সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। পাশাপাশি এই ঘটনার তদন্ত এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিচারের জোর দাবি জানিয়েছে আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি।

গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্লাস্ট জানায়, গত রোববার (২২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানী উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ উত্তরার পাঁচ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে নূরুল হুদাকে আটক করে। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ডিবি হেফাজতে নিয়ে যায়।

ব্লাস্টের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওচিত্র এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়— আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনে একদল পুরুষ নূরুল হুদাকে মারছে এবং তাঁর গলায় জুতার মালা পরিয়ে অপমানজনক আচরণ করছে।

এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও সংবিধানের লঙ্ঘন এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ এবং ৩৫(৫) অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিক আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী, আইনানুগ প্রক্রিয়া ব্যতীত বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে, এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না এবং কোনো ব্যক্তির প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর শাস্তি প্রদান বা আচরণের করা যাবে না।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একাধিক রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তিকে কোনো ধরনের বিচারবহির্ভূত শাস্তি দিতে পারে না। পাশাপাশি দণ্ডবিধির ধারা-৩২৩ ও ৩২৫ ধারায় কোনো ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত প্রদানকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। জনসমক্ষে সংঘটিত এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবলমাত্র সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন নয়, এটি বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি চরম অবজ্ঞা।

গতকাল মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) গণমাধ্যমে আলাদা বিবৃতি পাঠিয়ে ‘মব’ সৃষ্টি বা জনতার হাতে আইন তুলে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদার প্রতি অপমানজনক ও সহিংস আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা

ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। তাই সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। কেউ যদি সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্রুত সেবার ক্ষেত্রে সবার আগে জনগণ।”

সোমবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অডিটরিয়ামে ‘উপজেলা ভূমি অফিসের সেবা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

‘জ্ঞান জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করাই প্রকৃত সাফল্য’

ভূমিসেবা নিশ্চিতের মূল ভিত্তি সঠিক সার্ভে ও সেটেলমেন্ট: ভূমি উপদেষ্টা

তিনি বলেন, “ভূমি প্রশাসন বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত, যার কার্যক্রম মূলত উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষের ভূমি-সংক্রান্ত প্রায় সব সেবা এখান থেকেই দেওয়া হয়। তাই উপজেলা ভূমি অফিস নাগরিক সেবার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।”

তিনি আরো বলেন, “ভূমি সেবার মান ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এখনও নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সেবায় জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কিভাবে কাজ করলে জনগণের কল্যাণ হবে, তা নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্ধারণ করতে হবে।”

সুশাসন ছাড়া অগ্রগতি অসম্ভব
ভূমি উপদেষ্টা বলেন, “সুশাসন একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। এটি এমন একটি কাঠামো, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়—ভূমি সেবার ক্ষেত্রেও তাই।”

তিনি বলেন, “ভূমি মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এটি খাদ্য, শিল্প, আবাসন ও অর্থনীতির মূল উৎস। ভূমি সেবার মানোন্নয়ন কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, এটি মানবিকতা, সততা ও দায়িত্ববোধের সমন্বয়।”

জনবান্ধব ভূমি প্রশাসনের আহ্বান
ভূমি উপদেষ্টা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “স্বচ্ছতা, দেশপ্রেম, সততা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ভূমি খাতকে জনবান্ধব করা সম্ভব। সহকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, অসততার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কাজের জন্য ওপর থেকে সুপারিশ এলে দ্রুত হয়ে যায়, কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই দ্রুত সেবা পায় না। এসব অসঙ্গতি পরিহার করতে হবে।”

ভূমি খাতে সুশাসন এখন সময়ের দাবি
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “ভূমি খাত বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। এটি শুধু উৎপাদনের উপকরণ নয়; এটি নাগরিকের অধিকার, জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ভূমি প্রশাসনে সুশাসনের অভাব ও স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে জনগণ ভোগান্তিতে ছিল।”

নতুন বাংলাদেশের পথে
ভূমি উপদেষ্টা আরো বলেন, “সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই পালন করেন না, বরং নির্বাচন পরিচালনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁরা নির্বাচনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।”

তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশকে পুরোনো জীর্ণতা ভুলে সামনে এগোতে হবে। সামনে নির্বাচন—নতুন আশা ও নতুন প্রত্যয়ের প্রতীক। তাই এমন একটি নির্বাচন উপহার দিতে হবে, যেখানে জনগণ নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ।স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন টিআইবির পরিচালক (সিভিক এনগেজমেন্ট) ফারহানা ফেরদৌস, প্রফেসর ড. সুরাইয়া খায়ের, উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা), টিআইবি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দস্তয়েভস্কি: মানব-অস্তিত্বের নিখুঁত দ্রষ্টা
  • জাতীয় নির্বাচনে দল ও প্রার্থীরা পোস্টার ব্যবহার করতে পারবেন না
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ চাইলেন রাকসুর প্রতিনিধিরা
  • ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেজিস্ট্রারের অপসারণ চায় রাকসু
  • সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা
  • রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় আম্মার বললেন, ‘আমি রাকসুর নির্বাচিত জিএস’
  • ন্যূনতম ঐক্য না হলে নির্বাচন শঙ্কায় পড়বে
  • চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার ৩
  • ‘ওই মানুষটা আমার মুখ চেপে ধরেছিল...’, ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন নায়িকা
  • চট্টগ্রামে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার ৩