এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য দরপত্র প্রক্রিয়া চেয়ে করা রিটের আদেশ ২৩ জুলাই
Published: 9th, July 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশের জন্য ২৩ জুলাই দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের এই দিন ধার্য করেন।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন রিটটি করেন।
‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এই প্রতিবেদনসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন রিটে যুক্ত করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ মধ্যাহ্নবিরতির পর রিটের ওপর শুনানি হয়। রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহসানুল করিম এবং আইনজীবী কায়সার কামাল শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
শুনানি শেষ, আদেশ ২৩ জুলাই
শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, নতুন কর্তৃপক্ষ নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ছয় মাসের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে—একনেকের সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দিয়ে দেবে। এ প্রক্রিয়া চলমান। সরকার তার অবস্থান থেকে নড়েনি।
আহসানুল করিম বলেন, ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া আইনবিরোধী। জিটুজির ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ পেতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে হয়। অথচ পিপিপি কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রজেক্ট প্রোফাইলে অনুমিত বিনিয়োগ হিসেবে ২০০ কোটি টাকা দেখা যায়, যা জিটুজি গাইডলাইনের সংশ্লিষ্ট বিধিরও পরিপন্থী।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এই টার্মিনালে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন আহসানুল করিম। তিনি বলেন, পরামর্শক ফি হিসেবে আইএফসিকে গত ১৪ মে এক লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করে পিপিপি কর্তৃপক্ষ।
আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের হার্ট (হৃৎপিণ্ড)। ওখানে (হৃৎপিণ্ডে) রক্তক্ষরণ হলে কিন্তু মানুষটাকে বাঁচানো যায় না। অর্থ উপদেষ্টা কী বলেছেন? বিদেশিদের হাতে যাওয়ার আগে ছয় মাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে এনসিটি। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। ১ জুলাই বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা জানান। দরপত্র ডাকা হবে না বলা হয়েছে।
কায়সার কামাল আরও বলেন, রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি এসে সিদ্ধান্ত নেবে—কোনটা নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত, কোনটা হওয়া উচিত নয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থ এখানে জড়িত। রুল দেওয়ার আরজি জানান তিনি।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, টার্মিনাল বাংলাদেশের শ্রমিকেরা পরিচালনা করার জন্য সক্ষম। সেখানে কী কারণে, কী উদ্দেশ্যে (বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে) দিয়ে দেওয়া হবে? এখানে জনস্বার্থ রয়েছে। ১২–দলীয় জোট আছে, তারাও কিন্তু এর বিরুদ্ধে। তারা বলেছে, টার্মিনাল দেশীয় প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় স্বার্থ বড় করে দেখতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনার ক্ষমতা এ দেশেরই আছে। রুল দেওয়ার আরজি জানান তিনি।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, তিনি জাতীয় স্বার্থে এসেছেন, শুধু রুল চাচ্ছেন।
আরও পড়ুননতুন ব্যবস্থাপনায় নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা শুরু০৭ জুলাই ২০২৫শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি সরকার। ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেবে—এমন সিদ্ধান্ত হয়নি। কী সিদ্ধান্ত হবে, ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন (চুক্তির শর্ত)’ কী হবে, আদৌ অন্য কাউকে দেবে কি না—সিদ্ধান্ত হয়নি। ভবিষ্যতে কী হবে, তার ওপর ভিত্তি করে রুল হতে পারে না।
শুনানি নিয়ে আদালত আদেশের জন্য ২৩ জুলাই দিন রাখেন।
রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, দেশীয় অপারেটরদের (প্রতিষ্ঠান) অনুমতি না দিয়ে পিপিপি আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে। রিটে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে।
আরও পড়ুননিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে না দেওয়ার আহ্বান, শ্রমিক দলের বিক্ষোভ২৪ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ য ষ ঠ আইনজ ব প রক র য় ২৩ জ ল ই দরপত র র জন য পর চ ল এনস ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এ অশ্লীলতার অভিযোগ, নির্মাতা-শিল্পীদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ
জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’–এর পঞ্চম সিজনের কয়েকটি পর্বে অশ্লীলতা, সামাজিক অবক্ষয় এবং নৈতিক বিচ্যুতির অভিযোগ তুলে নির্মাতা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহি উদ্দিন গতকাল (৮ জুলাই) এ নোটিশটি পাঠান।
নোটিশে নাটকের নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি, অভিনেতা মারজুক রাসেল, জিয়াউল হক পলাশ, সাইদুর রহমান পাভেল, শিমুল শর্মা এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বুম ফিল্মস–এর নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট সিজন ৫’-এর প্রথম থেকে অষ্টম পর্ব পর্যন্ত এমন অনেক সংলাপ রয়েছে যা ‘অশ্লীল, ডাবল মিনিং এবং কিশোর-তরুণদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
নোটিশে উদাহরণ হিসেবে নাটকের কিছু সংলাপ তুলে ধরা হয়েছে, যেমন, ‘ডেট’, ‘উনিশ/বিশ’, ‘টাকা হলে সীসা খেতে পারতাম’, ‘বাঙালি পোশাক লুঙ্গি’, ‘ফিমেল’, ‘কিডনি’, ‘দই’-এই শব্দ ও সংলাপগুলোকে ‘নৈতিকতা, শালীনতা ও পারিবারিক রুচির পরিপন্থী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনজীবীর দাবি, এগুলোর মাধ্যমে নারীদের অবমাননা করা হয়েছে এবং তরুণ প্রজন্মের মুখে এসব সংলাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা উদ্বেগজনক।
এছাড়া নোটিশে নির্মাতা কাজল আরেফিন অমির একটি পুরোনো সাক্ষাৎকারের কথা তুলে ধরা হয়, যেখানে তিনি বলেছিলেন—নাটকটি এখন সব বয়সী দর্শকের জন্য তৈরি হচ্ছে। তবে বাস্তবে নাটকের ভাষা, উপস্থাপন ও বিষয়বস্তু মোটেও পরিবারবান্ধব নয় বলে দাবি করেন নোটিশদাতা।
আইনি নোটিশে আরও বলা হয়, ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪’ এবং ‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭’-এর আলোকে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে ক্ষতিকর কনটেন্ট প্রচার দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ এই নাটকের কিছু সংলাপ ও দৃশ্য সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে তরুণদের ভাষা ও আচরণে স্থায়ী ছাপ ফেলছে।
নোটিশে নাটকের বিতর্কিত সংলাপ ও ভিডিও ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায়, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।