ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঘরোয়া বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে এবং ভবিষ্যতের চাহিদা মাথায় রেখে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপরিশোধিত তেলের আমদানি বাড়িয়েছে ভারত।

১২ দিনের পাল্টাপাল্টি হামলার পর ইরান-ইসরায়েল শেষমেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এর মধ্যে তেলের বাজারে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি ইরান তেল বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে, এমন হুমকি দিয়েছিল। এ বাস্তবতায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বৃদ্ধি করে ভারত। খবর ইকোনমিক টাইমসের।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে তাৎক্ষণিক হবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং সে কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির চাপ। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে; বেড়ে যাবে শিল্পের খরচ। এ ছাড়া বাণিজ্যের ব্যয় বেড়ে যাওয়া, প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির অস্থিরতা মোকাবিলায় বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহব্যবস্থাকে আরও টেকসই ও বহুমুখী করতে হবে। বিকল্প জ্বালানি উৎস যেমন এলএনজি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা বিকল্প উৎস থেকে আমদানির দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও পরিকল্পিত খরচ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জ্বালানির দামে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা না দেয়।

আগাম ঝুঁকি বিবেচনা করে বিকল্প উৎস থেকে মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা আগেই করে রেখেছিল ভারত সরকার। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির পরিমাণ জুন মাসে সৌদি আরব ও ইরাক থেকে সম্মিলিত আমদানিও ছাড়িয়ে গেছে।

বিশ্ববাণিজ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের তথ্যানুযায়ী, জুনে ভারত প্রতিদিন ২০–২২ লাখ ব্যারেল রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করছে, গত দুই বছরে যা সর্বোচ্চ। একই সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকেও দৈনিক আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩৯ লাখ ব্যারেল, মে মাসের তুলনায় যা উল্লেখযোগ্যহারে বেশি।

মে মাসে রাশিয়া থেকে ভারত প্রতিদিন গড়ে ১৯ দশমিক ৬ লাখ ব্যারেল তেল এনেছে। জুন মাসের শেষ নাগাদ পশ্চিম এশিয়া থেকে আমদানির পরিমাণ কমে ২০ লাখ ব্যারেলের নিচে নামতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত প্রতিদিন গড়ে ৫১ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বিদেশ থেকে আমদানি করে। সেই তেল পরিশোধনের পর পেট্রল-ডিজেলে রূপান্তরিত হয়।

বাজারবিশেষজ্ঞ সুমিত রিতোলিয়া ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, ‘জাহাজমালিকেরা এখন পারস্য উপসাগরের দিকে খালি ট্যাংকার পাঠাতে এখন অনিচ্ছুক। ফলে ওই পথে জাহাজের সংখ্যা ৬৯ থেকে কমে ৪০-এ নেমে এসেছে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রুশ তেল আমদানি বৃদ্ধি করে ভারত। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপের বাজার হারানোর ফলে রুশ তেল তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে ওঠে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ভারত। ভারতের মোট তেল আমদানির ১ শতাংশের কম আসত রাশিয়া থেকে; কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে তা ৪০-৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

সংবাদে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ভারতের তেল সরবরাহে সরাসরি প্রভাব ফেলেনি। কেপলার বলছে, হরমুজ প্রণালি সম্পূর্ণ বন্ধ হলে বিশ্বের জ্বালানি বাজারে বড়সড় প্রভাব পড়ত। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপুল তেল ও কাতারের এলএনজি এই প্রণালি দিয়েই যায়। ভারতের আমদানিকৃত তেলের ৪০ শতাংশ ও গ্যাসের অর্ধেক এ পথের ওপর নির্ভরশীল।

রিতোলিয়া বলেন, গত দুই বছরে ভারতের তেল আমদানির কৌশলে বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে। রাশিয়ার উরালস, ইএসপিও ও সোকোল জাতের অপরিশোধিত তেল হরমুজ প্রণালি দিয়ে আসে না। এসব তেল আসে সুয়েজ খাল, আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত (কেপ অব গুড হোপ) কিংবা প্রশান্ত মহাসাগরের পথ ধরে।

ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলো এখন পরিশোধন ও মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নমনীয় হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন জাতের অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে তারা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা থেকে আসা তুলনামূলক ব্যয়বহুল তেলও এখন কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ও য ক তর ষ ট র থ ক অপর শ ধ ত ত ল ত ল আমদ ন আমদ ন র ন র পর ব কল প ব শ বব

এছাড়াও পড়ুন:

‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে সরব মোদি কেন শেষ পর্যন্ত চুপসে গেলেন

