অধ্যাপক আইনুন নিশাত আমার শিক্ষক। তিনি এখনো আমার শিক্ষক এবং বলতে দ্বিধা নেই যে আমাদের শিক্ষক। ১৯৪৮ সালের ২৯ এপ্রিল জন্ম তাঁর, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের পড়াতেন পানিসম্পদ কৌশল। তাঁর ক্লাসের কত লেকচার আজও আমার মনে আছে। ‘গল্পগুলো আইনুন নিশাত স্যারের কাছ থেকে শোনা’ নামে আমার একটা কলাম আছে। সেখান থেকে একটু আগে বলে নিই:
আমরা বুয়েটে ছিলাম ১৯৮৩-৮৪ ব্যাচ। ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে ছাত্র-শিক্ষক প্রীতি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হলো। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আইনুন নিশাত ছিলেন একজন বক্তা। স্যার একটা কৌতুক বলেছিলেন। ৪০ বছর আগে শোনা সেই কৌতুক আমার আজও মনে আছে।
প্রথম আলোর অনলাইনের জন্য সম্প্রতি স্যারের একটা বড় ভিডিও ইন্টারভিউ করেছি। ‘অভিজ্ঞতার আলো’ নামের একটা নতুন অনুষ্ঠান চালু হলো ৫ জুলাই ২০২৫ থেকে। প্রতি মাসের প্রথম আর তৃতীয় শনিবারে একজন প্রাজ্ঞ নাগরিক শোনাবেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। প্রথম সাক্ষাৎকারটা অধ্যাপক আইনুন নিশাতের।প্রেক্ষাপট ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন বৈঠক। বাংলাদেশ দলে প্রকৌশলীর সংখ্যা বেশি। ভারতীয়রা চান রাজনীতিবিদ আর আমলাদের। স্যার তখন এই কৌতুকটা শুনিয়েছিলেন। একজন চিকিৎসক, একজন প্রকৌশলী আর একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে বাহাস হচ্ছে। কার পেশা বেশি অভিজাত? চিকিৎসক বললেন, মানুষ যখন প্রথম পৃথিবীতে এল, তখন থেকেই তো ডাক্তারি পেশার শুরু। প্রকৌশলী বললেন, মহাজগৎ আগে ছিল বিশৃঙ্খল। স্রষ্টা সেই বিশৃঙ্খল অবস্থাকে সুবিন্যস্ত করলেন, সুশৃঙ্খল করলেন। তখন থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার শুরু। শুনে রাজনীতিবিদ মিটমিট করে হাসছেন। ‘আপনি হাসছেন কেন?’ রাজনীতিবিদ বললেন, ‘আপনারা বলছেন, বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে স্রষ্টা শৃঙ্খলা বিধান করলেন। তা এই বিশৃঙ্খলাটা সৃষ্টি করেছিল কে?’
স্যারের এই কৌতুক আজও প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশ-ভারত পানির হিস্যা সমস্যার সমাধান হতে হবে রাজনৈতিক, আইনুন নিশাত সে রকমটাই মনে করেন।
জলবায়ু, পানি, বন্যা, নদী বিষয়ে কোনো কিছু জানতে হলে আইনুন নিশাত স্যারকে ফোন করি। তিনি সব সময় ফোন ধরেন, প্রশ্নের উত্তর দেন। অনেক সময় বিদেশে থাকেন, হয়তো গভীর রাতে তাঁর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাই। তিনি বিরক্ত হন না।
প্রথম আলোর অনলাইনের জন্য সম্প্রতি স্যারের একটা বড় ভিডিও ইন্টারভিউ করেছি। ‘অভিজ্ঞতার আলো’ নামের একটা নতুন অনুষ্ঠান চালু হলো ৫ জুলাই ২০২৫ থেকে। প্রতি মাসের প্রথম আর তৃতীয় শনিবারে একজন প্রাজ্ঞ নাগরিক শোনাবেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। প্রথম সাক্ষাৎকারটা অধ্যাপক আইনুন নিশাতের। তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমাদের রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জন্য পাঁচটা করণীয় যদি বলতেন।
তিনি রসিকতা করে বলেন, একবার সুন্দরবন পরিদর্শনের জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ জিপগাড়ি কেনার পরামর্শ দিয়েছিল। তাকে বোঝানো যাচ্ছিল না সুন্দরবন পরিদর্শন করতে হলে বোট লাগবে, জিপ নয়। নদী বোঝার জন্য তিনি রবীন্দ্রনাথের ‘আমাদের ছোট নদী’ আর ‘নদী’—এই কবিতা দুটো আগে পড়ে আসতে বলেন।এক.
