যত দ্রুত দেশকে নির্বাচনের ট্র্যাকে ওঠানো যাবে ততই মঙ্গল: মির্জা ফখরুল
Published: 9th, July 2025 GMT
যত দ্রুত দেশকে নির্বাচনের ট্র্যাকে ওঠানো যাবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার রাজধানীর নিউরো সায়েন্স হসপিটালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদকে দেখার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন। সকাল সাড়ে ১১টায় আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎধীন অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব। তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে তার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। এরপর একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদকে দেখতে যান বিএনপির মহাসচিব এবং তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা বলতে চাই, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি যদি কেউ থাকে সেটা হচ্ছে বিএনপি এবং সবচেয়ে বেশি লড়াই যদি করে গণতন্ত্রের জন্য সেটা বিএনপি। বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বিএনপি নিয়ে এসেছে বহুদলীয় গণতন্ত্রে এবং পরবর্তিকালে সংসদীয় গণতন্ত্রে। সুতরাং এই বিষয়ে প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নেই। দেশটাকে সকলে মিলে বাঁচাতে হবে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে সঠিক ট্র্যাকে ওঠানো এবং যত দ্রুত সেটাকে ওঠানো যাবে ততই মঙ্গল।’
তিনি বলেন, ‘যারা মনে করে যে, নির্বাচন প্রয়োজন নেই- আমার মনে হয়, তারা আবার চিন্তা করবেন। নির্বাচন প্রয়োজন জনগণের জন্য। একটা নির্বাচিত সরকার দরকার, যে সরকার জনগণের সম্পর্ক থাকবে। সেই কারণেই আমরা সংস্কারে অংশ নিচ্ছি। প্রত্যেকটি সংস্কারের দাবি আমরাই তুলেছি। সুতরাং সংস্কার এবং নির্বাচনের মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিকতা নেই, দুইটা একসঙ্গে চলবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা খুব ভালো করে জানেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতন-হত্যা-গুম-খুনের সবচেয়ে বড় ভিক্টিম আমাদের দল বিএনপি। আমি নিজেও ১১২টা মামলার আসামি এবং ১৩ বার জেলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমরা সবসময়ে মনে করি যে, যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করবে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ কাজ করেছে তাদের প্রতিটি ব্যক্তির শাস্তি হওয়া প্রয়োজন, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত এবং শাস্তি হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা তিনি এককভাবে, আমি মনে করি দ্য রেসপোসিবল ফর দ্য কিলিং অব দ্য থাউজেন্ডস অব পিপল। তার বিচার শুরু হয়েছে, আমরা আশাবাদী তার এবং তার সঙ্গে যারা গণহত্যার সঙ্গে এবং এই ফ্যাসিস্ট আক্রমণের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকেরেই বিচার হবে। সেই হিসেবে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দলও যদি দেখা যায়, দলগত হিসেবে তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র জ ফখর ল গণতন ত র ন ব এনপ ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
এবার আনিস-হাওলাদারকে অব্যাহতি, নেতাকর্মীদের ক্ষোভ
দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর প্রকাশ করেছে জাতীয় পার্টি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতির ঘটনার মধ্যেই এ খবর পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা।
সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে পৃথক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ অব্যাহতির বিষয়টি জানানো হয়।
গত ২৮ জুন প্রেসিডিয়াম সভায় এই তিন নেতাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পার্টির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হলেও আজ সোমবার এ খবর প্রকাশ করেছে দলটি। এতদিন বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্ত কি কারণে এতদিন গোপন রাখা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলে এভাবে গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে অগণতান্ত্রিক বহিষ্কারের ঘটনায় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “দলে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য গঠনতন্ত্রের স্বৈরাচারী ধারা সংশোধনের দাবি তোলায় বলী হয়েছেন এসব শীর্ষনেতা। ওই বিশেষ ধারায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
নেতাকর্মীদের দাবি, দলে গণতন্ত্র নেই। যখন ইচ্ছা বহিষ্কার আবিষ্কারের ঘটনা চলছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই। জবাবদিহিতা চাইতে গেলে হেনস্থা, এমনকি দল থেকে বহিষ্কার হতে হয়। যার সর্বশেষ প্রমাণ দলের দুই কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বহিষ্কার। দল সবার মতামতে চলবে, কিন্তু এখন দল চলছে এক ব্যক্তির মর্জিতে। এভাবে দল চলতে থাকলে একদিন জাতীয় পার্টি মুসলিম লীগে পরিণত হবে।
সোমবার দলের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির গত ২৫ জুন জেলা/মহানগরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক/আহ্বায়ক, সদস্য সচিবদের মতবিনিময় সভায় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো- চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
গত ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সভায়ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই তিন নেতাকে দলীয় সব পদ-পদবী থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এমতাবস্থায় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে প্রাথমিক সদস্যসহ দলীয় সব পদ-পদবী থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। এ আদেশ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
এর আগে, পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব নিযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নিয়োগ দেন বলে দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের বৈধ মহাসচিব দাবি করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর মহাসচিব নিয়োগ দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদের কর্তৃক চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
সোমবার বিকেলে চুন্নুকে বাদ দিয়ে পাটোয়ারীকে নতুন মহাসচিব নিয়োগের এক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা একথা বলেন।
তারা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ ও সম্মানিত মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়। জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুকে কোনো কারণ ছাড়াই অব্যাহতি দিয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে একক সিদ্ধান্তে মহাসচিব নিয়োগ চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন। এটি একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ, যা পার্টির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
তারা বলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইতোমধ্যে জাতীয় কাউন্সিল ঘোষিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো প্রকার নিয়োগ, অব্যাহতি বা বহিষ্কার সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। এই ধরনের সিদ্ধান্ত দলের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলছে।
তারা আরো বলেন, আমরা বিস্মিত যে, দায়িত্বশীল প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়মিত চাঁদা প্রদান সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যেভাবে অব্যাহতির চিঠি প্রদান করা হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং নীতিহীন ও সম্মানহানিকর আচরণ।
তারা জাতীয় পার্টিকে ব্যক্তি নয়, গঠনতন্ত্র ও আদর্শে পরিচালিত হওয়ার দাবি জানান।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী