রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত
Published: 24th, June 2025 GMT
ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঘরোয়া বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে এবং ভবিষ্যতের চাহিদা মাথায় রেখে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপরিশোধিত তেলের আমদানি বাড়িয়েছে ভারত।
১২ দিনের পাল্টাপাল্টি হামলার পর ইরান-ইসরায়েল শেষমেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এর মধ্যে তেলের বাজারে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি ইরান তেল বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে, এমন হুমকি দিয়েছিল। এ বাস্তবতায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বৃদ্ধি করে ভারত। খবর ইকোনমিক টাইমসের।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে তাৎক্ষণিক হবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং সে কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির চাপ। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে; বেড়ে যাবে শিল্পের খরচ। এ ছাড়া বাণিজ্যের ব্যয় বেড়ে যাওয়া, প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির অস্থিরতা মোকাবিলায় বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহব্যবস্থাকে আরও টেকসই ও বহুমুখী করতে হবে। বিকল্প জ্বালানি উৎস যেমন এলএনজি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা বিকল্প উৎস থেকে আমদানির দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও পরিকল্পিত খরচ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জ্বালানির দামে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা না দেয়।
আগাম ঝুঁকি বিবেচনা করে বিকল্প উৎস থেকে মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা আগেই করে রেখেছিল ভারত সরকার। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির পরিমাণ জুন মাসে সৌদি আরব ও ইরাক থেকে সম্মিলিত আমদানিও ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্ববাণিজ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের তথ্যানুযায়ী, জুনে ভারত প্রতিদিন ২০–২২ লাখ ব্যারেল রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করছে, গত দুই বছরে যা সর্বোচ্চ। একই সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকেও দৈনিক আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩৯ লাখ ব্যারেল, মে মাসের তুলনায় যা উল্লেখযোগ্যহারে বেশি।
মে মাসে রাশিয়া থেকে ভারত প্রতিদিন গড়ে ১৯ দশমিক ৬ লাখ ব্যারেল তেল এনেছে। জুন মাসের শেষ নাগাদ পশ্চিম এশিয়া থেকে আমদানির পরিমাণ কমে ২০ লাখ ব্যারেলের নিচে নামতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত প্রতিদিন গড়ে ৫১ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বিদেশ থেকে আমদানি করে। সেই তেল পরিশোধনের পর পেট্রল-ডিজেলে রূপান্তরিত হয়।
বাজারবিশেষজ্ঞ সুমিত রিতোলিয়া ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, ‘জাহাজমালিকেরা এখন পারস্য উপসাগরের দিকে খালি ট্যাংকার পাঠাতে এখন অনিচ্ছুক। ফলে ওই পথে জাহাজের সংখ্যা ৬৯ থেকে কমে ৪০-এ নেমে এসেছে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রুশ তেল আমদানি বৃদ্ধি করে ভারত। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপের বাজার হারানোর ফলে রুশ তেল তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে ওঠে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ভারত। ভারতের মোট তেল আমদানির ১ শতাংশের কম আসত রাশিয়া থেকে; কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে তা ৪০-৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
সংবাদে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ভারতের তেল সরবরাহে সরাসরি প্রভাব ফেলেনি। কেপলার বলছে, হরমুজ প্রণালি সম্পূর্ণ বন্ধ হলে বিশ্বের জ্বালানি বাজারে বড়সড় প্রভাব পড়ত। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপুল তেল ও কাতারের এলএনজি এই প্রণালি দিয়েই যায়। ভারতের আমদানিকৃত তেলের ৪০ শতাংশ ও গ্যাসের অর্ধেক এ পথের ওপর নির্ভরশীল।
রিতোলিয়া বলেন, গত দুই বছরে ভারতের তেল আমদানির কৌশলে বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে। রাশিয়ার উরালস, ইএসপিও ও সোকোল জাতের অপরিশোধিত তেল হরমুজ প্রণালি দিয়ে আসে না। এসব তেল আসে সুয়েজ খাল, আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত (কেপ অব গুড হোপ) কিংবা প্রশান্ত মহাসাগরের পথ ধরে।
ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলো এখন পরিশোধন ও মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নমনীয় হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন জাতের অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে তারা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা থেকে আসা তুলনামূলক ব্যয়বহুল তেলও এখন কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও য ক তর ষ ট র থ ক অপর শ ধ ত ত ল ত ল আমদ ন আমদ ন র ন র পর ব কল প ব শ বব
এছাড়াও পড়ুন:
পাঠকের ভালোবাসাই পুরস্কার
প্রথম আলো ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, সেদিন যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছিল, এখন তার বয়স ২৭ বছর। ভাবা যায়! আর ধরা যাক, প্রথম আলো প্রকাশের প্রথম সপ্তাহে ৭ বছরের যে শিশু গোল্লাছুটের ছবির ধাঁধা মিলিয়েছিল, এখন তার ৭ বছরের একটা সন্তান আছে। মজার কথা হলো, এমন পাঠক আমরা পাই, যিনি বলেন, ‘আমি প্রথম আলো পড়ে আসছি সেই প্রথম দিন থেকে, আমার মা–ও পড়তেন। তিনি আজ আর বেঁচে নেই। এখন আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও এই প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো তো আমাদের পরিবারেরই একজন। এমনকি আমার নাতিও অনলাইনে প্রথম আলো পড়ছে।’
দেশে কিংবা বিদেশে, ঢাকায় কিংবা চট্টগ্রামে, রাজশাহী কিংবা যশোরে, যেখানেই যাই, কেউ না কেউ এগিয়ে আসেন, হয়তো কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ করপোরেট অফিসার, কেউ এনজিও নেতা, কেউ অধ্যাপনা করছেন; এসে বলেন, ‘আমি তো প্রথম আলো পড়ি, শুধু তা-ই নয়, আমি বন্ধুসভার সদস্য ছিলাম।’ কেউ বলেন, ‘আমি তো আপনাদের জিপিএ–৫ সংবর্ধনায় গিয়েছিলাম।’ বিদেশ থেকে আসেন এমআইটি থেকে পাস করা উদ্যোক্তা বা বিজ্ঞানী, এসে বলেন, ‘আমি তো গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতাম, সে কারণেই আজ আমি এই জায়গায়।’
মজার কথা হলো, এমন পাঠক আমরা পাই, যিনি বলেন, ‘আমি প্রথম আলো পড়ে আসছি সেই প্রথম দিন থেকে, আমার মা–ও পড়তেন। তিনি আজ আর বেঁচে নেই। এখন আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও এই প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো তো আমাদের পরিবারেরই একজন। এমনকি আমার নাতিও অনলাইনে প্রথম আলো পড়ছে।’আনন্দ-বেদনার ঘটনাও ঘটে। বুয়েটের এক শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন, লেখাপড়া তো অনিশ্চিত হলোই, জীবনই হয়ে গেল এলোমেলো। তাঁকে নিয়ে তাঁর মা আসতেন প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শসভায়। শিক্ষার্থী মাদকমুক্ত হলেন। পাস করে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারলেন। তাঁর মা এসে আমাদের বলেছিলেন, ‘প্রথম আলোর জন্য দোয়া করি, প্রথম আলো যেন বেহেশতে যায়।’ আবার প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী বৃত্তি পেয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মেধাবী সন্তানেরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা হয়েছেন। অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে দরিদ্রতম পরিবারের প্রথম স্নাতক হিসেবে মেয়েরা চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে আবার প্যারিস কিংবা মন্ট্রিয়লে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, চাকরিও করছেন।
কিন্তু সবার আগে প্রথম আলো করতে চেয়েছে সাংবাদিকতা। দলনিরপেক্ষ থাকব, স্বাধীন থাকব, জনগণের পক্ষে থাকব, সত্য কথা সাহসের সঙ্গে বলে যাব—২৭ বছর আগে থেকেই এই ছিল আমাদের নীতি। প্রথম আলো প্রকাশের আগেও গল্প আছে। আমরা আরেকটা সংবাদপত্রে ছিলাম অনেকেই। সেই পত্রিকার উদ্যোক্তা তখনকার সরকারের এমপি নির্বাচিত হলেন। আমরা ভাবলাম, আমরা তো দলনিরপেক্ষ কাগজ করতে চাই। তখনই ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয় ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামের মধ্যস্থতায়। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানকে সব সময় স্মরণ করি। তিনি প্রথম আলোর সম্পাদকীয় বিষয়ে কোনো দিন হস্তক্ষেপ করেননি, কোনো দিনও জানতে চাননি কী ছাপা হবে বা এটা কেন ছাপা হলো। শুধু উৎসাহ দিয়ে গেছেন।
মতিউর রহমান, সম্পাদক, প্রথম আলো