‘কখন জানি ভিটা-বাড়ি যায় পানির শব্দে গলা শুকায়’
Published: 19th, June 2025 GMT
‘পার ভাইঙ্গা ভিটার কাছে আইসা গেছে। যা ছিল তার সবই নদীতে নিছে। মাথাগোঁজার ঠাঁই এইবার যায় কিনা। পারে পানির বারির আওয়াজ শুনলে ডরে গলা শুকাই যায়...।’ কুশিয়ারা নদীর ভাঙন তীব্রতা বাড়ায় সর্বস্ব হারানোর ভয়ে থাকা হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মানুষ এভাবেই তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান দিলেন। প্রতিবছরই ভাঙনের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা।
সম্প্রতি কালনী-কুশিয়ারার তীর ভাঙছে ব্যাপকভাবে। সেই আতঙ্ক সঙ্গী করেই দিন কাটাচ্ছেন উপজেলার অন্তত চার থেকে পাঁচটি ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষ। শত শত পরিবারের সদস্যদের চোখে ঘুম নেই। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
প্রতিবছরই বর্ষার শুরু এবং শেষের দিকে ভাঙন আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করতে হয় কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী আজমিরীগঞ্জের বাসিন্দাদের। গত তিন দশকে ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন এই উপজেলার সহস্রাধিক পরিবার। নতুন করে ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং ভাঙনসংলগ্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, পাউবোর সেই জিও ব্যাগ ভয়াবহ এই ভাঙনের বিপরীতে কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারছে না।
সরেজমিন ভাঙনসংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কালনী-কুশিয়ারা নদীর তীর ঘেঁষা সাত-আটটি গ্রাম সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। সেখানকার শতাধিক পরিবারের সদস্যরা ভাঙনের শব্দে রাতভর থাকেন নির্ঘুম। ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সৌলরীর বাসিন্দাদের। সম্প্রতি ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে শুধু সৌলরী বাজারসংলগ্ন এলাকার এক কিলোমিটার জায়গা বিলীন হয়েছে নদীতে। প্রতিদিনই বাড়ছে ভাঙনের তীব্রতা। কুশিয়ারার ভাঙনে এবার উপজেলার নদীতীবরর্তী মনিপুর, সৌলরী, কালনীপাড়া ও ফিরোজপুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে কয়েকটি বসতঘর যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত এখানকার জনজীবন। কার্যত সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যে কারণে প্রতিবছরই বাস্তুহারার সংখ্যা বাড়ছে। সৌলরী গ্রামের রেখা রাণী সূত্রধর বলেন, কয়েকদিন আগে তাঁর বসতবাড়ি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন তিনিসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তিনি যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, সেই বাড়িটিও যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।
একই গ্রামের বাসিন্দা বাবুল সূত্রধর বলেন, দিন দিন নদী ভাঙন বেড়েই চলেছে। বসতভিটার বেশির ভাগই নদীতে গেছে। বাকি অংশটুকুও যে কোনো সময় যেতে পারে। সুজিত দাস বলেন, নদীর ভাঙন তাদের নিয়তি। বাপ-দাদার ভিটা চোখের সামনে একটু একটু করে নদীতে চলে যাচ্ছে কিছুই করতে পারছেন না। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু লোক দেখানো জিও ব্যাগ ফেলে। কার্যত সেগুলো কোনো কাজে আসে না।
আজমিরীগঞ্জের ইউএনও নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, সৌলরী বাজার, মনিপুর, বদরপুর ও কালনীপাড়ার তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী পরিদর্শন করে রিপোর্ট করেছেন। দ্রুত আপদকালীন জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নদীর তীর সংরক্ষণে কাজ শুরু হচ্ছে।
হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, যেসব স্থানে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে সেইসব স্থানে দ্রুত কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন শিক্ষাবর্ষে তিন শ্রেণির বই ছাপাই শুরু হয়নি
আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের অর্ধেকের বেশি বই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের কোনো বই এখনো সরবরাহ করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশই এখনো দেওয়া হয়নি। আর নবম শ্রেণির বই ছাপার বিষয়ে মুদ্রণকারীদের সঙ্গে মাত্রই চুক্তি হচ্ছে।