ভারতের নির্বাচন কমিশন ও তার কাজ–সম্পর্কিত পাঁচটি প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মুখোমুখি বিতর্কে বসার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী। কিন্তু অমিত শাহ তা গ্রহণ করলেন না। নির্বাচন ঘিরে কমিশনের (ইসি) এখতিয়ার এবং ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন পদ্ধতি (এসআইআর) নিয়ে বিরোধীদের তোলা প্রশ্নের উত্তরগুলো তাই অনুচ্চারিতই রয়ে গেল।

এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর আজ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন দেয়নি। লোকসভার দুই দিনের বিতর্ক শেষেও তা পাওয়া গেল না। বিতর্ক ঘিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব কার্যত রাজনৈতিক হয়ে রইল।

লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই বিরোধীরা এসআইআর নিয়ে আলোচনার দাবি তুলেছিলেন। অন্যদিকে সরকার চাইছিল জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’–এর সার্ধশতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আলোচনা করতে। বিরোধীরা সরকারের দাবি মেনে নেওয়ায় সরকারও বাধ্য হয় বিরোধীদের দাবি মানতে।

তবে আলোচনা শুধু ‘এসআইআর’–এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সরকার ঠিক করে, বিতর্কের বিষয়বস্তু হবে ‘নির্বাচনী সংস্কার’। সরকার জানায়, প্রথমে আলোচিত হবে ‘বন্দে মাতরম’, পরে নির্বাচনী সংস্কার।

বিরোধীরা বলেন, আরএসএসের সদর দপ্তর ও শাখাগুলোতেও ‘বন্দে মাতরম’ গান গাওয়া হয়নি। এমনকি বহু বছর আরএসএস শাখা ও সদর দপ্তরে স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকাও তোলা হয়নি।

বিজেপি ও সরকার ‘বন্দে মাতরম’ বিতর্কে কোণঠাসা করতে চেয়েছিল প্রধানত কংগ্রেসকে। তাদের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রধানত জওহরলাল নেহরু ‘বন্দে মাতরম’ গানের অঙ্গচ্ছেদের জন্য দায়ী এবং সেটি তিনি করেছিলেন মুসলিম লিগ ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর চাপে। তাদের মতে, ওটা ছিল কংগ্রেসের ‘মুসলিম তোষণের’ বড় প্রমাণ।

কিন্তু লোকসভা ও রাজ্যসভার বিতর্কে দেখা গেল, সব বিরোধী দল ‘বন্দে মাতরম’ প্রশ্নে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াল, এমনকি বিজেপির শরিক জেডিইউ পর্যন্ত। প্রত্যেকেই তথ্য দিয়ে জানাল, ‘বন্দে মাতরম’–এর প্রথম দুই স্তবক রেখে বাকিগুলো না গাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তাঁর সঙ্গে পূর্ণ সহমত হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী, সরদার বল্লভভাই প্যাটেল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বাবাসাহেব আম্বেদকরেরা।

দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক বিরোধী বক্তা এই বিতর্কে বিজেপিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান, স্বাধীনতা সংগ্রামে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) বিন্দুমাত্র ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ না থাকার অপরাধে। এই অভিযোগেও বিজেপিকে বিদ্ধ হতে হলো যে তারাও বহু বছর পর্যন্ত ‘বন্দে মাতরম’ উচ্চারণ করেনি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ, যিনি ‘বন্দে মাতরম’-এর স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’, বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসকে ‘পুলিন বিকাশ’ ও সূর্য সেনকে ‘মাস্টার’ বলে অভিহিত করে ক্ষীণ ‘ইতিহাসজ্ঞানের’ পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে হাস্যাস্পদও করে তুলেছেন।

বিরোধীরা বলেন, আরএসএসের সদর দপ্তর ও শাখাগুলোতেও ‘বন্দে মাতরম’ ওই গান গাওয়া হয়নি। এমনকি বহু বছর আরএসএস শাখা ও সদর দপ্তরে স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকাও তোলা হয়নি। একের পর এক বিরোধী নেতা বরং বলেছেন, কংগ্রেস নেতা–কর্মীরা যখন ‘বন্দে মাতরম’ গাইতে গাইতে ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে গেছেন, আরএসএস তখন ব্রিটিশ শাসকদের ‘পক্ষে’ কাজ করেছে।

অমিত শাহ ভোট চুরির অভিযোগ তুললেন জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরার বিরুদ্ধে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে সরব মোদি কেন শেষ পর্যন্ত চুপসে গেলেন
  • কর্তৃত্ববাদের সময়ে মানুষ কার্টুন আঁকতেও ভয় পেত: ইফতেখারুজ্জামান