ফেসবুকে সখ্যতা, ডেকে এনে মুক্তিপণ আদায়, দুই নারীসহ গ্রেপ্তার ৪
Published: 3rd, July 2025 GMT
ফেসবুকে সখ্যতা গড়ে ডেকে এনে দুই যুবককে আটকে রেখে দাবিকৃত এক লাখ টাকা মুক্তিপণের মধ্যে ৮২ হাজার ২৭০ টাকা আদায় করেও বাকি টাকার নির্যাতন করে একটি প্রতারক চক্র।
পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ও ভুক্তভোগী দুই যুবককে উদ্ধার করে। এসময় পুলিশ মুক্তিপণ বাবদ আদায়কুত টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে। ঘটনাটি ঘটে নারায়ণগঞ্জে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নাসিক ৩নং ওয়ার্ড রসূলবাগ এলাকায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মোসা.
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরআগে ভোর রাত ৩টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৩নং ওয়ার্ড রসূলবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী দুইজনকে উদ্ধার করাসহ প্রতারক চক্রের ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জানাগেছে, ভুক্তভোগী মো. ওয়াসিম এর সাথে মোসা. সুমাইয়া খাতুনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর থেকে তারা প্রায় সময়ই মোবাইল ফোনে কথপোকথন করতো। তারই একপর্যায়ে ১ জুলাই সকালে মোসা. সুমাইয়া খাতুন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন হতে মো. ওয়াসিমের মোবাইলে ফোন করে কথা বলে এবং একপর্যায়ে সুমাইয়া তার সাথে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার রসুলবাগ এলাকার ঈগল বাড়ীর সামনে রাস্তার উপর দেখা করার জন্য বলে।
এরপর দুপুর ১টার দিকে মো. ওয়াসিম তার এক বন্ধু আল-আমিনকে নিয়ে সুমাইয়ার সাথে দেখা করে। এ সময় তাদের কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযুক্ত মো. শাকিল, মো. ফাহিম হোসেন, হোসনেয়ারা ও ৫-৬জন আসে। তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়াসিম ও আল-আমিনকে জোরপূর্বক সুমাইয়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে আটক আটকে রাখে।
তারপর তারা মুক্তিপণ বাবদ ১ লাখ টাকা দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের এলোপাথারীভাবে মারপিট করতে থাকে, তাদের ভয়ে ওয়াসিমের কাছে থাকা নগদ ৩ হাজার ৫শ’ টাকা এবং আল-আমিনের সাথে থাকা ব্যবসায়িক কাজের নগদ ৪৬ হাজার ৫শ’ টাকা ও আল-আমিন এর ব্যবহৃত বিকাশ একাউন্ট ০১৯৭৮-১৮৮৬৪৩ নম্বর থেকে অপহরণকারীদের প্রদানকৃত বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট নম্বর ০১৭৯৯-৩৩১১২৬ এ ২ হাজার ৫শ’ টাকা মুক্তিপণ বাবদ তাদের দেয়া হয়।
বাকী টাকার জন্য ওয়াসিম ও আল-আমিনকে মারপিট করতে থাকলে, তাদের বন্ধু সোহেল (৩২) ও ইয়াকুব (২৫)দের বাকি টাকা পাঠানোর জন্য বললে, সেই মোতাবেক সোহেল (৩২) অপহরনকারীদের প্রদানকৃত বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট নম্বর ০১৭৯৯-৩৩১১২৬ এ ৯ হাজার ৮২০টাকা এবং অপর বন্ধু ইয়াকুব (২৫) বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট নম্বর ০১৭০৯-২২২৮১৯ এ ১৯হাজার ৯৫০টাকা মুক্তিপণ বাবদ প্রদান করে।
পরে বিষয়টি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করলে, থানা থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বজলুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স অভিযান চালিয়ে ওয়াসিম ও আল-আমিনকে উদ্ধার করে। এ সময় এ চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করলেও কৌশলে কয়েকজন পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশ গ্রেপ্তারদের হেফাজত হতে মুক্তিপণ বাবদ আদায়কৃত টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, মোবাইলে প্রেমের নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিভাকে ডেকে এনে আটকে রখে অর্থ হাতিয়ে নেয়া এ চক্রটি। এ চক্রের গতিবিধি আমাদের নজরে ছিল। ২ অপহৃতকে উদ্ধারসহ ৪জন আসামিকে ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। এ চক্রের হাত থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হওযার অনুরোধ করছি। আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ য বক য বক ফ সব ক ন র য়ণগঞ জ অপহরণ স দ ধ রগঞ জ থ ন র
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।
ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।