এমন অবস্থায় জানুয়ারির শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই, বিশেষ করে মাধ্যমিকের বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন না এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা। তাঁদের ভাষ্য, এবার ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই আবার দরপত্র দিয়ে ছাপানো হচ্ছে। আবার মাধ্যমিকে বই ছাপার কাজে মন্ত্রণালয় ও ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন পেতেও দেরি হয়েছে। ফলে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া কঠিনই হবে।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক বই ছাপায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মাধ্যমিক বই নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের সংকট। এবার মোট বইয়ের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।চলতি বছরও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়ে এবং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
এনসিটিবির সূত্র জানায়, আগামী বছর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের মোট পাঠ্যবই ৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৯ কপি। এর মধ্যে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ছাপা ও বাইন্ডিং সম্পন্ন হয়েছে ৬ কোটি ৬৫ লাখের বেশি বই। এর মধ্যে সরবরাহ-পূর্ব পরিদর্শন (পিডিআই) সম্পন্ন হয়েছে ৫ কোটি ৫১ লাখের বেশি বইয়ে। আর মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে ৪ কোটি ৮৫ লাখের বেশি বই।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক বই ছাপায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মাধ্যমিক বই নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের সংকট। এবার মোট বইয়ের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।
চলতি বছরও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়ে এবং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।গত বছর বই সরবরাহে দীর্ঘ দেরির কারণে এবার আগেভাগেই দরপত্র প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে মূল্যায়নের কাজও সম্পন্ন করেছিল এনসিটিবি। কিন্তু হঠাৎ ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র সেপ্টেম্বর মাসে বাতিল করা হয়। এই তিন শ্রেণির বইয়ের বাতিল হওয়া দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল গত মে ও জুনে। এরপর আবার দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। দরপত্র আহ্বানের পর যাচাই-বাছাই শেষ হলেও এখনো এই তিন শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া যায়নি।
নবম শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে এবং ছাপার কাজও চলছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশও দু-এক দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার অগ্রগতি ভালো। আশা করা যায়, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া যাবে।এনসিটিবির বিদায়ী চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরীএবার ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখের বেশি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখের বেশি ও অষ্টম শ্রেণির মোট বই ৪ কোটি ২ লাখের বেশি।
দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কার্যাদেশের পর চুক্তি হবে, আর চুক্তির পর ৪৫ দিনের মধ্যে ওই তিন শ্রেণির বই ছাপিয়ে সরবরাহের কথা। এমন অবস্থায় কার্যাদেশ ও চুক্তি সম্পন্ন করে জানুয়ারির শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
এবার ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখের বেশি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখের বেশি ও অষ্টম শ্রেণির মোট বই ৪ কোটি ২ লাখের বেশি।এনসিটিবি সূত্র আরও জানায়, এবার নবম শ্রেণির মোট পাঠ্যবই ৫ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ২৮ কপি। বুধবার মতিঝিলে এনসিটিবি কার্যালয়ে দেখা যায়, এসব বই ছাপার বিষয়ে মুদ্রণকারীদের সঙ্গে এখন চুক্তি হচ্ছে। চুক্তি করতে আসছেন মুদ্রণকারীরা।
নিয়মানুযায়ী চুক্তির পর ৬০ দিনের মধ্যে নবম শ্রেণির বই সরবরাহের কথা। ইতিমধ্যে নভেম্বরের প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে মুদ্রণকারীরা সাধারণত নোট ও গাইড ছাপানোয় ব্যস্ত থাকেন। আবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পোস্টার ছাপানোর কাজও বাড়বে। সব মিলিয়ে জানুয়ারির শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে ইবতেদায়ি স্তরের মোট বই ৩ কোটি ১১ লাখের বেশি; যার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ছাপা হয়েছে।
অবশ্য এনসিটিবির বিদায়ী চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেছেন, নবম শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে এবং ছাপার কাজও চলছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশও দু-এক দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার অগ্রগতি ভালো। আশা করা যায়, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া যাবে।