জামালপুরের মাদারগঞ্জে ২৩টি সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরতের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করেছেন গ্রাহকেরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়সহ ওই প্রাঙ্গণে থাকা অধিকাংশ সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ আছে।

‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’—এর ব্যানারে চলছে এই আন্দোলন। গতকাল সোমবার একই স্থানে সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। তাঁরা জানান, লাভের আশায় কষ্টার্জিত অর্থ সমবায় সমিতি নামের ২৩টি প্রতিষ্ঠানে জমা করেছিলেন। কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা দিয়ে লাভের টাকা নিচ্ছিলেন। তবে এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুনসমিতির হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরতের দাবিতে মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও২০ ঘণ্টা আগে

ওই কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয় দিনের মতো পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি সকাল থেকে শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকেরা বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে আসছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে টাকা উদ্ধারে কোনো কার্যকর ভূমিকা প্রশাসন রাখেনি।

আজ সকাল ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এরপর তাঁরা সেখানে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয়টি ঘেরাও করেন। এতে উপজেলা পরিষদসহ ২১ দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। এ কর্মসূচির কারণে ওই সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে ঢুকতে পারছেন না।

আরও পড়ুনগ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ: মাদারগঞ্জের সমবায় সমিতির এক পরিচালক আটক২৩ এপ্রিল ২০২৫

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, লাভের আশায় সমিতিগুলোতে টাকা জমা করেছিলেন প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা ২০২২ সালের শেষের দিকে আত্মগোপনে চলে যান।

আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হাজারো গ্রাহকেরা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের লোকজন আমাদের নিয়ে আলোচনায় বসেছেন এবং আন্দোলনকে থামিয়ে দিয়েছেন। দুঃখের ব্যাপার, প্রশাসনের এগুলো লোকদেখানো ছিল। অসুস্থ রোগীরা টাকার জন্য চিকিৎসা করতে পারছেন না। অনেকে খেতে পারছেন না। অথচ নিজেদের টাকা তাঁরা পাচ্ছেন না। আমরা কোনোভাবেই এবার আন্দোলনের মাঠ থেকে যাব না।’

আরও পড়ুনজামালপুরে ৩৫ হাজার গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও ২৩ সমিতি, থানার সামনে গ্রাহকদের অবস্থান০৬ এপ্রিল ২০২৫

জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোতে ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরের কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।

জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, ‘আমাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। তবে বহুবার টাকা উদ্ধারের জন্য আলোচনায় বসেছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’

মাদারগঞ্জের ইউএনও নাদির শাহ বলেন, আন্দোলনের কারণে দপ্তরগুলোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের আলোচনার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদল সমিতির মোস্তাফিজ, স্বদেশের আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমিতির ইব্রাহিম খলিল দীর্ঘদিন আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুনজামালপুরে সমবায় সমিতির লোভে পড়ে পথে বসেছেন মধ্যম ও নিম্ন আয়ের ৩৫ হাজার মানুষ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম দ রগঞ জ গ র হক র র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইউএনও অফিস ঘেরাও করে টাকা ফেরত দাবি

কয়েকটি সমবায় সমিতিতে জমা টাকা ফেরতের দাবিতে জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে গ্রাহকরা মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকে অবস্থান নেন। এ সময় সেখান থেকে সরে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ। বিক্ষোভকারীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সেখানে অবরোধ করেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের ভাষ্য, উপজেলার ২৩টি সমিতিতে বিপুল অঙ্কের টাকা জমা রেখেছেন তারা। এর মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনুতেই গ্রাহকের জমার পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার বেশি। তিন-চার বছর ধরে তারা টাকা ফেরতের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু প্রশাসন এসব সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। 
মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানত রাখা ‘অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’র ব্যানারে সোমবার সকাল ১০টার দিকে শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হন কয়েকশ গ্রাহক। তারা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। 
সেখানে আসা চরনগরের বিধবা রহিমা বেগমের ভাষ্য, ক্ষেতের ফসল ও হাঁস-মুরগি বিক্রি করে তিনি আল-আকাবা সমিতিতে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু সেই টাকার জন্য বছরের পর বছর ঘুরছেন। রহিমা বলেন, ‘ভেবেছিলাম বিপদে (টাকা) কাজে লাগবে। এখন আমার সব শেষ। টাকা না পেলে মরে যাব।’ গ্রাহকের টাকা প্রশাসনকে উদ্ধার করে দেওয়ার আকুতি জানান তিনি। 
শতদল সমিতিতে ২০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রহিম। তাঁর গল্পও রহিমার মতো। বালিজুরি পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহিমের ভাষ্য, ‘আমার পেনশনের সব টাকার সঙ্গে আরও টাকা যুক্ত করে ২০ লাখ টাকা জমা করি মেয়ের বিয়ের জন্য। শতদলের সবাই এখন উধাও। আমি এখন কোথায় যাব? এই টাকা ফেরত না পেলে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই।’ বলে কাঁদতে থাকেন তিনি। 
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তারা দফায় দফায় আন্দোলন করলে সম্প্রতি আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালক মাহবুবুর রহমান, শতদল সমিতির পরিচালক আব্দুল বাছেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু স্বদেশের পরিচালক আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমিতির পরিচালক ইব্রাহিম খলিল ও আল-আকাবা সমিতির পরিচালক মির্জা মাজেদ দীর্ঘদিন ধরেই আত্মগোপনে।
বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের ভূমিকাকে সন্দেহ করছেন ‘অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’ সভাপতি শিবলুল বারী রাজু। তিনি বলেন, গ্রাহকের টাকা উদ্ধারে তাদের কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজন আত্মাহুতির ঘোষণাও দেন।
সংবাদ পেয়ে সেখানে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন মাদারগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল্লাহ সাইফ। তিনি সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান। পাশাপাশি টাকা উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের আশ্বাস দেন। 
তবে পুলিশের এ কর্মকর্তার আশ্বাসে সন্তুষ্ট হননি গ্রাহকরা। তারা সাফ জানিয়ে দেন, আগে একাধিকবার প্রশাসন এমন আশ্বাস দিলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান চালিয়ে যাবেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অবশ্য তারা আবার কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে সেখান থেকে সরে যান। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউএনও নাদির শাহর মোবাইল ফোনে কল দিলেও ধরেননি।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। যারা সমিতিগুলো অডিটে গাফিলতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সমিতিসংশ্লিষ্টরা সবাই পলাতক। 
ওসি সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, দেড়-দুই মাসের মধ্যে এসব সমিতির তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা এখনও কারাবন্দি। সমিতিতে জড়িত পলাতক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউএনও অফিস ঘেরাও করে টাকা ফেরত দাবি
  • কুমিল্লায় চণ্ডীমূড়া মন্দিরের সামনে বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে দুপক্ষের উত্তেজনা