আগের পর্বআরও পড়ুনসিনিয়র ডাকাত কইলো, দাঁড়াইয়া কী দেখস? ২৯ জুন ২০২৫
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষ জীবনের স্বাদ হারায় অস্থিরতায়, স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারে: আফজাল হোসেন
অভিনয়, নির্মাণ, চিত্রকলা আর লেখালেখি—এই চার ধারার মেলবন্ধনে গড়া এক শিল্পসত্তার নাম আফজাল হোসেন। বহু বছর ধরে তিনি কেবল পর্দায় নয়, মানুষের চিন্তায়ও আলো জ্বালিয়ে আসছেন। এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার লেখায় উঠে এলো গভীর এক আত্মজিজ্ঞাসা—সময়, সম্পর্ক, স্মৃতি আর সমাজ নিয়ে।
রবিবার (২৯ জুন) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আফজাল হোসেন লেখেন, “আমরা বোধ হয় শেষ বা শেষের দিকের প্রজন্ম। যে প্রজন্মের দাদা ও নানাবাড়ির প্রতি আলাদা টান ছিল। আম কাঁঠালের ছুটিতে যাওয়া হতো দাদাবাড়ি আর বছরে মাত্র একবার নানাবাড়িতে যাওয়ার সুযোগ মিলতো। বছরে মাত্র একবার- অতএব বোঝাই যায়, সে সুযোগ মিললে মনে হতো স্বপ্নের রেলগাড়ি আমাদের স্বপ্নজগতে নিয়ে যাবে বলে বাড়ির দরজায় এসে হুইসেল বাজাচ্ছে। দুই বাড়ির একটা বাড়ি বুঝিয়েছে- জীবনের স্বাদ।”
মানুষ জীবনের স্বাদ হারায় অস্থিরতায়, স্বাধীনতার স্বাদ স্বেচ্ছাচারে। এ তথ্য উল্লেখ করে আফজাল হোসেন বলেন, “দাদাবাড়িতে ছিল পুরো পরিবারের সাথে একত্রিত হওয়ার আনন্দ আর নানাবাড়িতে ছিল হৈ হৈ রৈ রৈ করা অফুরান স্বাধীনতা। সেই বাল্যকালে জীবন কি জানতাম না, স্বাধীনতার মানে বুঝতাম না কেউ কিন্তু সবাই সুখ, আনন্দ কি জানতাম- বুঝতাম স্বাধীনতার স্বাদ কেমন! বড় হওয়ার পর জীবনের স্বাদ ও স্বাধীনতার স্বাদ পর হয়ে যায়। তাদের নিকটের করতে, পুনরায় আপন বানাতে মানুষকে জীবনের প্রায় সবটুকু দিয়ে দিতে হয়। এমনি এমনি আমরা অনেক কিছু পেয়ে যাই- এমনি এমনি পাওয়া বলে অবহেলায় সেসবের অনেক কিছু হারিয়েও ফেলি। জীবনের স্বাদ মানুষ অস্থিরতায় হারায়, স্বাধীনতার স্বাদ হারায় স্বেচ্ছাচারে, দায়িত্বহীনতায়।”
আরো পড়ুন:
মেহজাবীনের বোন মালাইকার ‘অনুতপ্ত’
ধর্ষণের প্রতিবাদে সরব তারকারা
সৌহার্দ্য, শান্তির উপর গুরুত্ব দিয়ে আফজাল হোসেন বলেন, ‘আগে বেশিরভাগ মানুষের সঙ্গে মানুষের ছিল সৌহার্দ্য, শান্তির সম্পর্ক। এখন মানুষ মুখে বলে শান্তি চায় কিন্তু মুখের কথার সাথে কাজের মিল নেই। দেখি, দেখতে পাই- একজন আর একজনের দুই চোখ তুলে নিয়ে তারপর প্রস্তাব করে, এসো, আর কলহ নয়, আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। এখনকার মানুষ এইরকম উন্মাদকাণ্ডে দুঃখিত হয় না, হতাশ হয় না। ভেবে নিতে শিখেছে- সবই স্বাভাবিক, সুন্দর।”
