কাত হয়ে শুলে, সমর্পণও কাত হয়ে থাকে
Published: 9th, July 2025 GMT
জলযাযাবর
অদ্ভুত বিদীর্ণ এক দিন—প্রবল বাতাসে গাছগুলি ছিঁড়ে গেছে,
প্রবল বাতাসে গাছে, অন্য এক পৃথিবীর সবুজ এসেছে;
গাছের ক্রন্দন তার রং, সেই রং চিকচিক করছে;
সম্পূর্ণ গাছ একটি চোখ হয়ে গেছে
তারপর উড়ে চলে যায়; গভীর গাছের নিচ দিয়ে
হেঁটে যেতে যেতে, ওদের ডানায় ভর দিয়ে
আমিও সহসা উড়ে যাই, যেতে যেতে টের পাই,
দিনগুলো, মানুষের নিশ্বাসের মতো শেষ হয়ে গেছে
আজ আকাশ মেঘলা; বিদীর্ণ বাতাসে গাছ যদিওবা ঝলমল করে,
বাইরে কোনো রৌদ্র নাই, তাই আমার মনেও রৌদ্র নাই
প্রকৃতি গভীরভাবে আমাকে আক্রান্ত করে, আমি
আগেও দেখেছি, মানুষের চক্রান্তও করে;
কিন্তু চক্রান্তের চাইতে বাতাস অনেক প্রবল, উপরের
ডালগুলো বেশি নড়ে, মনে হয় প্রত্যেকটি গাছ একটি
সবুজ ভূমিকম্প, পান্থশালার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে,
রাত্রির আগুনের কথা ভেবে;
কাল আর দেখব না ওদের, অন্য গাছের দিকে চলে যাব
এখন বাতাসে বেদনা উড়ে যায়, ছেঁড়া কাগজের হৃদয়ের মতো;
কালরাত্রের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘুমহীনতা চোখে লেগে আছে;
প্রবল বাতাসে, জানালার সাথে সাথে, ঘুমও উড়ে গিয়েছিল;
বিদীর্ণ পাখির মতো উড়ে গিয়েছিল ঘুম, দীর্ঘ বাতাসের ঝাপটায়
অনস্তিত্ব, কবে তুমি আসবে, ক্লান্ত অসারতা হয়ে, আমার হৃদয়ে?
আমার হৃদয় শূন্য করো; স্মৃতিগুলো অস্তিত্বহীন করে দাও;
মূল্যহীনতার জাল বিছিয়েছে কার হাত? জানা নাই
আমার হৃদয় এক নদী; মূল্যহীনতার জাল ফেলে আমার নদীতে,
যার হাত টেনে টেনে তুলছে সেই জাল, তার কোনো মুখ নাই;
তবু এই অসারতা শান্ত করে; শূন্যগর্ভ মন, অসারতা, শান্ত করে আনে;
অবিদ্যমানতার কিবোর্ডে অবিদ্যমানতা লিখতে পারি
জলযাযাবর ২ইনসমনিয়াক বলে আমি সামাজিক নই; ঘুম হলে
সামান্য হতাম হয়তোবা; তদুপরি অনুষ্ঠানহীন
ক্লান্তি লেগে আছে আমার পিছনে, নিরর্থক দেখা
হবার মতন; ঘুমাবার মতো ঘুম আসে না এ চোখে,
সেরকম ঘুম পেলে হয়তো আমিও ঘুমাতাম;
যাযাবর ইনসমনিয়া এড়াতে পারে না