দুই. তিনি বলেছেন, আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার ওপরে জোর দিতে হবে।
তিন. আমাদের পানি ব্যবস্থাপনার ওপরে জোর দিতে হবে। আমরা ধানখেত পানিতে ডুবিয়ে রাখি। কোনো দরকার নেই।
চার. ভূমি ব্যবহারের নীতি করতে হবে আর তা মেনে চলতে হবে। ল্যান্ড ইউজ প্ল্যান দরকার।
পাঁচ. আমাদের শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হবে। আমরা শুধু সংখ্যার দিকে নজর দিয়েছি। শিক্ষার মান নিয়ে একদমই ভাবিনি। এবার শিক্ষার মান বাড়াতে হবে।
এর বাইরে তিনি আরও একটা বিষয়ের ওপর নজর দিতে বলেছেন। দূষণ বন্ধ করা।
আইনুন নিশাত দেশের সমস্যা সমাধানে স্থানীয় জ্ঞান আর লোকশিক্ষার ওপরে গুরুত্ব দেন। তিনি রসিকতা করে বলেন, একবার সুন্দরবন পরিদর্শনের জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ জিপগাড়ি কেনার পরামর্শ দিয়েছিল। তাকে বোঝানো যাচ্ছিল না সুন্দরবন পরিদর্শন করতে হলে বোট লাগবে, জিপ নয়। নদী বোঝার জন্য তিনি রবীন্দ্রনাথের ‘আমাদের ছোট নদী’ আর ‘নদী’—এই কবিতা দুটো আগে পড়ে আসতে বলেন।
স্যার এখনো তাঁর এবং তাঁর ভাইবোনের এই পর্যন্ত আসার পেছনে মায়ের অবদানের কথা গভীর আবেগের সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, মা আমাদের হাতে ধরে অঙ্ক করিয়েছেন, ইংরেজি শিখিয়েছেন। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনজন যে পিএইচডি, তা মায়ের কারণেই।স্যার বুয়েট থেকে পাস করে বুয়েটের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী। তাঁর পিতা গাজী শামসুর রহমান ছিলেন পণ্ডিত, বাগ্মী এবং সাহিত্যিক। বিচারক পিতার কাছে পেয়েছেন আদর্শবোধ আর বাগ্মিতা। মা ছিলেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের বিএসসির শিক্ষার্থী, ম্যাট্রিকে গণিত আর উচ্চতর গণিতে লেটার মার্কস পেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন রুপার মেডেল। সেটা নিশাত স্যারের কাছে আজও আছে।
স্যার এখনো তাঁর এবং তাঁর ভাইবোনের এই পর্যন্ত আসার পেছনে মায়ের অবদানের কথা গভীর আবেগের সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, মা আমাদের হাতে ধরে অঙ্ক করিয়েছেন, ইংরেজি শিখিয়েছেন। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনজন যে পিএইচডি, তা মায়ের কারণেই।
আনিসুল হক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক আইন ন ন শ ত র জন ত ব দ আম দ র প র জন য ন র জন র ওপর প রথম র একট
এছাড়াও পড়ুন:
চিড়া–বাদাম বেচেন কুদ্দুস, বাড়িতে হাজারো বই আর অডিও
আবদুল কুদ্দুস শিকদারের বয়স ৭৩ ছুঁই ছুঁই। এখনো বাড়িতে ভাজা চিড়া, বাদাম আর বুট নিজেই বাইসাইকেল চালিয়ে দোকানে দোকানে বিক্রি করেন। সামান্য আয়ে সংসার চালিয়ে প্রতি মাসে কিছু টাকা বাঁচান, যা দিয়ে সাহিত্যের মোটা মোটা বই কেনেন। এভাবে তিনি সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকের হাজারখানেক বই। যদিও তিনি নিরক্ষর। পুত্রবধূকে দিয়ে বই পড়িয়ে পাশে বসে শুনে সাহিত্যের রস আস্বাদন করেন তিনি।
শুধু সাহিত্যের বই নয়, আধ্যাত্মিক বা গভীর অনুভূতির প্রকাশ ঘটানো সংগীত বা ভাবসংগীতের সংগ্রাহকও তিনি। তাঁর বাড়ির একটি টিনের ঘরে আড়াই হাজার অডিও রেকর্ডিংয়ের সংগ্রহ বা ক্যাসেট রয়েছে। এতে ধারণ করা আছে অন্তত ১০ হাজার ভাবসংগীত। ক্যাসেট বাজানোর জন্য ১৪টি ক্যাসেট প্লেয়ার সেটও রয়েছে। প্রায় প্রতি রাতে তিনি গান শুনতে শুনতে ঘুমাতে যান। মাঝেমধ্যে ঘরেই বসান ভাবসংগীতের আসর। সাধুসঙ্গে গানের পাশাপাশি গানের কথা ও ভাব নিয়ে আলোচনাও হয়।
