ঢাবি ক্লাবে তালা মারার হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের
Published: 9th, July 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্লাবে সদ্য ঘোষিত কমিটিতে পদ পাওয়া নীলদলের সমর্থকদের অবিলম্বে প্রত্যাহার না করা হলে তালা মেরে ক্লাব অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর ১টায় ঢাবি ক্লাবের প্রবেশ মুখে এক মানববন্ধনে এ আল্টিমেটাম দেন তারা। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদাদল ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল উভয়ের সমঝোতার ভিত্তিতে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী এমন কর্মকাণ্ড করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সাদা দলের আপস, মানি না মানব না’, ‘সাদা-নীল ভাগাভাগি, মানি না মানব না’, ‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী’, ‘ফ্যাসিবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার-সাবধান’, ‘গণহত্যার মদদদাতারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
আরো পড়ুন:
ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীদের ব্লকেড কর্মসূচি, ভোগান্তি
সাগরে নিখোঁজ চবির আরেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
ক্লাবে তালা মেরে অচল করার ঘোষণা দিয়ে ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান আল ফাহাদ বলেন, “যদি এই নীল দলের ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে বাতিল না করা হয়, তাহলে আমরা এই ক্লাবে তালা মেরে দেব। এ ক্লাব আমরা অচল করে দেব।”
তিনি আরো বলেন, “গত ১৬ বছরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল দখল করেছিল, নির্যাতন করেছিল। আর তাদের এসব কর্মকাণ্ডের বৈধতা দিয়েছিল নীলদলের প্রাধ্যক্ষ আর হাউস টিউটররা। এসব নীল দলের শিক্ষকেরাই ছাত্রলীগের পড়াশোনা না করা নেতাকর্মীদের অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে রেজাল্ট ভালো করাতো। আওয়ামীপন্থি নীলদলের সিনেট সদস্য রেজাউল করিম এখন ঢাবি ক্লাবের পদে রয়েছেন। সাদাদলের শিক্ষকরা এসব পদ ভাগাভাগি করেছেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী এ বি জোবায়ের বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ফ্যাসিবাদের পতনধ্বনি শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজ এক বছর পর এই ঢাবি থেকেই ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন শুরু করা হয়েছে। গত ১ জুলাই গঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের ১৫ সদস্যের সাত জনই আওয়ামী লীগপন্থি নীল দলের শিক্ষক। অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে, বিএনপিপন্থি সাদা দলের শিক্ষকরাই এই কমিটির বৈধতা দিয়েছে।”
শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক খান বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকেই নীল দলের জিনাত হুদারা এই ক্লাব থেকেই ষড়যন্ত্র করে গেছে। আমরা তার প্রমাণ পেয়েছিলাম। এখন এই ক্লাবে আবার ডামি কমিটি দেওয়া হয়েছে নীলদল-সাদাদলের সমঝোতার ভিত্তিতে হয়েছে। কলা অনুষদের ডিন সিদ্দীকুর রহমান খান এই কমিটির দায়ীত্বে ছিলেন। আমরা এই কমিটির ঘোষণার দিনকে কালো দিবস হিসেবে দেখছি। এই পুনর্বাসন যদি অবিলম্বে বন্ধ করা না হয়, তাহলে এই আন্দোলন গণ আন্দোলনে পরিণত হবে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ আওয় ম ল গ দল র শ ক ন ল দল র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অভিযুক্তরা এর আগে শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ছিলেন এবং তাদেরকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শেয়ার কারসাজির কোম্পানিগুলো হলো- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স পিএলসি, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তথ্য মতে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই সময়ে অর্থাৎ ১০ দিনে কোম্পানির শেয়ারের দাম বহুগুণ বেড়ে যায়। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে দীর্ঘদিন পর কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে ওই সময়কালে গুঞ্জন ছিল- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে ৩ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, মো. এ.জি. মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহকে যৌথভাবে ৪২ লাখ টাকা ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে অভিযুক্তদের মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি
স্বল্প সময়ের মধ্যে ৫টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে মো. সাইফ উল্লাহ, মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ শেয়ার কারসাজিতে নেতৃত্ব দেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. সাইফ উল্লাহ। আর তাকে সহযোগিতা করেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহর শ্যালক মো. এ.জি. মাহমুদ। আর এস. এম. মোতাহারুল জানান তাদের সহযোগী। সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেডে অভিযুক্ত ৩ ব্যক্তির বিও হিসাব রয়েছে। তারা সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ায়। তারা সবাই সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও বিশিষ্ট শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী।
এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্ব থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতেও জড়িত থাকার অভিযোগে হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, মো. সাইফ উল্লাহকে ৫০ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।
ওই বছরের মে মাসে ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ৩০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই বছরের আগস্টে জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে মো. সাইফ উল্লাহকে ৪০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৩.৯২ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৫.২৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৪.৬৫ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৭.৩৫ শতাংশ ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ১৪.৭৪ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করতে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ায় কারসাজি চক্র। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির তদন্তে দীর্ঘদিন পর অবশেষে তা প্রমাণিত হয়েছে।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত
কমিশন জানায়, অভিযুক্তরা ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে কারসাজি করে অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং এ কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থি। তাই অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জরিমানা ধার্য করা হয়।
ঢাকা/এনটি/ইভা