ঘুমায় যখন পৃথিবীর মানুষেরা ক্লান্ত হয়ে,
ক্লান্ত হয়ে আমি জেগে থাকি, চিৎ হয়ে;
চিত হয়ে জেগে থাকা হলো নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ
করে দেওয়া; কাত হয়ে শুলে, সমর্পণও কাত হয়ে থাকে;
মনে এই আশা জাগে, অনেক চেষ্টা করে, পাথরের মতো
পড়ে থাকতে পারলে, অবশেষে ঘুম হবে কিছুক্ষণ;
কিন্তু নৌকার পাটাতনে পাথরের মতো স্থির হওয়া
যায় না কখনো; নৌকার অভ্যাসবশে স্থলে শুয়েও
চিৎ হয়ে দুলতে থাকি রাত্রিভর আমি
তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না কখনো, এই কথা
নদীর স্বরের মতো, আমাকে পাটাতন থেকে, ধীরে ধীরে
শূন্যে তুলতে থাকে; উঠে যাই আমি, উঠে যাই…
বহু নক্ষত্রের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে ছাই হতে থাকি;
সম্পূর্ণ ছাই হতে আমি পারি না তখনো;
শরীর ছাই হলেও মন ছাই না হয়ে জেগে থাকে;
অর্ধেক ছাই আর অর্ধেক পাথর হয়ে ভেসে যেতে থাকি;
কোথাও কোনো অকল্পনীয় গ্রহের দেখা পাই;
মনে হয় ফিরে আমি এসেছি পরিচিত পুরানো শহরে
পুরাপুরি ছাই হতে পারি না যে কেন; ইনসমনিয়াক বলে
ছাই হতে পারি না হয়তো; ঘুম হলে সম্পূর্ণ ছাই হয়ে
যেতাম আমিও; তখন তোমার কথা আর মনে পড়ত না;
ইনসমনিয়াক বলে স্মৃতিহীনও হতে পারি না
অনেক নক্ষত্রের পথে যেতে যেতে, আংশিক ছাই
আর আংশিক পাথরের এই অস্তিত্বে, এক ভোর হয়;
বহু আগে নৌকার পাটাতনে থাকতাম বলে
এখন স্থলে থেকেও আমি সারা রাত অল্প অল্প দুলি
ব্যাকপ্যাক ও আহত স্তনকাল রাতে স্বপ্নে দেখি আমি এক প্লাস্টিকের ব্যাকপ্যাক হয়ে গেছি
আমার ভিতরের সব দেখা যাচ্ছে ট্রান্সপারেন্ট ত্বক আর মাংস
ভেদ করে; আমার সকল নির্জনতা বোধ পুঁজের মতো ক্ষরিত হচ্ছে
এই স্বপ্ন অদ্ভুত খুব; বাস্তবের অভিজ্ঞতার মতো নয়;
মানুষ কিভাবে এক স্বচ্ছ ব্যাকপ্যাক হয়ে যায়? এই স্বচ্ছতা
অপার্থিব; ব্যাকপ্যাক কখনো স্বচ্ছ হয় না; বিক্রেতাকে
জিজ্ঞেস করছিলাম, অস্বচ্ছ ব্যাকপ্যাক কি নেই আপনার?
সে আমাকে বলেছে, তুমি নিজেই এক স্বচ্ছ ব্যাকপ্যাক;
আমার নিকট কী আছে না আছে, তাতে তোমার কী?
