জুলাই হত্যাকাণ্ডে নির্দেশ দেওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বিবিসির অনুসন্ধানভিত্তিক প্রতিবেদনের কারণে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার বৈশ্বিক দাবি আরো জোরালো হবে বলেও তিনি জানান। 

বুধবার (৯ জুলাই) ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করেন।

প্রেস সচিব বলেন, “বিবিসির এই গভীর অনুসন্ধানভিত্তিক প্রতিবেদন এবং সম্প্রচারে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযোগ উঠেছে—তিনি নিজে জুলাইয়ের গণবিক্ষোভে শতাধিক শিশুসহ বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন—তা আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এই গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার বৈশ্বিক দাবি আরও জোরালো হবে।”

আরো পড়ুন:

বিচারক নিয়োগে আইন অনুসরণ করতে হবে: অধ্যক্ষ ইউনুস

মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আসামির আপিল শুনবেন হাইকোর্ট, অর্থদণ্ড স্থগিত

“তার বিরুদ্ধে বিচার এড়ানোর আর কোনো পথ নেই। গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি যে দমন-পীড়ন, হত্যাযজ্ঞ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়েছেন—তাতে যারা জড়িত, তাদের কেউই রেহাই পাবে না। শেখ হাসিনা এবং তার আশপাশের হত্যাকারী চক্রকে জবাবদিহির আওতায় আনতেই হবে। জনগণের রক্তের হিসাব একদিন দিতে হবেই।”

বুধবার বিবিসির অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে চলা বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন। 

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং যাচাই করে তারা জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের দেখা মাত্র গুলি করার।

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের দুর্ভেদ্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জন্য তাহলে কি অনুপ্রবেশ দায়ী

ইন্টারনেটে নতুন একটি ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। ভিডিওটির মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, সম্প্রতি তেল আবিবের মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলের চালানো আত্মঘাতী হামলার ঘটনাটি ভুলবশত হয়নি; বরং অভ্যন্তরীণভাবে নাশকতা চালানো হয়েছে।

ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশ করেছে ‘দ্য সন্স অব রুহুল্লাহ’ নামের একটি সংগঠন। ১৭ জুন ভোরে ইসরায়েলে ইরানের দশম দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চলাকালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থার এক নিয়ন্ত্রণকক্ষের ভেতরকার দৃশ্য দেখা গেছে ওই ভিডিওতে। ‘দ্য সন্স অব রুহুল্লাহ’ দাবি করছে, এটি ইসরায়েলের ওই নিয়ন্ত্রণকক্ষের তাৎক্ষণিক কার্যক্রমের দৃশ্য।

ভিডিওতে দেখা যায়, নিয়ন্ত্রণকক্ষে থাকা স্ক্রিনগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার নির্ধারিত লক্ষ্যপথ বদলে যেতে দেখা গেছে। তা ছাড়া দূর থেকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের কার্যকলাপও দেখা গেছে।

‘দ্য সন্স অব রুহুল্লাহ’ নামে পরিচয় দেওয়া সংগঠনটির সদস্যরা ভিডিওতে বলছিলেন, ‘আমরা হামলার সময় নিয়ন্ত্রণকক্ষে ছিলাম। ভেতর থেকেই ওই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করেছি। ওই আত্মঘাতী হামলাটি কোনো ভুল ছিল না, এটা আমাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত ছিল।’

স্বাধীন বিশ্লেষকেরা ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেছেন। তাঁরা বলছেন, ভিডিওতে দেখা যাওয়া ইন্টারফেসের নকশা, সরাসরি সম্প্রচারের ফুটেজ এবং কমান্ড লাইন সবকিছু ইসরায়েলের আসল প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে মিলে গেছে। যদি তা সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি হবে ইসরায়েলের সবচেয়ে সুরক্ষিত সামরিক স্থাপনায় এক বড় অনুপ্রবেশের ঘটনা।

ইসরায়েলে ইরানের বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় এই ঘটনা ঘটেছে। ইরানি ওই হামলার লক্ষ্য ছিল তেল আবিব ও আশপাশের সামরিক ঘাঁটি। গত ১৩ জুন ইরানে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলার জবাবে ওই হামলা চালাচ্ছিল তেহরান। ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় এবং দেশটির জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের হত্যা করে। এরপর দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হয়।

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে ইসরায়েল আয়রন ডোম এবং ডেভিডস স্লিং প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে সক্রিয় করেছিল। তবে এর মধ্যেই একটি প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যচ্যুত হয়ে তেল আবিব শহরের ভেতরেই আঘাত হানে।

প্রথম দিকে বিভিন্ন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, ক্ষেপণাস্ত্রের পথ বিশ্লেষণসংক্রান্ত উপাত্তে ভুল থাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। অন্য কিছু সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, ‘সংকেতে বিঘ্ন ঘটা’ বা ‘ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থায় অস্বাভাবিক’ কোনো কিছুর কারণে এমনটা ঘটে থাকতে পারে।

তবে নতুন ভিডিও প্রকাশের পর পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন অনেকেই মনে করছেন, ওই হামলার ঘটনাটি ভুলবশত হয়নি। প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় অনুপ্রবেশকারীরা অভ্যন্তরীণভাবেই এ নাশকতা চালিয়েছে।

শুধু এ ঘটনাই নয়। এখন বিশ্লেষকেরা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার আগের কিছু ব্যর্থতার ঘটনাও নতুন করে খতিয়ে দেখছেন।

২০২৩ সালের মে মাসে গাজা থেকে ছোড়া ৪০টির বেশি রকেট ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়েছিল। একটি ইসরায়েলের নিজেদেরই একটি প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র দেশটির এক বেসামরিক এলাকায় পড়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, ‘নিশানা নির্ধারণে ভুল হয়েছে।’

ওই ঘটনার এক মাস পর ২০২৩ সালের জুনে ইসরায়েলের অ্যারো ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ভুল করে নিজেদের একটি নজরদারি ড্রোনকে গুলি করে গোলান মালভূমিতে ফেলে দিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল ‘বন্ধু নাকি শত্রু’র জিনিস, তা শনাক্তের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব ঘটনা হয়তো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ভেতরে দীর্ঘদিনের অনুপ্রবেশ বা অন্তর্ঘাতের চিত্রকেই ফুটিয়ে তুলছে। সব ঘটনাকে একসঙ্গে বিবেচনা করলে বোঝা যায়, একসময় যে আয়রন ডোম ইসরায়েলিদের গর্বের প্রতীক ছিল, সেটিকে আসলে অনেক আগেই ভেতর থেকেই দুর্বল করে ফেলা হয়েছে।

এ তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর ইতিমধ্যে ইসরায়েলিদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলিদের আশঙ্কা, তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে তাদের নিজেদের মানুষের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হতে পারে।

এ ঘটনায় এখনো তদন্ত চলছে। কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে:

এই অনুপ্রবেশের পরিকল্পনা কে করেছে? কত দিন ধরে প্রতিরক্ষাব্যবস্থাটি দুর্বল অবস্থায় আছে? এমন ঘটনা কি আবারও ঘটতে পারে?

এ মুহূর্তে আয়রন ডোম সচল থাকলেও পর্যবেক্ষকদের অনেকে আর এটিকে ভরসার চোখে দেখছেন না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