মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বেশিরভাগ সড়ক পানিতে ডুবেছে। পানি ঢুকে পড়েছে বসতবাড়িতে। জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। এর মধ্যে পার্শ্ববর্তী জেলা ফেনীর মুহুরী নদীতে পানি বাড়তে থাকায় নোয়াখালীতে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বুধবার (৯ জুলাই) জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর চারটি উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার ও বৃহস্পতিবারের পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ির নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি
চট্টগ্রামে বৃষ্টি অব্যাহত, দুর্ভোগ
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, দুই দিন ধরে নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টির ফলে সদর, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তা ডুবে গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এসব উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা তার কাছে বুধবার ও বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল ও মাদ্রাসার চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রাখার নির্দেশনা চেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দুই দিনের পরীক্ষা স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নোয়াখালী জেলা কার্যালয় জানিয়েছে, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এ জেলায় এক দিনে পানি বেড়েছে ১৭ সেন্টিমিটার। তবে, তা এখনো বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচে আছে। টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর সদর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সুবর্ণচরে বেশি জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলার অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। অনেকের বসতঘরে পনি ঢুকেছে। বেশি জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে জেলা শহর মাইজদীতে। এখানে বিভিন্ন সড়ক ও পাড়া-মহল্লা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নোয়াখালী পৌর শহরের স্টেডিয়াম পাড়া, জেলখানা সড়ক এলাকা, ফকিরপুর, হরিনারায়ণপুর, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হাউজিংসহ বেশিরভাগ এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটুপানি জমেছে। চলতি বর্ষায় শহরের বেশিরভাগ সড়কে খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় সড়কগুলো যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দায়ী।
টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা এলাকার করালিয়া, মওদুদ স্কুল, কলেজ গেট, হাসপাতাল গেটসহ অনেক এলাকা ডুবে গেছে। বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর ও সেনবাগ উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেছেন, বিভিন্ন এলাকা আমি ঘুরে দেখেছি। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কমিটির বৈঠক চলছে।
ঢাকা/সুজন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ছয় মাসে ৮০টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫১
গোপালগঞ্জের সড়কগুলো যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ছয় মাসে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক সড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন অন্তত ২ শতাধিক।
অসাবধানতা এবং দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। রাতদিন কাজ করেও কোনোভাবেই দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
গাড়ি চালকদের দাবি, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, অদক্ষ চালক ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো এবং মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে দুর্ঘটনায় পড়েন তারা।
আরো পড়ুন:
মঙ্গলবার থেকে সিলেটে শ্রমিকদের ধর্মঘটে গণপরিবহন বন্ধ
ময়মনসিংহে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. মাকসুদুর রহমান মুরাদ ও ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মো. রোকিবুজ্জামান দুর্ঘটনা ও হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পযর্ন্ত এই ছয় মাসে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ অংশের ৭০ কিলোমিটারে ২৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯ জন এবং আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। মামলা হয়েছে ২৩টি।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গোপালগঞ্জ অংশে চারটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২২জন। মামলা হয়েছে তিনটি। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ২৫টি দুর্ঘটনায় ১৯জন নিহত ও আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সাতটি।
স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল শেখ বলেন, “গোপালগঞ্জে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই ছোট-বড় কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে এই মহাসড়কে। অদক্ষ বাস চালক আর গাড়ির দ্রুত গতি দুর্ঘটনার পেছনের মূল কারণ। যদি দক্ষ চালক দিয়ে এবং গতি কমিয়ে গাড়ি চালানো যায়, তাহলে আশা করছি, সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।”
কাশিয়ানী উপজেলার পোনা গ্রামের ররিউল শেখ বলেন, “ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে শুধু বাস নয়, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন ধরনের তিন চাকার যান চলাচল করে। এগুলোর চালকরা নিয়ম মানে না মহাসড়কে। তারা নিজেদের ইচ্ছা মতো গাড়ি চালায়। ফলে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে মানুষ। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গাড়ির চালক বলেন, শুধু পথচারীদের নয়, চালকদেরও নানা সমস্যা আর দোষ রয়েছে। ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন চালকরা। অনেক চালকের সঠিক লাইসেন্স নেই। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রশাসন যদি সঠিকভাবে তাদের কাজ করে তাহলে লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক গাড়ি চালাতে পারতো না।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, “দুর্ঘটনা কমাতে আমরা মহাসড়কে নিয়মিত টহল দিচ্ছি। মহাসড়কে চলাচলকারী দ্রুতগতির যানবাহনকে জরিমানা করা হচ্ছে, যাতে চালকরা মহাসড়কে সঠিক নিয়মে যানবাহন চালান। চালকদের দক্ষতা বাড়াতে তাদের নিয়ে সভাও করা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “এসব করার পরেও চালকদের উদাসীনতার কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।”
ঢাকা/মাসুদ