বহু দূর থেকে আহত স্তনের ঘ্রাণ শোনা যায়; এই ঘ্রাণ
কান্নার মতো, তাই তাকে শোনা যায়, ঘ্রাণ পাওয়ার সাথে;
বেদনা হয় না শেষ, কখনো সে আহত স্তন, কখনো এক
স্বচ্ছ ব্যাগপ্যাক—সমাপ্ত না হয়ে সে কেবল
রূপান্তরিত হতে থাকে; ঝুলন্ত নিঃসীম কাটারের মতো কাছে আসে
দূরে যায়; আহত স্তনের স্বর মূলত তোমার বেদনার কথা বলে;
স্বচ্ছ ব্যাকপ্যাক এমন এক মনোবেদনা, যা মানুষের
অভ্যন্তরে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছে—এখন সে
নিজের অস্তিত্ব বিপন্ন করেও বলতে চায়, এই দেখো, এই-ই আমি
সহস্র গার্বেজ আমার ভিতরে বহন করছি, ময়লার ট্রাকের মতন
আমার শরীরে কার অধিকার আছে? কীটপতঙ্গের আছে
আমি টের পাই; দূর থেকে ভেসে আসা আহত স্তনের ঘ্রাণ,
তারও আছে অধিকার রাত্রিভর, টপ টপ জলের মতন,
আমার ভিতরে ঢুকবার; যে ব্যাকপ্যাক আমার পিঠের ওপরে
সারা দিন সারা রাত ঝোলে—তারও আছে এক ক্লেম আমার শরীরে;
স্বচ্ছ হতে হতে একদিন সে নাই হয়ে যাবে;
আমাকে কোনো পথে আর হাঁটতে দেখবে না
অনেক ওজন মিলে আমাকে হাঁটায়—এ জীবন
ব্যাকপ্যাক হয়ে পিঠে থাকে, বুকে থাকে,
থাকে সব ক্রোমোসোমে, বহু বোতামের দাগ পড়া আহত স্তনে;
ওজন নাই হয়ে গেলে, ব্যাকপ্যাক নাই হয়ে যায়, আমিও থাকি না;
ব্যাকপ্যাক স্বচ্ছ হয়ে যাওয়া মানুষ এ জগতে থাকতে পারে না
নুডিটিমেঘের মতন নগ্ন বাতাস বইছে, থেমে থেমে,
বাঁক নিয়ে, আমার বিষণ্ণ প্রবণতা পার হয়ে,
আরেক সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখছে, তার আলো
আজ এই পৃথিবীতে পৌঁছাবে কি না; আলোর যে হাত
আছে, সেই হাত দিয়ে, স্পর্শ করবে কি না তাকে;
বাতাস প্রত্যাশা করে মেঘ আর আলো একসাথে
আমি তাকে মেঘ দিই, আলোও কি দিই না মাঝে মাঝে
মানুষও মেঘের মতো আজ, কংক্রিটের মধ্য দিয়ে
হেঁটে যাচ্ছে, কিন্তু, ওদের হাঁটার শ্রান্ত ভঙ্গি দেখে,
মনে হচ্ছে ওরা হাঁটছে নদীতীরে, মাটি স্পর্শ করা
বিমর্ষ রংধনুর মতন, ধীর পায়ে; মেঘলা বাতাসে,
শহরের মানুষেরা, জল যাযাবর হয়ে গেছে
নৌকা থেকে নেমে, অফিসের পথে যেতে যেতে,
হঠাৎ পথের মোড় ঘুরে, চলে যাচ্ছে দিকহীন দিকে,
পাহাড়ের দিকে যেতে যেতে, যেভাবে মোচড় দিয়ে নদী
চলে যায় অচেনা গ্রামের মানুষের দীর্ঘ তৃষ্ণার সমীপে
নদীতে নগ্ন হয়ে মেঘ আর আলো স্নান করে
নদীর সকল স্নান নগ্নতার; আবরণহীন না হয়ে
নদীকে অনুভব করা সম্ভব হয় না—হয় নাকি?
