বর্ষায় দেয়ালকে স্যাঁতসেঁতে ভাব থেকে যেভাবে বাঁচাবেন
Published: 25th, June 2025 GMT
ঘরবাড়ি বা অফিসের নির্মাণকাজ যত গুরুত্ব দিয়েই করা হোক না কেন, বছর ঘুরে এলেই এসবে লাগে বিশেষ যত্ন৷ আমাদের দেশে বর্ষাকালেই সাধারণত বাড়ি-অফিসের ভবনগুলোতে নানামুখী সমস্যা দেখা দেয় বেশি। তার মধ্যে দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে ভাব অন্যতম। শুধু স্যাঁতসেঁতে ভাবই নয়, ড্যাম্প দেয়ালকে সুরক্ষা দিতে দরকার বাড়তি যত্ন।
দেয়াল নষ্টের যত কারণনানা কারণে দেয়াল ড্যাম্প হতে পারে। তবে আমাদের দেশে মোটামুটি যে কারণগুলো বেশি দেখা যায় তার মধ্যে আছে—
অতিরিক্ত বৃষ্টি: টানা বৃষ্টি হলে পানি দেয়ালের ফাঁকফোকর দিয়ে চুইয়ে ছাদ বা জানালার পাশ দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। বিশেষ করে যদি ছাদ বা দেয়ালের প্লাস্টার বা রং পুরোনো হয়ে যায়। দেয়ালে ফাটল থাকলে পানি ঢুকে সহজেই দেয়াল ভিজে যায়।
অতিরিক্ত আর্দ্রতা: বর্ষাকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ও আর্দ্রতা থাকে অনেক বেশি। এই আর্দ্রতা দেয়ালে ঘনীভূত হয়ে ড্যাম্প বা স্যাঁতসেঁতে ভাব তৈরি করে।
ভূগর্ভস্থ পানি উঠে আসা: বাড়ির ভিতে বা মাটির কাছাকাছি অংশে পানির স্তর বেড়ে গেলে সেই পানি নিচ থেকে দেয়ালের ভেতর দিয়ে ওপরে উঠে আসে। বর্ষাকালে এটি বেশি হয়।
অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচল: ঘর বদ্ধ হলে বা আলো-বাতাসের চলাচল কম থাকলে আর্দ্রতা দেয়ালে জমে স্যাঁতসেঁতে ভাব তৈরি করে।
স্যানিটারি বা ড্রেনেজ পাইপে ফাটল: বৃষ্টি ছাড়াও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা, বাথরুম, রান্নাঘর বা পানির ট্যাংকের টাইলস বা পাইপে ছিদ্র দেয়ালে ড্যাম্প তৈরির একটি অন্যতম কারণ।
যে জায়গাগুলোতে বাড়তি নজর দিতে হবেঘরের দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে ভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে দেয়াল ফুলে যায়। যে কারণে দেয়ালের রং নষ্ট হয়। দেয়ালে দীর্ঘদিনের ড্যাম্পের সমস্যায় ঘরে মোল্ড বা ফাঙ্গাসও বাসা বাঁধে। ঘরের কর্নার, ছাদের সিলিং ও দরজা-জানালার আশপাশের জায়গাগুলোতে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়; দুর্গন্ধও হয়। এসব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই বাড়ি বা অফিসের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থা বুঝে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হয়।
ওয়াশরুম: যেকোনো মৌসুম হোক না কেন, বাড়ির অন্যান্য জায়গার চেয়ে ওয়াশরুমে আর্দ্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই ওয়াটারপ্রুফিং–ব্যবস্থা ভালো না থাকলে এখান থেকেই শুরু হতে পারে ফাঙ্গাসের বিস্তার। ওয়াশরুমে ওয়াটার কোটিং তাই খুব জরুরি। দেয়াল বা ফ্লোর সব জায়গায় ওয়াটারপ্রুফ গ্যাপ ফিলার বা সলিউশন পানির বিন্দু বিন্দু লিকেজ থেকে বাঁচায়।
ছাদ এবং পানির ট্যাংক: কড়া রোদ হোক আর মুষলধারে বৃষ্টি, বাইরের ঝড়-ঝাপটা, আবহাওয়ার বৈরীভাব, ট্যাংক থেকে পানি পড়া, ফাটল—সব ছাদের ওপর দিয়েই যায়। বছরের পর বছর চলতে থাকা এই বৈরিতা ছাদের কার্নিশ আর কোণাগুলোকে দুর্বল করার জন্য দায়ী। ছাদে পানি প্রতিরোধী সুরক্ষা না থাকলে প্রতিনিয়ত পানির লিকেজ বেডরুম থেকে শুরু করে পুরো বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশনকেই দুর্বল করে ফেলে। এ জন্য ওয়াটারপ্রুফ পলিমার বা সিমেন্ট ভালো করে ফাটলের লাইনে দিতে হবে।
অন্দর: ওয়াশরুম বা ছাদে ওয়াটারপ্রুফ ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অন্দরের দিকে তেমন একটা খেয়াল করা হয় না। ইন্টেরিয়র লিকেজ শুরু মানে পুরো ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট। সাধারণত বাথরুমের পাশের দেয়ালগুলো অন্দরের দেয়ালে ড্যামেজ তৈরি করে। ড্যাম্প দেয়ালের কারণে ঘরে বাজে গন্ধ হতে পারে, আসবাব নষ্ট হওয়ার জন্যও অনেক সময় দায়ী থাকে ড্যাম্প দেয়াল। তাই অন্দরে রং করার সময় রংটা ওয়াটারপ্রুফ কি না, খেয়াল রাখা উচিত।
