তিউনিসিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা রাশেদ ঘানুশিকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ এবং ‘একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার’ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে এ সাজা দেওয়া হয়েছে।

তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তিউনিস আফ্রিকা প্রেস (টিএপি)-এর বরাত দিয়ে বুধবার (৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু। 

টিএপির খবর অনুসারে, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) তিউনিস ফার্স্ট ইনস্ট্যান্স কোর্টে সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত মামলার জন্য ফৌজদারি চেম্বার এই রায় জারি করেছেন।

ঘানুশির পাশাপাশি, আদালত বেশ কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে সাবেক গোয়েন্দা প্রধান মাহরেজ জোয়ারি, তিউনিস-কার্থেজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিমান সুরক্ষার সাবেক প্রধান আবদেলকারিম আবিদি, বিরোধী দল আন-নাহদাহ পার্টির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হাবিব এল্লুজে এবং বেন আরুস প্রদেশের এজ্জাহরার মেয়র রায়ান হামজাউই।

এছাড়াও, আদালত পলাতক থাকা বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ নাদিয়া আকাচা, ঘানুচির ছেলে মোয়াজ ঘানুচি এবং আন-নাহদাহ পার্টির কর্মকর্তা আদেল দাদা ও রফিক আবদেসালেম।

অভিযোগ গঠনকারী চেম্বার ১৫ মে, ২০২৪ তারিখে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠায়। ২ মে, ২০২৫ তারিখে শুনানি শুরু হয় এবং ৮ জুলাই আদালত রায় দেওয়ার তারিখ নির্ধারণের আগে বেশ কয়েকবার স্থগিত করা হয়।

এই মামলায় প্রায় ২০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকা, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন, অর্থ পাচার, সরকার উৎখাতের চেষ্টা এবং সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়।

তিউনিসিয়ার সংবাদ সংস্থা সব আসামির রায়ের বিস্তারিত বিবরণ দেয়নি। সমস্ত রায় আপিলের আওতায় রয়েছে।

বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা এবং বিরোধী দল আন-নাহদাহ পার্টি মামলাটির সমালোচনা করেছে। এটিকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ ও তার বিতর্কিত পদক্ষেপের সমালোচকদের নীরব করার একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ’ বলে অভিহিত করেছে।

তবে, তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক কারণে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটির সরকার দাবি করছে, সব আসামীর বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বা ‘দুর্নীতি’ এর মতো ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে, গত ১৯ এপ্রিল একই ধরনের একটি মামলায় ৪০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৩ থেকে ৬৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ। তবে তার বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্র শাসন জোরদার করার অভিযোগ রয়েছে। 

২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী হিশাম মেসিসি সরকারকে বরখাস্ত করে নির্বাহী ক্ষমতা দখল করেন সাইদ। ২০১৪ সালের সংবিধান পাশ কাটিয়ে দেশের নির্বাচিত সংসদ ও বিচার বিভাগকে ভেঙে দেন তিনি।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত উন স য় র র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার

প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা। 

কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।

মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ। 

এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা। 

কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে। 

কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। 

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