নদী যে নগ্নতা দাবি করে শব্দহীনভাবে
নৌকায় থাকতে থাকতে জলযাযাবর তাকে জানে;
সে তখন ফিসফিস করে এই কথা বলে,
তোমার শরীর আর জলের মাঝখানে আর কিছু
থাকতে পারে না; তোমার ত্বকের ওপর
জল তার সব গভীরতা ঢেলে দেয়; এ জগতে,
কেবল নগ্ন হয়েই নদীকে স্পর্শ করতে পারো
আজ সেরকম দিন যখন সমস্ত শরীর দিয়ে
নগ্ন হয়ে নদীকে স্পর্শ করতে হয়,
আজ সকল কাপড় তীরে রেখে,
নুডিটি নদীতে নেমে গেছে
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ই হত ক ত হয় য য বর র র মত র মতন প রবল
এছাড়াও পড়ুন:
কাত হয়ে শুলে, সমর্পণও কাত হয়ে থাকে
জলযাযাবর
অদ্ভুত বিদীর্ণ এক দিন—প্রবল বাতাসে গাছগুলি ছিঁড়ে গেছে,
প্রবল বাতাসে গাছে, অন্য এক পৃথিবীর সবুজ এসেছে;
গাছের ক্রন্দন তার রং, সেই রং চিকচিক করছে;
সম্পূর্ণ গাছ একটি চোখ হয়ে গেছে
তারপর উড়ে চলে যায়; গভীর গাছের নিচ দিয়ে
হেঁটে যেতে যেতে, ওদের ডানায় ভর দিয়ে
আমিও সহসা উড়ে যাই, যেতে যেতে টের পাই,
দিনগুলো, মানুষের নিশ্বাসের মতো শেষ হয়ে গেছে
আজ আকাশ মেঘলা; বিদীর্ণ বাতাসে গাছ যদিওবা ঝলমল করে,
বাইরে কোনো রৌদ্র নাই, তাই আমার মনেও রৌদ্র নাই
প্রকৃতি গভীরভাবে আমাকে আক্রান্ত করে, আমি
আগেও দেখেছি, মানুষের চক্রান্তও করে;
কিন্তু চক্রান্তের চাইতে বাতাস অনেক প্রবল, উপরের
ডালগুলো বেশি নড়ে, মনে হয় প্রত্যেকটি গাছ একটি
সবুজ ভূমিকম্প, পান্থশালার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে,
রাত্রির আগুনের কথা ভেবে;
কাল আর দেখব না ওদের, অন্য গাছের দিকে চলে যাব
এখন বাতাসে বেদনা উড়ে যায়, ছেঁড়া কাগজের হৃদয়ের মতো;
কালরাত্রের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘুমহীনতা চোখে লেগে আছে;
প্রবল বাতাসে, জানালার সাথে সাথে, ঘুমও উড়ে গিয়েছিল;
বিদীর্ণ পাখির মতো উড়ে গিয়েছিল ঘুম, দীর্ঘ বাতাসের ঝাপটায়
অনস্তিত্ব, কবে তুমি আসবে, ক্লান্ত অসারতা হয়ে, আমার হৃদয়ে?
আমার হৃদয় শূন্য করো; স্মৃতিগুলো অস্তিত্বহীন করে দাও;
মূল্যহীনতার জাল বিছিয়েছে কার হাত? জানা নাই
আমার হৃদয় এক নদী; মূল্যহীনতার জাল ফেলে আমার নদীতে,
যার হাত টেনে টেনে তুলছে সেই জাল, তার কোনো মুখ নাই;
তবু এই অসারতা শান্ত করে; শূন্যগর্ভ মন, অসারতা, শান্ত করে আনে;
অবিদ্যমানতার কিবোর্ডে অবিদ্যমানতা লিখতে পারি
