দ্বিতীয় দিনের মতো মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও, হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরতের দাবি
Published: 24th, June 2025 GMT
জামালপুরের মাদারগঞ্জে ২৩টি সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরতের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করেছেন গ্রাহকেরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়সহ ওই প্রাঙ্গণে থাকা অধিকাংশ সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ আছে।
‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’—এর ব্যানারে চলছে এই আন্দোলন। গতকাল সোমবার একই স্থানে সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। তাঁরা জানান, লাভের আশায় কষ্টার্জিত অর্থ সমবায় সমিতি নামের ২৩টি প্রতিষ্ঠানে জমা করেছিলেন। কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা দিয়ে লাভের টাকা নিচ্ছিলেন। তবে এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুনসমিতির হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরতের দাবিতে মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও২০ ঘণ্টা আগেওই কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয় দিনের মতো পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি সকাল থেকে শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকেরা বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে আসছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে টাকা উদ্ধারে কোনো কার্যকর ভূমিকা প্রশাসন রাখেনি।
আজ সকাল ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এরপর তাঁরা সেখানে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয়টি ঘেরাও করেন। এতে উপজেলা পরিষদসহ ২১ দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। এ কর্মসূচির কারণে ওই সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে ঢুকতে পারছেন না।
আরও পড়ুনগ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ: মাদারগঞ্জের সমবায় সমিতির এক পরিচালক আটক২৩ এপ্রিল ২০২৫আন্দোলনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, লাভের আশায় সমিতিগুলোতে টাকা জমা করেছিলেন প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা ২০২২ সালের শেষের দিকে আত্মগোপনে চলে যান।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হাজারো গ্রাহকেরা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের লোকজন আমাদের নিয়ে আলোচনায় বসেছেন এবং আন্দোলনকে থামিয়ে দিয়েছেন। দুঃখের ব্যাপার, প্রশাসনের এগুলো লোকদেখানো ছিল। অসুস্থ রোগীরা টাকার জন্য চিকিৎসা করতে পারছেন না। অনেকে খেতে পারছেন না। অথচ নিজেদের টাকা তাঁরা পাচ্ছেন না। আমরা কোনোভাবেই এবার আন্দোলনের মাঠ থেকে যাব না।’
আরও পড়ুনজামালপুরে ৩৫ হাজার গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও ২৩ সমিতি, থানার সামনে গ্রাহকদের অবস্থান০৬ এপ্রিল ২০২৫জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোতে ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরের কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, ‘আমাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। তবে বহুবার টাকা উদ্ধারের জন্য আলোচনায় বসেছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’
মাদারগঞ্জের ইউএনও নাদির শাহ বলেন, আন্দোলনের কারণে দপ্তরগুলোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের আলোচনার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদল সমিতির মোস্তাফিজ, স্বদেশের আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমিতির ইব্রাহিম খলিল দীর্ঘদিন আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুনজামালপুরে সমবায় সমিতির লোভে পড়ে পথে বসেছেন মধ্যম ও নিম্ন আয়ের ৩৫ হাজার মানুষ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম দ রগঞ জ গ র হক র র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমে এসপি-ওসির পদায়ন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশ সুপার (এসপি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) লটারির মাধ্যমে পদায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে লটারির মাধ্যমে এসপি ও ওসির পদায়ন করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন যদি কাউকে বদলি ও পদায়নের প্রয়োজন মনে করে, তারা সেটা করবে।
আজ বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মপরিকল্পনাবিষয়ক এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ডিসি ও ইউএনও যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন, সেখানে লটারির মাধ্যমে পদায়ন হবে কি না, তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আশা করছি, তারাও লটারি মাধ্যমে পদায়ন করবে।
তিনি বলেন, আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসপি ও ওসি পদায়ন হবে লটারির মাধ্যমে। তবে ওসির সংখ্যা যেহেতু বেশি, তাই একটি বিভাগ ধরে ধরে লটারির মাধ্যমে পদায়ন করা হবে। এবারের নির্বাচনে ৪৭ হাজার কেন্দ্রে একটি করে বডি ক্যামেরা থাকবে। ওই কেন্দ্রে পুলিশের জ্যেষ্ঠ সদস্যের কাছে বডি ক্যামেরা থাকবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এবারের নির্বাচনে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। যাঁরা নির্বাচনে দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের প্রত্যেককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যিনি যে বাহিনীর, যার যার এলাকা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
নির্বাচনে পুলিশের পক্ষপাত ঠেকাতে সরকার কী করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের সহযোগিতা নেওয়া হবে। আশা করা হচ্ছে, এবার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।