আমার ফেলে আসা প্রত্যেকটি সম্পর্কই গুরুত্বপূর্ণ: জয়া
Published: 18th, June 2025 GMT
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া আহসান। দেশের সীমা পেরিয়ে ভারতে অভিনয় ও রূপের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমা। এরই মধ্যে ওপার বাংলার দর্শকদের ভালোবাসা যেমন পেয়েছেন, তেমনি কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে পুরস্কার।
ব্যক্তিগত জীবনে মডেল-অভিনেতা ফয়সাল আহসানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন জয়া আহসান। কিন্তু ২০১২ সালে ভেঙে যায় তাদের ১৪ বছরের সংসার। তারপর থেকে সিঙ্গেল জীবনযাপন করছেন জয়া। বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছেন তিনি। সেখানে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এ আলাপচারিতার কাজ ও ব্যক্তিগত নানা বিষয় উঠে এসেছে।
ব্যক্তি সম্পর্কে জটিলতা আরো বেড়েছে, এ বিষয়ে আপনার কী মত? এমন প্রশ্নের জবাবে জয়া আহসান বলেন, “এখন তো কেউ রিলেশনশিপেই যায় না! সিচুয়েশনশিপ.
আরো পড়ুন:
প্রাক্তন প্রেমিক মিঠুনের জন্মদিনে যে বার্তা দিলেন মমতা
বিয়ে করলেন নুসরাতের বোন, নুজহাতের রূপে মুগ্ধ নেটিজেনরা
তাহলে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটাই কী পুরোনো হয়ে গেল? জবাবে জয়া আহসান বলেন, “ওগুলো তো ‘ওল্ড স্কুল’। যাইহোক, এই জিনিসগুলো আসবে। আবার ঘুরে আসবে। তবে পৃথিবীতে যতরকম মানুষ ততরকম সম্পর্ক। কোনো সম্পর্কই কোনো সম্পর্কের সঙ্গে মেলে না। আমার প্রত্যেকটি ফেলে আসা সম্পর্কও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেই সম্পর্কগুলো নিয়েই আজকের আমি। সব ঝেড়ে ফেলে দেওয়া যায় না। ভুলটুকুও তো আমার! সেটা মেনে সামনের দিকে চলা।”
দীর্ঘ দশ বছর পর বাংলা সিনেমা নির্মাণ করছেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। ‘ডিয়ার মা’ শিরোনামের এ সিনেমায় অভিনয় করছেন জয়া। কয়েক দিন আগে কলকাতায় সিনেমাটির পোস্টার প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানেও উপস্থিত ছিলেন জয়া।
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জয় আহস ন চলচ চ ত র আহস ন করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ: এক ব্যক্তির ক্ষমতার মেরুদণ্ড
বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হচ্ছে ৭০ অনুচ্ছেদ। বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়নের কাল থেকেই এই অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা চলে আসছে। ‘লোভে পড়ে ব্যক্তিস্বার্থে’ সংসদ সদস্যরা তাঁদের ভোট বিক্রি করতে পারেন—এমন আশঙ্কা এবং ‘গণতন্ত্রের সঙ্গে স্থিতিশীল সরকার দরকার’—এমন বাসনা দিয়ে এই অনুচ্ছেদের পক্ষে অজুহাত দেওয়া হয়।
কিন্তু গত ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দাবি করতে পারি, স্থিতিশীল সরকারের বাসনা থেকে যে অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছিল, তা স্থিতিশীল সরকার গঠনে ভূমিকা রাখা দূর কি বাত, উল্টো গণতন্ত্রকে একেবারে কাঠামগত ধ্বংস করতেই অধিক ভূমিকা পালন করেছে।
সংসদের ভেতর গণতান্ত্রিক চর্চাকে গলা টিপে হত্যা করে আদৌ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম সম্ভব কি না, যে শঙ্কা বাহাত্তরেই দেখা দিয়েছিল, আমরা গত ৫০ বছরে অজস্র জীবনের বিনিময়ে সেই সত্য উপলব্ধি করার সক্ষমতা অর্জনের কথা ছিল। কিন্তু এখনো ৭০ অনুচ্ছেদের পক্ষে অনেকেই অবস্থান নিচ্ছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য। তাঁরা এখনো বুঝতে পারছেন না, যে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতাকাঠামো শেখ হাসিনার মতো ভয়াবহ স্বৈরাচারের জন্ম দিয়েছে, এর মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে ৭০ অনুচ্ছেদ।
তৈরির প্রেক্ষাপটমুক্তিযুদ্ধের পরপর স্বাধীন বাংলাদেশে গণপরিষদ শুরুই হয়েছিল ‘সদস্যপদ খারিজ আদেশ-১৯৭২’ জারির মাধ্যমে। সেই আদেশে বলা হয়, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হয়ে এবং ওই দলের সদস্যপদ লাভ করে কোনো ব্যক্তি গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা ওই দল থেকে বহিষ্কৃত হন, তবে তাঁর মেয়াদকালের অসমাপ্ত সময়ের জন্য তিনি আর পরিষদ সদস্যপদে থাকবেন না।’
