ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। তবে, ভোগান্তি বেড়েছে পানিবন্দী মানুষের।
অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো কোনো সহায়তা পাননি তারা।
এর আগে, মঙ্গলবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪ স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। রাত দেড়টা পর্যন্ত প্লাবিত হয় নতুন নতুন এলাকা।
আরো পড়ুন:
তিস্তায় নিখোঁজের একদিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার
টেক্সাসে বন্যায় ১৫ শিশুসহ ৫১ জনের মৃত্যু
বুধবার (৯ জুলাই) এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় পানিবন্দি কয়েকজনের সঙ্গে। তারই একজন মুন্সীরহাট গাইনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আছমা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘‘গত রাতে ঘরে পানি ঢুকেছে। কিছু জিনিস ওপরে তুলতে পারলেও বাকি সব তলিয়ে গেছে। আজ সারাদিন না খাওয়া। কিন্তু, এখনো কোনো সহায়তা পাইনি।’’
নাপিতকোনা গ্রামের জাহানারা বেগম বলেন, ‘‘গতকাল বাঁধ রক্ষায় স্থানীয়ভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, লাভ হয়নি। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয়ে নিয়েছি। কিন্তু, খাবার-বিশুদ্ধ পানি নেই। বিদ্যুৎ-নেটওয়ার্ক না থাকায় কারো সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।’’
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, ‘‘দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন, তাদের জন্য রান্না করা খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’
এ বিষয়ে জানতে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে, বুধবার বৃষ্টিপাত কিছুটা কমেছে। এ কারণে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘‘মুহুরি নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। উজানে বৃষ্টি বন্ধ না হলে ভাঙনের ঝুঁকি থাকবে।’’
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘ফুলগাজী ও পরশুরামে ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। রান্না করা খাবারও সরবরাহ করা হচ্ছে।’’
ঢাকা/সাহাব/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন য প ন বন দ
এছাড়াও পড়ুন:
২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষ হাতে পরিচালনা করছেন সদর ইউএনও জাফর সাদিক
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী শত ব্যস্ততার মধ্যেও দক্ষতার সঙ্গে একাই পরিচালনা করছেন সদর উপজেলার ২৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা।
একইসাথে বক্তাবলী ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।গত ১১ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইউএনও জাফর সাদিক অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
পূর্ববর্তী সভাপতিদের আমলে যে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও কোচিং নির্ভরতা ছিল, তা নির্মূল করে শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে নিরলস কাজ করছেন তিনি।
তিনি ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নীতিমালা-২০২৩’ বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ করেন। অনিয়ম তদন্তে গঠন করেন ভিন্ন ভিন্ন কমিটি। ফান্ডের অর্থ অপব্যবহার ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
পুনর্জন্ম পেয়েছে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়
পূর্বে সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠদের দ্বারা পরিচালিত পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নীতি, ৮ মাসের শিক্ষক বেতন বকেয়া, জমির রেজিস্ট্রি জটিলতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে গত বছর ১৫ আগস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।
ইউএনও জাফর সাদিক যোগদানের পর মাত্র ছয় মাসে ১৭টি সভা করে ফান্ড স্বচ্ছতা, শিক্ষক বেতন পরিশোধ, প্রভিডেন্ট ফান্ড ঋণ শোধ, জমির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেতৃত্ব দেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা সুলতানা বলেন, “স্যার দুইবার বিদ্যালয় পরিদর্শন করে বাস্তব পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন নিয়মিত বেতন হচ্ছে, ড্রেন নির্মাণ চলছে।”
দখলদার উচ্ছেদ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান
ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারীর আর্থিক অনিয়মের তদন্তে সরাসরি মাঠে নামেন ইউএনও। বিদ্যালয়ের ২০ শতক জমি দখলমুক্ত করে ইটের দেয়াল অপসারণের নির্দেশ দেন। ঘুষের মাধ্যমে দেয়া পুকুর ইজারাও বাতিল করেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আফরোজা বলেন, “ইউএনও স্যারের উদ্যোগে জমি উদ্ধার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনও প্রক্রিয়াধীন।”
বক্তাবলীর কানাইনগর সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি দখলমুক্ত করতেও সরাসরি পুলিশি সহায়তায় দখলদার উচ্ছেদ করেন ইউএনও।
শিক্ষা সফর ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নতুন প্রাণ
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষা সফর, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুনরায় চালু করে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছেন ইউএনও জাফর সাদিক। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা বেতনে ও অর্ধ-বেতনে পড়ার সুযোগও তৈরি করেছেন।
প্রশংসিত হচ্ছেন সর্বত্র
সদর উপজেলার ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগের সভাপতির দায়িত্বে থেকে ইউএনও জাফর সাদিক যে স্বচ্ছতা, দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন, তা এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছে। সচেতন মহলের মতে, যেখানে পূর্ববর্তী সভাপতিরা শিক্ষা ফান্ডের অর্থ আত্মসাতে ব্যস্ত ছিলেন, সেখানে কোনো আর্থিক সুবিধা ছাড়াই এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষভাবে পরিচালনা একজন প্রকৃত কর্মবীরের পরিচয় বহন করে।
ইউএনও নির্বাহী অফিসার জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি।
নিজ কাজের অতিরিক্ত এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকার যখন যে দায়িত্ব আমাকে অর্পণ করবেন সেটাকেই জনকল্যাণমুখী করে ভবিষ্যতেও কাজ করে যেতে চাই।