অবৈধ সম্পদ: সাবেক এমপি জিয়াউরের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 23rd, June 2025 GMT
১ কোটি ৮ লাখ ৩২ হাজার ৮৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেন এর অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২৩ জুন) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা; মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের ৩ সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শামীম ওসমানের ২টি প্লট জব্দ, ২৯ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
দুদক জানায়, আসামি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহারের মধ্যে ১ কোটি ৮ লাখ ৩২ হাজার ৮৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নিজ নামে ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত মোট ৫টি হিসাবে মোট জমা ও উত্তোলনসহ ১০ কোটি ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৪ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী মোসা.
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ার আলোচিত যুবলীগ নেতা মতিন সরকার ঢাকায় গ্রেপ্তার
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হত্যা মামলার পলাতক আসামি বগুড়ার যুবলীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মতিন সরকারকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর বছিলার একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।
আবদুল মতিন সরকার বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার মৃত মজিবর রহমান সরকারের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা ছাড়াও অস্ত্র, মাদক আইনেও ডজন খানেক একাধিক মামলা রয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর নতুন করে একাধিক হত্যাসহ আরও ডজন খানেক মামলায় আসামি হওয়ায় তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকা থেকে মতিন সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে করেছিলেন। রাজধানীতে সপরিবার তিনি বসবাস করে আসছিলেন। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে হত্যাসহ ডজন খানেক মামলার আসামি তিনি। অতীতেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক হতা, মাদক, অস্ত্র আইনে হাফ ডজনের বেশি মামলা রয়েছে।
এর আগে দুদকের করা মামলায় চলতি বছরের ১১ মার্চ বগুড়ার বিশেষ জজ আদালতে আবদুল মতিন সরকারকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অপরাধে তাঁকে ২ কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকা জরিমানা করা হয়। অর্থদণ্ড ছাড়াও আবদুল মতিন সরকারের অবৈধভাবে অর্জিত ২ কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রাষ্ট্রীয় অনুকূলে জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। আবদুল মতিনের অনুপস্থিতিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করা হয়।
যেভাবে উত্থান মতিন সরকারের
আবদুল মতিন সরকারের জন্ম দরিদ্র পরিবারে। স্থানীয়ভাবে তিনি কসাই মতিন নামে পরিচিত। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম ওরফে মোহনের ‘দেহরক্ষী’ হিসেবে রাজনীতিতে উত্থান হয় তাঁর।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মতিন সরকারের কপাল খুলে যায়। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তিনি বগুড়া শহরে নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন; বাগিয়ে নেন শহর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের পদ। পরে পরিবহনে চাঁদাবাজি, জায়গাজমি দখল, টেন্ডার বাণিজ্য, বড় বড় হাটের ইজারা নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অস্ত্র, মাদক, হত্যা মামলা মাথায় নিয়েও বগুড়া শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদও দখল করেন।
আবদুল মতিন সরকার ২০০০ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। সেই মামলায় ২০০৭ সালে ২৭ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। এ ছাড়া ১৯৯৮ সালে চকসূত্রাপুর এলাকার মো. রসুল হত্যা, ২০০১ সালে একই এলাকার আবু নাসের উজ্জ্বল হত্যা, ২০১১ সালে বগুড়া শহরের মাটিডালির বাণিজ্য মেলায় শফিক চৌধুরী হত্যা ও ২০১৩ সালে যুবদল নেতা ইমরান হত্যা মামলায় আবদুল মতিন সরকারকে আসামি করা হয়। ২০১২ সালে মাদকসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও অল্প দিনেই বেরিয়ে আসেন তিনি।
২০১৭ সালের ১৭ জুলাই কলেজে ভর্তির কথা বলে এক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আবদুল মতিন সরকারের ছোট ভাই তুফান সরকার ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তুফানের স্ত্রী ও তাঁর বড় বোন নারী কাউন্সিলর এবং তুফানের লোকেরা ওই ছাত্রী ও তাঁর মায়ের ওপর নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় তুফানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনার পর অভিযোগ ওঠে, বড় ভাই মতিন সরকারের প্রভাব খাটিয়েই তুফান এ অপকর্ম করেছেন। দুদকের মামলায় ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত তুফান সরকার বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
আবদুল মতিন সরকার সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে বগুড়া শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।