‘বিতর্কিত’ বিচারকদের অপসারণ চায় সুপ্রিমকোর্ট বার
Published: 9th, July 2025 GMT
সারাদেশে বিচারাঙ্গন থেকে অবিলম্বে ‘বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট’ বিচারকদের অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে শফিউর রহমান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ. এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন। এ সময় সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলনসহ কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কতজন বিতর্কিত, দলকানা, ফ্যাসিস্ট রেজিমের আজ্ঞাবহ বিচারককে অপসারণ করা হয়েছে- তা অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত এক যুগ ধরে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে রায় প্রদানকারী বিচারকদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখাসহ দলীয় বিবেচনায় রিমান্ড প্রদানকারী, ভিত্তিহীন চার্জশিট, রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় নেতাকর্মীদের জামিন না দিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রায় দানকারী বিচারকদের অতি দ্রুত অপসারণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে জোরালো আহ্বান- দেশের বিচার বিভাগের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। অবিলম্বে বিতর্কিত, পক্ষপাতদুষ্ট ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বিচারকদের অপসারণ করতে হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব চ রক ব চ রকদ র ব তর ক ত
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ১০ জুলাই
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য ১০ জুলাই তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সোমবার এই তারিখ ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালে অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাঁদের পক্ষে আমির হোসেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।
অভিযোগ গঠন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আজকের শুনানিতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের অব্যাহতির আবেদন করেন তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁরা সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিরপরাধ।
আমির হোসেন বলেন, ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন। শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেননি। তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় সুপিরিয়র রেসপনসেবলিটির (সর্বোচ্চ দায়) অভিযোগ আনা হয়েছে। আসাদুজ্জামান খানও সুনামের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক ও কাল্পনিক।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লাখ বাংলাদেশিকে হত্যা ও ২ লাখ মা-বোনেরা ইজ্জত নষ্ট করা হয়েছিল। সে সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য এই আইন (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন) করা হয়েছে। ২০২৪ সালে দেশে কোনো যুদ্ধ হয়নি। এমন আন্দোলন আরও হয়েছে। তাই এই আইনে জুলাইয়ের মতো ঘটনার বিচার করা যায় না।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলেননি। তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকারীদের লাশ কবর দিতে বাধা, লাশে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া, যার কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, রংপুরে আবু সাঈদকে হত্যার যে অভিযোগ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তাও সত্য নয়। আবু সাঈদ হত্যায় তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন। এমনকি তাঁর পরিবারকে ঢাকায় এনে শেখ হাসিনা সাহায্য করেছেন।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশে আগুন দেওয়ার ঘটনা শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর ঘটেছে। এসব অভিযোগও ভিত্তিহীন।
এসব যুক্তির ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের অব্যাহতি চান রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
মামলার অপর আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার আছেন। তাঁকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁর আইনজীবী জানান, অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানিতে তিনি অংশ নেবেন না।
আজ শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য তারিখ ধার্য করেন।