গল্পে গল্পে আবদুল কুদ্দুস জানান, জীবনে এক দিনের জন্যও স্কুলে যাওয়া হয়নি তাঁর। পরে অবশ্য নিজের চেষ্টায় কিছুটা অক্ষর চিনেছেন। তবে গড়গড়িয়ে পড়ার মতো শিখতে পারেননি। লিখতেও পারেন না। বইয়ে লেখকের ছবি দেখে তিনি মূলত বই চিনতে পারেন।যশোর শহরের পালবাড়ি রায়পাড়া এলাকায় আবদুল কুদ্দুসের বাড়ি। ১৩ শতক জমির বাড়িতে স্ত্রী, চার ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনি নিয়ে তাঁর বসবাস। নিজে সাহিত্য পড়তে বা গান গাইতে না পারলেও তিনি সাহিত্য ও ভাবসংগীতের অনুরাগী। গানে তাল লয় সুর তোলার জন্য একতারা, দোতারা ও মন্দিরা রয়েছে তাঁর ঘরে।
গত ২৯ মে কুদ্দুস শিকদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, টিনের চালার একটি ঘরে তাঁর বসবাস। অন্য আরও ঘর রয়েছে। স্ত্রী-সন্তানেরা সেগুলোতে থাকেন। কুদ্দুসের ঘরের এক প্রান্তে একটি চৌকির মতো খাট। খাটে সব সময় মশারি টাঙানো থাকে। মশারির মধ্যে বালিশের দুই পাশে দুটি ক্যাসেট প্লেয়ার ও অসংখ্য ক্যাসেট। সেগুলো এখনো সচল। পাশবালিশের মতো করে একটি দোতারা রাখা আছে মশারির ভেতরে।
আবদুল কুদ্দুস বলেন, দানা গুড়ের ঠিলেয় ঝোল রাখা হয় কেন জানেন? দানা বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আমি হলাম সেই ঝোল। নিজে দানা হতে না পারলেও দানা বাঁচিয়ে রাখার কাজটা ঝোল হিসেবে করে যাচ্ছি।ঘরের অন্য প্রান্তে রাখা দুটি আলমারি। যেগুলো মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, ড. লুৎফর রহমান, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জসীমউদ্দীনের মতো অসংখ্য কবি-লেখকের বইয়ে ঠাসা। ঘরটি কাঁচা। বৃষ্টিতে ভিজে যেতে পারে কিংবা ইঁদুরে কেটে ফেলতে পারে—এ আশঙ্কায় প্রতিটি বই পলিথিনের মলাটে মুড়িয়ে রাখা। দুই আলমারির মধ্যে বসার জন্য একটি চৌকির মতো বেঞ্চ। টেবিল-চেয়ারও রয়েছে একটা। টেবিলের ওপরে অনেকগুলো কাগজের কার্টন সাজানো রয়েছে। ওই কার্টনের ভেতরে পুরোনো দিনের গানের ক্যাসেট রাখা।
তাঁর বাড়ির একটি টিনের ঘরে আড়াই হাজার অডিও রেকর্ডিংয়ের সংগ্রহ বা ক্যাসেট রয়েছে। এতে ধারণ করা আছে অন্তত ১০ হাজার ভাবসংগীত। ক্যাসেট বাজানোর জন্য ১৪টি ক্যাসেট প্লেয়ার সেটও রয়েছে। প্রায় প্রতি রাতে তিনি গান শুনতে শুনতে ঘুমাতে যান।গল্পে গল্পে আবদুল কুদ্দুস জানান, জীবনে এক দিনের জন্যও স্কুলে যাওয়া হয়নি তাঁর। পরে অবশ্য নিজের চেষ্টায় কিছুটা অক্ষর চিনেছেন। তবে গড়গড়িয়ে পড়ার মতো শিখতে পারেননি। লিখতেও পারেন না। বইয়ে লেখকের ছবি দেখে তিনি মূলত বই চিনতে পারেন। সাহিত্যের প্রতি তাঁর প্রবল অনুরাগ। প্রতি মাসে তিনি দু-একখানা করে লেখকের রচনাসমগ্র কেনেন। বই কেনার এমন নেশা যে সুদে টাকা নিয়েও তিনি বই কিনেছেন। কাউকে পেলেই তাঁকে দিয়ে বই পড়িয়ে নিজে বসে বসে শুনেছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, এখন অবসর সময়ে পুত্রবধূ সাবিহা খাতুনকে ডেকে বই পড়তে বলেন আবদুল কুদ্দুস। সাবিহা বই পড়ার সময় প্রবল আগ্রহ নিয়ে পাশে বসে তা শোনেন তিনি। সাহিত্যের প্রতি শ্বশুরের এমন আগ্রহ সাবিহা খাতুনও উপভোগ করেন। পড়াশোনা বিদ্যালয়ের গণ্ডি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সাবিহা বলেন, ‘আমার শ্বশুর অন্যদের চেয়ে একদমই আলাদা। শিশুর মতো তাঁর মন। সাহিত্য আর বাউলগানের প্রতি তাঁর বেশি আগ্রহ। প্রায়ই আমাকে ডেকে সাহিত্যের বই পড়তে বলেন। আমি পড়ে শোনাই। এতে আমারও বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। আমার স্বামীও এতে উৎসাহ দেন।’
