৪ জুন পাঁচ ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে হঠাৎ ডেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সভা করে। ব্যাংক পাঁচটি ছিল ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। সে সভায় ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এ পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। আগে ছয় ব্যাংক একীভূত করার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ সেটা পাঁচ ব্যাংক হয়ে গেল। সভায় তিন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আপত্তি করে। আমিও জানিয়ে দিয়েছি, পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে চার ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের তুলনা চলে না। ওই চারটি ব্যাংকের মালিকানা এস আলম গ্রুপের কাছে ছিল। এসব ব্যাংক যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এক্সিমের ক্ষত ততটা নয়।

আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দিয়েছি, এক্সিম ব্যাংক কিছুদিনের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে তারল্য–সহায়তা নেওয়া হয়েছে, তা আগামী বছর থেকে ফেরত দেওয়া শুরু হবে। আমাদের ব্যাংক থেকে কোনো গ্রাহক টাকা তুলতে সমস্যায় পড়েননি। আমাদের আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের যে ব্যবসা আছে, তা অন্য চার ব্যাংকের চেয়ে বেশি। এসব ব্যাংক মিলে একটা সরকারি ব্যাংকে রূপান্তর করা হলে তা কোনোভাবেই ভালো হবে না। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত মানতে পারছি না।

এক্সিম ব্যাংকের যতটা ক্ষতি গত সরকারের সময়ে হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে গত ১০ মাসে। কয়েক দফায় বলা হয়েছে, এক্সিম ব্যাংক দুর্বল, এক্সিম ব্যাংক একীভূত হবে। এর ফলে দফায় দফায় আমাদের ব্যাংকের গ্রাহকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। যাতে ব্যাংকের তারল্য–সংকটে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয়। এ ছাড়া বিদেশিদের দিয়ে ঋণের মান পরীক্ষায় প্রায় অর্ধেক ঋণ খেলাপি হওয়ার যোগ্য বলে জানিয়েছে, যা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর। বাণিজ্যিক (ট্রেডিং) ঋণে কখনো শতভাগ জামানত থাকে না, বিদেশিরা জামানত কম পেলেই তা খেলাপি হিসেবে ধরেছে। এ ছাড়া এস আলমের ঋণ নিয়মিত থাকলেও তা খেলাপি বলা হচ্ছে। এভাবে ধরলে সব ব্যাংকের ঋণ অর্ধেক খারাপ হয়ে যাবে। তাই আমরা মনে করি, যথাযথ বাছবিচার ও হিসাব করে একীভূত করার সিদ্ধান্ত আসা উচিত।

নজরুল ইসলাম স্বপন, চেয়ারম্যান, এক্সিম ব্যাংক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক স ম ব য ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

অভিযোগ তদন্তে প্রশ্নের উত্তর পাঠাতে সময় বাড়াল ভারত সরকার

বাংলাদেশের পাটপণ্য আমদানির ওপর কাউন্টারভেলিং ডিউটি বা প্রতিকারমূলক শুল্ক বসাতে তদন্ত করছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগ। অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে পাঠানো প্রশ্নমালার আনুষ্ঠানিক উত্তর পাঠানোর সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে তারা।

ভারতের বাণিজ্য বিভাগের উপপরিচালক মনোজ কুমার গত বুধবার এ–সংক্রান্ত এক নোটিশে সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি জানান। বাংলাদেশের পাশাপাশি একই তদন্ত নেপালের বিরুদ্ধেও হচ্ছে।

নোটিশে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ও নেপালকে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্নমালার উত্তর পাঠাতে বলা হয়েছিল। তবে দেশগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে আর সময় বাড়ানো হবে না বলে জানানো হয় নোটিশে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ গত ২১ আগস্ট ই–মেইল পাঠিয়ে ভারত ২ সেপ্টেম্বর পরামর্শ সভায় বসার আহ্বান জানিয়েছিল। ২৯ আগস্ট ভারতকে এক ই–মেইল বার্তায় বাংলাদেশ জানিয়েছিল পরামর্শ সভার প্রস্তুতির জন্য ৬০ দিন সময় দরকার। ভারত তার জবাব দেয়নি। পরবর্তীতে অভিযোগ তদন্তে ভারতের প্রশ্নমালা পূরণ করতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটি ডেস্ক চালু করে।

অভিযোগ তদন্তের প্রশ্নমালা পূরণ করেন মূলত রপ্তানিকারকেরা। ইতিমধ্যে কাজ এগিয়েছে বলেও জানালেন বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান তাপস প্রামাণিক। তিনি আাজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও নিজেদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরবে।

পাটপণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং শুল্ক আরোপের তদন্ত শুরু করা হলেও ২০১৮ সালে বাংলাদেশি একই পণ্যের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারত সরকার। প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে সেটি আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। তখন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পাটপণ্যে ভিন্ন ভিন্ন হারে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়।

ভারতের পাটকল সমিতি (আইজেএমএ) এবং এ পি মেস্তা টোয়াইন মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (এজেএমএ) যৌথ আবেদনের পর বাংলাদেশ ও নেপালের পাটপণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং শুল্ক বসাতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে তদন্তের ঘোষণা দেয় বিভাগটি। ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্তের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।

ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাটপণ্যে ভর্তুকি দেওয়াবিষয়ক ১২টি অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (ইজেড) পাটপণ্যের ওপর নানা ধরনের ভর্তুকি দেওয়া হয়। যে কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

তদন্তের নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের ইপিজেডে অবস্থিত কারখানাগুলো লভ্যাংশ কর থেকে অব্যাহতি পায় এবং বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ পায়। আর ইজেডের কারখানাগুলো ১০ বছরের কর অবকাশ ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি পায়। এ ছাড়া নগদ সহায়তা, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