আবার সেই আদেশের মাধ্যমে সংগঠিত কর্মের রক্ষাকবচ হিসেবে যুক্ত করা হয়, ‘এই আদেশের অধীন প্রণীত কোনো আদেশ বা গৃহীত কোনো ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো আদালত কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবেন না।’
বিষয়টি পরে ৭০ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল ১৯৭২ সালেই। একদিকে শেখ মুজিব এর পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছিলেন, ‘অনেকেই লোভে পড়ে ব্যক্তিস্বার্থে এদিক-ওদিক করে। সুষ্ঠুভাবে দেশ চালাতে গেলে গণতন্ত্রের সঙ্গে স্থিতিশীল সরকার দরকার। অন্যদিকে খোদ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের অনেকেই বলেছিলেন, ‘এ ব্যবস্থা সর্বপ্রকার গণতান্ত্রিক নীতির পরিপন্থী।’
অর্থাৎ সংসদ সদস্যরা যে রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে নির্বাচিত হয়েছেন, সেই দলের প্রস্তাবিত যেকোনো নীতি বা সিদ্ধান্ত অকপটে মেনে নিতে বাধ্য করে ৭০ অনুচ্ছেদ। কেউ যদি এর ব্যত্যয় ঘটান, তাহলে এর পরিণাম খুব কঠোর, তাঁদের আসনই শূন্য হয়ে যায়।
এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে যে সংবিধানের ক্ষমতাকাঠামো এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে এবং প্রধানমন্ত্রী যে অসীম ক্ষমতা পেয়ে যান, সেটা নিয়ে ১৯৭২ সাল থেকেই তীব্র সমালোচনা চলে আসছে।
দীর্ঘ উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের পথ ধরে রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান যাঁরা তৈরি করেছেন, সেই গণপরিষদের সদস্যদের যে রকম মতামত প্রকাশের ‘স্বাধীনতা’ থাকার কথা ছিল, শুরুতেই তা দেওয়া হয়নি।
পুরো গণপরিষদের কর্তৃত্ব আওয়ামী লীগের আয়ত্তে থাকার পরও গণপরিষদের (নিজ দলের পরিষদ মেম্বার) কাছ থেকে তার স্বাভাবিক মতামত দেওয়ার অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধারা শাসনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করে সংসদীয় গণতন্ত্রকে অকার্যকর করা এবং অনুশীলনের শুরু হয় একদম প্রথম দিন থেকেই।
ব্যবহারের ফলাফলসংসদ সদস্যরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে যান প্রধানত আইন তৈরির উদ্দেশ্যে। নির্বাহী বিভাগ কোন আইনের আওতায় দেশ চালাবে, সেটা ঠিক করে দেওয়া, অর্থাৎ আইন তৈরি করাই তাঁদের প্রধান কাজ। পাশাপাশি সরকার চালাতে যে টাকাপয়সা দরকার, তা জনগণের কাছ থেকে কতটুকু ও কীভাবে আদায় করা হবে এবং কোন কোন খাতে সেগুলো ব্যয় করা হবে, অর্থাৎ বাজেট প্রণয়ন করাও সংসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেই সঙ্গে নির্বাহী বিভাগ আইন মেনে কাজ করছে কি না, মন্ত্রণালয়গুলো বাজেট ঠিকভাবে খরচ করছে কি না, কোথাও দুর্নীতি–লুটপাট–অপচয় হচ্ছে কি না, তার ওপর নজরদারি করবে এবং সরকারের কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বিপথে গেলে জবাবদিহি করবে—এগুলোও সংসদের কাজ।
কিন্তু বাংলাদেশের সাংবিধানিক বন্দোবস্তে একই সঙ্গে দলের প্রধান, সরকারপ্রধান ও সংসদনেতা হতে বাধা নেই। তাই ৭০ অনুচ্ছেদ থাকার ফলে দলের কোনো সিদ্ধান্তের (আদতে দলের প্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর) বিরোধিতা করার সুযোগ কোনো সংসদ সদস্যের নেই। তাই সংসদে কী আইন বানানো হবে, বাজেট কেমন হবে, বাজেটের খরচের জবাবদিহি করা যাবে কি না, এমনকি লুটপাট–অপচয় করলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে কি না—সবই নির্ভর করে একজনের, মানে প্রধানমন্ত্রীর, ওপর। জনগণের সরাসরি ভোটে ‘নির্বাচিত’ বাকি সংসদ সদস্যদের শুধু আজ্ঞাবহ হিসেবে ‘হ্যাঁ-না’–এর বাইরে কিছু বলার বা করার সুযোগ থাকে না। এমনকি সংসদ সদস্যদের তাঁদের নির্বাচনী এলাকার স্বার্থের প্রতিনিধিত্বও করতে বাধা প্রদান করে এই অনুচ্ছেদ। অতএব ৭০ অনুচ্ছেদসহ ওই পার্লামেন্টকে ‘রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট’ বলাই যায়!
সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাগত ৫৪ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাহাত্তরের সাংবিধানিক বন্দোবস্তে যে দল নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতবে, সেই দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান হবেন। আবার তিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সংসদনেতাও হবেন।
৭০ অনুচ্ছেদের বলে তিনি একক সিদ্ধান্তে আইন বানাবেন, বাজেট তৈরি করবেন, বাজেট ইচ্ছেমতো খরচ করবেন, রাষ্ট্রপতি নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা পাবেন, রাষ্ট্রপতির হাত দিয়ে বিচারক ও বিচারপতি এবং সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা পাবেন।
আবার তাঁর কাছে যদি দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য থাকে, তাহলে তিনি সংবিধান পরিবর্তনেরও ক্ষমতার অধিকারী হবেন। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যাঁরা সংসদে যাবেন, ওই সংসদ পরিচালনা করার জন্য দিনে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে যে জনগণ; তাদের প্রতিনিধিদের আইন তৈরি, বাজেট প্রণয়ন, সরকারের ওপর নজরদারি, সরকারের জবাবদিহিসহ সব ক্ষেত্রে স্বাধীন মতামত দিতে পারার সুযোগ থাকতে হবে।
আবার এটাও ঠিক, স্বাধীন মতামতের সুযোগ নিয়ে যেন হরহামেশা সরকার পরিচালনায় অচলায়তন এবং অনাস্থা ভোটের নামে হর্স ট্রেডিং না হয়। পাশাপাশি হর্স ট্রেডিংয়ের দোহাই দিয়ে সংসদে একনায়কতন্ত্র বহাল রাখার চেষ্টা করাও হবে সময়ের বহু বহু পেছনে হাঁটা। তাই বর্তমান সময়ের উপযোগী মধ্যবর্তী সমাধান খুঁজতে হবে আমাদের।
সম্ভাব্য সমাধান৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করে সংসদ কার্যকর ও গণতান্ত্রিক করার সমাধান দুনিয়াতে রয়েছে। এর একটা সমাধান বা সংস্কার প্রস্তাবনা সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাবও করেছে। তারা বলেছে, ‘অর্থবিল ব্যতীত নিম্নকক্ষের সদস্যদের তাঁদের মনোনয়নকারী দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।’
অর্থাৎ অর্থবিল বাদে সব ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারবেন; এমনকি নিজ দলের বিপক্ষেও। যেহেতু নিজ দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ভোট দিলে দলের ভেতর চাপে পড়ার বা কোণঠাসা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই ভোটদানের পদ্ধতি প্রকাশ্যে মৌখিক ‘হ্যাঁ-না’–এর পরিবর্তে গোপন ব্যালট বা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে করা যেতে পারে।
শেষ কথাবাংলাদেশের ১৯৭২ সালের যে সংবিধান, তার ক্ষমতাকাঠামোর বাকি সবকিছু ঠিক রেখে শুধু ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করলেই রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হবে না। রাষ্ট্রের সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা একটা সামগ্রিক কাজ। বিচ্ছিন্ন দু–একটা কাজ করে কোনোভাবেই রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করা যাবে না। তবে যেসব জায়গায় অবশ্যই সংস্কার করতে হবে, তার মধ্যে প্রধান প্রধান জায়গার অন্যতম ৭০ অনুচ্ছেদ। কারণ, এই অনুচ্ছেদ হচ্ছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতার মেরুদণ্ড!
ফরিদুল হক যুগ্ম সদস্যসচিব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।