জলযাযাবর ২ইনসমনিয়াক বলে আমি সামাজিক নই; ঘুম হলে
সামান্য হতাম হয়তোবা; তদুপরি অনুষ্ঠানহীন
ক্লান্তি লেগে আছে আমার পিছনে, নিরর্থক দেখা
হবার মতন; ঘুমাবার মতো ঘুম আসে না এ চোখে,
সেরকম ঘুম পেলে হয়তো আমিও ঘুমাতাম;
যাযাবর ইনসমনিয়া এড়াতে পারে না
ঘুমায় যখন পৃথিবীর মানুষেরা ক্লান্ত হয়ে,
ক্লান্ত হয়ে আমি জেগে থাকি, চিৎ হয়ে;
চিত হয়ে জেগে থাকা হলো নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ
করে দেওয়া; কাত হয়ে শুলে, সমর্পণও কাত হয়ে থাকে;
মনে এই আশা জাগে, অনেক চেষ্টা করে, পাথরের মতো
পড়ে থাকতে পারলে, অবশেষে ঘুম হবে কিছুক্ষণ;
কিন্তু নৌকার পাটাতনে পাথরের মতো স্থির হওয়া
যায় না কখনো; নৌকার অভ্যাসবশে স্থলে শুয়েও
চিৎ হয়ে দুলতে থাকি রাত্রিভর আমি
তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না কখনো, এই কথা
নদীর স্বরের মতো, আমাকে পাটাতন থেকে, ধীরে ধীরে
শূন্যে তুলতে থাকে; উঠে যাই আমি, উঠে যাই…
বহু নক্ষত্রের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে ছাই হতে থাকি;
সম্পূর্ণ ছাই হতে আমি পারি না তখনো;
শরীর ছাই হলেও মন ছাই না হয়ে জেগে থাকে;
অর্ধেক ছাই আর অর্ধেক পাথর হয়ে ভেসে যেতে থাকি;
কোথাও কোনো অকল্পনীয় গ্রহের দেখা পাই;
মনে হয় ফিরে আমি এসেছি পরিচিত পুরানো শহরে
পুরাপুরি ছাই হতে পারি না যে কেন; ইনসমনিয়াক বলে
ছাই হতে পারি না হয়তো; ঘুম হলে সম্পূর্ণ ছাই হয়ে
যেতাম আমিও; তখন তোমার কথা আর মনে পড়ত না;
ইনসমনিয়াক বলে স্মৃতিহীনও হতে পারি না
অনেক নক্ষত্রের পথে যেতে যেতে, আংশিক ছাই
আর আংশিক পাথরের এই অস্তিত্বে, এক ভোর হয়;
বহু আগে নৌকার পাটাতনে থাকতাম বলে
এখন স্থলে থেকেও আমি সারা রাত অল্প অল্প দুলি
ব্যাকপ্যাক ও আহত স্তনকাল রাতে স্বপ্নে দেখি আমি এক প্লাস্টিকের ব্যাকপ্যাক হয়ে গেছি
আমার ভিতরের সব দেখা যাচ্ছে ট্রান্সপারেন্ট ত্বক আর মাংস
ভেদ করে; আমার সকল নির্জনতা বোধ পুঁজের মতো ক্ষরিত হচ্ছে
এই স্বপ্ন অদ্ভুত খুব; বাস্তবের অভিজ্ঞতার মতো নয়;
মানুষ কিভাবে এক স্বচ্ছ ব্যাকপ্যাক হয়ে যায়? এই স্বচ্ছতা
অপার্থিব; ব্যাকপ্যাক কখনো স্বচ্ছ হয় না; বিক্রেতাকে
জিজ্ঞেস করছিলাম, অস্বচ্ছ ব্যাকপ্যাক কি নেই আপনার?
সে আমাকে বলেছে, তুমি নিজেই এক স্বচ্ছ ব্যাকপ্যাক;
আমার নিকট কী আছে না আছে, তাতে তোমার কী?
