শরীয়তপুরে ব্যাংকের সিঁড়ি থেকে ২ নারীর আড়াই লাখ টাকা লুট
Published: 3rd, July 2025 GMT
শরীয়তপুর শহরের দুবাই প্লাজায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকের সিঁড়ি থেকে দুই নারীর ব্যাগ থেকে নাটকীয় টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে ব্যাংক থেকে রেমিট্যান্সের টাকা তুলে বের হওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন সদর উপজেলার কোটাপাড়া এলাকার শারমিন আক্তার লিজা। এ ঘটনা বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে পালং মডেল থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ব্যাংকের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ ছয়জন নারী তাকে ঘিরে ফেলে। তাদের পরনে ছিল কালো ও লাল রঙের বোরখা। ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে শারমিনের ব্যাগ থেকে তুলে নেয় ৮৫ হাজার টাকা। মুহূর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনায় তিনি কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। কিছু সময় পর ব্যাগে হাত দিয়ে দেখেন চেইন খোলা, টাকা নেই।
আরো পড়ুন:
মোংলা বন্দরে জাহাজে ডাকাতি, ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট
পাঠাগারে ‘নাস্তিকদের’ বই, ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে লুট
সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান। তবে ততক্ষণে ছিনতাইকারী নারীরা ভিড়ের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পালং মডেল থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
এ বিষয়ে শারমিন আক্তার লিজা জানান, প্রবাসে কর্মরত স্বামীর পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা তুলেছিলেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন ভাবি, কোলে নিজের ছোট সন্তান। ব্যাংকের ভেতর বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর টাকা নিয়ে নিশ্চিন্তে বাইরে বেরিয়ে আসছিলেন তিনি। ব্যাংকের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ দুই নারী তাকে ধাক্কা দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরো তিন থেকে চারজন নারী তাকে ঘিরে ধরেন। তাদের পরনে ছিল কালো ও লাল বোরকা।
তিনি জানান, আচমকা শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, হট্টগোল। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে তুলে নেয় ৮৫ হাজার টাকা। ঘটনা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের।
একই সময়ে একই স্থানে আরো এক নারী গ্রাহকের ব্যাগ থেকেও ছিনিয়ে নেওয়া হয় দেড় লাখ টাকা। তবে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এ ঘটনায় ব্যাংক ও আশপাশের এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ অভিযোগ তুলছেন নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়ে।
ঘটনাস্থলে থাকা শাহানাজ পারভীন নামে এক নারী জানান, এই জায়গায় প্রতিদিন শত শত মানুষ আসেন। ব্যাংকের কারণে ভিড় লেগেই থাকে। অথচ এখানে কোনো নিরাপত্তা কর্মী চোখে পড়ে না। আজ যা ঘটেছে, তাতে সবাই আতঙ্কে আছে। ব্যাংকের বাইরে পুলিশ বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা দরকার।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইমন পারভেজ বলেন, “এমনিতেই টাকাপয়সা নিয়ে ব্যাংকে গেলে ভয় লাগে। এখন তো বোঝাই যাচ্ছে, সংঘবদ্ধভাবে নারী ছদ্মবেশে একটি চক্র কাজ করছে। ব্যাংকের আশপাশে পর্যাপ্ত সিসিটিভি আর পুলিশের টহল দরকার। না হলে সাধারণ মানুষ কেমন করে নিরাপদে লেনদেন করবে?”
