ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আবারও আশার সঞ্চার হয়েছে। প্রায় ২১ মাস ধরে গাজায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ঘোষণা গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস এ বিষয়ে পুরোপুরি একমত নয়। তারা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ চায়। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
গত মঙ্গলবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির কথা বলেন। তিনি জানান, গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার জন্য ‘প্রয়োজনীয় শর্তাবলি’ মেনে নিয়েছে ইসরায়েল। তাঁর পোস্টে লেখা হয়, ‘প্রস্তাবিত চুক্তি কার্যকর থাকার সময় যুদ্ধ বন্ধে (স্থায়ীভাবে) আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করব।’ তবে চুক্তির শর্তের বিষয়ে ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি আরও লেখেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তায় কাতার ও মিসরবাসী কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তাঁরাই চূড়ান্ত চুক্তির প্রস্তাব দেবেন। আশা করি, হামাস চুক্তিটি গ্রহণ করবে। কারণ, এটি আর ভালো হবে না; বরং এটি শুধু আরও খারাপ হতে পারে (অর্থাৎ এ চুক্তিই হামাসের জন্য সবচেয়ে ভালো সুযোগ। যদি তারা এটি প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে)।’
হামাসের প্রতিক্রিয়াইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে হামাস। তবে তারা ট্রাম্পঘোষিত মার্কিন-সমর্থিত প্রস্তাবটি সরাসরি গ্রহণ করেনি। বরং তারা গাজা যুদ্ধের পুরোপুরি অবসান চাওয়ার দাবিতে আগের অবস্থানে অটল রয়েছে।
হামাস কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু বলেন, তারা চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে প্রস্তুত ও আন্তরিক। যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করতে পারে, এমন যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হামাস প্রস্তুত।
মিসরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে হামাসের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল বুধবার কায়রোতে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। তবে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কথা বলার অনুমতি না থাকায় ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করতে চাননি।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েল–হামাসের মতানৈক্য
প্রায় ২১ মাস ধরে চলা যুদ্ধের পুরো সময়টাতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। মূলত কোনো চুক্তির অংশ হিসেবে যুদ্ধ শেষ হবে কি না, এই প্রশ্নে মতভেদ থাকায় এমন হয়েছে।
গত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগেই মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল আবার গাজায় হামলা শুরু করে।
হামাস জানিয়েছে, নতুন করে যুদ্ধবিরতি হলে তারা গাজায় থাকা ৫০ জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। বিনিময়ে তারা গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের অবসান চায়।
এদিকে ইসরায়েল বলেছে, হামাস যদি আত্মসমর্পণ করে অস্ত্র ত্যাগ করে এবং গাজা থেকে নির্বাসনে যায়, তবেই কেবল যুদ্ধ শেষ হবে। এদিকে হামাস এ ধরনের শর্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ইসরায়েল কী বলছেনাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের দেওয়া সর্বশেষ প্রস্তাবে ৬০ দিনের একটি চুক্তির কথা বলা হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় গাজা থেকে সাময়িকভাবে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং সেখানে উল্লেখযোগ্য হারে মানবিক সহায়তা বাড়ানোর কথা রয়েছে। মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের অবসানসংক্রান্ত আলোচনার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেবে।
এই চুক্তির আওতায় কতজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আগের প্রস্তাবগুলোয় অন্তত ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
গাজায় হত্যাযজ্ঞ চলছেই২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালান ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা। ইসরায়েলের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ কারণে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। ইসরায়েল থেকে দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়।
হামলার জবাবে ওই দিনই অবরুদ্ধ গাজায় তাণ্ডব শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এখন পর্যন্ত চলমান থাকা নির্বিচার ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকাটিতে ৫৬ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত মানুষের সংখ্যাও লাখ ছাড়িয়েছে। ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পরও ইসরায়েলি হামলায় গতকাল বুধবার গাজায় ৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত প রস ত ব ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
উত্তরসূরি বাছাইয়ে অন্য কারো ‘হস্তক্ষেপ’ চলবে না: দালাই লামা
ভারতে নির্বাসিত তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা জানিয়েছেন, তার অবর্তমানে যে উত্তরসূরি বেছে নেওয়া হবে তিনি তাদের কয়েক শতাব্দী প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যকে বজায় রাখবেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তার 'গাহদেন ফোড্রাং ট্রাস্ট'। এই প্রসঙ্গে অন্য কারো 'হস্তক্ষেপ' চলবে না।
এদিকে চীন তার এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, পরবর্তী দালাই লামা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চীনের সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন।
দালাই লামা তার ৯০ তম জন্মদিনে নিজের উত্তরসূরি সম্পর্কে কোনো সূত্র দিতে পারেন এই ব্যাপক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। তার আগেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত অনুসারীরা উত্তর ভারতের ধর্মশালায় জড়ো হয়েছেন।
অতীতে উত্তরসূরির বিষয়ে তাকে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত দেখা গিয়েছিল। তবে বুধবার এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের প্রধান পেনপা সেরিং জানিয়েছেন দালাই লামার সিদ্ধান্তকে তারা সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন করছেন। সূত্র-বিবিসি বাংলা