বহু দূর থেকে আহত স্তনের ঘ্রাণ শোনা যায়; এই ঘ্রাণ
কান্নার মতো, তাই তাকে শোনা যায়, ঘ্রাণ পাওয়ার সাথে;
বেদনা হয় না শেষ, কখনো সে আহত স্তন, কখনো এক
স্বচ্ছ ব্যাগপ্যাক—সমাপ্ত না হয়ে সে কেবল
রূপান্তরিত হতে থাকে; ঝুলন্ত নিঃসীম কাটারের মতো কাছে আসে
দূরে যায়; আহত স্তনের স্বর মূলত তোমার বেদনার কথা বলে;
স্বচ্ছ ব্যাকপ্যাক এমন এক মনোবেদনা, যা মানুষের
অভ্যন্তরে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছে—এখন সে
নিজের অস্তিত্ব বিপন্ন করেও বলতে চায়, এই দেখো, এই-ই আমি
সহস্র গার্বেজ আমার ভিতরে বহন করছি, ময়লার ট্রাকের মতন
আমার শরীরে কার অধিকার আছে? কীটপতঙ্গের আছে
আমি টের পাই; দূর থেকে ভেসে আসা আহত স্তনের ঘ্রাণ,
তারও আছে অধিকার রাত্রিভর, টপ টপ জলের মতন,
আমার ভিতরে ঢুকবার; যে ব্যাকপ্যাক আমার পিঠের ওপরে
সারা দিন সারা রাত ঝোলে—তারও আছে এক ক্লেম আমার শরীরে;
স্বচ্ছ হতে হতে একদিন সে নাই হয়ে যাবে;
আমাকে কোনো পথে আর হাঁটতে দেখবে না
অনেক ওজন মিলে আমাকে হাঁটায়—এ জীবন
ব্যাকপ্যাক হয়ে পিঠে থাকে, বুকে থাকে,
থাকে সব ক্রোমোসোমে, বহু বোতামের দাগ পড়া আহত স্তনে;
ওজন নাই হয়ে গেলে, ব্যাকপ্যাক নাই হয়ে যায়, আমিও থাকি না;
ব্যাকপ্যাক স্বচ্ছ হয়ে যাওয়া মানুষ এ জগতে থাকতে পারে না
নুডিটিমেঘের মতন নগ্ন বাতাস বইছে, থেমে থেমে,
বাঁক নিয়ে, আমার বিষণ্ণ প্রবণতা পার হয়ে,
আরেক সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখছে, তার আলো
আজ এই পৃথিবীতে পৌঁছাবে কি না; আলোর যে হাত
আছে, সেই হাত দিয়ে, স্পর্শ করবে কি না তাকে;
বাতাস প্রত্যাশা করে মেঘ আর আলো একসাথে
আমি তাকে মেঘ দিই, আলোও কি দিই না মাঝে মাঝে
মানুষও মেঘের মতো আজ, কংক্রিটের মধ্য দিয়ে
হেঁটে যাচ্ছে, কিন্তু, ওদের হাঁটার শ্রান্ত ভঙ্গি দেখে,
মনে হচ্ছে ওরা হাঁটছে নদীতীরে, মাটি স্পর্শ করা
বিমর্ষ রংধনুর মতন, ধীর পায়ে; মেঘলা বাতাসে,
শহরের মানুষেরা, জল যাযাবর হয়ে গেছে
নৌকা থেকে নেমে, অফিসের পথে যেতে যেতে,
হঠাৎ পথের মোড় ঘুরে, চলে যাচ্ছে দিকহীন দিকে,
পাহাড়ের দিকে যেতে যেতে, যেভাবে মোচড় দিয়ে নদী
চলে যায় অচেনা গ্রামের মানুষের দীর্ঘ তৃষ্ণার সমীপে
নদীতে নগ্ন হয়ে মেঘ আর আলো স্নান করে
নদীর সকল স্নান নগ্নতার; আবরণহীন না হয়ে
নদীকে অনুভব করা সম্ভব হয় না—হয় নাকি?
নদী যে নগ্নতা দাবি করে শব্দহীনভাবে
নৌকায় থাকতে থাকতে জলযাযাবর তাকে জানে;
সে তখন ফিসফিস করে এই কথা বলে,
তোমার শরীর আর জলের মাঝখানে আর কিছু
থাকতে পারে না; তোমার ত্বকের ওপর
জল তার সব গভীরতা ঢেলে দেয়; এ জগতে,
কেবল নগ্ন হয়েই নদীকে স্পর্শ করতে পারো
আজ সেরকম দিন যখন সমস্ত শরীর দিয়ে
নগ্ন হয়ে নদীকে স্পর্শ করতে হয়,
আজ সকল কাপড় তীরে রেখে,
নুডিটি নদীতে নেমে গেছে