আরও পড়ুনঅন্দরসজ্জার রং নির্বাচনের আগে যেসব বিষয় খেয়াল রাখা উচিত০৩ জুন ২০২৫দেয়ালের সুরক্ষায়ড্যাম্প দেয়ালকে সুরক্ষা দিতে দরকার বাড়তি যত্ন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তথ্যচিত্রের জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেও ট্রাম্পকে ক্ষতিপূরণ দিতে পাঁচ কারণে নারাজ বিবিসি
বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠানে প্রচারিত তথ্যচিত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি ভাষণ ভুলভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে—এমন অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাটির জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যমটি। তবে ওই ঘটনায় ট্রাম্পকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়নি তারা।
গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ট্রাম্পের আইনজীবীরা হুমকি দিয়েছেন, বিবিসি যদি অনুষ্ঠানটি প্রত্যাহার না করে, ক্ষমা না চায় ও ক্ষতিপূরণ না দেয়, তবে তারা ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করবে।
গত রোববার বিবিসিকে ট্রাম্পের আইনজীবীদের পাঠানো এক চিঠিতে এ হুমকি দেওয়া হয়। চিঠিতে শুক্রবার পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। এ বিতর্কের জেরে গত রোববার বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও বার্তাপ্রধান ডেবোরাহ টারনেস পদত্যাগ করেন।
২০২২ সালে নিউজনাইট অনুষ্ঠানে প্রচারিত ট্রাম্পের ভাষণের আরেকটি একই ধরনের সম্পাদিত অংশ ডেইলি টেলিগ্রাফ প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টা পর ক্ষমা চাওয়ার এ ঘোষণা আসে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত ‘সংশোধনী ও ব্যাখ্যা’ অংশে বিবিসি জানায়, ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পাদনা করা নিয়ে সমালোচনার পর প্যানোরমা অনুষ্ঠান আবার পর্যালোচনা করা হয়েছে।
বিবিসি বলেছে, ‘পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ট্রাম্পের ভাষণের আলাদা আলাদা অংশ তথ্যচিত্রে জোড়া দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা স্বীকার করছি যে সম্পাদনার ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল; যেন আমরা ট্রাম্পের একটানা ভাষণ দেখাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল ভাষণের বিভিন্ন অংশের উদ্ধৃতি। ফলে এমন একটি ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য সরাসরি আহ্বান জানিয়েছিলেন।’
গত রোববার বিবিসিকে ট্রাম্পের আইনজীবীদের পাঠানো এক চিঠিতে মামলা করার হুমকি দেওয়া হয়। চিঠির জবাব দিতে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। এ বিতর্কের জেরে গত রোববার বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও বার্তাপ্রধান ডেবোরাহ টারনেস পদত্যাগ করেন।বিবিসির একজন মুখপাত্র বলেন, ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের আইনজীবীরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবীদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহও আলাদাভাবে হোয়াইট হাউসে এক ব্যক্তিগত চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের ভাষণের যে সম্পাদিত অংশ তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছিল, সে জন্য তাঁর কাছে তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠান দুঃখপ্রকাশ করেছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘ভিডিও ক্লিপটি যেভাবে সম্পাদিত হয়েছে, তার জন্য বিবিসি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছে। তবে মানহানির অভিযোগ আনার মতো ভিত্তি আছে—এমন দাবির সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করি।’
ট্রাম্প তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমরা ক্যাপিটলের দিকে হাঁটব, আর আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের উৎসাহ দেব।’ প্রায় ৫০ মিনিট পর তিনি বলেন, ‘আর আমরা লড়াই করি। আমরা প্রাণপণ লড়াই করি।’
ভিডিও ক্লিপটি যেভাবে সম্পাদিত হয়েছে, তার জন্য বিবিসি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছে। তবে মানহানির অভিযোগ আনার মতো ভিত্তি আছেএমন দাবির সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করি।কিন্তু প্যানোরমা অনুষ্ঠানের সম্পাদিত অংশে ট্রাম্পের বক্তব্য এভাবে তুলে ধরা হয়, ‘আমরা ক্যাপিটলের দিকে হাঁটব…আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব। আর আমরা লড়াই করি। প্রাণপণ লড়াই করি।’
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তাঁর ভাষণকে ‘কেটে ফেলা হয়েছে’ এবং এটি এমনভাবে দেখানো হয়েছে, যাতে দর্শকদের ‘প্রতারণা’ করা হয়েছে।
রোববার ট্রাম্পের আইনজীবীদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বিবিসি যেন অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ ও ন্যায্যভাবে প্রত্যাহার করে, ক্ষমা চায় এবং ট্রাম্পের হওয়া ক্ষতির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়।
আরও পড়ুনবিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও বার্তাপ্রধান ডেবোরাহ টারনেসের পদত্যাগ০৯ নভেম্বর ২০২৫চিঠিতে শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে বিবিসিকে জবাব দিতে বলা হয়। ট্রাম্পের আইনজীবীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিবিসি পাঁচটি প্রধান যুক্তি দিয়েছে, যেগুলো দিয়ে তারা বুঝিয়েছে—এ অভিযোগের জবাব দেওয়ার মতো কোনো দায় তাদের নেই বা বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার ভিত্তি নেই।
ট্রাম্পের আইনজীবীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিবিসি পাঁচটি প্রধান যুক্তি দিয়েছে, যেগুলো দিয়ে তারা বুঝিয়েছে—এ অভিযোগের জবাব দেওয়ার মতো কোনো দায় তাদের নেই বা বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার ভিত্তি নেই। প্রথমত, বিবিসি বলেছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্যানোরমা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার অধিকার ছিল না এবং তারা তা করেনি।প্রথমত, বিবিসি বলেছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্যানোরমা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার অধিকার ছিল না এবং তারা তা করেওনি। তথ্যচিত্রটি যখন বিবিসি আইপ্লেয়ারে দেখা গেছে, তখন তা যুক্তরাজ্যের দর্শকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
দ্বিতীয়ত, এ অনুষ্ঠান ট্রাম্পের কোনো ক্ষতি করেনি। কারণ, তিনি এর পরপরই পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন।
আরও পড়ুনবিবিসির মহাপরিচালক ও বার্তাপ্রধান কেন পদত্যাগ করলেন, ট্রাম্পের তথ্যচিত্রে সমস্যাটা কোথায়১০ নভেম্বর ২০২৫তৃতীয়ত, ক্লিপটি ইচ্ছা করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়নি। দীর্ঘ ভাষণ সংক্ষেপ করতে গিয়ে সম্পাদনা করা হয়েছিল এবং এতে কোনো বিদ্বেষ ছিল না।
চতুর্থত, ক্লিপটি আলাদা করে দেখানোর উদ্দেশ্য ছিল না। এটি ছিল ঘণ্টাব্যাপী একটি অনুষ্ঠানের মাত্র ১২ সেকেন্ড। অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পক্ষেও অনেক মতামত তুলে ধরা হয়েছিল।
পঞ্চমত, জনস্বার্থ ও রাজনৈতিক বিষয়ে মতামত প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের মানহানি আইনে অত্যন্ত সুরক্ষিত।
এদিকে বিবিসির এক অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ভেতর তারা নিজেদের যুক্তির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এবং নিজেদের অবস্থানকে সঠিক বলে মনে করে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের কাছে তথ্যচিত্রের জন্য দুঃখপ্রকাশ করল বিবিসি, ক্ষতিপূরণে নারাজ৬ ঘণ্টা আগে