ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়ানোর জবাবে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে তেহরান।

গতকাল সোমবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়তি ঘোষণা দেন, ওই অঞ্চলে বা অন্য কোথাও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহৃত ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন হামলার প্রতিশোধ নিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পরে ওই দিন রাতেই কাতারের রাজধানী দোহায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদে হামলা চালায় ইরান।

আল উদেইদ ঘাঁটিতে কী আছে, এটি নিয়ে এত আলোচনা কেন, আল উদেইদ হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল কি না, এসব বিষয় জেনে নেওয়া যাক—

আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে কী আছে

ইরান থেকে পারস্য উপসাগর পেরিয়ে মাত্র ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ দেশ কাতারের অবস্থান। আর এ দেশেই আল উদেইদ ঘাঁটি অবস্থিত। এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি।

১৯৯৬ সালে কাতারের রাজধানী দোহার কাছে মরু অঞ্চলে ২৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয় এ ঘাঁটি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার্স বা অগ্রবর্তী সদর দপ্তর। মিসর থেকে শুরু করে কাজাখস্তান পর্যন্ত বিশাল অঞ্চলে মার্কিন সামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এই সদর দপ্তর থেকে।

১৯৯৬ সালে কাতারের রাজধানী দোহা শহরের কাছে মরু অঞ্চলে ২৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয় এ ঘাঁটি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের অগ্রবর্তী সদর দপ্তর।

এ ঘাঁটিতে কাতারের নিজস্ব বিমানবাহিনী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আরও কয়েকটি দেশের বাহিনী অবস্থান করছে। সেখানে প্রায় ১০ হাজার সেনা থাকেন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক পত্রিকা দ্য হিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আল উদেইদ ঘাঁটিতে ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা দীর্ঘ রানওয়েগুলোর কারণে দ্রুত বাহিনী মোতায়েন করা যায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আল উদেইদ ঘাঁটিতে কাতারের বিনিয়োগের কারণে এ ঘাঁটি সামরিক প্রস্তুতির দিক থেকে এগিয়ে আছে। একই সঙ্গে এ ঘাঁটির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের কয়েক বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। বছরের পর বছর কাতার এ ঘাঁটির অবকাঠামো উন্নয়নে ৮০০ কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছে।

এ ঘাঁটি ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান এবং ২০২১ সালে কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমেও বড় ভূমিকা পালন করেছে।

কেন খবরের শিরোনামে

গতকাল সোমবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় বলা হয়, ইরানের পাল্টা হামলার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে তারা সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আঞ্চলিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে দেশের আকাশসীমায় উড়োজাহাজের চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।’

আল উদেইদ ঘাঁটিতে কাতারের নিজস্ব বিমানবাহিনী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আরও কয়েকটি দেশের বাহিনীর অবস্থান রয়েছে। সেখানে প্রায় ১০ হাজার সেনা থাকেন।

কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতাবাসগুলোও তাদের নাগরিকদের সতর্কভাবে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ওই ঘোষণা দেওয়া হয়।

পরে এক পশ্চিমা কূটনীতিকের বরাতে রয়টার্স জানায়, গতকাল দুপুর থেকে উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলার আশঙ্কা আছে।

সেই রাতেই কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে আল–জাজিরা জানায়, দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আল উদেইদ ঘাঁটির দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে।

আল উদেইদ কি হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে সরাসরি জড়ানোর কথা ভাবছিলেন, তখন স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, উদেইদ ঘাঁটির রানওয়ে থেকে বেশ কয়েকটি সামরিক বিমান সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

৫ ও ১৯ জুন স্যাটেলাইটে ধারণকৃত উদেইদ ঘাঁটির দুটি ছবি। স্যাটেলাইট ছবিগুলো প্রকাশ করেছে প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র স ও য ক তর অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

কাতারে ইরানের হামলার শিকার মার্কিন ঘাঁটি আল উদেইদে আসলে কী আছে

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়ানোর জবাবে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে তেহরান।

গতকাল সোমবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়তি ঘোষণা দেন, ওই অঞ্চলে বা অন্য কোথাও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহৃত ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন হামলার প্রতিশোধ নিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পরে ওই দিন রাতেই কাতারের রাজধানী দোহায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদে হামলা চালায় ইরান।

আল উদেইদ ঘাঁটিতে কী আছে, এটি নিয়ে এত আলোচনা কেন, আল উদেইদ হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল কি না, এসব বিষয় জেনে নেওয়া যাক—

আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে কী আছে

ইরান থেকে পারস্য উপসাগর পেরিয়ে মাত্র ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ দেশ কাতারের অবস্থান। আর এ দেশেই আল উদেইদ ঘাঁটি অবস্থিত। এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি।

১৯৯৬ সালে কাতারের রাজধানী দোহার কাছে মরু অঞ্চলে ২৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয় এ ঘাঁটি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার্স বা অগ্রবর্তী সদর দপ্তর। মিসর থেকে শুরু করে কাজাখস্তান পর্যন্ত বিশাল অঞ্চলে মার্কিন সামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এই সদর দপ্তর থেকে।

১৯৯৬ সালে কাতারের রাজধানী দোহা শহরের কাছে মরু অঞ্চলে ২৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয় এ ঘাঁটি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের অগ্রবর্তী সদর দপ্তর।

এ ঘাঁটিতে কাতারের নিজস্ব বিমানবাহিনী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আরও কয়েকটি দেশের বাহিনী অবস্থান করছে। সেখানে প্রায় ১০ হাজার সেনা থাকেন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক পত্রিকা দ্য হিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আল উদেইদ ঘাঁটিতে ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা দীর্ঘ রানওয়েগুলোর কারণে দ্রুত বাহিনী মোতায়েন করা যায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আল উদেইদ ঘাঁটিতে কাতারের বিনিয়োগের কারণে এ ঘাঁটি সামরিক প্রস্তুতির দিক থেকে এগিয়ে আছে। একই সঙ্গে এ ঘাঁটির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের কয়েক বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। বছরের পর বছর কাতার এ ঘাঁটির অবকাঠামো উন্নয়নে ৮০০ কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছে।

এ ঘাঁটি ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান এবং ২০২১ সালে কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমেও বড় ভূমিকা পালন করেছে।

কেন খবরের শিরোনামে

গতকাল সোমবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় বলা হয়, ইরানের পাল্টা হামলার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে তারা সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আঞ্চলিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে দেশের আকাশসীমায় উড়োজাহাজের চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।’

আল উদেইদ ঘাঁটিতে কাতারের নিজস্ব বিমানবাহিনী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আরও কয়েকটি দেশের বাহিনীর অবস্থান রয়েছে। সেখানে প্রায় ১০ হাজার সেনা থাকেন।

কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতাবাসগুলোও তাদের নাগরিকদের সতর্কভাবে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ওই ঘোষণা দেওয়া হয়।

পরে এক পশ্চিমা কূটনীতিকের বরাতে রয়টার্স জানায়, গতকাল দুপুর থেকে উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলার আশঙ্কা আছে।

সেই রাতেই কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে আল–জাজিরা জানায়, দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আল উদেইদ ঘাঁটির দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে।

আল উদেইদ কি হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে সরাসরি জড়ানোর কথা ভাবছিলেন, তখন স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, উদেইদ ঘাঁটির রানওয়ে থেকে বেশ কয়েকটি সামরিক বিমান সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

৫ ও ১৯ জুন স্যাটেলাইটে ধারণকৃত উদেইদ ঘাঁটির দুটি ছবি। স্যাটেলাইট ছবিগুলো প্রকাশ করেছে প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি

সম্পর্কিত নিবন্ধ