কিছু মানুষের ধর্মপালন ও বিচার কাজের সমালোচনা করে আফজাল হোসেন বলেন, “আগে মানুষ মনে প্রাণে বিশ্বাসী ছিল। সম্পর্ক, জ্ঞান, নীতি ও ধর্মে বিশ্বাস করতো। কে কত জ্ঞানী, ধর্মপ্রাণ, দেশপ্রেমিক- তা জানান দেবার বিষয় মনে করেনি। এখন মানুষ কে কতটা ধার্মিক, কতটা দেশপ্রেমিক- তা ক্রমাগত বলে বোঝাতে চায়। এখন আমরা কে কি, কতটা ওজনদার তা জানান দিতে না পারলে যেন জীবন অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। তাই চারিদিকে এত রাজনৈতিক আস্ফালন আর ধর্মজ্ঞান দেবার আকাঙ্ক্ষা। কিছু মানুষ ধর্মপালন করে ভাবে, সে উন্নত স্তরের বান্দা, পরকালে তার জন্য বেহেস্তের একখানা ঘর বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেই উন্নত বান্দা তারপর জগতে বসেই বিচার আচার শুরু করে দেয়, কারা যাবে বেহেস্তে, কারা যাবে দোজখে।”
জীবনে উন্নতি বলতে মানুষ এখন বোঝে— বিত্তবৈভব আর ক্ষমতাকে। এ কথা স্মরণ করে আফজাল হোসেন বলেন, “আগে মানুষের হাতে কাজ কম ছিল- তার মানে ছিল অবসর। অবসর থাকলেই মানুষ প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় অনেক কথা বলে। অনেক কথা বলা, অদরকারে কথা বলা, মিথ্যা- দোষারোপ করে কথা বলা, গায়ে পড়ে উপদেশ দেয়া মানুষ তখনো ছিল। কিন্তু তারা সংখ্যায় ছিল কম এবং সমাজ তেমন মানুষদের দিকে তাকাত আড় চোখে। এখন মানুষের অনেক অনেক ব্যস্ততা, দম ফেলার ফুসরত মেলে না। কিন্তু অপরকে অমর্যাদা, ছোট করা, গীবত গাওয়া, ভালোকে আর মন্দকে- নিজের বিচারে আসামি করার সময়ের অভাব হয় না। এসব দেখে বলা যায় না- সময় এবং মানুষ, দুটোই আগের চেয়ে ভালো আছে, হতে পেরেছে। উন্নতি বলতে মানুষ এখন বোঝে, বিত্তবৈভব, দাম পাওয়া, ক্ষমতার উন্নতি।”
মানুষের বৈকল্য মানসিকতার সমালোচনা করে আফজাল হোসেন বলেন, “গুরুত্ব পাওয়া, ক্ষমতাবান হওয়া মানুষ পছন্দ করে। হতে পারে মিথ্যুক, প্রতারক বা অজ্ঞান— লোকে মান্য করে, মূল্য দেয়। তাই অনেক মানুষের এখন পছন্দ রাজনীতিবাড়ি বা ধর্মবাড়ি। আমাদের ছোটবেলায় যেমন ছিল দাদাবাড়ি অথবা নানাবাড়ি। দাদা আর নানাবাড়ি- এ দুটোয় ছোটদের সম্মান ছিল। ছোটরা ছোট হয়েও জীবনানন্দ ও স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। বহু মানুষের এখন যে দুটো বাড়ি বিশেষ পছন্দের, সে দুটো বাড়ি থেকে প্রধান যে জ্ঞান পাওয়া হয়, তা হলো- মানুষ ছোট, এসো, তাদেরকে আরো ছোট ভাবতে ও ছোট করতে শিখি।”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত