ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত পরিস্থিতি যে কোনো সময় নতুন দিকে মোড় নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিনটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। ইরান হামলা বাড়িয়ে দিতে পারে অথবা রণে ভঙ্গ দেওয়ার কৌশল নিতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সংঘাত থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। দ্য কনভারসেশনের বিশ্লেষণে এসব কথা বলা হয়েছে। 

রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় যে হামলা শুরু করেছিল, এই হামলা সেই ধারাবাহিকতার অংশ। এর পর ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে ইরানসমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দুর্বল করে ফেলার কৌশল নেয়। গাজায় হামাসকে দমানোর পর তারা লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দুর্বল করে ফেলে। এর পর সিরিয়ায় হামলা করে ইরানকে পিছু হটাতে বাধ্য করে। ফলে সিরিয়ায় ইরানসমর্থিত আসাদ সরকারের পতন ঘটে। 

ইরান বরাবরই শক্তিশালী ভূমিকায় ছিল। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতেও দেশটি ব্যাপক শক্তি প্রদর্শন করে। এই অবস্থায় নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর ইরানে হামলার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই ৩০ হাজার পাউন্ডের বাঙ্কার বাস্টার বোমা হামলা চালান ইরানে। এই হামলার পর ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন বিশ্বনেতারা। 

বড় হামলার কৌশল নিতে পারে ইরান  

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরান নিজের শক্তি প্রদর্শনে ব্যাপক পরিসরে হামলা চালানোর নীতি গ্রহণ করতে পারে। যদিও তারা জানে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার শক্তি তাদের নেই। তার পরও ইরানি জনগণকে আশ্বস্ত করতে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে দেশটি। সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনির নীতি এটাই। এর আগেও একই নীতি গ্রহণ করেছিল ইরান। ২০২০ সালে যখন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের প্রধান কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তখনও প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল তেহরান। পরবর্তী সময়ে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে বড় হামলা হয়। কোনো মার্কিন সেনা নিহত না হলেও কৌশলে অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এবারও একই কৌশল নিতে পারে ইরান। তবে এবার মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু নাও বানাতে পারে তারা। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের ওপর ধারাবাহিক ও বড় হামলা অব্যাহত রাখতে পারে। আর এটা নির্ভর করবে তাদের হাতে কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন রয়েছে তার ওপর। কারণ, ইতোমধ্যে ৪০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র তারা ব্যবহার করে ফেলেছে। ফলে সমরাস্ত্রের মজুত কমে যাচ্ছে।    

রণে ভঙ্গ দিতে পারে তেহরান 

ইরানের সামনে সংঘাত থেকে পিছু হটার কৌশলও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র হামলা করার আগে ইরান বারবার বলে আসছিল, ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে তারাও হামলা বন্ধ করে দেবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটি আপসের পথ গ্রহণ করতে পারে। ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দিলে তারা আবারও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচিতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে রাজি হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা করবে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু পরমাণু আলোচনা চালিয়ে যাওয়ায় বিশ্বাসী নন। ইসরায়েল পরমাণু কর্মসূচির সম্পূর্ণ ধ্বংস দাবি করে হামলা চালিয়ে যাওয়ার নীতি নিয়েছে। ফলে চতুর নেতানিয়াহু ইরানের জ্বালানি অবকাঠামোসহ বেসামরিক স্থাপনায় হামলা অব্যাহত রাখতে পারে। আশির দশকে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের সময়ও ইরান রণে ভঙ্গ দিয়েছিল মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে যুদ্ধবিরতিতে যায় তেহরান। চলমান সংঘাতের ক্ষেত্রেও দেশটি একই কৌশল নিতে পারে। খামেনি তাঁর শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে ও সমরাস্ত্র সক্ষমতার কথা বিবেচনা করে পিছু হটার কৌশল নিতে পারেন।

সংঘাত থেকে বিরত থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

চলমান সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র যদি নিজেকে সরিয়ে নেয়, তাহলে যুদ্ধ পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্য ইকোনমিস্টের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক তা চায় না ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের ৫৩ শতাংশ সমর্থক। যুদ্ধের পক্ষে মাত্র ১৬ শতাংশের অবস্থান। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ইরানে হামলার বিষয়টি জনপ্রিয়তা পায়নি, তা স্পষ্ট। বরং আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত বন্ধের পদক্ষেপ নিলে ট্রাম্পকে দেশটির জনগণ স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। সংঘাতে ওয়াশিংটন যদি আরও জড়িয়ে পড়ে কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থের ওপর হামলা হয়, তাহলে নাগরিকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে ট্রাম্প প্রশাসন। তাছাড়া ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে কিনা, তাও অজানা। দেশটি নতুন করে আগামীতে কর্মসূচি চালিয়ে নিতেও পারে। এই  বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখতে পারে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর ষ ট র র পর স থ ত ইসর য় ল র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সের ব্যাটিং ঝলক আর বোলারদের দাপটে ইংল্যান্ডের সিরিজ জয়

ডাবলিনের মালাহাইড ভিলেজে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ছয় উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ নিজেদের করে নিল ইংল্যান্ড। ম্যাচের নায়ক জর্ডান কক্স করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। সঙ্গে লিয়াম ডসন, জেমি ওভারটন ও আদিল রশিদের বোলিং জাদুতেই ধরা খেল স্বাগতিকরা।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৪ রান তুলেছিল আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের মূল ভরসা ছিলেন গ্যারেথ ডেলানি। শেষদিকে তার ঝড়ো ২৯ বলে অপরাজিত ৪৮ রানে ভর করে লড়াকু সংগ্রহ পায় দল। ইনিংসে ছিল ৪টি চার আর ৩টি বিশাল ছক্কা। ওপেনার রস অ্যাডায়ার ২৩ বলে ৩৩ এবং তিন নম্বরে নামা হ্যারি টেক্টর ২৭ বলে ২৮ রান যোগ করেন। তবে অধিনায়ক পল স্টার্লিংকে দ্রুত ফেরান ডসন। পরে টেক্টরকেও আউট করে ২ ওভারে ৯ রানে ২ উইকেটের বোলিং ফিগার দাঁড় করান তিনি।

আরো পড়ুন:

ভারতকে ১৭২ রানের টার্গেট ছুড়ল পাকিস্তান

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে ভারত

জেমি ওভারটন তার চার ওভারে লরকান টাকার ও কার্টিস ক্যাম্ফারকে ফিরিয়ে আয়ারল্যান্ডের মিডল অর্ডারে আঘাত হানেন। সবচেয়ে কার্যকরী ছিলেন লেগস্পিনার আদিল রশিদ। ইনিংসের শেষভাগে ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ২৯ রানে ৩ উইকেট।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ওভারেই সিনিয়র ব্যাটার জস বাটলারকে শূন্য রানে ফেরান ব্যারি ম্যাককার্থি। অধিনায়ক জেকব বেথেলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, করেন মাত্র ১৫ রান।

তবে একপ্রান্ত আগলে ব্যাট চালান ফিল সল্ট। ২৩ বলে ২৯ রানের ইনিংসে দুই চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়ে গড়েন কক্সের সঙ্গে ৫৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। সেখানেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। কক্স খেলেন ৩৭ বলে ৫৫ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস। যেখানে ছিল নিয়ন্ত্রিত শটের ছড়াছড়ি। শেষ পর্যন্ত বেন হোয়াইট তাকে বোল্ড করলেও তখন জয় প্রায় নিশ্চিত।

বাকি কাজটা সেরে দেন টম ব্যান্টন ও রেহান আহমেদ। ব্যান্টনের ২৬ বলে অপরাজিত ৩৭ রানে ভর করে ১৭.১ ওভারেই ৪ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।

এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতল ইংল্যান্ড। 

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