এ বিষয়ে শরীয়তপুর ইসলামী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ভবিষ্যতে গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত নজরদারি ও সতর্কতা বাড়ানো হবে। আর ব্যাংকের ভিতরে যখন গ্রাহক আসে, সে দায়-দায়িত্ব ব্যাংকের। তবে বাইরের বিষয়ে গ্রাহককে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। ব্যাংকের বাইরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সে দায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নেবে না।”
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, “শারমিন আক্তার লিজার ব্যাগ থেকে ৮৫ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”
ঢাকা/আকাশ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ফেসবুকে সখ্য গড়ে ডেকে এনে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়, ২ নারীসহ গ্রেপ
ফেসবুকে সখ্যগড়ে ডেকে এনে দুই যুবককে আটকে রেখে দাবিকৃত এক লাখ টাকা মুক্তিপণের মধ্যে ৮২হাজার ২৭০ টাকা আদায় করেও বাকি টাকার নির্যাতন করে একটি প্রতারক চক্র।
পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ও ভুক্তভোগী দুই যুবককে উদ্ধার করে। এসময় পুলিশ মুক্তিপণ বাবদ আদায়কুত টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে। ঘটনাটি ঘটে নারায়ণগঞ্জে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নাসিক ৩নং ওয়ার্ড রসূলবাগ এলাকায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মোসা. সুমাইয়া খাতুন (২০), মো. শাকিল (২৫), মো. ফাহিম হোসেন (২৭), হোসনেয়ারা (৩০)।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরআগে ভোর রাত ৩টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৩নং ওয়ার্ড রসূলবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী দুইজনকে উদ্ধার করাসহ প্রতারক চক্রের ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জানাগেছে, ভুক্তভোগী মো. ওয়াসিম এর সাথে মোসা. সুমাইয়া খাতুনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর থেকে তারা প্রায় সময়ই মোবাইল ফোনে কথপোকথন করতো। তারই একপর্যায়ে ১ জুলাই সকালে মোসা. সুমাইয়া খাতুন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন হতে মো. ওয়াসিমের মোবাইলে ফোন করে কথা বলে এবং একপর্যায়ে সুমাইয়া তার সাথে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার রসুলবাগ এলাকার ঈগল বাড়ীর সামনে রাস্তার উপর দেখা করার জন্য বলে।
এরপর দুপুর ১টার দিকে মো. ওয়াসিম তার এক বন্ধু আল-আমিনকে নিয়ে সুমাইয়ার সাথে দেখা করে। এ সময় তাদের কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযুক্ত মো. শাকিল, মো. ফাহিম হোসেন, হোসনেয়ারা ও ৫-৬জন আসে। তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়াসিম ও আল-আমিনকে জোরপূর্বক সুমাইয়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে আটক আটকে রাখে।
তারপর তারা মুক্তিপণ বাবদ ১ লাখ টাকা দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের এলোপাথারীভাবে মারপিট করতে থাকে, তাদের ভয়ে ওয়াসিমের কাছে থাকা নগদ ৩ হাজার ৫শ’ টাকা এবং আল-আমিনের সাথে থাকা ব্যবসায়িক কাজের নগদ ৪৬ হাজার ৫শ’ টাকা ও আল-আমিন এর ব্যবহৃত বিকাশ একাউন্ট ০১৯৭৮-১৮৮৬৪৩ নম্বর থেকে অপহরণকারীদের প্রদানকৃত বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট নম্বর ০১৭৯৯-৩৩১১২৬ এ ২ হাজার ৫শ’ টাকা মুক্তিপণ বাবদ তাদের দেয়া হয়।
বাকী টাকার জন্য ওয়াসিম ও আল-আমিনকে মারপিট করতে থাকলে, তাদের বন্ধু সোহেল (৩২) ও ইয়াকুব (২৫)দের বাকি টাকা পাঠানোর জন্য বললে, সেই মোতাবেক সোহেল (৩২) অপহরনকারীদের প্রদানকৃত বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট নম্বর ০১৭৯৯-৩৩১১২৬ এ ৯ হাজার ৮২০টাকা এবং অপর বন্ধু ইয়াকুব (২৫) বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট নম্বর ০১৭০৯-২২২৮১৯ এ ১৯হাজার ৯৫০টাকা মুক্তিপণ বাবদ প্রদান করে।
পরে বিষয়টি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করলে, থানা থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বজলুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স অভিযান চালিয়ে ওয়াসিম ও আল-আমিনকে উদ্ধার করে। এ সময় এ চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করলেও কৌশলে কয়েকজন পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশ গ্রেপ্তারদের হেফাজত হতে মুক্তিপণ বাবদ আদায়কৃত টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, মোবাইলে প্রেমের নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিভাকে ডেকে এনে আটকে রখে অর্থ হাতিয়ে নেয়া এ চক্রটি। এ চক্রের গতিবিধি আমাদের নজরে ছিল। ২ অপহৃতকে উদ্ধারসহ ৪জন আসামিকে ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। এ চক্রের হাত থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হওযার অনুরোধ করছি। আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।