সাহিত্যের প্রতি এমন আগ্রহ কীভাবে এল—জবাবে আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার ঠাকুর দাদা করম আলী ফকিরের বাউলগান ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ছিল। তাঁকে দেখেছি। দাদার বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায়। পরে অভাবের কারণে বাবা আনিসুর রহমান আমাদের নিয়ে যশোরে চলে আসেন। বাবা রিকশা চালাতেন। আমাকে লেখাপড়া শেখানোর কেউ ছিল না। আমি বুট ভেজে বিক্রির কাজে নেমে পড়লাম। কিন্তু দাদার কাছ থেকে বিভিন্ন কবি–সাহিত্যিকের কথা শুনেছি।’
প্রতি মাসে তিনি দু-একখানা করে লেখকের রচনাসমগ্র কেনেন। বই কেনার এমন নেশা যে সুদে টাকা নিয়েও তিনি বই কিনেছেন। কাউকে পেলেই তাঁকে দিয়ে বই পড়িয়ে নিজে বসে বসে শুনেছেন।আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘কোনো বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে একেকজন একেক রকম করে বলত। তাই আমি নিজেই তখন বইপুস্তক কিনে নিজে খোঁজার চেষ্টা করতাম। আশির দশকে বাণী চিরন্তনী নামের বইটি প্রথম কিনেছিলাম। তারপর ভাবগানের বিভিন্ন আসরে গিয়ে সাহিত্য ও গানের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।’
আবদুল কুদ্দুসের ওই টিনের ছাপরা ঘুরে গেছেন লোকসংস্কৃতি-গবেষক সাইমন জাকারিয়া। পরে ২০১৩ সালে প্রকাশিত সাইমন জাকারিয়ার বাংলাদেশের লোকসংগীত গ্রন্থের ১৬০ পৃষ্ঠায় যশোর অঞ্চলের ভাবসংগীতের সংগ্রাহক হিসেবে আবদুল কুদ্দুসের ছবি ছাপানো হয়।
আবদুল কুদ্দুসকে আমরা কুদু ভাই নামেই চিনি। তাঁর মধ্যে প্রখর জীবনবোধ ও জীবনদর্শন রয়েছে। একজন নিরক্ষর মানুষের মধ্যে এতটা সাহিত্যানুরাগ আমি আর কারও মধ্যে দেখিনি।চিত্রশিল্পী ও লেখক অধ্যাপক মফিজুর রহমানযশোরের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও লেখক অধ্যাপক মফিজুর রহমানের (রুননু) একক প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছিল আবদুল কুদ্দুসকে নিয়ে তাঁর আঁকা একটি ছবিও। মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুল কুদ্দুসকে আমরা কুদু ভাই নামেই চিনি। তাঁর মধ্যে প্রখর জীবনবোধ ও জীবনদর্শন রয়েছে। একজন নিরক্ষর মানুষের মধ্যে এতটা সাহিত্যানুরাগ আমি আর কারও মধ্যে দেখিনি। তিনি একজন সুচিন্তক মানুষ।’ ৭৩ বছর বয়সেও নিজে ভাজা বুট দোকানে দোকানে বিক্রি করে বেড়ালেও আবদুল কুদ্দুস কারও মুখাপেক্ষী হতে চান না বলে জানান তিনি।
সাহিত্যচর্চা তাঁকে নানা খারাপ বাসনা থেকে দূরে রেখেছে বলে মনে করেন আবদুল কুদ্দুস। তিনি তেমন বেশি মানুষের সঙ্গে মেশেন না। তাঁর সঙ্গীসাথি সব বাউল সাধকেরা। তাঁর গুরু ছিলেন কুষ্টিয়ার প্রয়াত বাউল সাধক করিম শাহ। তাঁর কাছে জীবনে তিনি গুনে গুনে ৫৬ বার গেছেন। নিজের কাজের বিষয়ে আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘দানা গুড়ের ঠিলেয় ঝোল রাখা হয় কেন জানেন? দানা বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আমি হলাম সেই ঝোল। নিজে দানা হতে না পারলেও দানা বাঁচিয়ে রাখার কাজটা ঝোল হিসেবে করে যাচ্ছি।’