাকতে চায়। কিন্তু উপনির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ উঠেছে, তার ফলে তা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
গওহর আরও বলেন, ‘[ইমরান] খানকে আমি যতটা জানি, তিনি আর আমাদের পার্লামেন্টের অংশ হয়ে থাকতে দিতে রাজি হবেন না।’
ইমরানের বোনের অভিযোগ
শুক্রবার ইমরান খানের বোন আলিমা খান আদিয়ালা কারাগারের সুপারিনটেনডেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অবেদন করেন। তাঁর অভিযোগ, ইমরান খানের সঙ্গে সপ্তাহে দুবার সাক্ষাতের সময়সূচি পুনর্বহাল করতে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা মানা হচ্ছে না। তাই তিনি শুক্রবার সকালে কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন।
ইমরানের মৃত্যু নিয়ে গুজব
শুক্রবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরানের মৃত্যু নিয়ে ইন্টারনেটে গুজব ছড়িয়েছে বলে ভারতের কিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে তাঁকে আদিয়ালা কারাগার থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
কিন্তু আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কারাগার থেকে তাঁকে (ইমরান খান) স্থানান্তর সম্পর্কিত কোনো খবর সত্য নয়। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।’ কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে বলেছে, ইমরানের স্বাস্থ্য নিয়ে যে অনিশ্চয়তার কথা বলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। তাঁর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে বিরোধী দলের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে।